মুখোমুখি














মুখোমুখিঃ-




প্রায় হাজার সদস্যের চিলেকোঠা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই এক একটি নক্ষত্র। কিন্তু এই নক্ষত্র ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগত পরিবারে লুকিয়ে থাকা জ্বলজ্বলে কাঁচ কাটা সব হীরের দ্যুতি লুকিয়ে রাখা যায় কি ভাবে? মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, আই.সি.এস.ই, আই.এস.সি – জীবনের প্রথম/দ্বিতীয় বড় বড় সব বোর্ড পরীক্ষায় কি অসম্ভব ভাল রেসাল্ট করেছে ছেলেমেয়েগুলো ! ওদের সকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য চিলেকোঠার শুভ কামনা।

এদেরই ক’এক জনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন সুস্মিতা সিং। পাঠক, এই দারুণ টেলেন্টেড প্রাণবন্ত কচিকাঁচাগুলোর নিজেদের কথা শুনুন ওদেরই নিজেদের ভাষায়।


কুন্তল রায়, চিলেকোঠা পরিবারের নীরব অথচ বেশ সক্রিয় সদস্য। কোথাও কোনো কমেন্টস নেই, মাঝে মাঝে ভীষণ পছন্দের কোনো পোষ্টে একটা লাইক, অথচ নিয়মিত পোষ্ট। বার কয়েকের চেষ্টায় ফোনে পাওয়া গেলো। প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর ফোন করার উদ্দেশ্য জানাতেই সুদূর দূর্গাপুরবাসী অমায়িক বন্ধু ফোন বাড়িয়ে দিলেন মেয়ের দিকে। কলকাকলির মতো কলকলে মিষ্টি গলায় সাড়া এলো ও প্রান্ত থেকে – ‘হ্যাঁ, বলো’ – আন্তরিকতায় মনটা ভরে গেলো। একটু প্রশ্ন করতেই মিষ্টি মেয়ে বলে গেলো নিজের কথা – ‘আই.সি.এস.ই দিয়েছিলাম কারমেল কনভেন্ট হাই স্কুল থেকে। 93.2% পেয়েছি। খুব টেনশন হচ্ছিল। আমি তো নিজে দেখিই নি। বাবাকে বসিয়ে দিয়েছিলাম নেট-এ’। খুব পড়তে, তাই না? ‘হ্যাঁ, পড়তে আমার ভালোই লাগে, তবে রাত জেগে নয়, সারাদিন যখন ইচ্ছে হোত তখনই পড়তাম’। কি নিলে আই.এস.সি-তে? ‘বায়োসায়েন্স, নিউরোলজি নিয়ে মেডিক্যল পড়তে চাই’। ইন্সপিরেশন কে? ‘মেইনলি মা আর টিচাররা। বাবাও অনেক হেল্প করেছে, তবে মা সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে থেকেছে, খুব এনকারেজ করেছে’। আর কিছু করোনা, পড়াশোনা ছাড়া? ‘করি তো, ড্রইং, রিসাইটেশন, ড্যান্স। আমার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। যাব একবার কোলকাতায় তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে’। - মিষ্টি মেয়ে ঝলমলে গলায় বলে ওঠে। আরে, এখনো নামটা বলা হয়নি বুঝি? ঋতজা, ঋতজা রায়। কি মানে তোমার নামের? ‘সত্যজাতা’ – আহা, এমনই অকপট সরল সত্য তোমাকে চালিত করুক ভবিষ্যতের সাফল্য চূড়ায়। চিলেকোঠার শুভেচ্ছা রইল তোমার সঙ্গে।



গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায়, চিলেকোঠার একেবারে জন্মলগ্ন থেকে পরিবারের বিশিষ্ট সদস্যা। সদাহাস্যময়ী, অসম্ভব মিশুকে গৌরীদির সঙ্গে কথা হয়েছিলো আগেই। তাই অফিস থেকে বাড়ি ফিরে সরাসরি ফোন ধরিয়ে দিলেন ছেলের হাতে। ‘হ্যাঁ, বলুন’ – সদ্য কৈশোরের ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলা, খুব গম্ভীর করার প্রবল অথচ ব্যর্থ প্রচেষ্টা। অগ্নিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমেই জানতে চাইলাম, ক্রিকেট খেলা কেমন চলছে? লহমায় বদলে গেল কিশোরের কন্ঠস্বর। প্রাণোচ্ছল এক বালকের উচ্ছ্বাস ঝরে পড়তে থাকলো ফোনের ওপার থেকে। নিজেই বলতে শুরু করলো, ‘লেকের ধারে ক্রিকেট ক্লাব অফ ঢাকুরিয়া-তে খেলি। এখন তো ভালোই চলছে খেলা। আই.সি.এস.ই দিয়েছিলাম রামমোহন মিশন হাই স্কুল থেকে। 86% পেয়েছি। আর একটু বেশী এক্সপেক্ট করেছিলাম। মা খুব পড়ার কথা বলতো সব সময়। শেষ দু’মাস পড়েছি খুব। সেই সময়টা খেলা, ফেসবুক কিছুই করা হয় নি। ফিজিক্স আমার ফেভারিট সাবজেক্ট। ফিজিক্স নিয়েই পড়তে চাই ফিউচারে। তাই পিয়োর সায়ন্স নিয়েছি। খেলা কিন্তু ছাড়তে পারবোনা, ওটা ছাড়া যাবে না’। মায়ের আক্ষেপ অবশ্য অন্য জায়গায় – ‘এতো কম পড়ে যদি এই রেসাল্ট হয়, তবে আর একটু – একটু বেশী পড়তে কি পারতো না !’ আমরা অবশ্য সেই আক্ষেপে বেশী কান দিই না। অগ্নিবেশ, অগ্নিশুদ্ধ হোক তোমার আগামীর পথ, তোমার ক্রিকেট আর ফিজিক্স নিয়ে তুমি লেলিহান অগ্নিশিখার মতো উজ্জ্বল হয়ে আকাশ স্পর্শ করো, চিলেকোঠার আন্তরিক অভিনন্দন রইলো তোমার সাথে।



বন্ধুপ্রবর অমিতাভ সিরাজ, আজকাল পত্রিকার চিফ্‌ রিপোর্টার। ব্যক্তিগত পরিচিতি সূত্রে আগেই জানিয়ে রাখা ছিলো। তাই সরাসরি কথা হোল সবুজশ্রী সিরাজের সঙ্গে। রিনরিনে মিষ্টি মার্জিত গলা। শান্ত হয়ে এক এক করে উত্তর দিয়ে গেলো সব প্রশ্নের। ‘আওয়ার লেডী কুইন অফ দ্য মিশন, সল্টলেক থেকে আই.সি.এস.ই দিয়েছিলাম। 89% হয়েছে। রেসাল্টের দিন খুব টেনশন হচ্ছিল। আগে নিজে দেখবো বলে সবাইকে ঘর থেকে বার করে দিয়ে একা রেসাল্ট দেখতে বসেছিলাম নেটে’। ইন্সপিরেশন কে? ‘বাবা-মা দুজনেই, দুজনেই বন্ধু আমার’। আই.এস.সি-তে কি নিলে? ‘সায়েন্স উয়থ ইকনমিক্স। ফিউচারে ফিজিক্স বা ইকনমিক্স নিয়ে পরতে চাই। পরে ম্যাথ্‌স্‌ বা ফিজিক্স নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা’। মিষ্টি মেয়ের মিষ্টি গলায় নম্র অথচ দৃঢ় প্রত্যয়। খুব পড়তে? ‘না না, মোডারেট! ফেসবুক, গান, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প – সবই করতাম। তার সঙ্গে সিরিয়াসলি পড়াশোনাটাও করেছি অবশ্য’ – অকপট, ঈষৎ লাজুক স্বীকারোক্তি মেয়ের। আই.এস.সি-র কথা ভেবে একটু চিন্তিত – ‘দেখছি কোনো মিলই নেই আই.সি.এস.ই-র সঙ্গে। অনেক টাফ্‌ মনে হচ্ছে’। আগে থেকেই এতটা চিন্তা কোরো না সবুজশ্রী, তোমার উজ্জ্বল সবুজ স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ জীবনের পথে সঙ্গে আছেন পরম শুভানুধ্যায়ী দুই বন্ধু তোমার – তোমার বাবা-মা, ভরসা রেখো তাঁদের ওপর। চিলেকোঠার স্নেহাশীর্বাদ সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে তোমার আগামীকে শুভ্রতর, সুন্দরতম করুক।


আর যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল না, চিলেকোঠার তরফ থেকে তাদের জন্যও রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা। ভবিষ্যৎ জীবনে সাফল্য তোমাদের পদচুম্বন করুক, এই কামনাই করি।


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন