কবিতা - আকাশ দত্ত



কবিতাঃ

পাখিমানুষ
আকাশ দত্ত


আমার জানলার পাশ দিয়ে যে লোকটা প্রতিদিন দুপুর নিয়ে আসে, তার নাম অপেক্ষা। কাঠের বাঁকের মত একটা মস্ত বড় ঝোলা নিয়ে। তাতে নানারকম খাঁচা। আর অদ্ভুত রকমের পাখি। বেশীরভাগই অচেনা। মা বলে ওই লোকটা নাকি দুষ্টু। ডেরায় বসে রঙ করে চেনাপাখিদের গায়ে। আমার বিশ্বাস হয়না। সামান্য রঙ কি চেনামুখ অচেনা করে দিতে পারে? বোধহয় পারে। কিংবা পারে না। আমার কিন্তু পাখিওয়ালাটাকে বেশ লাগে। কি সুন্দর শিস দিতে পারে। ওই ভাষায় সে পাখিদের সাথে কথাও বলে। গান গায়। সুখদুঃখের আলাপ করে। আমি কোনদিন লোকটার থেকে পাখি কিনিনি। তবুও আমার ভালো লাগে। পাখি মনে হয় নিজেকে। আর এই দেওয়ালঘড়ি টেবিল আর আলনাটাকে পাখিওয়ালা। এরা আমায় নিজের ভাষায় কথা বলতে শেখায়। রঙ লাগতে শেখায়। স্বপ্ন দেখায় বিক্রী হয়ে যাওয়ার। হয়ত কোনদিন। পাখি হয়েই। আজকাল সে আর সময়মত আসে না। হয়তো ইচ্ছে করেই। হয়তো সব পাখি তার বেচা হয়ে গেছে। পাছে আমি তাকে আবার পাখিওয়ালা আর নিজেকে পাখি ভেবে নিই। বছর পেরিয়ে গেলে পুরোণো ক্যালেন্ডার যেমন একা হয়ে যায়, নতুন করে তেমন একা কেউ আর হতে চায় না। ঠিক বেলা দুটোর থমকে যাওয়া জানালার মত। আমি একা হতে হতে কতবার দেখেছি দুবার ঘন্টা পড়া ছাড়া দুই আর বারো সংখ্যাদুটো ঠিক ততখানিই পাখি। আসলে গত ফাগুনে সে হয়তো জেনে গেছে পালকের মরসুমে শিসগুলো বড় একা হয়ে যায়। নিজের নিজের পাখিওয়ালার কাছে। না থেকেও।


2 মতামত: