কবিতা - সৈয়দ হাসমত জালাল



আনন্দপথ
সৈয়দ হাসমত জালাল

সে এক মেলায় বাঁশির সুরে গানের ছন্দে
...............................বাজছিল একতারা
ভিড়ের মধ্যে একলা সেই মেয়ে, চুলের ওপর
................................মিহি ধূলোর রেখা
দু-এক ফোঁটা শিশিরও ঝরছিল, বৈরাগিনী
আসলে সে দিগন্তের মতোন সুদূর
.................................এবং উদাস
তার হাতে এক প্রাচীন পুঁথি দিয়েছিলাম-নামটি লিখে
ঝরনাজলের মতো কয়েক পঙ্‌ক্তিমালা
কী ছিল তা, স্তব্ধগহন প্রেম অথবা বিষণ্ণতা
বিরহ না অনির্দেশ্য একলা চলার আনন্দপথ
...............................পাথর-নুড়ি সংকুলতা
চাঁদ উঠেছে মাঠের পারে...

তারপর দিন চলে যায়, রাত চলে যায়
চলে গেল অযুত বছর, কোথায় সে বৈরাগিনী
আমি তখন গ্রাম-নগরের দ্বন্দ্ব ছিঁড়ে
...................................আকাশতলে
করেছি জড়ো ষড়ঋতুর শুকনো পাতা
বটপাকুড়ের ফলে-বীজে লিখছি জীবন
পাখির জীবন, পালকস্পর্শ, কাঁটাতারের বেড়ার উপর
যে পাখিটি গান গেয়েছে, যে মাধুরী মানতে চায় না
.............................................ছন্দবাঁধন
গভীর রাতে বৃষ্টি নামে মাঠের পারে...

ভিজতে ভিজতে নিযুত বছর পার হয়ে যায়
..........................................বরফ-মরু
মৃত শঙ্খ বুকের মধ্যে ধরে রাখে সমুদ্রনাদ
এই পৃথিবী বয়স্ক হয়, ঘুরতে ঘুরতে সবুজ গ্রহের
............................................অক্ষপথে
হটাৎ দেখা, বৈরাগিনী ডাকলো আমায়
ভোলেনি সে সরল জলের পঙ্‌ক্তিমালা
লিখতে লিখতে কখন অন্ধ হয়ে গেছে
................................আমার  দুচোখ
দেখি না তার চুলের ফাঁকে রুপোর রেখা
অস্ত-আলোর চূর্ণ রেণু পড়ছে ঝরে
আমি তো তার মুখ দেখি না, স্বরস্পর্শে খুঁজি তাকে
সে আমার স্তব্ধজটিল ভাষার ভেতর
................................খুঁজতে থাকে আনন্দপথ
তারও বিষাদ জমে ছিল হাজার বছর
দিনান্তে আজ চাঁদ ওঠেনি

শরৎমেঘের ফাঁকে ফাঁকে ফুটছে তারা মাঠের পারে...


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন