ছোটগল্পঃ শুভজিত বসাক







ছোটগল্পঃ


নতুন পৃথিবীর জন্য
শুভজিত বসাক



নতুন পৃথিবীর জন্য
কলম নিয়ে বসেছিলাম সাদা কাগজে লিখব কিছু, হাতটা চেপে ধরে লেখনী বলল আজ সে রুক্ষ কাগজে নয়, আদিম প্রেমের খেলায় নিজেকে প্রকাশ করাতে চায় আমার মধ্যে। রুক্ষ কাগজে প্রকাশ হবে অন্যদিন।
লিখতে বসেছিলাম আজ সেই “পরকীয়া” মেয়েটির জন্য, সাদা কাগজই আজ তার জন্য বুঝি বরাদ্দ ছিল।এও বলে দিলাম রাতের বাহার, নিস্তব্দ্ধতা, স্বপ্নসব যা কিছু আছে তারই নিপূণতায় ভরাট করে নিও চিঠিখানি। মাঝে মাঝে মনে হয় “লেখনী” আর “পরকীয়া”এই দু’য়ের মাঝে আমি যুগযুগান্তরের বন্ধনী একটা,একজনের জন্যই অন্যজনের বহিঃপ্রকাশ, তাই বুঝি কেউ আমাকে বাঁধা দেয় না। যুগ যুগ ধরে লেখকের আ্ত্মপ্রকাশ এদেরই মিলবন্ধনঘটাতে, তবু এরা কূটিল গণিতের মতোই মিলতে চায় না। কথার কারুকার্যতা সাময়িক হলেও চিরস্থায়ী নয়। আর এই প্রকাশেই “কলমের” জন্ম। জানান দিয়েছে পৃথিবীর শেষ হলে আবার একটা পৃথিবী আঁকতেই তো মিলি না “তিনজন”! 
রাতের বাহার, নিস্তব্দ্ধতা, স্বপ্ন তাই তো দিয়েছি তোমাকে উপহার, জীবনগুলো খুঁটিয়ে তোলো তো দেখি, জমা রেখো পরের “পৃথিবীর” জন্য!! 



পরকীয়া
“পরকীয়া” কথাটা শুনেই মেয়েটি চমকে উঠল। বলল, যদি সমাজ জানতে পারে আমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে। হায়না, নেকড়ের দল আমাকে ছিঁড়ে খাবে, নিজেকে একান্তে বলতে চাইলেও কেউই সেটা দেখবে না, দেখবে আমি পরকীয়ায় সামিল হয়েছি, রাতের সাথে পরকে আপন তনু দিয়েছি। না! তুমি আমাকে এমন প্রস্তাব দিও না, চলে যাও।
আমি বললাম, তুমি তো পরকীয়া শুনেই আঁতকে উঠছো, কিন্তু আসলে সে কি জানো? মৌচাকের মধ্যে মৌ-এর বাস, তার মধ্যেই “মোম” থাকে, সেইচাক ভেঙ্গে আনা মোম অন্ধকারে আলো দেয়। সে আলো কত ধীর কিন্তু মনোরম, অন্ধকারেই সে স্নিগ্ধতার জানান দেয়। লক্ষ্য করেছো সেই স্ব-প্রতিভআলোয় একটা সৃজনশীলতা আছে, নিস্তব্দ্ধ ভাবনা লুকিয়ে আছে? আমিও সেই পরকীয়া বাঁধনে নিজেকে বেঁধে ওই মোম আহরোণ করতে চাই, সেটা দিয়েতোমার কথাগুলো অন্ধকার কোণগুলোতে ছড়াতে চাই। মন দূর থেকে অনুধাবন করা সম্ভব নয়, তাকে সামনে থেকে করতে হয় সম্পর্কটা পুরো শিল্পীর তুলি আর ক্যানভাসের সাথে যোগস্থাপন। যে কূটিল সমাজকে তুমি ভয় করছো সেখানে অমানিশার কালো আঁধার ছড়িয়ে, তাতে না আছে প্রাণ না আছেদৃষ্টি, আমি সেই দৃষ্টি দিতে মোমের স্নিগ্ধতা দিতে চাই। দেখবে হয়তো কাব্যের শেষ কটা পৃষ্ঠা সাদা পড়ে থাকবে তোমারই গহন কোণে, আর মোমআহরোণকারী সে মৌএর বিষের জ্বালায় শেষ অবধি নিজের সৃষ্টিকেই দেখে যেতে পারবে না, মনেও থাকবে না কারো আমাকে।। ঠিক তখনই তোমারকথাগুলো বুঝবে মৌচাকের কুঠুরিতে আবদ্ধ নাকি লেখনীতেই আত্মপ্রকাশ কোনটি শ্রেয় ছিল তার কাছে।
বাইরের ঝোড়ো ঠান্ডা হাওয়াটা জানলাটাকে দমকা গতিতে বন্ধ করে দিল, কি জানি কি স্বর্গ নামিয়েছি সে দিকে কারো হুঁশ নেই, বদ্ধ ঘরটায় আমি,সেইমেয়েটি আর কতগুলো চিন্তার স্তূপ ছাড়া কেউ নেই, মোমের আলোটাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।।।।।……



উলঙ্গ মেয়ে
উলঙ্গ মেয়েটি চুপটি করে পড়ে আছে পুকুর পাড়ের ধারে, যে কিনা এত লজ্জার আভূষণে মোড়া ছিল সেই-ই পড়ে আছে আজ বিবস্ত্রা হয়ে। মুখটায় আজ আর লজ্জার লেশমাত্র নেই, নগ্ন বুকের উঁচু স্তনদ্বয় অনাবৃত, হাতদুটোও যেন আজ আর লজ্জা ঢাকতে মৌন! খালি স্ত্রীঅঙ্গটা আবৃত এক মৃত শিশুর অর্ধেক বিশ্বে প্রবেশিত লাশ দ্বারা! উফ্! কি ভয়ঙ্কর, কি পৈশাচিক জান্তব দৃশ্য এ, যেন শত শত স্বর্গীয় অপ্সরার অর্ধনগ্ন দেহও বুঝি ম্লান এই মৃত পার্থিব রমনীর কাছে, দেবতার শিষ্য যে আমরা! তাই এই দান তোমারই প্রাপ্য….

রাতের আকাশ সকলই দেখছে তার প্র্রজাপতির ডানার ন্যায় কোটি নক্ষত্রের সমাহার-বেষ্টিত শোভার মায়া ছড়িয়ে,তার সেই শোভায় আছে কবির কলম চলবার সামর্থ্য। কিন্তু সে ঐ রমনীর দিকে গ্রাহ্যই করে না,বলে বাগানে কিছু মৃত ফুলের খবরে তার কি লাভ? তার কাজ মিথ্যে মায়ায় জড়িয়ে কবিকে বিবশ করে মায়াজাল বুনতে দেওয়া! সৃষ্টির কান্ডারীকে মৃত লাশের কথায় বিভ্রান্ত করলে সে তার মায়াবী রূপের কথা লিখবে না, আর কি লাভ আছে মিথ্যে প্রতিবাদ লিখে? তার চেয়ে তোরা প্রেম কর, সম্ভোগ কর, সৃষ্টি কর কবির কাছে সেসব তুলব ধরে, ইনাম পাবি অনেক! কবির কলম নগ্ন নারীমূর্তি আঁকে, তার সিক্ত বসনে নারীশোভা ফুটে ওঠে, কিন্তু মেয়েমানুষের লাশ যতই বিবস্ত্রা হোক, বেদনাময় জীবন হোক সে কথা ঠাঁইও পাবে না কখনো।



একটা নারীর মর্যাদা তার জীবনকালে কেবল নগ্ন শরীরেই, মনের কোনো মূল্য নেই, সেই কথার ভাষা নেই,ভাষার কোনো আঁধার নেই! মৃত্যুর পরে ওমন ভাবে বিবস্ত্রা হয়ে পড়ে রইলে স্বর্গোদ্যানেও তা শোভা কিঞ্চিত বাড়ায় না, কেবলই লাশের পচন লাগার দুর্গন্ধ ভেসে আসে, মুখ চাপা দিয়ে দেবতারাও চোখ ফিরিয়ে চলে যায়, আর আমরা তো শ্রেষ্ঠ জীব! ভুল তো একটু হবেই আমাদের দ্বারা!


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন