জানেন কি ? জগাই














জানেন কি ?

কালাপাহাড়
জগাই



কোন ব্যক্তি প্রচলিত প্রথা বা সংস্কারাদির বিনাশক হইলে তাহাকে “কালাপাহাড়” বলে।

কিন্তু কে এই কালাপাহাড় ?

কালাপাহাড় ছিলেন দেববিদ্বেষী জনৈক মুসলমান সেনাপতি। মুসলমান ঐতিহাসিকগণ তাহাকে “রাজু” নামে অভিহিত করেন। ইহার প্রকৃত নাম রাজচন্দ্র, রাজকৃষ্ণ বা রাজনারায়ণ । ইনি অসমের কামরূপ অঞ্চলের পোরাসুঠায়, পোরাসুঠার কালাসুঠান ও কালাযবন নামে খ্যাত।

কথিত আছে, এই কালাপাহাড় প্রথমে হিন্দু ব্রাহ্মণ ছিলেন। কোন নবাব কন্যার প্রণয়পাশে আবদ্ধ হইয়া তিনি মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু মুসলমান ইতিহাসে কালাপাহাড়কে আফগান বলিয়া বলা হইয়াছে। ইহার ন্যায় হিন্দুবিদ্বেষী মুসলমান আর কখনও দেখা যায় নাই।

কালাপাহাড়ের জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যেকোন প্রকারেই হোকনা কেন, হিন্দুদের লাঞ্ছনা করা। আর সেইজন্য তাহার সময়কালে দেবমন্দির ভঙ্গ, দেববিগ্রহ চূর্ণ এবং হিন্দুদের নিধন করিয়া গিয়াছেন। পূর্বে অসম, পশ্চিমে কাশী এবং দক্ষিণে উড়িষ্যার মধ্যে যত অখ্যাত-বিখ্যাত হিন্দু দেবমন্দির ছিল, তাহার একটাও কালাপাহাড়ের ধ্বংসের হাত হইতে পরিত্রাণ পায় নাই। ঐসকল দেবালয়ের মধ্যে কোনটি ভগ্ন, কোনটি অঙ্গহীন বা কোনটি একেবারে ধূলিসাৎ হইয়াছে। পূর্বে প্রবাদ ছিল, কালাপাহাড়ের আগমনসূচক কাড়ানাকাড়া বাজিলে দেবমূর্তি কম্পিত হইত।

কালাপাহাড় প্রথমে বাংলার নবাব সুলেমান কিরাণির ও পরে তাহার পুত্র দাউদের সেনাপতি ছিলেন। ইনি ১৫৬৫ খৃষ্টাব্দে উড়িষ্যা অভিযান করিয়া দেশটি জয় করেন এবং রাজা মুকুন্দদেবকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া জগন্নাথদেবের মূর্তি পোড়াইয়া ভস্মসাৎ করেন। এ সম্বন্ধে শ্রীক্ষেত্রের মাদলপঞ্জীতে লিখিত আছে :-

“মুকুন্দদেবের রাজত্বের অন্তিমকালে কালাপাহাড় উড়িষ্যায় প্রবেশ করেন। যুদ্ধে মুকুন্দদেব পরাজিত হন। তৎপরে মুকুন্দদেবের পুত্র গৌড়িয়া গোবিন্দ রাজা হইলে কালাপাহাড় পুরী লুন্ঠন করিতে আগমন করেন। পাণ্ডারা জগন্নাথদেবের মূর্তি লইয়া গড় পারিকুদে লুকাইয়া রাখেন। কালাপাহাড় এই সংবাদ পাইয়া জগন্নাথবিগ্রহ আনাইয়া দগ্ধ করিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দেন। সেই পাপে কালাপাহাড়ের হাত-পা খসিয়া যায়, ও তাহাতেই তাহার মৃত্যু হয়”।

পরন্তু কালাপাহাড়ের মৃত্যু সম্বন্ধে আকবরনামায় এইরূপ লিখিত আছে যে, “যখন মোগল সেনাপতি মুনিম খাঁ, দাউদকে ধরিবার জন্য কটকে উপস্থিত হন, সেইসময় কালাপাহাড় ও কয়েকজন আফগান সেনানায়ক কাকসাল অধিকার করেন। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই ১৫৮০ খৃষ্টাব্দে মোগলবাহিনীর সাথে ভয়ংকর এক যুদ্ধে কালীগঙ্গার তীরে মোগলবাহিনীর তোপের আঘাতে কালাপাহাড় ভূলুন্ঠিত হন”।


1 মতামত:

  1. দেবাশিস কাঞ্জিলাল৫ মে, ২০১৪ এ ৭:২১ PM

    কালাপাহাড়ের কথা অমৃত সমান
    উল্টোপাহাড় এলো ওই,বলে পুণ্যবান ।
    :D

    উত্তরমুছুন