রান্নাঘর - শকুন্তলা দে , ইন্দ্রানী মুখার্জী



রান্নাঘরঃ

ডিমের পাকোড়া
শকুন্তলা দে



চিলেকোঠায় আজ অনেক বন্ধুরা এসেছে, তাই ভাবছি একটা নতুন চটপট কিছু বানিয়ে খাওয়াব। ঘরে যা সব সময়ই থাকে তাই দিয়েই বানাই,কি বলো??

৫/৬ টা ডিম নিয়ে ফাটিয়ে নিলাম, এবারে এতে মিহি করে ৩টে পেঁয়াজ কুঁচিয়ে দিলাম, এর সাথে সামান্য আদা কুঁচি আর পরিমান মতো কাঁচা লঙ্কা কুঁচিয়ে দিলাম, বেশ ভাল করে এটাকে ফ্যাটিয়ে নিলাম, নিশ্চয়ই ভাবছ এ আবার কি, এতো প্রায় রোজ সকালেই আমরা বানাই, ঠিক, এই পর্যন্ত আমরা সবাই জানি। 

এবারে নতুন কিছু বানাব, সবার বাড়িতেই সুজি থাকে, সেই সুজি এবারে এই ফ্যাটানো মিশ্রণটার মধ্যে এমন ভাবে মেশাতে হবে যাতে মিশ্রণটা খুব পাতলাও হবে না আবার খুব শক্ত হবে না। এবারে কড়াইয়ে সর্ষের তেল অথবা সাদা তেল দিয়ে বেশ গরম করে নিয়ে চামচে করে এই মিশ্রণটা দিতে হবে। ছোট ছোট পাকোড়ার মতো দেখতে হবে, হাল্কা লাল করে ভেজে নিয়ে নানা রকম সস এর সাথে সুন্দর করে সাজিয়ে তোমাদের সামনে রাখা হল। এবারে তোমরা খেয়ে বলো কেমন হয়েছে......।।




জ্বালানো-ইলিশ 
ইন্দ্রানী মুখার্জী



এই ইলিশ মাছের রান্নাটি খেতেও যেমন ভালো,তেমনি রান্নাও করা যায় খুব তাড়াতাড়ি। তোমরা একবার চেষ্টা করে দেখো,তোমাদেরও ভালো লাগবে আশা করি। প্রথমে ইলিশের টুকরো ভালো করে ধুয়ে নাও।তারপরে একটি কড়াতে মাছের টুকরোগুলিতে পরিমাণ মত হলুদ,লঙ্কাগুঁড়ো,সামান্য চিনি,নুন ভালো করে মাখাও। মাখানোর সময় হাতে দু'চামচ সর্ষের তেল মেখে নিও। মাখা হয়ে গেলে সামান্য একটু জল নিয়ে হাতের তেল-মশলা ধুয়ে সেই জলটি মাছেরওপরে ছড়িয়ে দাও। এবারে বেশ কিছুটা সর্ষের তেল আর কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা ঐ মশলা-মাখা মাছের ওপরে ভালো করেছড়িয়ে দিয়ে গ্যাসে বসিয়ে কড়াটি একটি ঢাকা দিয়ে দাও। এবারে ৫ থেকে ৭ মিনিট রান্না হবার পরে সাবধানে ঢাকা তুলে মাছের টুকরোগুলি উলটে দাও। আবার ঠিক একই ভাবে সীম-আঁচে মাছগুলিকে৫থেকে৭মিনিট রান্না হতে দাও। তারপরে গ্যাস বন্ধ করে মাছগুলি ঢাকা অবস্থায় কিছুক্ষণ রেখে দাও। ব্যস,হয়ে গেল তোমার জ্বালানো-ইলিশ। এই ইলিশ এবারে গরমভাতের সঙ্গে পরিতৃপ্তি করে খাও,আর আমাকে জানাও কেমন লাগল তোমাদের এই খুব সহজ অল্প সময়ের রান্নাটি । 




কুমীরের লেজ-ভাজা
ইন্দ্রানী মুখার্জী 


আমেরিকার ফ্লোরিডাতে এই রান্নাটি করে সবাইকে খাওয়ানো ও নিজে স্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। যদিও আমাদের দেশে কুমীরের মাংস পাওয়া যায় না,তবু তোমরা কখন কেউ সে দেশে গেলে এই রান্নাটি করে দেখতে পারবে এই আশা নিয়েই রান্নাটি এখানে শেয়ার করলাম। 

এই রান্নার জন্য লাগবে কিছুটা 'সীজনিং-সল্ট'। এই সল্ট যদিও কিনতে পাওয়া যায় ওদেশে,বাড়িতেও নিজেরা খুব ভালো করে তা বানিয়ে নেওয়া যায়। যদি নিজেরা বানাতে চাও তবে এমনি সাদা সাধারণ নুনের সাথে কিছুটা করে অনিয়ন পাঊডার,গার্লিক পাঊডার,জিঞ্জার পাঊডার আর লঙ্কা-গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করেচামচ দিয়ে নাড়তে হবে।কিছু সময় পরে ওই সাদা নুনের রঙ লালচে হয়ে যাবে। ব্যস,তৈরী হয়ে গেল তোমার 'সীজনিং-সল্ট'। ও দেশে পেঁয়াজ,আদা,রসুনের পাউডারগুলি কৌটোতে পাওয়া যায়। 

রান্না শুরুর প্রথমে ৫০০ গ্রামের মত কুমীরের মাংস ভালো করে ধুয়ে থেঁতো করে নিতে হবে। ও দেশে সাধারণতঃ মাংস-থেঁতো করার এক রকমেরযন্ত্র পাওয়া যায়। কিন্তু অভাবে হামান-দিস্তা দিয়েও থেঁতো করা যেতে পারে। এবারে ওই থেঁতো হওয়া নরম মাংসকে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে,যেমন ছবিতে আছে সেই রকম করে। তারপরে একটি বড়ো বাটিতে কিছুটা ময়দার সাথে কিছুটা সীজনিং-সল্ট দিয়ে জল মিশিয়ে বেসনের মত ঘন করেগুলতে হবে। আরেকটি বাটিতে দুটো ডিম ফেটিয়ে রাখতে হবে। এর পরে একটি প্যান বা কড়াতে বেশ কিছুটা বাদাম তেল নিয়ে খুব ভালো করে ফুটে ওঠা পর্যন্ত গরম করতে হবে। এবার ওই মাংসের টুকরো প্রথমে ফেটানো ডিমে চুবিয়ে তারপরে ঐ ময়দা-গোলাতে চুবিয়ে গরম তেলেছাড়তে হবে। এবার বেশ সোনালী করে ভেজে তুলতে হবে কুমীরের মাংসের টুকরো গুলিকে। 

এই গরম গরম কুমীরভাজা এবারে পরিবেশন করতে হবে টোম্যাটো-কেচাপ বা সয়া-সসের সাথে। হ্যাঁ,একটা কথা বলি,এই রান্নাটি কিন্তু কুমীরের অভাবে অন্য যে কোন মাংসেও করা যেতে পারে বলে আমার মনে হয়। তাই এ দেশে নেহাতই কুমীর না পেলে অন্য কোন মাংস দিয়ে একবার চেষ্টা করেই দেখবে না কি তোমরা ?


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন