সম্পাদকীয়



সম্পাদকীয়ঃ


প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চৈত্র; বাংলা সনের দ্বাদশ ও সমাপনী এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শকাব্দের প্রথম মাস। বসন্তের শেষ। নামটি এসেছে চিত্রা নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে।

চিরনবীন ঋতুরাজের কনিষ্ঠা কন্যা, চৈত্রের বাসন্তী প্রকৃতিতে বকুলে-পারুলে-অশোকে-শিমুলে-পলাশে-কৃষ্ণচূড়ায় রঙের আগুন, মুকুলে মুকুলে মধুকরের গুঞ্জরন, অকারণ কুহুরবে কোকিলের ব্যকুলতা, দিবস-শর্বরী নবপত্রালিকায় নবীন দখিণা সমীরণের আকুলি বিকুলি; কনকচাঁপা আর করবীর সুঘ্রাণী সুমিষ্ট সুবাসে প্রকৃতি মাতাল। কবিচিত্তও আলুলায়িত বিচিত্র প্রেমে পরিপূর্ণ। 

এই বছর এই মাসেই ছিল দোলযাত্রা। দোলযাত্রা বা হোলি উৎসব সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলি মূলতঃ দুই প্রকার - প্রথমটি দোলযাত্রার পূর্বদিন পালিত বহ্ন্যুৎসব হোলিকাদহন বা মেড়াপোড়া সংক্রান্ত এবং দ্বিতীয়টি রাধাকৃষ্ণের দোললীলা বা ফাগুখেলা কেন্দ্রিক কাহিনী। এগুলি ছাড়াও এই দিনটির একটি ধর্মনিরপেক্ষ তাৎপর্যও আছে। এই দোলপূর্ণিমার দিনটিতেই শান্তিনিকেতনে উদযাপিত হয় বসন্তোৎসব; রঙের উৎসব, সৌভ্রাতৃত্বের উৎসব হিসাবে যা বিশ্ববিখ্যাত।

আদিগন্ত বিস্তৃত বোরো ধানের নয়নাভিরাম গাঢ় সবুজ প্রান্তর আর কচি আমের অপূর্ব সুগন্ধে চারিদিক যতই ম’ ম’ করুক চৈত্র তবুও বেলা শেষের ভগ্ন আসরের সুরমুর্ছনায় দীর্ণ। বছরের সব আনন্দ উৎসব শেষ। কিন্তু কালের রথচক্রে শেষ বলে তো কিছুই নেই!! তাই শূণ্য চৈত্র, রিক্ত চৈত্র বিবর্ণ, জীর্ণ, হতাশার ম্লান স্মৃতিকে ধুয়ে মুছে সুন্দর আগামীর বার্তা নিয়ে আসে বৈশাখের দ্বারে। নতুন বছর আসে নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা নিয়ে।। 

চিরনূতনের সেই চিরন্তন আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকাশিত হোল চিলেকোঠা ওয়েবজিন প্রথম বর্ষ, নবম সংখ্যা। এই সংখ্যায় থাকছে গানের সুরের জাদুকর শাচীন কত্তাকে নিয়ে লেখা একটি মনোজ্ঞ প্রচ্ছদ নিবন্ধ, তিনটি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ, একটি অনুবাদ কবিতাসহ আরো কবিতা, রম্যরচনা, ছয়টি ছোটগল্প, দুইটি ধারাবাহিক, কৌতুক নাটিকা, ফটোগ্রাফি, রঙ ও তুলি, ইত্যাদি। এছাড়া, চিলেকোঠা সরগরম, ছোটোদের পাতা, হাস্যকৌতুক, রান্নাঘরের মতো নিয়মিত বিভাগগুলি তো থাকছেই। আশা করি, ভালো লাগবে। 

সংশয় নেই, প্রতিবারের মতই এবারও পড়বেন মন দিয়ে; নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়ান, সুচিন্তিত মতামত জানিয়ে পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করুন। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আপনাদের একান্ত নিজস্ব পত্রিকাটির মানোন্নয়ণে সহায়তা করবে।


জানি, সঙ্গে আছেন, সঙ্গে থাকবেন, ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা জানবেন।। 



নমস্কারান্তে, 

চিলেকোঠা ওয়েবজিনের সম্পাদকমণ্ডলী


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন