জানেন কি ? জগাই











জানেন কি ?

চাণক্য
জগাই



চাণক্য ছিলেন কূট-রাজনীতি বিশারদ পণ্ডিত। কৌটিল্য, বিষ্ণুশর্মা, বিষ্ণুগুপ্ত নামেও ইনি পরিচিত। ইনি তক্ষশীলায় জন্মগ্রহণ করেন। মহাবংশ পাঠে জানা যায়, চাণক্য বাল্যবস্থায় পিতৃহীন হইয়া জননী কর্তৃক পালিত হন। ইনি দেখিতে অতি কদাকার ও দন্তুর ছিলেন। দন্তুর সন্তান কদাচিৎ মাতৃভক্ত হয়, এই আশঙ্কায় চাণক্য নিজের সন্মুখের দাঁতগুলি ভাঙ্গিয়া ফেলেন। 

তৎকালে ভারতবর্ষের মধ্যে তক্ষশীলাই বিদ্যালোচনার প্রধান কেন্দ্র ছিল। চাণক্য অল্প বয়সেই স্বীয় প্রতিভাবলে সর্বশাস্ত্রে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তাঁহার সাংসারিক অবস্থা কখনও স্বচ্ছল ছিল না। মাতৃবিয়োগের পর ইনি ধনোপার্জনের নিমিত্ত রাজধানী পাটলীপুত্র নগরে আগমন করেন। তখন শিশুনাগবংশীয় ধনানন্দ ভারতবর্ষের একছত্র সম্রাট। প্রতি বছর পাটলীপুত্রের পণ্ডিতবর্গ রাজাজ্ঞায় রাজনীতি ও বিদ্যালোচনার জন্য রাজধানীতে সমবেত হইতেন। চাণক্য বিনা আহ্বানেই ওই সভায় গিয়া এবং প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রধান পণ্ডিতের আসন অধিকার করিয়া বসিলেন। রাজা এবং পণ্ডিতমণ্ডলী ইহাতে ক্রুদ্ধ ইঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোন সাহসে প্রধান পণ্ডিতের আসন অধিকার করিয়াছ ?” দাম্ভিক চাণক্য উত্তর করিলেন, “আমা অপেক্ষা প্রধান পণ্ডিত এই সভায় কেঊ কি আছেন ?” যদি কেহ আপনাকে আমা অপেক্ষা বিদ্বান্‌ মনে করেন, তবে তিনি আমাকে তর্কে পরাস্ত করিবার নিমিত্ত প্রস্তুত হউন।” 

কদাকার ও মলিন বেশ দেখিয়া সভাস্থ সকলেই তাহাকে বাতুল বলিয়া মনে করিলেন। রাজাও সেই ধারণার বশবর্তী হইয়া চাণক্যকে সভা হইতে বহিস্কৃত করিবার আদেশ দিলেন। ইহাতে ক্রুদ্ধ চাণক্য যজ্ঞোপবীত ছিন্ন করিয়া সর্বসমক্ষে প্রতিজ্ঞা করিলেন, “যদি আমি যথার্থ ব্রাহ্মণ-সন্তান হই, তাহা হইলে এই অবমাননার প্রতিশোধ গ্রহণ করিব – আমি নন্দ বংশ ধ্বংস করিব।” 

অতঃপর কি উপায়ে প্রতিজ্ঞা কার্যে পরিণত করা যায়, চাণক্য তদ্বিষয়ে যত্নবান হইলেন। তিনি অবস্থাহীন ক্ষত্রিয় রাজবংশসম্ভূত বালককে প্রতিপালন করিয়া স্বীয় কূটনীতিতে দীক্ষিত করিতে লাগিলেন। কিন্তু এই বালক সেরূপ প্রতিভাবান নহে দেখিয়া মনোমত অপর বালকের অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন। তাঁহার সুযোগ উপস্থিত হইল। চন্দ্রগুপ্তের সাথে তাহার দেখা হইল ; তাঁহাকে নিজের কূট রাজনীতিতে দীক্ষিত করিয়া উপযুক্ত করিলেন। অতঃপর চন্দ্রগুপ্তের সাহায্যে চাণক্য নন্দবংশ ধ্বংস করিয়া চন্দ্রগুপ্তকে সিংহাসন দান করেন। 

চাণক্য যে মহাপণ্ডিত ও প্রতিভাশালী ছিলেন, তাহার সংকলিত “চাণক্যশ্লোক” নামক শ্লোকগুলিতেই বুঝিতে পারা যায়। 

চাণক্যের প্রণীত গ্রন্থাদি পাঠে জানা যায় যে, যুগধর্মানুসারে ইনি সম্পূর্ণ নাস্তিক ছিলেন। ইঁহার কোন রচনাতেই ঈশ্বরবাদের উল্লেখ নাই।


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন