সম্পাদকীয় - নভেম্বর ২০১৫


‘চিলেকোঠা’ আয়োজিত রাখীবন্ধন অনুষ্ঠান তো দারুণ জমবে, এ আর নতুন কি কথা! গত ২৯ অগস্ট হয়ে গেছিল সেই অনুষ্ঠান, সল্টলেকে এসওএস ভিলেজে। সঙ্গে বিতর্কসভা, বিষয় ‘সাইবার অপরাধ’। এমন বিষয়ে আলোচনা সময়োপযোগী এবং নিশ্চিত ঋদ্ধ করে উপস্থিত সকলকে। 

ওয়েবে উড়ে উড়ে ডানায় ক্লান্তি আসে বইকী কখনো! ‘চিলেকোঠা ওয়েবজিন’ তাই স্থির করেছিল বাঙালির আদরের শারদোৎসব-লগ্নে সে মুদ্রিতরূপে সংস্থিত বা সংস্থিতা হবে। আমাদের সদস্যা শ্রীমতী তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলয়ে মহালয়ার মনোরম সন্ধ্যায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রীমতী যশোধরা রায়চৌধুরি এবং কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ হাসমত জালাল পত্রিকার মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন রুচিশীল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে। 

কেমন হয়েছে সেই পত্রিকা? মতামত পেয়েছি কিছু, আসুক আরও। 

আশপাশে কত কিছু যে ঘটে যাচ্ছে। “চিলেকোঠা ওয়েবজিন” রাজনীতির দর্শনে বিশ্বাস রাখে, রাজনীতির দৈনন্দিনতায় বা দলাদলিতে তার তত আগ্রহ নেই। কিন্তু স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র – এগুলি আমাদের দেশের মৌলিক চরিত্র। আর কথাতেই আছে, পয়সা হারালে হারায় না কিছুই, স্বাস্থ্য হারালে হারায় অল্প, আর চরিত্র হারালে থাকে না কিছুই। 

আসুন সকলে ব্রতী হই, আমাদের দেশের চরিত্র অটুট থাকুক। তার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে চিলেকোঠা ওয়েবজিন। সকল অন্ধকার দূর করে দিক আসন্ন দীপাবলির আলোকমালা।

কবিতা - সৈয়দ হাসমত জালাল



আনন্দপথ
সৈয়দ হাসমত জালাল

সে এক মেলায় বাঁশির সুরে গানের ছন্দে
...............................বাজছিল একতারা
ভিড়ের মধ্যে একলা সেই মেয়ে, চুলের ওপর
................................মিহি ধূলোর রেখা
দু-এক ফোঁটা শিশিরও ঝরছিল, বৈরাগিনী
আসলে সে দিগন্তের মতোন সুদূর
.................................এবং উদাস
তার হাতে এক প্রাচীন পুঁথি দিয়েছিলাম-নামটি লিখে
ঝরনাজলের মতো কয়েক পঙ্‌ক্তিমালা
কী ছিল তা, স্তব্ধগহন প্রেম অথবা বিষণ্ণতা
বিরহ না অনির্দেশ্য একলা চলার আনন্দপথ
...............................পাথর-নুড়ি সংকুলতা
চাঁদ উঠেছে মাঠের পারে...

তারপর দিন চলে যায়, রাত চলে যায়
চলে গেল অযুত বছর, কোথায় সে বৈরাগিনী
আমি তখন গ্রাম-নগরের দ্বন্দ্ব ছিঁড়ে
...................................আকাশতলে
করেছি জড়ো ষড়ঋতুর শুকনো পাতা
বটপাকুড়ের ফলে-বীজে লিখছি জীবন
পাখির জীবন, পালকস্পর্শ, কাঁটাতারের বেড়ার উপর
যে পাখিটি গান গেয়েছে, যে মাধুরী মানতে চায় না
.............................................ছন্দবাঁধন
গভীর রাতে বৃষ্টি নামে মাঠের পারে...

ভিজতে ভিজতে নিযুত বছর পার হয়ে যায়
..........................................বরফ-মরু
মৃত শঙ্খ বুকের মধ্যে ধরে রাখে সমুদ্রনাদ
এই পৃথিবী বয়স্ক হয়, ঘুরতে ঘুরতে সবুজ গ্রহের
............................................অক্ষপথে
হটাৎ দেখা, বৈরাগিনী ডাকলো আমায়
ভোলেনি সে সরল জলের পঙ্‌ক্তিমালা
লিখতে লিখতে কখন অন্ধ হয়ে গেছে
................................আমার  দুচোখ
দেখি না তার চুলের ফাঁকে রুপোর রেখা
অস্ত-আলোর চূর্ণ রেণু পড়ছে ঝরে
আমি তো তার মুখ দেখি না, স্বরস্পর্শে খুঁজি তাকে
সে আমার স্তব্ধজটিল ভাষার ভেতর
................................খুঁজতে থাকে আনন্দপথ
তারও বিষাদ জমে ছিল হাজার বছর
দিনান্তে আজ চাঁদ ওঠেনি

শরৎমেঘের ফাঁকে ফাঁকে ফুটছে তারা মাঠের পারে...

কবিতা - কাশীনাথ গুঁই



বৃষ্টি
কাশীনাথ গুঁই

বৃষ্টি

তুই কি আজ আসবি -
সন্ধ্যেটা খালি রাখি রোজ
কথা দিয়ে কেন এত ভুলিস রে

একদিন মাত্র
কথা রাখতে পারিনি
অমনি পর হলি!

নটা বছর ধরে
তোর সব কথাই রেখে
এই প্রতিদান দিতে পারলি!

তুই নাকি একদিন
খুব ভালবেসেছিলি!
রোজ কানে কানে বলতিস কিনা

ভালবাসার মানে বুঝিস -
এত অপমানে ফেরালি
তবু তোকেই যে ভালবাসি!

লোকে বলে
আমি নাকি নির্বোধ
তাই আজও তোকেই ভালবাসি

জানিরে জানি,
কোনদিন এই চিরকুট
তুই পাবি না,পেলেও বুঝবি না

তবু বলি
রোজ সাঁঝে
তুই একটু একটু করে