প্রচ্ছদ নিবন্ধ - ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়



প্রচ্ছদ নিবন্ধঃ

গানের সুরের রাজপুত্র
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়


‘বাক্য যেখানে শেষ হইয়াছে সেইখানেই গানের আরম্ভ’ – রবীন্দ্রনাথ । 

গান বাঙালির বড় প্রিয় অবলম্বন । সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায়, প্রেমে-বিরহে গানই তার শেষ আশ্রয় । “গানকে ভালোবেসেছে বলেই সে গানকে আদর করে আপন হাতে আপন মনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরী করতে চেয়েছে”। আধুনিক বাংলা গান প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এই কথাগুলি বলেছিলেন ১৯৩৬ এ ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে সংগীতের স্থান’ প্রবন্ধে । বাঙালির গান শোনার কান তৈরী হওয়ার সেটা প্রথম যুগ । গত শতকের তিরিশের দশক - বাঙ্গালির পরিশীলিত সাঙ্গীতিক রুচির শুরুয়াত হয়েছে সবে মাত্র । শুধু সাঙ্গীতিক রুচিই বা বলি কেন ? বাঙালি মননের উর্বর ভূমিতে তখন নানান ধারার সৃষ্টির প্রাচুর্য । বাংলা চলচ্চিত্র সবাক হয়েছে, রবীন্দ্র প্রভাব বলয়ের বাইরে আধুনিক বাংলা কবিতার পথচলা শুরু হয়েছে বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুধীন্দ্র নাথ দত্ত প্রমুখের প্রবল আবির্ভাবে, বাংলা গানে লালচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণ চন্দ্র দে, আঙ্গুর বালা, কমলা ঝরিয়া, ইন্দুবালা, কে মল্লিকদের যুগ পেরিয়ে এসেছেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক, যুথিকা রায়, সুধীরলাল চক্রবর্তী, জগন্ময় মিত্র, শচিনদেব বর্মণরা । 

তিরিশ থেকে ষাটের দশক ছিল বাংলা গানের ‘সোনার দিন, প্রাণভরে আধুনিক বাংলা গান শোনার দিনও । আর বাংলা গানের সেই সোনার দিনের নির্মাণ যাঁদের হাতে হয়েছিল তাঁদের এক অগ্রজন ছিলেন শচিন দেববর্মণ । আধুনিক বাংলা গানের গায়কীর অনেকটাই তৈরী করে দিয়েছিলেন শচিন দেববর্মণ । হওয়ার কথা ত্রিপুরার রাজা, হয়ে গেলেন আধুনিক বাংলা গানের মুকুটহীন রাজা । ‘সব ভুলে যাই তাও ভুলিনা বাংলা মায়ের কোল’ আজও যে গান তার সুরের মায়ায় আমাদের দুলিয়ে দেয় । 

ইতিহাস বিস্মরণের এই দিনে কতজনই বা মনে রাখি সেই সুরের যাদুকরকে ? আমাদের সংবেদনশীলতা কি ক্ষণিকের জন্যেও চমকে উঠেছিল এই সংবাদ জেনে যে সেই মায়াবী সুরের স্রষ্টার সহধর্মিনী শিল্পী নবতিপর মীরা দেববর্মণের শেষ জীবনের আশ্রয় হবে মুম্বাই শহরতলীর বারো ফুট বাই দশফুট ঘরের এক বৃদ্ধাশ্রমে, যার ত্রিপুরার রাজবধু হওয়ার কথা ছিল ? আর মুম্বাই ফিল্ম জগতে শচিনদেবের অবদান আর নিজেরও প্রতিষ্ঠার মূলে যে মানুষটার অবদান সবচেয়ে বেশি তাও ভুলে গিয়েছিলেন শচিনদেবেরই পুত্রবধু আশা ভোসলে । সে সময়ে রাহুলদেবও চলে গেছেন । মুম্বাই ফিল্ম জগতও চমকে ওঠেনি । বৃদ্ধাশ্রমের কতৃপক্ষও জানলেন কে এই বৃদ্ধা, যখন মীরাকে সম্মানিত করার কথা জানিয়ে ত্রিপুরা সরকারের চিঠি তাদের ঠিকানায় পৌছেছিল । 

শচিনদেবের জন্ম কুমিল্লাতে । পিতা ঈশাণ চন্দ্র মাণিক্যের মৃত্যুর পর সিংহাসন থেকে বঞ্চিত হয়ে চলে আসেন কুমিল্লাতে । সেখানেই জন্ম শচিনদেবের । বাল্য ও কৈশোরে দিনগুলো কাটে কুমিল্লাতেই, কলেজ শিক্ষাও । পিতা চেয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার পর পুত্র আগরতলায় ফিরে এসে রাজকার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন , কিন্তু শচিন আবদ্ধ হলেন সুরের মায়ায় । চেতনায় তখন ত্রিপুরার বাঁশের বাশি, ভাটিয়ালির সুর, মাঝিমাল্লাদের জীবন ও জীবিকার সুর, গোমতী নদীর অপরূপ ছন্দ, কুমিল্লার গাছ-গাছালি, নদী-নালা আর মাঝি-মাল্লাদের মাটির গন্ধমাখা সুর । জীবন সায়াহ্নে শচিনদেব আত্মকথায় বলেছিলেন “কেন জানিনা জ্ঞান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটির টান অনুভব করে মাটির কোলেই থাকতে ভালোবাসতাম । আর বড় ভালো লাগত সেই সহজ সরল মানুষগুলোকে, গুরুজনরা যাদের সাধারণ লোক। যাইহোক, অসাধারণের দিকে না ঝুঁকে আমি ওই সাধারণ লোকের মাঝেই নিঃশেষে বিলিয়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে এক হয়ে গেলাম শৈশব থেকেই”(‘শচিন কর্তা’/পান্নালাল রায়) । 

আসলে শচিনদেবের সঙ্গে কুমিল্লার সংস্পর্শ না বললে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলা সম্পূর্ণ হয় না । আগরতলা তাঁকে দিয়েছিল পারিবারিক আভিজাত্য, কুমিল্লা দিয়েছিল সুর আর বাকি জীবনের চলার ছন্দ, কলকাতা দিয়েছিল শচিনদেবের প্রতিষ্ঠা আর মুম্বাই দিয়েছিল যশ ও খ্যাতির আকাশ । ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত আত্মকথায় তিনি নিজেই লিখেছিলেন “খতিয়ে দেখলে আমার এ জীবনকে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায় । শৈশব ও কৈশোরের দুরন্তপনা গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লায়, যৌবনের উন্মত্ততা ভাগীরথীর তীরে কলকাতায় – যা জীবনে প্লাবন এনে দিয়েছিল এবং প্রৌঢ়ত্বের ছোঁয়া দিল আরব সাগর - এই মুম্বাইতে । রাজ পরিবারের আভিজাত্য গায়ে মেখেও শচিনদেব মাটির প্রতি মমত্ব বোধ আর মাটির গন্ধমাখা সুর আহরণ করে আধুনিক বাংলা গানের পথচলার কায়দাটাই যেন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন । কলকাতা বেতার কেন্দ্রে প্রথম গান গাইলেন ১৯২৫এ, তখন সবে কলকাতা বেতারের প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯২৪এর অগস্ট মাসে । শচিনদেবের প্রথম গ্রামফোন রেকর্ড প্রকাশিত হল ১৯৩২এ হিন্দুস্থান রেকর্ড থেকে । তাঁর কিছুটা আনুনাসিক কন্ঠস্বরের জন্য প্রথমে তখনকার মুখ্য রেকর্ড কোম্পানী এইচ এম ভি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল । হিন্দুস্থান থেকে প্রথম রেকর্ড প্রকাশের পর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি । 

ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সন্তান হওয়ার পারিবারিক আভিজাত্য শচিনদেবের শিল্পী হয়ে ওঠা বা প্রতিষ্ঠায় অনুঘটকের কাজ করেনি বিন্দুমাত্র, বরং কিছুটা অভিমানই ছিল রাজ পরিবারের প্রতি । ১৯৪৪এ স্থায়ীভাবে মুম্বাই চলে যাবার পর ত্রিপুরার প্রতি ভালোবাসার টান থাকলেও রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ হতে থাকে । ১৯৪৬এর পর শচিনদেব আর আগরতলায় যাননি । কোন রাজপরিবারের আভিজাত্যের ছাপ না থাকা মীরা দাশগুপ্তাকে বিবাহ আগরতলায় তাঁর পরিজনরা মেনে নেয় নি । তাঁর অভিমান ও রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার কারণ হয়তো এটাই । সহধর্মিনী মীরার সঙ্গীত শিক্ষার প্রথম পাঠ শান্তি নিকেতনে, পরে শচিনদেবের কাছেই সঙ্গীত শিক্ষা । কলকাতায় থাকা কালীন ১৯৩৮এর ফেব্রুয়ারিতে শচিনদেব বিবাহ করেন ছাত্রী মীরাকে । মীরা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন, শান্তিনিকেতনে অমিতা সেনের কাছে নাচ ও অনাদি দস্তিদারের মত মানুষের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখেছিলেন । নিজে গানের রেকর্ড করেছিলেন এবং শচিনদেবের সহকারী ছিলেন, নিজেও মুম্বাইতে ফিল্মএ গান করেছেন, লিখেছেনও অনেক গান ।

এক আশ্চর্য সাঙ্গীতিক আভিজাত্যের মোড়ক তাঁকে মর্যাদা মন্ডিত করেছিল । কৃষ্ণ চন্দ্র দের কাছে গান শিখেছিলেন, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে । হিন্দি সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনায় গগনচুম্বি খ্যাতি পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেকে এক মর্যাদামন্ডিত ‘ধুতি-পাঞ্জাবি পরা বাঙালি’ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে দেননি কাউকে, কলকাতার শহুরে বাংলা’ ভাষাও রপ্ত করার কোন চেষ্টা করেন নি , ভোলেননি কুমিল্লার ভাষাভঙ্গি । “সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল” এ শুধু তাঁর গানের পংক্তি নয়, আশ্চর্য বৈভব মন্ডিত শচিনদেবের সঙ্গীত জীবনের চলার ছন্দ । আবার এপার বাংলার প্রতি অনেক অভিমানও ছিল শচিনদেবের । বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নারায়ন চৌধুরীকে বলেছিলেন “... আজ যদি কেউ আমাকে কলকাতা থেকে প্রস্তাব করে পাঠাত, তোমাকে পাঁচশো টাকা করে মাসোয়ারা দেব, তুমি আবার আমাদের মধ্যে ফিরে এসো, আমি তন্মুহুর্তে মুম্বাই-এর তল্পিতল্পা গুটিয়ে কলকাতা চলে আসতুম – আবার সেই পুরনো দিনের মত গানে গানে মেতে উঠতুম’ । জীবন সায়াহ্নে নিজের উপলব্ধি লিখে গেছেন তিনি “নিজের শুধু এই পরিচয় যে আমি বাংলা মায়ের সন্তান এবং আমার সুরসৃষ্টি সমগ্র ভারতবাসীর সম্পদ – আমার সুর ভারতবর্ষের প্রতীক” (সূত্রঃ’ শচিন কর্তা’/পান্নালাল রায়) । 

শচিনদেব প্রথম গানের রেকর্ড করেন ১৯৩২এ আর শেষ গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয় ১৯৬৯এ । এই দীর্ঘ ৩৭ বছরে শচিনদেব রেকর্ডে বাংলা গান গেয়েছেন মাত্র ১৩১টি । ১২৭টি একক এবং ৪টি দ্বৈত কন্ঠে স্ত্রী মীরার সঙ্গে । এর একটা কারণ শচিনদেব অন্যের সুরে গান প্রায় গাইতেনই না, এবং নিজের পছন্দ মত গীতিকার ছাড়া অন্যের গীত রচনাতেও গান গাইতেন না । বাংলা গানের জগতে শচিনদেবের গৌরবময় প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক বাংলা গানের মোড় ঘুরিয়ে দেবার ঘটনায় আরো দুজন মানুষের কথা একই সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন – তারা হলেন শচিনদেবের কুমিল্লার সাথী সুরসাগর হিমাংশু দত্ত ও গীতিকার অজয় ভট্টাচার্য । তাঁর গাওয়া ১৪১টি বাংলা গানের মধ্যে সুরসাগর হিমাংশু দত্তর সুরে ৮টি, কাজী নজরুলের সুরে ৬টি ছাড়া সব গানই গেয়েছিলেন নিজের সুরে । শচিনদেবের বেশিরভাগ লোকপ্রিয় গানের গীত রচনা করেছিলেন অজয় ভট্টাচার্য । আধুনিক বাংলা গানের গায়ন শৈলীতেই এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন । শুধুমাত্রে ঈষৎ আনুনাসিক ও দরাজ কন্ঠস্বরের জন্যই নয়, বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় আত্মীয়তার ফলে বাংলার লোক সুর আর মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে মিশে তাদের সুর তুলে এনেছিলেন আর আশ্চর্য দক্ষতায় শাস্ত্রীয় সুরের সঙ্গে মাটির সুরের মিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা গানকে দান করেছিলেন অপার ঐশ্বর্য । শচিনদেব তাঁর জীবন কথায় লিখে গেছেন “১৯৩০ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত এই ৫/৬ বছরে লোকসঙ্গীত ও ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের সংমিশ্রনে নিজস্ব ধরণের সুর রচনা করলাম – যা অন্য কারো সঙ্গে মিললো না । এইভাবে আমি আমার নিজস্ব গায়কী সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলাম”(সূত্র- ‘শচিনকর্তা’/পান্নালাল রায়) । এই পর্বে ‘আমি ছিনু একা বাসর জাগায়ে’(১৯৩৬), কিংবা ‘প্রেমের সমাধি তীরে’ (১৯৪০)র মত রাগাশ্রয়ী আধুনিক গান কিংবা লোক সুরের মিশ্রণে ‘সেই যে বাঁশি বাজাবার দিনগুলি’(১৯৫১), ‘ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের জলে’(১৯৫১), কিংবা ষাটের দশকের শেষ দিকে রেকর্ড করা ‘মন দিল না বধু’, ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা’ এখনো গানপ্রিয় বাঙালির হৃদয়ে দোলা দেয় । অথচ আমাদের অপার বিস্ময় বাংলা ছায়াছবি শচিনদেবের সুরের ঐশ্বর্য প্রায় বর্জনই করেছিল । ১৯৩২এ বাংলা ছায়াছবি সবাক হওয়ার পর ১৯৩৮এর মধ্যে মাত্র ৫/৬টি বাণিজ্যিক ভাবে অসফল বাংলা ছায়াছবিতে তিনি গান গেয়েছিলেন ।

একথাও মনে করা যেতে পারে যে শচিনদেবের সাঙ্গীতিক রুচি ও আভিজাত্য সেকালের ছায়াছবির জগতের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি । তিনি অন্যের সুরে গান করতেন না । সঙ্গীত পরিচালক অন্য কেউ হলেও তাঁর গীত গানের সুর তিনি নিজেই করতেন । শুধুমাত্র একটি ছায়াছবিতে নজরুল ইসলামের সুরে একটি গান করতে সম্মত হয়েছিলেন । আর একটি সর্ত থাকত তাঁর, তাঁর গাওয়া গান ছবির কোন চরিত্রের কন্ঠে থাকবে না, শুধুমাত্র নেপথ্য দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে গীত হবে । কিন্তু ক্ষতি যে বাংলা চলচ্চিত্রের হয়েছিল তাতে সংশয় নেই । বাংলা ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসাবেও শচিনদেব কোন সুযোগ পাননি । ১৯৩২এ বাংলা ছায়াছবি সবাক হওয়ার পর দুটি অসফল ছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন, তারপর কোন প্রযোজক, পরিচালক তাঁকে ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার সুযোগ দেন নি । কোন ডাক না পেয়ে কিছুটা অভিমান নিয়েই বাংলা ছেড়ে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন । ১৯৪২এ মুম্বই যাওয়ার প্রথম ডাক পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । চেয়েছিলেন বাংলাতেই থাকার । কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্র জগত থেকে কোন ডাক না পেয়ে অভিমানাহত হয়ে ১৯৪৪এ মুম্বাই চলে গেলেন পাকাপাকি ভাবে । ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর আত্মকথনে (মার্চ ১৯৬৯) শচিনদেব লিখেছিলেন “বাংলা চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করার আকাঙ্খা ছিল খুব । কিন্তু কোন সুযোগই পাচ্ছিলাম না ......। কোথাও কোন চলচ্চিত্র সংস্থা আমাকে সঙ্গীত পরিচালনার সুযোগ না দেওয়াতে মনে খুবই দুঃখ হয়েছিল” । তাই ১৯৪৪এ দ্বিতীয়বার যখন মুম্বাই থেকে ডাক পেলেন, আর ফিরিয়ে দিলেন না ।


তারপর হিন্দি সিনেমার গান তাঁর সুরের জাদুতে কি অসামান্য উচ্চতা স্পর্শ করেছিল তা তো ইতিহাস হয়ে আছে । মুম্বাই সিনেমার গান ঐশ্বর্যময়ী হয়ে উঠলো বাংলার মাটির সুরের স্পর্শে আর বাংলা ছায়াছবি কোন শচিনদেবের ছোঁয়া পেল না । কিন্তু যেটুকু পেয়েছে বাংলা সঙ্গীত জগত তাই বা কম কি ? শচিনদেব চলে গেছেন আজ প্রায় চার দশক হ’ল(মৃত্যু- ৩১ অক্টবর ১৯৭৫)। বাংলা সঙ্গীত ভান্ডারে যে ১৩১টা গান রেখে গেছেন শচিনদেব, আজও সব প্রজন্মের মানুষ অবাক বিস্ময়ে শোনেন, দোলায়িত হন তাঁর সুরের মায়ায় ।


1 মতামত:

  1. দেবাশিস কাঞ্জিলাল৪ এপ্রিল, ২০১৪ এ ৬:২১ PM

    এবারের প্রচ্ছদ নিবন্ধ- গানের সুরের রাজপুত্র। গতবারের মতই এই নিবন্ধটি লিখে আমাদের ওয়েবজিনকে সম্বৃদ্ধ করলেন শ্রদ্ধেয় ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়,আমাদের সবার প্রিয় মানুষ 'ফাল্গুনী দাদা'।
    লেখাটি সম্পূর্ন পড়ার শেষে প্রথমেই যে কথাটি মনে এল, কতটা যত্ন নিয়ে কত তথ্য খুঁজে খুঁজে আহরণ করে শচীন দেব বর্মনের এমন মনোজ্ঞ একটি চরিত-কথা কত স্বচ্ছ ভাষায় তিনি সাজিয়েছেন। কত অজানা তথ্য জানা গেল শিল্পীর বিষয়ে, সেই কারনেই ফাল্গুনীদাদাকে কৃতজ্ঞতা জানাই

    উত্তরমুছুন