হাস্যকৌতুক - দেবাশিষ কাঞ্জিলাল




হাস্যকৌতুকঃ

দেবাশিষ কাঞ্জিলাল


আজ শিবরাম চক্রবর্তী একটি গল্প মনে পড়ল । একটু আধটু এদিক ওদিক হলে মার্জনা করতে হবে, স্মৃতি থেকে লিখছি তো ! 

শিবরামের স্কুলের সংস্কৃতের পন্ডিতমশাই ছাত্রদের সব সময়ে সাধুভাষায় কথা বলতে বলতেন। চলিত ভাষায় কথা বললে শাস্তি দিতেন, যে কারণে সব ছাত্ররাই তাঁকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত। 

একদিন এক ছাত্র ভীড় বাসে ঊঠে দেখে সেখানে আগে থেকেই পন্ডিত মশাই মজুত হয়ে আছেন ! ছাত্রটি সাধু ভাষার ভয়ে পরের স্টপেজে নেমে যাবার প্ল্যান করে লুকিয়ে গেটের দিকে এগোতে গিয়ে হতবাক হয়ে গেল একটি ঘটনা দেখে ! 

সে সব ভয় ভুলে তারস্বরে সাধু ভাষায় চেঁচিয়ে উঠল,'পন্ডিত মশাই,ব্যগ্র হন কল্য,ব্যগ্র হন কল্য' ! 

পন্ডিত মশাই তার চিৎকারে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে ভাবতে শুরু করলেন, ছাত্রটি ঠিক কি বলতে চাইছে ! সে ব্যগ্র হতে বলছে কেন ? কি বিষয়েই বা ব্যগ্র হতে বলছে ? আর যদি নেহাতই ব্যগ্র হতেই হয়, তবে তা কল্য, মানে কালকে কেন ? আজই বা নয় কেন ? কিন্তু চলন্ত ভীড় বাসে এদিক থেকে ওদিকে এতো সব প্রশ্নের সমাধান করা খুব শক্ত ! ছাত্রটিও তাঁর দিকে খুব ব্যগ্র হয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাতে সে যথেষ্ঠ সাফল্য পেয়ে উঠছে না ! 

যাইহোক, অবশেষে ছাত্রটি তাঁর কাছে ভীড় সাঁতরে এসে পৌঁছনোর পরে পন্ডিত মশাই তাকে প্রশ্ন করলেন, সে কি বলতে চাইছিল ? ছাত্রটি খুব কুন্ঠিত হয়ে জানালে, 'এক ব্যক্তি আপনার ব্যাগটি পকেট মারছিল, তাই আমি আপনাকে সতর্ক করছিলাম। আমি বলেছিলাম, ব্যাগ গ্রহন করল, ব্যাগ গ্রহন করল ! পন্ডিত মশাই প্রথমে পকেটে হাত দিলেন, ব্যাগ পেলেন না, তারপরে নিজের কপালে হাত দিয়ে করাঘাত করলেন, এবং সব শেষে ছাত্রটির গণ্ডে এক বিশাল চপেটাঘাত করে বললেন, 'আরে বাঁদর, পকেট মারছে বলতে কি হয়েছিল তোর' ? ছাত্রটি করুণ মুখে গালে হাত বোলাতে বোলাতে বললে, 'আমি পকেটমারকে সাধু ভাষায় কি বলে তা জানি না বলে সে কথা বলতে পারিনি, আপনি যদি চলিত ভাষায় কথা বলার জন্য শাস্তি দেন, সেই ভয়ে পকেট মারছেও বলতে পারি নি' । সেই থেকে পন্ডিতমশাইয়ের ছাত্রদের সাথে সাধু ভাষায় কথা বলার বাতিক একেবারেই উবে গেছিল !


1 মতামত: