সম্পাদকীয়





সম্পাদকীয়



‘তুমি এলে মনে হয় যেতে চাই সেইখানে, সেই প্রিয় উপত্যকা, প্রজাপতি আর পর্বতের কাছে, যেখানে অচিন্তনীয় ঊষার শরীর আর স্বর্ণরঙ চন্দ্রিমার ছায়া আজো বেঁচে আছে। মানুষের সব প্রেম যেইখানে গোধূলির কাছে একটি সূর্যাস্ত হয়ে চিরকালে সমর্পিত হয় - তুমি এলে জন্ম নেয় সেই প্রেম, সেই চিরকাল, সেই পরম বিস্ময়।’ - কবি ফজল শাহাবুদ্দীন ।

বৈশাখ, বাংলা সনের প্রথম এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শকাব্দের দ্বিতীয় মাস। গ্রীষ্মের শুরু। নামটি এসেছে বিশাখা নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। রিক্ত চৈত্রের জীর্ণতাকে পরাভূত করে বৈশাখে বৃক্ষগুল্মলতা সুজলা, সুফলা, পূর্ণ যৌবনবতী। নতুন বৃষ্টির জলে সবুজ হয়ে ওঠে ধরিত্রী, ঘর বাঁধে পাখী।

বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিতে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে সমগ্র বাংলায়। নববর্ষে উৎসব উদযাপনের এই প্রথার প্রচলন করেছিলেন সম্রাট আকবর। সেই সময় চৈত্র সংক্রান্তির দিন বছরের সমস্ত খাজনা মিটিয়ে দিতে হতো – আর খাজনা মিটিয়ে দেওয়ার খুশীতে পরের দিন বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হতো। চৈত্র সংক্রান্তিতে খাজনা এখন মেটাতে হয় না বটে, কিন্তু উৎসব প্রিয় বাঙালি বর্ষবরণ উৎসবের হাজার বছরের এই কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে আজও বহন করে চলেছে সমান উদ্দীপনায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন উৎসব।

চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুবসংক্রান্তির দিন পালিত হয় চড়কপূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। মনে আছে, আমার মেয়েবেলায় এই খোদ কলকাতাতেও এই দিন থেকে শুরু হতো চড়ক সংক্রান্তির মেলা......পয়লা বৈশাখের দিন বিকেলবেলা নতুন জামা পরে বাবার হাত ধরে আমরা যেতাম সেই মেলায়। হরেক রকম মাটির ঘর সাজানোর মূর্তি - রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী, বিবেকানন্দ, গাউন পরা মেমের সঙ্গে টুপি মাথায় সাহেব; পাখী, গাছ, খেলনাবাটি, মাদুর, তালপাতার পাখা, তোলা উনুন, হাতা-খুন্তি-সংসারের হরেক খুটিনাটি, জিলিপি, বোঁদে, জিবে গজা, আরও কত কি যে... সব কেমন স্বপ্ন মনে হয়। সে উৎসব বড় স্নিগ্ধ ছিলো। আমাদের পরের প্রজন্মের কাছে তো এসব ‘বিগত শতাব্দীর রূপকথা’। 

এবছর নববর্ষে (পয়লা বৈশাখ, ১৪২১; ১৫ই এপ্রিল, ২০১৪) চিলেকোঠা ফেসবুক পরিবারের মুকুটে সংযোজিত হোল আরও একটি নতুন পালক। শুরু হোল মাসিক সাহিত্য আড্ডা, চিলেকোঠার বৈঠক।

এ মাসেই বিশ্বের আপামর বাঙালির প্রাণের উৎসব ২৫শে বৈশাখ......এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকার, সুরকার, গীতিকার, দার্শনিক আরো কত কি যে, এক কথায় বাঙালির প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতে তাঁর জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে তাঁর সেই পঁচিশ বছর বয়স থেকেই। দেশে থাকাকালীন জোড়াসাঁকোতে, শান্তিনিকেতনে, শিলাইদহে, আলমোড়ায়, দেশের বাইরে সুদূর আমেরিকার আরাবানায়, রেঙ্গুনে, চীনের পিকিং-এ, জাপান যাত্রার সময় প্রশান্ত মহাসাগর বক্ষে নলদেরা নামক জাপানী জাহাজে, প্যারিসে, পারস্যে, কোথায় নয়!! আজ তাঁর নিজের কথাতেই তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই - তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার, জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। 

আজ তাঁকে স্মরণ করেই প্রকাশিত হোল চিলেকোঠা ওয়েবজিন প্রথম বর্ষ, দশম সংখ্যা। এই সংখ্যার বিশেষ আকর্ষণ প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম রিয়াজ কাপুর-এর একটি একান্ত সাক্ষাৎকার ও প্রথম চিলেকোঠার বৈঠকের একটি বিশেষ প্রতিবেদন। 

আর থাকছে, রবীন্দ্র-বিষয়ক একটি মনোজ্ঞ প্রচ্ছদ নিবন্ধ ও একটি প্রবন্ধ, অনুবাদ কবিতা সহ আরো কবিতা, ছড়া, মুক্ত গদ্য, বিশেষ রচনা, অনুগল্প, ছোটগল্প, ধারাবাহিক, স্মৃতিচারণ, ইত্যাদি। এছাড়া, ছোটদের পাতা, রঙ ও তুলি, ফটোগ্রাফি, রান্নাঘর, হাস্যকৌতুক, জানেন কি, প্রভৃতি নিয়মিত বিভাগগুলি তো থাকছেই। আশা করি, ভালো লাগবে। 

সংশয় নেই, প্রতিবারের মতই এবারও পড়বেন মন দিয়ে; নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়ান, সুচিন্তিত মতামত জানিয়ে পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করুন। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আপনাদের একান্ত নিজস্ব পত্রিকাটির মানোন্নয়ণে সহায়তা করবে। 

জানি, সঙ্গে আছেন, সঙ্গে থাকবেন, ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা জানবেন।। 



নমস্কারান্তে, 

চিলেকোঠা ওয়েবজিনের সম্পাদকমণ্ডলী


1 মতামত: