গল্প - রানী সিনহা



শান্তির আলয়
রানী সিনহা

অনেক সাধ করেই এ বাড়ির নাম রেখেছিলেন বাড়ির বড় ছেলে শিবশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
“শান্তির আলয়”|
আজ সকাল থেকেই বাড়িতে হই হই কান্ড| যেন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে| উঠোনের এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে আর নিজের মনে বলছে- হয়না, অসম্ভব এভাবে হয়না| বেলা ১১ টায় এই মন্তব্য এ বাড়ির ছোট বউ কমলার| ছেলেটা স্কুলে গেছে, সঙ্গে মেয়েটাও| আর এবাড়ির ছোট ছেলে অমর আর বড় ছেলে শিবশঙ্কর, সে তো কোন কাক ডাকা ভোরে অফিসে চলে গেছে|
তাহলে গোলমালটা কোথায়?
কোথায় আবার...ওই যে বড় বৌ সুনয়নী| সকাল থেকে এমন জল ঢালা শুরু করেছে, আর একটু হলে ছোট বৌ কমলা আছাড় খেয়ে পড়তো| এ ভাবে হয়না, কখনও হয়না, বলে কমলা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে|
“কি হয়না?” বলে বড় বৌ সুনয়নী ঘুরে দাঁড়িয়েছে| “আসুক আজ বড় ভাই শিবশঙ্কর, জানুক সব| রোজ রোজ এ অশান্তি ভাল লাগেনা|”
ছোট বউ হই হই করে বলে উঠলো, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আসুক অমর| দুই ভাই মিলে ঠিক করুক কি করবে|
তোমার তো ঘরে কোন ছেলেপুলে নেই|”
“হ্যাঁ, তাতে হয়েছেটা কি?” বলে সোজা হয়ে দাঁড়ায় বড় বউ সুনয়নী |
কমলা তখন মারমুখো| ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো, “তুমি মরে গেলে কাঁদবার জন্য তো লোক নেই| আর কারও মা হারিয়ে অনাথ হবার ভয় ও নেই”|
“সকাল বেলায় মরে যাবার প্রশ্ন আসছে কেন?” একটু অবাক হয়েই সুনয়নী জিজ্ঞেস করল|
“তোমার জল ঢালার বহর দেখে| পা পিছলে পড়ে যদি আমি মরি, সেই ভয়ে,” বলে কমলা রাগত স্বরে|
সুনয়নী একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বলে- “বলছ তো অনেকদিন ধরেই। মরেছো কি?”
উঠোনটা তো পরিষ্কারই আছে| তোমার জল ঢালার বাতিকের জন্য এবার সত্যিই পড়ে মরবো| বাতিক আর কাকে বলে...কমলা গজ গজ করে বলতে লাগলো|
গলা ছেড়ে চিৎকার লাগিয়ে দিল সুনয়নী, “খবরদার বাতিক বলবে না”|
আলবাৎ বলবো|
লেগে গেল ধুন্ধুমার|
অমর আর শিবশঙ্কর সেই সকালে অফিস বেরিয়ে গেছে| ফিরতে ফিরতে রাত আটটা ন’টা তো হবেই | ওদের ঝগড়া চলবে এখন টানা আধ ঘন্টা|
চিল বাড়িতে বাসা বেঁধেছিল ছাদে| তারা এলাকা ছেড়ে কবে উড়ে পালিয়ে গেছে|
“শান্তির আলয়”-এর ছাদে আবার ভুল করে এসে বসেছিল দুটো কাক| কিছু কাক নেহাৎ কাক বলেই এখানে টিঁকে আছে| তারা ও এখন যে যেখানে পারছে পালিয়ে বাঁচছে|
ওদের তারস্বরে চিৎকারের দাপটে|


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন