মুক্তগদ্য - তনুশ্রী চক্রবর্তী



আকাশফুল
তনুশ্রী চক্রবর্তী

একটা সবুজ রঙের টিয়া , থাকতো বাড়ির অন্দরমহলে একটা ছোট্ট খাঁচার ভেতরআকাশ এসে রোজই তাকে কাছে ডাকে হাতছানি দিয়ে; কিন্তু ও সাড়া দেয়না কিছুতেই, ওর কাছে ছোট্ট খাঁচাটাই ওর স্বর্গএকদিন কী এক আলেয়ার টানে উড়তে ইচ্ছে করলো খুব;  ছুঁয়ে দেখতে চাইল ওই নীলাম্বরের মনের গভীরতাআকাশ দেখার প্রবল বাসনা তাকে অস্থির করে তুললোসে বেরোতে চাইলো খাঁচার দরজা খুলে; আপ্রাণ চেষ্টা করলো কিন্তু অবশেষে ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত ডানায় ভর করে যখন সে মুখ ফেরালো খুব চেনা ঠিকানায় তখন তার বেজায় মনখারাপ।

 মাঝে মাঝে যখন দখিনা বাতাস খেলা করে আপনমনে, সেই পাখিটাও আপনমনে গুনগুন করে গেয়ে ওঠে শেখানো গানপরক্ষণেই ব্যথায় আড়ষ্ট ডানাদুটো কী যেন মনে করিয়ে দেয় ওকে ...

অনেক দিন হলো ও আর শিস্ দেয়না;  দানাপানি ছুঁয়েও দেখে না সেভাবে। খাঁচার সামনে একটা আয়না রাখলে, একমাত্র সেই দেখতে পায় নীরব অভিমানে ফুলে ওঠা ওর ছোট্ট শরীরটাকে কিন্তু কী আশ্চর্য্য, ও কখনোও ঠোকরায় না কাউকে! বুঝি, অভিযোগের খাতায় সে লিখে রেখেছে অনন্ত নীরবতা। একনাগাড়ে তাকিয়ে দেখেছি, ওর চোখের জলের দাগটাও কেমন মিলিয়ে গেছে। শুধু খুব চেনা কেউ এলে শেখানো বুলি আওড়ায়

আকাশকে একদিন চীৎকার করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন শুনিয়েছিলে ওকে মুক্তির গান ? উত্তর পাইনি; কিন্তু সম্বিৎ ফিরেছিলো এক ভীষণ অট্টহাস্যে! ভয়ে, আশঙ্কায় ছুটে গেছিলাম খাঁচাটার কাছে; ডেকেছিলাম, ' ফুল, তুই ভালো আছিস তো ?  ফুল, ফুল" ---  কোনো সাড়া পাইনি তাড়াতাড়ি খাঁচার দরজা খুলে ওর গায়ে হাত দিতে গিয়ে দেখলাম,  মুখ ঘুরিয়ে ঘাড় গুঁজে পড়ে আছে সবুজ  "ফুল"! ওর স্বপ্ন দেখার চোখ দুটো ভয়ংকর কোনো আঘাতে উপড়ে গেছেআদরের টিয়া ফুলকে হাতের তেলোয় নিয়ে শেষবারের মতো আদর করতে গিয়ে শুনতে পেলাম ও যেন বলছে,  "এখন  বুঝতে পারি,  একদিন যে আকাশের জন্য অপেক্ষা করতাম আমিও ...”   


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন