গল্প - নূপুর বড়ুয়া



হঠাৎ পাওয়া
নূপুর বড়ুয়া

      গত জানুয়ারী মাসে একদিন একটু সময় পেয়ে চলে গেলাম “বইমেলা”তে| একা একাই ঘুরছি স্টল থেকে স্টলে...হঠাৎ কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকল| তাকালাম এদিক ওদিক...কই? কোন চেনা মুখ তো চোখে পড়ছেনা| তাহলে কি ভুল শুনলাম? যেই মুখটা ঘুরিয়ে আর একটি স্টলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি তুমি সামনে এসে দাঁড়ালে| প্রথমে চিনতে পারিনি| কি করে চিনব বল? শরীর টা অনেক ভারি হয়েছে, মাথার চুল অনেকটাই কমে গেছে, চোখে চশমা| আমার মনে তো তিরিশ বছর আগের তোমার ছবিটা গেঁথে আছে- উদ্দাম উচ্ছল এক কিশোর, যে কথায় কথায় কবিতা বলে, গান গেয়ে ওঠে|

     ধীরে ধীরে স্মৃতির দরজা গুলো খুলে যেতে লাগল| কলেজে কিন্তু তুমি কখনও আমাকে বুঝতে দাওনি তোমার মনের বাসনা| আমি ও তাই কোনদিন কিছু বলতে পারিনি| আসলে সেই সময় টা আমরা একটু অন্য রকম ছিলাম| আগ বাড়িয়ে নিজের কথাটা বলতে বড় দ্বিধা হত, লজ্জা করত| কলেজ শেষ হল...কে কোথায় চলে গেলাম, আর কোন যোগাযোগ রইল না| অনেক পরে তুমি একদিন খুঁজতে খুঁজতে এসেছিলে আমাদের বাড়ি| নিজেকে একেবারে তৈরী করে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, প্রস্তুত হয়ে-যাতে তোমাকে কেউ ফেরাতে না পারে| কিন্তু বড্ড দেরী করে ফেলেছিলে|

      আমরা দুই বোন একেবারে পিঠোপিঠি ছিলাম- তাই বড় হওয়ার সুবাদে আমার বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছিল| না, দেখা হয়নি সেদিন তোমার সাথে আমার| শুধু ফোন নম্বর জোগাড় করে দু-একবার আমার সাথে কথা বলেছিলে| আশ্চর্য! আজ তুমি আমাকে দেখেই চিনতে পারলে! 

       তারপর সে কত কথা- কত পুরনো স্মৃতি হাতড়ানো...ফিরে গেলাম ৩০ বছর আগেকার সেই ছাত্র জীবনে- যে সময়টা আমাদের অনেকের জীবনের অমূল্য সম্পদ | দল বেঁধে সিনেমা দেখতে যাওয়া, যার কাছে যত পয়সা থাকত সব এক জায়গায় জড় করে গোনা হত, তারপর সেই পয়সা দিয়ে টিকিট কাটা হত| অন্যান্য কলেজের কালচারাল ফাংশন গুলোতে অংশ গ্রহন করা, বইমেলা তে যাওয়া-কারনে অকারনে হেসে ওঠা...কত সুখস্মৃতি| এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল একসাথে| তারপর দুজন দুদিকে চলে গেলাম যে যার গন্তব্যে| কিন্তু থেকে গেল অনেক আনন্দের রেশ, যা আগামী বেশ কিছুদিন ভাল থাকার রশদ হয়ে থাকবে|

          অপেক্ষায় থাকলাম...আবার কখনও অন্য কোথাও...অন্য কোনখানে...।।



0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন