অনুগল্প - ব্রতী মুখোপাধ্যায়





অনুগল্পঃ

ব্রতীর গল্প 
ব্রতী মুখোপাধ্যায় 



ব্রতীর বড়ো ইচ্ছে, গল্প লেখে। ইচ্ছে এইজন্যে যে, সে আর কিছুই পারে না। এইজন্যেও যে, কেউই বসে নেই। কেউ বলতে, দীপ, তিতাস, বান্টি, তিতির, অরুণাভ। বড় দিনের ছুটির মুখে বছরের পরীক্ষা শেষ। সকালের দিকটায় ভালোই শীত। তবু ন’টা বাজতেই, সব্বাই, এক এক করে জড়ো হচ্ছে অরুণাভদের খোলা গ্রিলের বারান্দায়। অরুণাভর মা সবার মাসিমা। হাসিহাসি মুখ। ‘সব্বাই এসে পড়েছিস ?’ বলেই ভেতর থেকে একটু কিছু নিয়ে আসে। আজ যেমন নাড়ু, নারকেলের। শাদা। চিনির। দুটো করে প্রত্যেককে। ঠিক আছে। দুটোই সই। 

ছুটি বলেই, অরুণাভর এক বোন এসেছে সেদিন। মাসতুতো বোন। বোন, কিন্তু সমানবয়েসি। চন্দননগরে থাকে। দময়ন্তী। সবাই অন্তি বলেই ডাকে। বারান্দায় সবাই যখন জড়ো হয়, অন্তি এসে দরজায় দাঁড়ায়। সবাই অপেক্ষা করে। অন্তি যদি পাশে এসে বসে, ভালো লাগে। 

বলা বেশি, ভালো অন্তিরও লাগে। প্রত্যেকদিন পোশাক বদলায়। দীপ তো হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। তিতাস বলে, কেমন লম্বা তোমার আঙুল ? ছবি আঁকো ? বান্টি অবাক হয়ে ভাবে, চন্দননগর কত দূরে, সেখানে সবাই কি খু-উ-ব ফরসা, অন্তি যেমন ? তিতিরের নজর শুধু কানের রিঙের দিকে। দোলে তো, আর রোদ পড়লে দারুণ দেখায়। ব্রতী, প্রথম দিন দেখেই, বলেছিল, ওরে ব্বাস! একেবারে বারবি পুতুল। মনে মনেই বলেছিল। কি আর বয়েস ব্রতীর! যে বয়েসে মায়ের চোখে সবার আগে ধরা পড়ে ছেলের ঠোঁটের উপরের দিকে সবুজসবুজ রেখা যেন দেখা যাচ্ছে। 

ব্রতীর গল্পে, বলতে কি, দীপ তিতাস বান্টি তিতির অরুণাভ অরুণাভর মা, সবাই আছে। অন্তি তো আছেই। গল্প লেখা শেষ হলেই, স্থির করেছে, এইখানে পড়ে শোনাবে। সবাই থাকবে। অন্তিও থাকবে। লজ্জা লজ্জা লাগবে যদিও। 

গল্প লেখার এমন ইচ্ছের আর একটা কারণ হল, সবাই অন্তিকে কিছু না কিছু উপহার দিয়েছে। যেমন দীপ একটা ছবি দিয়েছে, মিকি মাউসের, নিজের হাতে আঁকা। তিতাসও ছবি দিয়েছে, তিনটে, তবে তা তেনদুলকারের ছবি। তিতাসদের বয়েসে যেমন সে দেখতে ছিল সেই ছবি। বানটি গান শেখে। সে একটা সিডি দিয়েছে। তাতে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার গান। তিতির একটা বই দিল, রাসকিন বন্ড। অরুণাভরও মাথায় কিছু আছে। আর দীপ কাল সবার সামনে বলেই ফেলল, কি রে ব্রতী! তুই কিছু দিবি না ? ব্রতীর চোখ অন্তির দিকেই। ভাবছিল, কবিতা! বলল, দেবো। কাল। হয়ে যেতে পারে। 

পরের দিন, অন্য দিনের মতোই, সবাই এসে হাজির। ব্রতীও। গল্প এখনো শেষ হতে বাকি। গল্প কোথায় শেষ হবে ব্রতী এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। যদি শেষ করতে না পারে ? কিন্তু এমন সে কল্পনাও করে নি। কল্পনা করে নি, কিন্তু তাই হল। অন্তিকে ওর বাবা গতকাল সন্ধেবেলা বাড়ি নিয়ে গেছে।


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন