সম্পাদকীয় - জানুয়ারী ২০১৫





চিলেকোঠা ওয়েবজিনের পক্ষ থেকে সবাইকে নতুন ইংরাজি বছরের প্রচুর শুভেচ্ছা ও প্রীতি। ভালো থাকুন সকলে।

পেশোয়ারের ইশকুলে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হত্যালীলা আমাদের আমূল নাড়িয়ে দেয়। সব পথের শেষে কি এবার শৈশব-কৈশোর নিধন! এ কেমন মতবাদ? এ কেমন দর্শন? এ কেমন আদর্শ? অসীম ঘৃণা ও ধিক্কার...

আসুন, এক মিনিট নীরবতা পালন করে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানাই এই বর্বরতার।






কবিতা - ইন্দিরা দাশ


তুলসী গাছ লাগাইবি ইন্দিরা দাশ

মন, তুই জংলা বাগানে তুলসীর গাছ লাগাইবি
মন, ঘর বাহিরে কোলাহলে নাম বিলাইবি

খড়-কাঠে ঘর একখান হয়
তাতে পরান নামে কী যেন রয়
সেটা পিদিম হয়ে জ্বলতে থাকে
তয়, সেবার তেল জুগাইবি
তুলসীর গাছ লাগাইবি

কোনখানে ঘরের মধ্যে ঘর বেঁধেছে
কে এক বুদ্ধি উপায় করে রেখেছে
যেমন আলোর থিকে আলো জ্বলে
সে আলো ফুরায় না দিব্যি
তুলসীর গাছ লাগাইবি

শোন, পুরাতন রাত্রি জ্বলে পিদিমখানা
ক্ষীণ হলে আর নেইকো মানা
কাঠ-খড় ঘর ধুলাই হবে
সে ধুলায় ফুল উগাইবি,
জংলা বাগানে তুলসীর গাছ লাগাইবি
ঘর বাহিরের কোলাহলে পিরীত বিলাইবি

কবিতা - দেবযানী বিশ্বাস



রাজার হস্ত
দেবযানী বিশ্বাস



গলায় দড়ি দিল একজন
জ্বালাটা খিদের;
জ্বালাটা জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়ার
এক নিদারুণ অসহায়তা
মাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলের মুখে
দুমুঠো ভাত তুলে দিতে না পারার


খালি পাকস্থলীতে কি বিদ্যাভ্যাস হয়?
মনের খিদে মেটাতে
নেই কি প্রয়োজন পেটের খিদে মেটানোর?
প্রশ্নগুলো ধাক্কা খেয়ে ফেরে
পাষাণ বুকে, নির্লজ্জ চেতনায়;
দায়টা কার, বুভুক্ষু পেটে অন্ন যোগানোর?


অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাসে রক্তনালিকায় জমে মেদ,
নড়তে চড়তে হাঁপ; তবু টুনি লাগানো দোকানের পাড়ে
দোকানের পাশে মাংস ঘি এর গন্ধ  মন কাড়ে,
হাতে হাতে ফেরে ফয়েলে মোড়া গরম প্যাকেট,
আর রঙিন কাচের গ্লাসে
টুংটাং শব্দগুলি নড়ে




আর ঠিক তখনি আঁধার শীতের রাতে
মাটির ঘরে কুঁকড়ে থাকে
ধুঁকতে থাকা জীবন্ত সব লাশ;
জল শুকনো ঘোলাটে চোখে শুধু
গরম ভাতের স্বপ্ন-
প্রাণ ধরতে বিসর্জনে বাকি সকল আশ

খেলায়, মেলায়, গাড়ির চাকায়
উড়তে থাকে টাকা;
মঞ্চ বেঁধে গরম গরম বিষাক্ত সব বুলি
বেহিসেবি কোটি কোটি ওড়ে টাকা  
ডাইনে বাঁয়ে সামনে পিছে,
ভরছে কেবল হাঙরের হাঁ মুখগুলি


যন্ত্র খোঁজে দুর্বল হাতগুলো;
ফুরোয় না যে শীত
ছাদফুটো ওই মানুষগুলোর ঘরে,
অট্টালিকায় জমাট পার্টি তখন
আধমরাদের বুকের উপর উঠে
থলথলে পেট উদোম নৃত্য করে

কবিতা - সৈয়দ হাসমত জালাল



বরফযুগ
সৈয়দ হাসমত জালাল




কত দিন? এক হাজার বছর হল?
এরপর যদি দেখা হয়
চিনতে পারব কি হেমন্তসন্ধ্যার ছায়ামাখা
                       ও মুখখানি?
চিনতে পারবে কি ঘন কুয়াশায় ফুটে থাকা
                      একটি মানুষের অবয়ব?
তখন হয়ত দূরে একলা পাখিটির শান্ত ও
                 সর্বস্ব হারানো ঘুম-ঘুম ডাক
যাকে আমরা গান বলে ভুল করতে পারি......
তখন হয়ত হিম পড়ছে আমাদের চারপাশে
মনে কর হিম... মনে কর ভিজে ভিজে শিরশিরে হাওয়া......
এরপর আমরা কি বরফযুগের দিকে ফিরে যাব?
একটি নদীস্রোত আমাদের বুকে জমে থাকবে স্থির?
একটি পাখির ডাক শীর্ণ পাতাটি হয়ে ঝুলে থাকবে
               শাদা হাড়ের মতন ডালে?