মুক্তগদ্য - জয় ভট্টাচার্য



বৃক্ষরোপণ
জয় ভট্টাচার্য


আমার ঘুমের অস্তিত্ব বিপন্ন হবার কারণটা বড়োই অদ্ভুত ! আমাদের গ্রামের
ঝিলে এখন দেখি নতুন পাখীর আনাগোনা
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বারোমাস...

কাশিটা এখন বেপরোয়া; যদিও শুরুতে ছিল ভদ্রস্থ

বাসব দা বিয়ে করেছিল খুব ধুমধাম করেই তল্লাটের সবাই নেমন্তন্ন খেয়েছিল
কবজি ডুবিয়ে আর খেতে খেতে সবাই গুণকেত্তন করেছিল বাসব দা' আমাদের বাসবদা,
রঞ্জনা বৌদির সারা গা বাঁধিয়ে দিয়েছিল সোনায় মুড়ে এমন সুন্দরী বৌদি
আমাদের গ্রামে ওই একজনই রীতিমত সুন্দরী ! আমাদের খুব ইচ্ছে করতো- আলাপ
করি, কিন্তু সাহসে কুলোতো না যদি বাড়ির বড়োরা কিছু বলে... ওদিকে, দাদা
জাহাজে পাড়ি দিলেই তিন মাসের আগে ফিরবে না
কেউ বুঝতে চায় না, বসন্তকাল কি আটকে রাখা যায় ?
বৌদি দুঃখ করে বলে- তার কথা ভাবার মত কেউ নেই !
স্কুল জীবনে স্যার প্রশ্ন করলে যেমন হাত তুলে জানান দিতাম 'আমি পারবো স্যার'
ঠিক তেমনি বৌদিকে বলতে ইচ্ছে করে 'আর কেউ না ভাবুক, তোমার কথা আমি ভাবি বৌদি'

কিন্তু, ভেবেই বা কি করবো আমি ?
প্রথম প্রথম সন্ধের দিকে ঘরটা থেকে একটা হাসির আওয়াজ আসতো, পুরুষ কন্ঠে...
কিছুদিন পরেই সেটা হয়ে গেল বেপরোয়া ধমক
সেদিন বুঝেছিলাম- দাদা সাগর পাড়ি দিলেই, কেউ একজন বৌদির কথা ভাবার
দায়িত্ব নেয়া শুরু করেছে

শুনেছিলাম, লোকটা নাকি কোর্টে কাজ করে মুহুরী গোছের
সব কাজ করে আইন-এর প্যাঁচ কষে
বৌদিকে নিয়েও প্যাঁচ কষছে সকাল দুপুর ছুটির দিনে
বৌদির দশা কল্পনা করে আমার খুব কষ্ট হয়, কান্না পায়

ইদানিং আবার কাশি শুরু হয়েছে প্রথমে খুস-খুসে তার পর বেমক্কা কাশি
কাশতে কাশতে, খিস্তি দিতে দিতে বৌদিকে নিংড়ে চলে লোকটা রাতের অন্ধকারে
রঞ্জনা বৌদির আর্তনাদ মাথা চারা দিয়ে ওঠে নিঃশব্দে !

খুব রাগ হতো শুধু দাদার ওপরেই ! গাছে জল দিতে পারো না যখন, তখন লোক
দেখানো বৃক্ষরোপণ না করলেই কি চলছিল না !!


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন