চিলেকোঠা ওয়েবজিন - সেপ্টেম্বর ২০১৪


















চিলেকোঠা ওয়েবজিন। আবার শুরু হল। মাঝে সামান্য বিশ্রামের প্রয়োজন হয়েছিল, এবার সে প্রয়োজন ফুরিয়েছে। নব উদ্যমে শুরু হল চিলেকোঠা ওয়েবজিন-এর পথ চলা। আগের বিভাগগুলিই থাকছে, একটু স্লিম-ট্রিম হয়ে... স্বাস্থ্য-সচেতন হওয়া যে কতটা জরুরি তা তো আমরা সবাই জানি আজকের দিনে, তাই না? চিলেকোঠার সদস্যদের লেখালিখি দিয়েই মূলত আমাদের নৈবেদ্য সাজাচ্ছি।


নৈবেদ্যর কথায় মনে পড়ে গেল, পুজো আসছে। কাশফুল বা সোনারঙা রোদ এখনও সেভাবে না দেখা গেলেও, বাজার ভিড়ে ভিড়। সকলেই জানেন, চিলেকোঠার নানান বিচিত্র রূপ এবং উপস্থিতি। চিলেকোঠা বর্ষায় ইলিশের সাথেও যেমন থেকেছিল ডোমজুড়ে, আবার ঢাকে কাঠি পড়ার আগে, তেমনই মেতে উঠতে চলেছে “মনের বয়স বাড়তে দেব না” বিষয়ক আড্ডায়-গল্পে-গানে, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর। এর পর চিলেকোঠা নিজেদের প্রস্তুত করে তুলবে আসন্ন শারদ উৎসবের জন্য, আন্তর্জালে আসবে শারদ-ওয়েবজিন, বাস্তবের মাটিতে আসবে গানে-নাচে-কবিতায়-আড্ডায় মুখর আরও কত কিছু।

দীর্ঘ গুরুগম্ভীর সম্পাদকীয়র বদলে এমন হালকা শুরুয়াৎ-ই থাকুক, কী বলেন? আপনারা সকলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন, লিখুন, সমালোচনা করুন। সঙ্গে থাকুন, চিলেকোঠায়, চিলেকোঠা ওয়েবজিনে...

কবিতা - শ্রীশুভ্র

একাধিক গল্প ততধিক শোক
শ্রীশুভ্র


নীরোর বেহালায় ইতিহাসের পাতা পুড়লে
নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের দোষ?
পৃথিবীর মাটির ভাঁড়ারে সাম্রাজ্যের জাদুকাঠি আছে,
তবুও মানুষ হাজারো ম্যানিফেস্টো ছেপেছে!
কাঁঠালপাতা প্রসবের পর রঙতুলির এজলাসে
শিং নাড়ে ধর্মের ষাঁড়।
বুদ্ধ কনফুসিয়াসের মর্মবেদনা কোনো দৈববাণীর জন্য নয়, কেঁদেছিল ভালোবাসার তাজমহলে।
মিশরের উটের পিঠে পিরামিড দেখে চমকায় যে শিশু - তার কাছে ভাবী দিনের সুখবর আছে।
ভূমধ্যসাগরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে ক্লিওপেট্রার খোঁপায়
গুঁজে দিতে ব্রহ্মকমল আমাদের প্রস্তুতি চলেছে।
কিংবদন্তীর বয়সিনী দ্রৌপদীর শাড়ির পাড়ে লেগে থাকা
লাঞ্ছনার রঙে এখনো গল্প বিকোবে।
গোলাপী আতর মেখে সস্তার মেয়েদের আঘ্রাণ নিতে
পুরুষার্থের ঘাম, ধর্মগ্রন্থের নামে শপথ নেবে পিতৃতন্ত্রের।
আর তুমি বলবে বিপ্লবের কথা সমাজবদলের স্বপ্নে?

কবিতা - নন্দিনী সেনগুপ্ত

ঠিকানা
নন্দিনী সেনগুপ্ত

আমার ঠিকানা রাখলো লিখে একটি উপলখণ্ড,
আঁচড় কেটে নদীর বুকে,
আখর লিখে, মুহূর্তকে —
বন্দী করে হারায় কোথায়, দাঁড়ায় না এক দণ্ড !

নদী তবু উদাসীনা, গর-ঠিকানা ভালো মন্দ,
বুকের মাঝে স্বর্ণচিহ্ন বয়ে,
নদী, তোমার সময়-অসময়ে-
ভেবেছিলাম সঙ্গে যাবো,- শিখবো চলার ছন্দ ।

ছন্দ জেগে যথা তথা, শেখায় সে কোন জীবন-কুহক;
হাতে নিয়ে যাদুর কাঠি –
অরণ্য বা অগাধ মাটি,
সবার ছন্দ আছে বুঝি নদীর কাছেই বন্ধক !

ছন্দ খুঁজে তারই কাছে, নদীর ভিতর আরেক নদী –
পরজন্মে আমিই হবো –
বারিসম্ভূতা পুনর্ভব !
খুঁজবো না কোন ছন্দ-ঠিকানা, খুঁজবো না কোন বোধি ।

কবিতা - প্রদীপ বসু

আকাশ ভালবাসি
প্রদীপ বসু


দে না আমায় ছেড়ে, আকাশটা দেখে আসি,
হাতের চেটোয় কেন, হারাব আমার হাসি,
দিবি আমায় ছেড়ে-, আমি,আকাশ ভালবাসি।
তোরা নাকি 'মানুষ'? কোথায় তোদের হুঁস?
পরের জীবন লুটে হাসিস জয়ের হাসি--…
দে ছেড়ে আমায় আমি আকাশ ভালবাসি।
বদ্ধ জীবন খানা হাঁপায় যে একটানা….
স্বাধীনতার আলো হারাই দিবানিশি –
শুধু দে না আমায় ছেড়ে সুদূর ,
আকাশ যে ভালবাসি।...

কবিতা - রানি সিনহা

ইচ্ছে
রানি সিনহা


তোমাকে খুব ছুঁতে ইচ্ছে করে
তুমি পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার জল।
তুমি সকালের রাঙা সূর্যের আকাশ, তুমি রাতের স্নিগ্ধ আলো।
তুমি ভালো লাগা সন্ধ্যার মেঘ।
তুমি আমার নিভৃত সাধনা,
তোমাকে পেতে চাই আমার মনের নিবিড় আঙিনাতে।
জীবনের কিছু কিছু না বলা কথা, জীবনের কিছু কিছু অদ্ভুত অনুভুতি
রাগ অনুরাগ মনের গোপনে লুকিয়ে থাকা কিছু না বলা কথা
ইচ্ছে হয় মন চায় এমন একজনকেই ...
সে তো শুধু 'তুমি'।

কবিতা - অনুপম দাশশর্মা

একটিবার
অনুপম দাশশর্মা


একটা নীরব সকাল, আধফোটা পাপড়ি
একটা নিঝুম দুপুর ছবিতে পালকি
একটা অবস অপরাহ্ন চিলেকোঠায় ফাঁসা ঘুড়ি
একটা মাতাল সন্ধ্যে দেবে আমায়!
একটু আদুড় আধা পিঠ চিবুক নামায়
একটু ঝনন ঝন কাঁচ ঝিনুক পাতায়
একটু তিতির কঙ্গন গোলাপ কাঁটায়
একবার সংজ্ঞা কাড়ো আমার।
শুধু একবার স্রষ্টা বলো আমায়।

কবিতা - শমীক দাশগুপ্ত

আমিও আছি
শমীক দাশগুপ্ত


এ প্রাণ যদি না হয় শেষ,
এ জীবন যে লাগে বেশ।
এ প্রদীপ যদি নতুন শিখায় জ্বলে,
এ পথ যদি পথিকের আয়ু বলে,
এ আলো যদি আল-আধারে চলে,
মৃত্যু হাসে, জীবন আসে, অসম সমান্তরালে।
তুমি এসো, আমিও আসি, একই আত্মার মধ্যে মিশি,
তুমি রুপে চরম সত্য, আমি নাহয় ভগ্ন বাঁশি।
রাত যে একটু বাকি ছিল, যাওয়াও বাকি ঘুম এর কাছে,
কত গুল্পগুচ্ছ মাঝে আমার একটি গল্প আছে।

কবিতা - সৌভিক দে (শুভ)

তোমাকে চাই
সৌভিক দে (শুভ)


ভোরের আপছা আলোয়
একাকি একলা মনে,
হারানো পথের খোঁজে
দাড়িয়ে গঙ্গা তিরে,
তোমাকে চাই।।
ট্রামে-বাসে চেপে
হাতিবাগান – ধর্মতলা ঘুরে,
আমার শহর ভিরে
মিশে যাওয়ার পথে,
তোমাকে চাই।।
অফিস কামাই করে
ময়দানে একলা বসে,
বাদাম খেতে খেতে
আনমনা এই মনে,
তোমাকে চাই।।
বাড়ি ফেরার সময়
পাখিদের কলরবে,
ল্যাম্প পোস্টের নিচে
বাসের প্রতিক্ষায়,
তোমাকে চাই।।
রাতের আঁধার ঘুচায়
মোমের আলোয়,
খাবার টেবিলে
ভালবাসার গানে,
তোমাকে চাই।।

কবিতা - রাজ মল্লিক

তোমার অপেক্ষায়
রাজ মল্লিক


তোমার জন্যই অপেক্ষা শুধু আমার
তোমাকে খুজেছি সারা সারা দিন ,
সারা সারা রাত
তোমাকে খুজেছি সারা সারা মাস ,
সারা সারা বছর।
তোমাকে খুজেছি শহরের অলি গলি পথ
শিশির ভেজা মেঠো আল।
কখনো খুজেছি ক্লান্ত ভিড়ের মাঝে
হন্যে হয়ে তপ্ত দুপুরে বা নিঝুম সাঁঝে।
হয়তো নির্জনে কোথাও হারিয়ে গেছ তুমি
কোনো এক অজানা শহরের ভিড়ে
অস্থির এই মন পড়ে আছে শুধু তোমাতে
পারলে তুমি , এ ভাবে আমায় ফেলে যেতে ?
আমার এই হৃদয় শুধুই তোমার অপেক্ষায়
একটি বার যদি পেতাম তোমার দেখা।
কঠিন ওই বাঁধন ছিড়ে পারো নাকি আসতে
পথ চেয়ে বসে ছিলাম , আছি , থাকবো তোমার অপেক্ষাতে।

কবিতা - অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়

ছায়াপথিক
অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়


ছায়া পথিকেরা আজ মৃত ,
কখন আমায় ডাকবে সময়ের পেরনো দিগন্তে।
স্বপ্নরা কি কখনো প্রতারক হয় ?
আমার চিতা শয্যার অগ্নিভ স্রোতে ,
হারিয়ে যাচ্ছে কবিতারা ।

এখন পৃথিবীর প্রান্ত ছুঁয়ে ,
নেমে আসছে অন্ধকার ।
ভূমির শেষতম বিন্দুটি আঁকড়ে -
ধরতে চেয়েও হারিয়ে যাচ্ছি ,
মহাকাশের নীলাভ স্তব্ধতায় ।
আমার বিদায়ী বন্ধুরা,
মহাকালের ওপারে
হাসতে হাসতে চলে গেলো ।
কোন এক বিপন্ন সময়ের
আশ্রয়ে বাঁচার আকাঙ্খায় ।


কবিতা - কিংশুক চক্রবর্তী

তুমি দেখো শুধু চেয়ে চেয়ে
কিংশুক চক্রবর্তী



আমি একটু একটু করে যাব ক্ষয়ে ক্ষয়ে
ধীরে ধীরে রয়ে সয়ে ... যাব ক্ষয়ে ক্ষয়ে
যেমন করে পাথর জলের তোড়ে যায় ক্ষয়ে
জলের ধারা (যায়) বয়ে বয়ে
তুমি দেখো শুধু চেয়ে চেয়ে
আমি ধীরে ধীরে হব অন্তরলীন ক্রমে ক্রমে
ক্ষেপে ক্ষেপে একদিন হব অন্তরলীন
বৃস্মিতির অতলে যাব তলিয়ে
শুন্যের সাথে মিলিয়ে তুমি শুধু দেখ চেয়ে চেয়ে
আমি একদিন যাব হারিয়ে সব বাঁধন ছারিয়ে
যাবই দেখো তুমি চেয়ে চেয়ে দূর থেকে দাড়িয়ে
সব বাঁধন মাড়িয়ে আমি যাবই, আমি আছি পা বাড়িয়ে।


কবিতা - তন্ময় গুপ্ত

পানকৌড়ি
তন্ময় গুপ্ত

অনেক দিন তো দিস না দেখা,
আছিস কেমন ?
আড়াল থেকে চুপটি হাসিস,
স্বভাব যেমন !
পানকৌড়ি ডুব দিয়েছিস,
ভাসবি কবে ?
একমুঠো ফুল ঠাণ্ডা হাওয়া,
আসবি কবে ?
ছেঁড়া পাতায় চিঠি লেখা
উঠেই গেছে ।
কবিতা তোর ভাল্লাগেনা ?
গেছিস বেঁচে ।

কবিতা - জয় ভট্টাচার্য

মুখচোরা
জয় ভট্টাচার্য

কাল সারা রাত ধরে জমিয়ে স্তূপীকৃত করে রেখেছি তোমার দুষ্টুমিগুলো।
জিনিসপত্র এলোমেলো করে রাখা আমার ধাতে নেই। ছাদের অন্ধকার থেকে মুঠো ভরে
নামিয়ে আনি তোমার গোপন তরঙ্গ। তুমিও তো খবর রাখো না- জাপটে ধরে থাকা
কোলবালিশের মত মুখ গুঁজে থাকি কোথায় কোথায়... বয়সটা 'ফ্যাক্টর' নয় !
যতদিন পেরেছি চালিয়ে গেছি ঝিনুকে মুক্তোর চাষ। তোমার হাসি দেখে সকলে
মন্ত্রমুগ্ধ হয় ; কিন্তু ক'জন তার কারণ জানে, বলো ? তবু এলোমেলো হয়ে যায়
সব কিছু। তোমার রক্ষণশীল প্রেম আর আমার পুরুষ-মানুষি দীর্ঘ গৌর-চন্দ্রিকা
উল্টো দিকে মুখ করে বসে থাকে।


কবিতা - বিদিশা সরকার

একাঙ্ক নাটক
বিদিশা সরকার


ধুয়ে গেল ইষ্টনাম প্রথম বৃষ্টিতে
সুনন্দা দাঁড়িয়ে ভিজল,প্রতিবেশী গ্রাম
ধানের যৌবনে লাগল আমন পৌরুষ
কাগজি লেবুর গন্ধে মিলেমিশে ঘাম

কেউ সুখে আড়াআড়ি সম্পর্কে সেলাই,
আরশি বাঁচিয়ে কারো মোহিনীআট্ট‌ম
নীলাঞ্জন চশমা খুলে সুদূরপিয়াসী
বজ্রগর্ভে কান পাতে কালের সোহম

সোহম,না নীলাঞ্জন কার দায় এতে
শঙ্খিনী শ্রাবনসন্ধ্যা পদ্মিনী চাতক
পর্দা ভেজে অহরহ পর্দা ছিঁড়ে গেলে
আমাদের গুমঘরে লুকায় ঘাতক

ঘাতক পরমপূজ্য ছায়া স্বরলিপি
নটীর নূপুরে বৃষ্টি আর ছায়ানট
সারেঙ্গী হারিয়ে যাচ্ছে ডাকো ওকে ডাকো
জীবন আলেখ্য, নাকি একাঙ্ক নাটক !!

ছোটগল্প - হিরণময় মজুমদার

ব্যাধি
হিরণময়  মজুমদার


দুলি সাঁওতাল মেয়ে আঠাশ তিরিশ বয়েস । নিঠোল কর্মঠ যৌবন । তেল পিছলানো কালো গায়ের রঙ । দুলি যখন অ্যাঁটো করে খোপা বেঁধে তাতে পলাশ গুঁজে হাটেবাজারে যায় । গায়ের পুরুষগুলো হাঁ করে তাকিয়ে থাকে । দুলির কোমর যেন জল ভর্তি কলসি । ছলাৎ ছলাৎ করে । অল্প বয়েসে শিবুর সাথে বিয়ে হয় দুলির । রঙ করে বিয়ে । গাঁয়ের সেরা পুরুষ ছিল শিবু । পাথরে খোদাই করা মূর্তি ।সাহসী এক পুরুষ । দিনের শেষে মহুয়া খেয়ে যখন দুলির কোমর জড়িয়ে ধরতো তখন মাতাল হতো দুলি । ভালবাসত মরদটা ওকে । তিন কূলে কেউ ছিল না শিবুর । একদিন দুলি ঘরণী হয়ে এলো শিবুর অগোছালো ভাঙ্গা ঘরে , দুলির হাতের স্পর্শে সেই ভাঙা ঘর হয়ে উঠল পরিপূর্ণ সংসার । নিকানো উঠান , মাটির দেওয়ালে নক্সা , সামনের একফালি জমিতে সবজি আর ফুলের গাছ ।

বীরভূমের এক সাঁওতাল গ্রামে বাস তাদের ।দুলির কোলে এলো চন্দ্রা । অনেক সখ করে নাম রাখল শিবু । সব যেন সাজান স্বপ্ন । বছর পাঁচেক ঘুরতে না ঘুরতে শিবু মারা গেল দিন সাতেকের জ্বরে । অনেক সেবা করেছিল দুলি । কিন্তু ভবিতব্য , বিধবা হল সে ,স্বপ্ন ভাঙল । তারপর থেকে চন্দ্রাকে নিয়ে সংসার । গাঁয়ের মরদগুলো রঙ করতে চায় তার সাথে । ভাগিয়ে দেয় ওদের বেশ কঠোর ভাবেই । মাতব্বর রা বলে আবার সাঙ্গা কর । দুলি এরিয়ে যায় । সে গ্রামের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য । আঁচার পাঁপড় বানায় বেতের ঝুড়ি বোনে ।তার বানানো আঁচার পাঁপড় যে খায় সেই বলে বেশ । তার হাতে তৈরী বেতের ঝুড়ি সবার আগে বিকোয় । তার একমাত্র স্বপ্ন চন্দ্রা, স্কুলে যাবে , বড় হবে । চন্দ্রার বয়স আট বছর ।



পরেশ সোরেন , বছর চল্লিশেক বয়েস । কাঁচাপাকা চুল । পরিণত অবিবাহিত মুখ । মুখে স্মিত হাসি সবসময় । গায়ের রং টা প্রায় ফরসার দিকে । শোনা যায় পরেশের মায়ের সাথে পরেশের জন্মের আগে এক শহুরে বাবুর প্রেম পিরীত হয়েছিল । পরেশের ব্যবহার শিক্ষা বুদ্ধি এসবের জন্য গ্রামের অনেকেই তাকে মানেগোনে । অনেকেই তার কাছে শলাপরামর্শ নেয় । পরেশ গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠী চালায় । সেই সূত্রে কলকাতায় যায় । অনেক উপরতলার মানুষের সাথে তার সখ্যতা ।



দুলি মাঝে মাঝেই গোষ্ঠীতে আসে । পরেশ পছন্দ করে দুলিকে একটু বেশী । দুলির মুখের হাসির সাথে সুক্ষ বিষাদ তার ব্যক্তিত্বকে বাড়িয়েছে ।দুলি আর পাঁচটা সাধারণ সাঁওতাল মেয়ে হয়েও যেন সাধারণ নয় । দুলির কাছে পরেশ যেন ভগবান । তার কথা বেদবাক্য । শিবু মরার পর সেই দুলিকে নতুন জীবনের আলো দেখিয়েছে । পরেশের স্মিত হাসি আর উজ্জ্বল চোখে দুলি খুঁজে পায় পরম নির্ভরতা । ঐ চোখ অন্য পুরুষদের মত তার শরীরের আনাচে কানাচে ঘোরে না । পরম মমতা নিয়ে পরেশ দুলির চোখে চোখ রাখে । মিতে পাতায় তারা । কুলোকে কুকথা বলে । এসব দুলিকে ছোঁয় না ।



অমিত মুখার্জী বয়স ৪০ - ৪২ নামকরা চিত্র পরিচালক । সিনেমাপ্রেমীরা তার একনিষ্ঠ ভক্ত । একের পর এক ভিন্নধর্মী ভিন্নস্বাদের ছবি উপহার দিয়ে বাংলা সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে । বড় রুক্ষ স্বভাবের ইনি । কাট কাট কথাবার্তা । পরোয়া করেনা কোন কিছু । থাকেন বালিগঞ্জ প্লেসে । সুবিশাল ফ্ল্যাট , একলা মানুষ , বড় অগোছালো । যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েসন শেষ করে ফিল্ম নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে পুনে ফিল্ম ইন্সিটিউটে । পুনেতে দেখা হয় মৈত্রেয়ীর সাথে ।প্রথম দর্শনেই প্রেম । তারপর তুমুল প্রেম । কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে । বিয়ের ছমাসের মধ্যে মৈত্রেয়ী ছেড়ে চলে যায় অমিতকে । যাওয়ার সময় বলে যায় তুমি কোনদিন কাউকে ভালবাসবে না । তারপর থেকে অমিতের জীবন শুধুই সিনেমা আর সিনেমা । জীবনে বহু নারী সংসর্গ করেছে কিন্তু বোধহয় কাউকেই ভালবাসেনি । মৈত্রেয়ী কথাটা এখনো কানে লেগে আছে । আপাত দৃষ্টিতে ভীষণ রুক্ষ এই মানুষটি । কিন্তু ভেতরে একটা নরম মন আছে । বিভিন্ন সেবাপ্রতিষ্টান এবং স্কুলগুলোতেই প্রতি বছর একটা মোটা অঙ্কের টাকা দান করেন । কিছু গরিব শিশুর ভরনপোষণের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন ।সেই সুত্রেই পরেশের সাথে আলাপ । তবে এই বিষয়ে প্রচার বিমুখ মানুষ অমিত মুখার্জী । অমিত আর পরেশের মধ্যে এর গভীর হৃদ্যতা আছে ।



অমিত মুখার্জী অসুস্থ । পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা গেল উনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত । ওষুধ পথ্য এবং সেবার প্রয়োজন । উনি উচ্চবিত্ত, পয়সার অভাব নেই । কিন্তু একজন নিজের মানুষ যে নিজের মত করে একটু সেবা করবে তার বড় অভাব । নার্স দিয়ে অসাব কাজ হয় না । খবর পেয়ে পরেশ এলো দেখা করতে । গুণী মানুষটাকে এই অবস্থায় দেখে বড় কষ্ট পেল পরেশ । ফিরে এসে পরেশ দুলিকে বলে অমিত মুখার্জীর শুশ্রষার দায়িত্ব নিতে । পরেশ সোরেন এর একটি অবৈতনিক স্কুল আছে , সেখানে গ্রামের বাচ্চারা পড়ে ।স্কুলটি চলে সরকারি এবং কিছু মানুষের অনুদানে । পরেশ দুলিকে বলে চন্দ্রার এযাবৎ পড়াশোনার খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন অমিত মুখার্জী । দুলি রাজী হয় । কয়েকদিনের মধ্যে দুলি তার ছোট্ট পুটুলি নিয়ে পরেশের সাথে রওনা দেয় । পরেশ অমিত মুখার্জীর বাড়িতে দুলিকে রেখে চলে আসে ।



দুলির হাতের স্পর্শে একটু একটু করে ভাল হয়ে উঠতে থাকে । দুলির হাতের ছোঁয়ায় অগোছালো বাড়িটা ঘর হয়ে যায় । প্রতিটা মুহূর্তে দুলি আগলে থাকে অমিত মুখার্জীকে । তার সন্তানের এই পালকপিতাকে , অনেকদিন পর দুলির খুব মনে পড়ছে শিবুকে । শিবুর মৃত্যুর পরে সে আর কোন পুরুষের কাছাকাছি আসেনি । দুলি ভালবাসল এই আপাত রুক্ষ মানুষটাকে । আর অমিত মুখার্জী খুব অভ্যস্ত ভাবে দুলির সেবাটুকু নেয় যেন সেতা তার পাওনা । কয়েকমাসের মধ্যে অমিত ভাল হয়ে উঠে । সম্পূর্ণ সুস্থ । এবার নিজে থেকে বিদায় দেয় দুলিকে অমিত । ধন্যবাদ দিয়ে বেশকিছু টাকা দিতে চায় দুলিকে । বড় অভিমান হয় অমিতের উপর , নিজের উপর । মরে যাওয়া স্বামীর উপর , সারা পৃথিবীর উপর । ম্লান হেসে টাকা ফিরিয়ে দেয় এবং ফিরে আসে গ্রামে ।



দুলি ফিরে আসে নিজের পুরোন জীবনযাত্রায় ফেরে । চন্দ্রা এতদিন পরেশের কাছে ছিল । চন্দ্রা আর দুলির সংসার চলে আগের মতই । কিন্তু দুলির মনে বড় বিষাদ । কিছুদিন পর দুলির জ্বর হয় । কোনকিছুতেই জ্বর সারে না । স্বাস্থকেন্দ্রে গিয়ে রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় দুলি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে । অমিত মুখার্জী ভাল হয়ে উঠেছে কিন্তু এই ছোঁয়াচে রোগের শিকার হল দুলি । ভালবাসার বিষ এসে বাধা বেঁধেছে দুলির গরিব ঘরে । ওতো দামী পথ্য পাবে কোথায় । তবুও সেই ভাবেই চললো চিকিৎসা । পরেশ চায় অমিত মুখার্জীকে খবর দিতে । দুলি না করে দেয় । পরেশ পাশে থাকে দুলির ।



ওদিকে অমিত মুখার্জী পুনরায় ফিরে গেছে role sound camera action র জগতে । চূড়ান্ত ব্যস্ততা । কিন্তু বাড়ি ফিরে নিজের মনের ভুলেই দুলিকে ডেকে ফেলে । পরে বুঝতে পারে নিজের মনের ভুল । চুপচাপ বসে থাকে study room র easy চেয়ারটায় । অনেক ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে অমিত । ঠিক মনে নেই । তারপর মৈত্রেয়ী র চলে যাওয়া । এরপর তার জীবনে যত নারী এসেছে কেউই শরীরের বাইরে আসতে পারিনি । কিন্তু দুলির গভীর কালো নীরব চোখ অক্লান্ত সেবা সবকিছুই তার মাকে মনে করাতে থাকে । নারীর এই মাতৃমূর্তির স্বাদ সে কক্ষনও পায়নি । অমিতের কাছে দুলি নেই এখন । দুলির অনুপস্থিতি তাকে কুরে কুরে খেতে থাকে । দিন যায় মাস যায় বছর ঘোরে অমিতের চঞ্চলতা বাড়তে থাকে । কিন্তু আশ্চর্য অমিত দুলিকে ভালবেসেছে ।

ভালবাসার বোধের সাথে সাথে অমিত আর এক মুহূর্ত টিকতে পারল না ছুটে চলে গেল বীরভূমের সেই গ্রামে যেখানে দুলি থাকে ।

পাগলের মত ছুটে চলেছে সে । যেভাবেই হোক দুলিকে ফিরিয়ে আনবে , সস্মানে প্রতিষ্ঠা করবে নিজের বাড়িতে । গ্রামে গিয়ে সবার আগে দেখা করল হরেনের সাথে ।দুলির ঠিকানা জানার জন্য । চমকে উঠল , হরেন জানায় দুলি মারা গেছে অমিতের কাছ থেকেই রাজরোগে আক্রান্ত হয়ে । নিবিড় অভিমানে অমিতকে জানাতে চাইনি দুলি । তার মেয়ে চন্দ্রাকে দিয়ে গেছে তার হেফাজতে । পাথরের মত বসে থাকে অমিত । অনেকক্ষণ পর অমিত দেখতে চায় চন্দ্রাকে । হরেন চন্দ্রাকে ডেকে পাঠায় , অমিত দেখে ঠিক যেন ছোট্ট দুলি দাঁড়িয়ে আছে , অমিত চন্দ্রাকে ভিক্ষা চায় হরেনের কাছে । অমিত বলে চন্দ্রাকে নিজের নাম দিয়ে সন্তানস্নেহে বড় করে তুলবেন । দুলির স্বপ্নকে সত্যি করে তুলবে । হরেন স্মিত হেসে বলে নিয়ে যাও ওর উপর একমাত্র তোমার অধিকার ।





ছোটগল্প - নারায়্ণ রায়

হাই ফাই বাবু
নারায়ণ রায়


এমন আন্তর্যাতিক নামের একটা অফিসের ভিতরে এই অবস্থা? ছাদ, দেয়াল অতীব ভাঙ্গাচোরা, সাধারণ ইট বিছানো মেঝে। চেয়ার টেবিল আলমারীর অবস্থা কহতব্য নয়। যে দুটি বহুতল বাড়ি আছে তাদেরও অবস্থা তথৈবচ, ছাজা, জানালার কাঁচ এবং পাল্লা বেশীর ভাগই ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। আবার অন্যদিক দিয়ে চিন্তা করলে, কলকাতা শহরের উপকন্ঠে এমন গাছ-পালা, পুকুর, চারিদিকে এমন সবুজ প্রান্তর, এহেন একটা প্রকৃতিক পরিবেশের ভিতর অফিস? ভাবাই যায় না। আসলে শহররের এক প্রান্তে একটা পুরানোদিনের জমিদার বাড়িতে এই অফিস। প্লাবন মজুমদার আজ নিয়ে দুইদিন এই অফিসে এল। প্রথম দিন সংবাদ পত্রের বিজ্ঞাপন দেখে ওর নিজের চাকরীর একটা দরখাস্ত জমা দিতে এসে ছিল, আর আজ তার মাস দুই পরে ঐ চাকরীর পরীক্ষা দিতে আসা। একটা নোটিস দেয়া আছে, Candidates for the post of Junior Engineers are requested to……. কিন্তু পড়াটা শেষ করার আগেই এক বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক হটাৎ যেন মাটি ফুড়ে উঠে এলেন, সৌম দর্শন ঐ ভদ্রলোক খুবই কায়দা করে নোটিশ বোর্ডে লেখা কথাগুলো গড় গড় করে নিজস্ব ভঙ্গিমার ইংরাজীতে মুখস্ত বলে গেলেন। প্লাবন ভাবলো ইনি নিশ্চই এই অফিসের কোন উচ্চ পদস্থ অফিসার হবেন। আর পাঁচজনের মত প্লাবনও তাঁর পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে বলে লাগলো , “স্যার, এই ১৪ নম্বর ঘরটি কোন দিকে ?” ভদ্রলোক খবই চটপটে, মুখে বাংলার চেয়ে ইংরাজী বলতেই বেশি পারঙ্গম বলে মনে হ’ল। তিনি মুখে যথেস্ট গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললেন, “You just follow me.” দোতলায় পাশা পাশি দুটো ক্লাশ রুমে ১৪ ও ১৫ যথারীতি ১০টায় পরীক্ষা শুরু হল। পরীক্ষা চলার সময় পরীক্ষা তদারকির কাজে প্রায় দশ-বারো জন ব্যক্তি উপস্থিত থাকলেও পুরো ববস্থ্যাটাই ওই সৌম দর্শন ভদ্রলোক একাই নিয়ন্ত্রন করছিলেন। কখনও ডানদিক থেকে বাম দিকে দৌড়চ্ছিলেন তো কখনও বাম থেকে ডাইনে। মাঝে মাঝে বিনা কারনেই খানিক চিৎকার করে নিচ্ছিলেন, “You 2nd row pleaze don’t look behind” কখনওবা “Half an hour more….” অবজেকটিভ টাইপ কোশ্চেন, প্লাবনের পরীক্ষা ভালো হয়েছে বললে কম বলা হবে খুবই ভালো হয়েছে। অবশেষে সেই চুড়ান্ত মূহুর্ত…. ঠিক বেলা বারোটায় পরীক্ষার শেষ ঘন্টা বাজলো। “Canditates are request to submit their papers”….. “Attention please…and one important announcement… Result of this exam will be declared at 4 pm right today….hence interested candidates may wait for their result….Our office canteen will remain open for you only upto 4 pm. প্লাবনের সঙ্গে ওর এক কলেজ মেট-এর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, চাকরীর পরীক্ষাগুলো অনেক সময়েই বেশ রি-ইউনিয়নের কাজ করে দুজনে মিলে ভদ্রলোকের নাম দিল হাই-ফাই বাবু। ওই হাই-ফাইবাবু তখনও ইংরাজীতে বক বক করেই চলেছেন। আর ৪টে পর্যন্ত সময় কাটানোর জন্য দুজনে ঠিক করল …. পাশের অনন্যা বলে একটা হলে ১-৪টে সিনেমা দেখে সময়টা কাটাবে, আর যেমন ভাবা তেমনই কাজ। অফিস ক্যান্টিনে কিছু খাওয়া দাওয়া করে দুজনে গেল সিনেমা দেখতে। সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে ৪টের সময়ে রেজাল্ট দেখতে গিয়ে দেখলো ১ নম্বরের নামটাই প্লাবন মজুমদার।

সময়মত ইন্টারভিউ-ও হয়ে গেল। প্লাবন খবর পেল লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মিলিয়েও প্লাবন এক নম্বরেই আছে। আর সেদিনও হাই-ফাই বাবু সমানে তাঁর উপস্থিতি জানান দিয়ে গেলেন। …. হটাৎ কোথা থেকে ভুঁইফোড়ের মত উদয় হয়ে হাই বলে চিৎকার করে উঠলেন, “You boys, wish your best of luck! See you soon.”

আজ প্লাবন এসেছে চাকরীতে জয়েন করতে। ইতিপূর্বে প্লাবন আরও দুটি সরকারী অফিসে চাকরী করছে কিন্তু সেইসব অফিসের পরিবেশ যেন অনেক উন্নত ছিল। তাহলে কি কোন ভূল সিদ্ধান্ত নিল প্লাবন? যাই হোক এ ঘর ওঘর ঘুরে শেষে পার্শোনেল ডিপার্টমেন্টে পৌছে এক ভদ্রলোককে প্লাবন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার টা দেখিয়ে জিগ্যেস করলো, “এই ব্যাপারে কার সঙ্গে দেখা করতে হবে একটু বলবেন?” ভদ্রলোক তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন “ওই পাশের ঘরে দেখুন এক সুপুরুষ ভদ্রলোক বসে আছেন, ওনাকে জিগ্যেস করুন।” প্লাবন ওই ঘরটিতে ঢুকে তেমন কাউকে না দেখতে পেয়ে যখন ইতস্তত করছে তখন ওই ঘরে উপস্থিত একমাত্র ভদ্রলোক বেশ শীর্ণ, ঘোরতর কৃষ্ণ বর্ণের এক বছর পঞ্চাশের ভদ্রলোক ওকে নিজে থেকে ডেকে ব্যাপারটা বুঝে নিলেন এবং তাঁর তরফের যেটুকু কাজ করার ছিল সেটা করে দিয়ে জানালার দিকে হাত বাড়িয়ে একটা ঘর দেখিয়ে দিয়ে বললেন, “ওইটা ইন্জিনিয়ারিং অফিস, এবার ওখানে গিয়ে রিপোর্ট করুন।” ইন্জিনিয়ারিং অফিসে ঢুকেই প্লাবন অবাক, সেই হাই-ফাইবাবু! “Hallo, Mr. Majumder, we are waiting for you…. Don’t worry, you just give me your joining report and I will arrange everything.” এ কথা বলে হাই-ফাইবাবু অফিস থেকে সাঁ করে বেরিয়ে কোথায় চলে গেলেন। ইতিমধ্যে অফিসের বড়বাবুর সঙ্গে আলাপ হ’ল। তিনিই চাকরীতে জয়েন করতে যথেষ্ট সাহায্য করলেন এবং সাহেবের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবার জন্য প্লাবনকে সাহেবের ঘরে নিয়ে গেলেন। “স্যার, ইনি আমাদের নতুন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র প্লাবন মজুমদার।” স্যার গম্ভীর ভাবে মুখটা তুলে বললেন, “হ্যা, ইন্টারভিউ বোর্ডে তো আলাপ হয়েছে।” প্লাবনেরও মনে পড়ল উনি ইন্টারভিউ বোর্ডে ঠিক ডানদিকের শেষ চেয়ারটায় বসেছিলেন এবং বেশ সহানুভুতি সম্পন্ন ব্যবহার করেছিলেন। এর পর সাহেব বড়বাবুকে বললেন, “আপনি, প্লাবনকে সজলবাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে সজলবাবুকে বলুন আজ ওনাকে আমাদের অফিস সাইটটা ভালো করে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিতে।” বড়বাবু প্লাবনকে তাঁর নিজের ঘরে নিয়ে বসতে বললেন। তারপর অফিসের এক কর্মীকে বললেন সজল বাবুকে ডাকতে। এরপর বড়বাবু তাঁর গলার স্বরটা বেশ কিছুটা নামিয়ে বললেন, “আপনাকে একজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি, সজল গড়াই, আমাদের এই অফিসের একজন সুপারভাইজিং স্টাফ, তবে তার আগে আপনাকে একটা কথা বলে রাখি। সজলবাবু উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ নিউরোপ্যাথিক ব্লাড সুগারের রোগী, এই রোগীদের মস্তিস্ক সর্বদা চঞ্চল থাকে। ফলে বড্ড বেশী কথা বলেন, আর ওনার ব্যক্তিগত একটা প্রবলেম হচ্ছে ওনার ধারণা, উনি ইংরাজীতে কথা বললে সবার কাছে উনি বেশী গুরুত্ব পাবেন। তাছাড়া সম্প্রতি ওনার একমাত্র সন্তান চলে যাওয়ার পর উনি একটু বেশী রকমের অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” আর ঠিক সেই সময়ে দরজার পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকে হাই-ফাই বাবু বললেন, “Hallo… all the formalities must be over, then lets have a move in the campus.”

ছোটগল্প - দেবাশিস কাঞ্জিলাল

সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে
দেবাশিস কাঞ্জিলাল



হাঁপাতে হাঁপাতে অমলবাবু অফিসে এসেই ঢুকলেন আমার ঘরে । খুব লজ্জিতভাবে বললেন, আজও বড্ড দেরী হয়ে গেল স্যার, আসলে এতদিক সামলে আসতে হয়, কিছুতেই পেরে উঠি না ! ঘর্মাক্ত ভদ্রলোককে দেখে মায়া হচ্ছিল, বসতে বললাম । দ্বিধা করে বসলেন সামনের চেয়ারে ।

আমার জলের বোতলটা এগিয়ে দিলাম। ভদ্রলোক কুন্ঠিত হয়ে জল খেলেন। এবারে উঠতে যাচ্ছেন,বললাম,আপনি আমাকে একটু বলুন তো, সংসারের সব কাজ কি আপনাকে একাই সারতে হয় ?

-- না না, আমার স্ত্রীই তো স্যার সবদিক সামলান সংসারের, আমি শুধু সব বাইরের কাজ, এই যেমন বাজার-হাট, ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, তাকে পড়ানো,এইসব করি ! সংসারের আসল সব ঝক্কি-ঝামেলা সবই আমার স্ত্রীই সামলান!'

-- শুনুন অমল বাবু, আপনাকে কয়েকটি কথা বলি ! মহিলারা সংসার সামলাবেন, এ' এক স্বতঃসিদ্ধ ঘটনা ! এ যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে, চলবেও ! সব সময়ে মনে রাখবেন, গৃহিনীরাই গৃহকে শোভিত করেন ! এ সংসার-রাজ্যে তাঁরা হলেন গৃহমন্ত্রী, স্বগৃহে-স্বরাট ! আর আমরা হলাম সেখানে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা-মন্ত্রী ! আমাদের কাজ হল, বাইরের সব জটিল ব্যাপারে ভালোভাবে নিজেদের অবহিত রেখে সম্ভাব্য প্রতিকূলতা থেকে গৃহিনীদের রক্ষা করা !

যেমন ধরুন, আমাদের পরবর্তী সংস্কৃতি-মন্ত্রীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক হলে চলবে কিনা, সৌরভকে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করার কুশীলবেরাই তাকে ফুটবলের দল বানাতে প্ররোচিত করছে কিনা,কবি জয়দেব আসলে বাঙ্গালী না ওড়িয়া ছিলেন,চাঁদে জমির দাম কত, মঙ্গলে জলের আনবিক গঠন কি, সাহারা-মরুভূমিতে যে আবাসন প্রকল্প হবে তাতে ফ্ল্যাট নিতে হলে সেই মরু-শ্রী লোকটিকে টাকা কোর্টের মাধ্যমে দিতে হবে কিনা, এই সব জরুরী বিষয়ে সচেতন থাকা যাতে আমাদের গৃহিনীদের এইসব বড়ো ব্যাপারে বিব্রত না হতে হয় ।

আমি তাই সারা সকালে ধরে কাগজ পড়ে এইসব বিষয়ে নজর রাখি, তারপরে ধীরে সুস্থে ওই সব জটিল সমস্যাগুলি কোনমতে সামলে অফিসে চলে আসি। তাই আমার কখনো দেরী হয় না !

আর এই ভাবে সব বড়ো জটিল সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য নিজেরা মাথা ঘামিয়ে, তাঁদের ওই সব ছোট ছোট সাংসারিক কাজগুলি করতে দিলেই তাঁদের ভার আমরা যথেষ্ট কমাতে পারি ! তাই আপনিও বাজার-হাট, ছেলে-পড়ানো, সহায়িকা না এলে ঘর মোছা, রান্না করা,আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ, এইসব অকিঞ্চিৎকর তুচ্ছ কাজ থেকে দূরে থাকবেন, দেখবেন আর সময়ের কোন অভাব হবে না ।

এই আমাকে দেখুন না, আমার স্ত্রী সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কাজ করেন। সকাল ন'টার আগেই চলে যান, কিন্তু ভোর চারটেতে উঠে সংসারের সব কাজ সারেন, আমাকে এইসব তুচ্ছ ব্যাপারে ঢুকতেই দেন না ! তাঁর অফিস অভিমন্যুর ব্যূহের মত, প্রবেশের ঠিক আছে, কিন্তু নির্গমন অনিশ্চিত ! তবে মোটামুটি রাত ন'টার মধ্যেই ফেরেন সেখানে সব সামলে !

সেই রাত নটায় ফিরে তারপর আবার সংসারের তুচ্ছ সব কাজ সামলান। আর এই সময়ে আমি ফেসবুক বা মেল নিয়ে সবার সাথে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগে ব্যস্ত থাকি। আমি সংসারের কোন ব্যাপারেই নাক গলাই না ! শুধুমাত্র তিনি যা বলেন তাই শুনে চলি । আপনিও এই ভাবে চলুন, শান্তিতে থাকবেন !

আর একটি কথা বলি নারীজাতি হলেন দেবীর অংশ, তাঁদের ক্ষমতা অসীম, তাঁদের স্থিতিস্থাপকতা আমাদের চিন্তার অতীত । তাই তাঁদের দেবীর মত সম্মান দিয়ে তাঁদের মাথায় করে রাখবেন, তাঁতে তাঁরাও খুসি, আপনিও নিশ্চিন্ত ! ম্যানেজমেন্টের ভাষায় একেই বলে উইন-উইন সিচ্যুয়েসন !

মনে রাখবেন ,তাঁরা মানবাতীত শক্তি, সেখানে তাঁদের দেবীর মত মাথায় করে রাখাই আমাদের একমাত্র কাজ ! আপনি সত্যজিত রায়ের 'দেবী' সিনেমাটি আরেকবার দেখলে আরো ভালো করে ব্যাপারটি বুঝবেন । সাধে কি আর সেই প্রাচীনযুগ থেকে মুনি-ঋষিরা বলে এসেছেন সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে ! এ কথার অনেক গ্যূঢ়ার্থ আছে ! আচ্ছা এখন আসুন, আবার পরে কথা হবে !

অমলবাবু আমার দিকে এক বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলেন ! মনে হয় তাঁর অপরাধ বোধের বিব্রততার মাত্রা একটু কমানো গেল ।

আচ্ছা, সত্যি কি কমানো গেল ? নাকি আরো গুলিয়ে গেল ! কে জানে !

ছোটগল্প - অরুণ চট্টোপাধ্যায়

মনড্রাইড
অরুণ চট্টোপাধ্যায়

কেউ বলেছে হতাশা, কেউ বলেছে সামাজিক অবক্ষয়ের ফল । কারণ যাই হোক, ফল তো একটাই । স্বামী-স্ত্রীর অশান্তির পরিণতিতে ডিভোর্স । ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকার বা বাবা মায়ের বকুনি সহ্য করতে না পারা ছেলেমেয়েদের আত্মহত্যা । বাবার কথায় ঠোক্কর খাওয়া বেকার ছেলের ব্যোম মেরে যাওয়া কিংবা মায়ের ঠোকরানিতে বিপর্যস্ত মেয়ের অঝোর কান্না । পেনশন পাওয়া বাবা কিংবা ভবিষ্যতের এক চিলতে ফ্যামিলি পেনশনের আশায় চিন্তিত মায়েদের অনিদ্রা, বদহজম, খিটখিটে মেজাজ । মন ভেঙ্গে যাওয়া নিশুতি রাতে ঘন ঘন ঘড়ি দেখা, জল খাওয়া আর বাথরুমে যাওয়া যেন প্রতি রাতের রুটিন চিত্র ।

এক সকালে দেবদূতের আবির্ভাব একটা কাগজের বিজ্ঞাপন হয়ে । এক হাজার এক টাকায় এক ফাইল । খাবার পিল নয় – লাগানোর মলম । তাও আবার শরীরে নয় – মনে । সুদৃশ্য ছবি লাগানো অদ্ভুত এই মলমটির মধুর মত নাম – মনড্রাইড । ভাঙ্গা মন জোড়া দেবার মধুর কল্পনার ততোধিক মধুর বাস্তবায়ন । মাল্টিন্যাশন্যালের চাপে দমবন্ধ আবহাওয়ায় উঁকি পাড়া এক ন্যাশন্যাল কোম্পানীর অনবদ্য আধুনিক এক আবিষ্কার । রোগের যেমন অনেক কারণ থাকে, মন-ভাঙ্গা রোগেরও অনেক কারণ থাকতে পারে । এক এক কারণে কিন্তু এক এক রকম মলম ।

দীপু একটা পেন ড্রাইভ কিনবে বলে টাকা জমিয়েছিল । দীঘায় বাবা মায়ের সঙ্গে গিয়েছিল নভেম্বরে । সাগরে স্নান করতে করতে ছবি তুলেছিল । উত্তুঙ্গ ঢেউয়ের মত তার উত্তুঙ্গ যৌবনের কিছু ছবি তুলেছিল প্রেমিক অসীমের জন্যে । পেন ড্রাইভে করে সেই ছবি প্রেজেন্ট করবে তাকে। কিন্তু পেন ড্রাইভ নয়, এখন তো তার ডেনড্রাইড কেনার ইচ্ছা । অসীম পালটি খেয়েছে । কোথায় যেন শুনেছিল দীপু ডেনড্রাইড খেয়ে নাকি আত্মহত্যা করা যায় ।

মনড্রাইডের বিজ্ঞাপন পড়ে ভাবল জিনিসটা যখন আবিষ্কার হয়েইছে তখন দেখাই যাক না একবার চেষ্টা করে । তিনবারের চেষ্টায় ফোন ধরল অসীম । জায়গা ঠিক হল । ঝালমুড়ি আর এগরোল অসীমকে দীপুই খাওয়াল । তারপর বলল, আমাকে বিয়ে করার কথা তোমায় আমি বলছি না । সে তুমি অলকাকেই কর । আর সুন্দরী সে তো বটেই । খুব ম্যাচ করবে তোমাদের । কংগ্রাচুলেশন অসীম । ফুচকা খাবে ?

দীপু বলল সেটাই আর করল সেটাই যেটা মনড্রাইডের পুরিয়ার কাগজে লেখা ছিল ।

-দেখ ডার্লিং, অসীম বলল, সে তো তুমি আমায় বিয়ে বিয়ে করে ব্যতিব্যস্ত করেছিলে তাই । বল তো এই বাজারে চাকরি কি জয়নগরের মোয়া ? তাই তো আমি অলকাকে – ওর বাবা একটা চাকরি দেবে বলেছে বলেই তাই । কিন্তু দিল না তো এখনও । আর সুন্দরী ফুন্দরী ওসব রাখ তো। আমার চোখে তুমিই খুব সুন্দর । প্লিজ ডার্লিং আর একটু ওয়েট যদি কর ।

রাত জেগে কম্পিটিটিভ পরীক্ষার পড়া করল । তিন মাসের মধ্যে চাকরি পেল অসীম । সাত মাসের মাথায় দীপুকে নিয়ে মন্দারমনি চলে গেল মধুচন্দ্রিমা সারতে ।

দীপু-অসীমের বিয়েতে মনড্রাইডের কোনও কর্মকর্তা নেমন্তন্ন খেয়েছিল কিনা জানা নেই । কিন্তু মলমটার দ্বিতীয় সাফল্য এল দীপেন আর তার বাবার হাত ধরে । চার দিন কথা বলে নি দীপেন তার বাবার সঙ্গে । আর দুজনেই ঘুমোয় নি তিন রাত । এই ইয়ার এন্ডিং-এর সময়ও বাবা অফিসে সিক লিভের দরখাস্ত পাঠিয়েছে । গোমড়ামুখো হোমড়াচোমড়া ম্যানেজারের কলমে তার স্যাংশন কঠিন জেনেও ।

সোফায় মুখ গুঁজে পড়ে ছিল দীপেন । ওর মা তো রাগ করে চিরাচরিত প্রথা অনুসরণ করে বাপের বাড়ী চলে গেল । বাবা মেঝেয় গড়াচ্ছে । নির্ঘুম নির্জলা নি-বাথরুম উপবাস । কিন্তু পাশ তো ফিরতেই হয় দুয়েকবার । সেই পাশ ফিরতে গিয়েই কাগজে বিজ্ঞাপন দর্শন ।

তড়াক করে উঠে এক ফাইল কিনে ফেলল বাবা । সোফায় দীপেনের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি স্বরে বলল, চোখ খোল বাবা রাগ করে না । আর তোকে আমি চাকরি খুঁজতে বলব না সোনা মাণিক যাদু আমার । আমার পি-এফ, গ্র্যাচুইটি সব তো থাকবেই রিটায়ার করার পর । আমি মরলেও তোর আর তোর মায়ের চলে যাবে কোনোমতে ।

বাবা বলল আর করল তেমনটাই যেমনটা লেখা ছিল মলমের কাগজটায় । তড়াক করে লাফিয়ে উঠল দীপেন, তোমার পি-এফ গ্র্যাচুইটি ? সে আর কত ? ব্যাংকের ইন্টারেস্ট গ্লোবাল ওয়ারমিং-এর দাপটে আবহাওয়ার মত রোজ ওঠা পড়া করছে সে খবর রাখ ? তাছাড়া তোমার টাকায় খাব আমি – বড় হচ্ছি না বুঝি ? আমার কম্পিউটার গেমসগুলো সব সাত্যকিকে দিয়ে দিয়ো তো বাবা। ও এলে বল আমার সময় নেই ।

ছেলে উঠে পড়ল । হাতে কত কাজ । কম্পিটিটিভ পরীক্ষার পড়া করতে হবে । একেবারে নব উদ্যমে । বাবা মাকে ফোন করল, ফিরে এস গো । ছেলে পরীক্ষা দিতে যাবে আর আমি অফিস যাব । রাঁধতে হবে তো ? ইলিশের কাল গেছে অন্তত একটু ভাপা চিংড়ি –

চার মাস পরের খবর । সরকারী চাকরি পেয়েছে দীপেন । আর ওর মা মনড্রাইডের নামে পুজো দিয়েছে বেশ বড় করে । এক বছর পরে বাবা পি-এফ গ্র্যাচুইটির টাকায় একটা গাড়ী কিনে ফেলেছে – একেবারে চার চাকা ।



তিনবছরের মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা শোভনের । বউ নীলার সঙ্গে ডিভোর্সটা হয়ে গেলে বেচারি মেয়েটার কি হবে ? হয়ত কোর্ট মায়ের সঙ্গেই থাকতে দেবে তাকে । কিন্তু তাই কি সে থাকতে পারবে ? বাবা অন্ত প্রাণ যে মেয়েটার । এক দিকে মেয়ের চিন্তা আর অন্য দিকে নীলার । খিটিমিটির অন্ত নেই । ডিভোর্স ছাড়া আর উপায় নেই ।

-যাও যাও । তোমাকে ছাড়াও আমার চলবে । খুব বীরত্বের সঙ্গে কথাটা বললেও পরে ভেবেছিল শোভন । মাকে না হয় দরকার নেই কিন্তু মেয়ে ? তাকে ছেড়ে থাকা আর চুঁচড়ো থেকে কলকাতায় হেঁটে অফিস করা একই মানে একই রকম কষ্টের । পিতৃমুখী কন্যা কিনা তাই সোহাগটা একেবারে লাগামছাড়া ধরণের ।

ডিভোর্সটা নাকি তেমন কিছু ব্যাপারই নয় । তার এক বন্ধু বলল, জানিস তো বৌ আর বই একটু পুরোন হলে আর ভাল লাগে না । তাই তুই যা করছিস তা ঠিক করছিস । আর বৌদিও তো তোর ওপর বীতশ্রদ্ধ নাকি ? মানে তোর কথায় যা মনে হল আর কি ।

বন্ধু বললেও মনের মধ্যে ঝড় আর যায় না । আহা একবার যদি অন্তত তাকে বলত । একটু নরম করে যদি বলত, ওগো আমি তোমায় –

শোভন এক ফাইল কিনে ফেলেছিল বিজ্ঞাপন দেখে । একটা সিমলা-কুলুর ই-টিকিট হাতে করে এল নীলার কাছে । নীলা নাক কোঁচকাল । আর ট্যারা চোখে শোভনের হাতের টিকিটটা দেখল । কিন্তু তবু কোঁচকান নাক আর সোজা হল না কিছুতেই ।

-যা গরম পড়েছে বুঝলে নীলু । সিমলা না গেলে আর চলছে না ।

শোভন বলল সেগুলোই যেগুলো লেখা ছিল মনড্রাইডের পুরিয়ার কাগজে । বলল খুব মিষ্টি করে । তার বাঁ হাতে ছিল কোয়ালিটি আইসক্রিমের বেশ বড় একটা প্যাকেট। ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল ।

নীলার নাকের কোঁচকানি একটু সমান হল । তার ওলটানো ঠোঁটে ট্যারা হাসির একটা চিহ্ন টের পাওয়া গেল । আর চোখে একটা ঔসুক্য ।

-আই লাভ ইউ নীলা, ডিয়ার । দরদ ভরা গলায় শোভন বলল, আই লাভ ইউ ভেরি মাচ।

ঠিক এ রকমটাই পুরিয়ার কাগজে লেখা ছিল । একেবারে হুবহু ।

পরের দৃশ্যটা কোর্টে নয় সিমলার হোটেলে দেখা গেল । মাঝরাতে ঘুমন্ত তিন বছরের মেয়ের পাশে নিদ্রাহীন এক বাঙ্গালী দম্পতির ভীষণ লড়াই – রোশের নয় খুশির ।

মিলনান্ত নাটকের পরিচালক মনড্রাইড তো ভারি খুশি ।

রান্নাঘর - মৌসুমী বিশ্বাস

ডাল বুখারা

উপকরণঃ- তড়কা ডাল ১ কাপ , ছোলা ডাল ১ বড় চামচ , রাজমা ১ বড় চামচ

প্রণালীঃ- ডাল এবং রাজমা ৭-৮ কাপ জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে । এরপর ডালকে প্রেসারকুকার এ দিয়ে এক চামচ নুন বা হিং দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। ১৫ মিনিট ধিমে আঁচে রাখতে হবে । তারপর কুকার খুলে ১/৪ কাপ দুধ এবং কমলা রং ঢালতে হবে । জোর আঁচে আবার রান্না করতে হবে ।

অন্য উপকরণঃ- ৬-৭ টমাটো নিয়ে সিদ্ধ করে খোলা ছাড়িয়ে পেস্ট করে নিতে হবে , মাখন ১ ১/২ বড় চামচ রসুন এর রস ১/২ চামচ , রসুন বাটা ১/২ ছোট চামচ , আদা ১/২ ছোট চামচ বাটা , লংকার গুড়ো ১/২ ছোটচামচ , গরম মশলা গুড়ো ১/৪ ছোট চামচ , গোটা জীরা ১/২ ছোট চামচ , ক্রিম ১/২ কাপ ।

প্রণালীঃ- কড়ায় মাখন দিয়ে গরম হলে তাতে জীরা , রসুন এবং আদা দিয়ে নাড়তে হবে । তারপর লঙ্কার গুড়ো্‌ , রসুন এর রস এবং টম্যাটো পেস্ট দিয়ে নাড়তে হবে । ঘন হলে এর মধ্যে ডাল ঢেলে দিতে হবে । গরম মশলা , ক্রিম , ধনে পাতা এবং কাঁচালঙ্কা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ।

রূপচর্চা - মিলি মুখার্জী

বর্ষায় পায়ের যত্ন
মিলি মুখার্জী

আমাদের প্রায় সকলকেই প্রতিদিন বাড়ির বাইরে বের হতে হয়। বর্ষার রাস্তায় থাকে উপরি কাদা-নোংরা-জল। তাই বর্ষাকালে রোজই পায়ের যত্ন নেওয়া উচিত। মেনে চলুন কয়েকটি ধাপ, তাহলেই হলঃ

১) প্রথমে আপনার পায়ের নখ কেটে নিন গোল কিংবা চৌকো আকারে।
২) এবারে একটা গামলাতে হালকা গরম জল নিয়ে তাতে দু’টো পা ডুবিয়ে বসুন ।
৩) পা ঘষার ব্রাশে সামান্য লিকুইড সাবান দিয়ে পায়ের উপর-নিচ ভালো করে ঘষে নিন, গোড়ালিও ঘষে নিন পিউমিফ স্টোন দিয়ে।
৪)এবার ঠাণ্ডা জল দিয়ে পা ধুয়ে শুকনো করে মুছে নিন।
৫)পায়ের নখের ভিতর আর বাহিরের দিকের ময়লা নেল-পুশার দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
৬)ফুট-ক্রিম দিয়ে পা হালকা ম্যাসাজ করুন।
৭)নখের উপরের ক্রিম তুলো দিয়ে মুছে নিন। আপনি মহিলা হলে পছন্দ মতো নেল পালিশ পরতে পারেন।

দেখুন তো, এবারে আপনার পা কি সুন্দর আর ঝকঝকে দেখাচ্ছে।