একটি শিশুর মানসিক বিকাশ ও তার বাবা মা-এর সাথে সম্পর্ক
নন্দিনী সেনগুপ্ত চক্রবর্তী
সম্পর্ক কাকে বলে? যে ভাবে দুজন মানুষ বা আরও অনেক মানুষ নিজেদের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করেন, তাকে বলে সম্পর্ক। আমরা যখন পৃথিবী তে আসি, একা আসি। ক্রমে জ্ঞান হবার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ। মানুষে মানুষে সম্পর্কের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে অনেক কিছু। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার একটি বিশেষ আগ্রহ আছে, সেই জন্য আমি এই বিষয়টি লেখার জন্য বেছে নিলাম। পরবর্তী কালে 'সম্পর্ক ' নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে রইল।
একটি শিশু যখন প্রথম পৃথিবীতে আসে, তার মা ও বাবার তখন অনেক দায়িত্ব, কিভাবে তার সাথে চলা উচিৎ বা কথা বলা উচিৎ, তার উপর নির্ভর করে শিশুটির পরবর্তী জীবনের অনেক কিছু। প্রত্যেকের জীবনের একটি বিশেষ অংশ জুড়ে থাকে তার মা-এর সঙ্গে, তারপর বাবা। তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা ও আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে মানুষের স্বভাব চরিত্র ।
সারা পৃথিবী তে এখন Behavioral science নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, এবং তাঁরা অনেক নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছেন। এখনকার মানুষ তাদের মন খারাপ বা মানসিক রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে আর দ্বিধা বোধ করেন না।
এক বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল একবার, সেই প্রয়োজনীয় তথ্য ডায়েরি তে লিপিবদ্ধ করে রেখে ছিলাম, আজ আমি সেই লেখার ভিত্তিতে আমার পাঠকের সাথে কিছু তথ্য বিনিময় করে নিতে বসেছি ।
১) আমরা মাঝে মাঝে ভুল এ যাই যে, একটি শিশুর মানসিক বিকাশ শুরু হয়ে যায়, যখন থেকে সে মাতৃগর্ভে থাকে। সেই জন্য প্রতিটি মায়ের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে তাঁর সন্তানের মানসিক বিকাশের উপর।
২) শৈশব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অধ্যায়। একটি কিশলয়কে যেমন আঘাত করলে সে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য, তেমনই একটি ছোট শিশু ও তার নরম মনকে খুব সাবধানে ও সযত্নে এবং মনোযোগ সহকারে পরিচালিত করা উচিৎ।
৩) শিশুকে ভালোবাসা দিতে হবে, অনেক চাকুরীজীবী মায়েরা অনেক সময় মনে করেন, তিনি যখন তার সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না, তখন বাজার থেকে কিনে আনা খেলনা বা উপহার দিয়ে শিশুকে তার ভালবাসার নিদর্শন দেখাবেন; কিন্তু একটি বাজারের কেনা বস্তু কখনই মা-বাবার ভালোবাসার পরিপূরক হতে পারে না। কোন কিছুই মা-এর জায়গা নিতে পারে না। আপনি আপনার সন্তানের সাথে আপনার সুখ-দুঃখ বিনিময় করুন, তাকে গল্প পড়ে শোনান, তাতে সে অনেক তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসবে বা আপনাকে বুঝতে পারবে।
৪) সন্তানের প্রতি ভালবাসা বা আদর তার কাছে অফুরন্ত ভাবে প্রকাশ করতে হবে। সে ব্যাপারে যেন কোথায়ও কোন কম না থাকে।
৫) কখনও অন্য কোন শিশু বা কারুর সাথে নিজের সন্তানের তুলনা করা উচিত না, প্রত্যেকের আলাদা স্বভাব চরিত্র, আমাদের হাতের পাঁচটি আঙ্গুল, প্রত্যেকে সমান প্রয়োজনীয় ও আলাদা।
৬) আপনার সন্তানের গুণ বা ভাল দিকগুলো খেয়াল করে তাকে সবসময় উৎসাহ দিতে হবে এবং মনে করিয়ে দিতে হবে, এতে তার আত্মসম্মানবোধ ও মনোবল ( Confidence) বেড়ে উঠবে।
৭) কখনই কারুর জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ সহজ হতে পারে না, কার জীবনে কখন যে দুর্বিপাক আসবে কেউ বলতে পারে না, সেই জন্য সেই সময় কে মোকাবিলা করার মত করে নিজের সন্তান কে গড়ে তুলতে হবে। তার নিজের কাজটি তাকে দিয়ে করানো বা কঠিন সময় তার সাথে আলোচনা করা বা তার মতের মূল্য দেওয়া, এগুলো বিশেষ প্রয়োজন।
৮) প্রত্যেক দিন বা সপ্তাহে একদিন সমস্ত পরিবারের একসাথে বসা এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা এবং একে অপরের গুণ বা ভাল দিকগুলি আলোচনার মাধ্যমে মনে করিয়ে দেয়া বিশেষ প্রয়োজন। তাতে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা বা Bonding তৈরি হয়।
৯) সন্তানের কাজের বা তার কীর্তির সবসময় প্রশংসা করা উচিত, কিন্তু এমন কিছুর প্রশংসা করা উচিত না, যাতে তার কোন কৃতিত্ব নেই। যেমন, তার চেহারার প্রশংসা না করে তার দ্বারা কোন কাজের প্রশংসা করুন।
১০) সন্তানের সমালোচনা করা বা তার সাথে কারুর তুলনা করা কিম্বা তার ক্ষমতার বাইরে তার থেকে কিছু আশা করা, এতে আপনার প্রতি আপনার সন্তানের ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে। সুতরাং এই সব ব্যাপারগুলো কে কখনও প্রশ্রয় দেবেন না।
১১) এখনকার ছোট পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেইজন্য সবসময় একে অপরকে খুশী করা বা প্রশংসা করার চেষ্টা করবেন, তাতে সংসারে একটি ঘরোয়া ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে, যেটি শিশুর বিকাশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে আমার বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, সবসময় আপনার সন্তানের সম্বন্ধে ইতিবাচক (Positive) মনোভাব রাখা দরকার। তাকে আপনার ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে রাখতে পারলে একদিন সে একটি যথার্থ মানুষ হওে উঠতে পারবে। এই বলে আজকের মতো আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম।
নন্দিনী সেনগুপ্ত চক্রবর্তী
সম্পর্ক কাকে বলে? যে ভাবে দুজন মানুষ বা আরও অনেক মানুষ নিজেদের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করেন, তাকে বলে সম্পর্ক। আমরা যখন পৃথিবী তে আসি, একা আসি। ক্রমে জ্ঞান হবার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্ক ও যোগাযোগ। মানুষে মানুষে সম্পর্কের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে অনেক কিছু। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার একটি বিশেষ আগ্রহ আছে, সেই জন্য আমি এই বিষয়টি লেখার জন্য বেছে নিলাম। পরবর্তী কালে 'সম্পর্ক ' নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে রইল।
একটি শিশু যখন প্রথম পৃথিবীতে আসে, তার মা ও বাবার তখন অনেক দায়িত্ব, কিভাবে তার সাথে চলা উচিৎ বা কথা বলা উচিৎ, তার উপর নির্ভর করে শিশুটির পরবর্তী জীবনের অনেক কিছু। প্রত্যেকের জীবনের একটি বিশেষ অংশ জুড়ে থাকে তার মা-এর সঙ্গে, তারপর বাবা। তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা ও আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে মানুষের স্বভাব চরিত্র ।
সারা পৃথিবী তে এখন Behavioral science নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, এবং তাঁরা অনেক নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে চলেছেন। এখনকার মানুষ তাদের মন খারাপ বা মানসিক রোগ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে আর দ্বিধা বোধ করেন না।
এক বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল একবার, সেই প্রয়োজনীয় তথ্য ডায়েরি তে লিপিবদ্ধ করে রেখে ছিলাম, আজ আমি সেই লেখার ভিত্তিতে আমার পাঠকের সাথে কিছু তথ্য বিনিময় করে নিতে বসেছি ।
১) আমরা মাঝে মাঝে ভুল এ যাই যে, একটি শিশুর মানসিক বিকাশ শুরু হয়ে যায়, যখন থেকে সে মাতৃগর্ভে থাকে। সেই জন্য প্রতিটি মায়ের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে তাঁর সন্তানের মানসিক বিকাশের উপর।
২) শৈশব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অধ্যায়। একটি কিশলয়কে যেমন আঘাত করলে সে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য, তেমনই একটি ছোট শিশু ও তার নরম মনকে খুব সাবধানে ও সযত্নে এবং মনোযোগ সহকারে পরিচালিত করা উচিৎ।
৩) শিশুকে ভালোবাসা দিতে হবে, অনেক চাকুরীজীবী মায়েরা অনেক সময় মনে করেন, তিনি যখন তার সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না, তখন বাজার থেকে কিনে আনা খেলনা বা উপহার দিয়ে শিশুকে তার ভালবাসার নিদর্শন দেখাবেন; কিন্তু একটি বাজারের কেনা বস্তু কখনই মা-বাবার ভালোবাসার পরিপূরক হতে পারে না। কোন কিছুই মা-এর জায়গা নিতে পারে না। আপনি আপনার সন্তানের সাথে আপনার সুখ-দুঃখ বিনিময় করুন, তাকে গল্প পড়ে শোনান, তাতে সে অনেক তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসবে বা আপনাকে বুঝতে পারবে।
৪) সন্তানের প্রতি ভালবাসা বা আদর তার কাছে অফুরন্ত ভাবে প্রকাশ করতে হবে। সে ব্যাপারে যেন কোথায়ও কোন কম না থাকে।
৫) কখনও অন্য কোন শিশু বা কারুর সাথে নিজের সন্তানের তুলনা করা উচিত না, প্রত্যেকের আলাদা স্বভাব চরিত্র, আমাদের হাতের পাঁচটি আঙ্গুল, প্রত্যেকে সমান প্রয়োজনীয় ও আলাদা।
৬) আপনার সন্তানের গুণ বা ভাল দিকগুলো খেয়াল করে তাকে সবসময় উৎসাহ দিতে হবে এবং মনে করিয়ে দিতে হবে, এতে তার আত্মসম্মানবোধ ও মনোবল ( Confidence) বেড়ে উঠবে।
৭) কখনই কারুর জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ সহজ হতে পারে না, কার জীবনে কখন যে দুর্বিপাক আসবে কেউ বলতে পারে না, সেই জন্য সেই সময় কে মোকাবিলা করার মত করে নিজের সন্তান কে গড়ে তুলতে হবে। তার নিজের কাজটি তাকে দিয়ে করানো বা কঠিন সময় তার সাথে আলোচনা করা বা তার মতের মূল্য দেওয়া, এগুলো বিশেষ প্রয়োজন।
৮) প্রত্যেক দিন বা সপ্তাহে একদিন সমস্ত পরিবারের একসাথে বসা এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা এবং একে অপরের গুণ বা ভাল দিকগুলি আলোচনার মাধ্যমে মনে করিয়ে দেয়া বিশেষ প্রয়োজন। তাতে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা বা Bonding তৈরি হয়।
৯) সন্তানের কাজের বা তার কীর্তির সবসময় প্রশংসা করা উচিত, কিন্তু এমন কিছুর প্রশংসা করা উচিত না, যাতে তার কোন কৃতিত্ব নেই। যেমন, তার চেহারার প্রশংসা না করে তার দ্বারা কোন কাজের প্রশংসা করুন।
১০) সন্তানের সমালোচনা করা বা তার সাথে কারুর তুলনা করা কিম্বা তার ক্ষমতার বাইরে তার থেকে কিছু আশা করা, এতে আপনার প্রতি আপনার সন্তানের ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে। সুতরাং এই সব ব্যাপারগুলো কে কখনও প্রশ্রয় দেবেন না।
১১) এখনকার ছোট পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেইজন্য সবসময় একে অপরকে খুশী করা বা প্রশংসা করার চেষ্টা করবেন, তাতে সংসারে একটি ঘরোয়া ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে, যেটি শিশুর বিকাশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে আমার বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, সবসময় আপনার সন্তানের সম্বন্ধে ইতিবাচক (Positive) মনোভাব রাখা দরকার। তাকে আপনার ভালবাসা ও স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে রাখতে পারলে একদিন সে একটি যথার্থ মানুষ হওে উঠতে পারবে। এই বলে আজকের মতো আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম।
নন্দিনী সেনগুপ্ত চক্রবর্তী , শিশুর মানসিক বিকাশে বাবা মা-এর সাথে শিশুর সম্পর্ক বিষয়ে যে সংগৃহীত তথ্যমূলক প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন তা' খুবই সঠিক । আজকাল অনু-পরিবারে শিশুরা যে ভাবে অবহেলিত হয়,সে বিষয়েও বাবা-মায়ের সচেতনতা নিয়ে আলোকপাতের অবকাশ আছে । তা' ছাড়া তথাকথিত শিক্ষিত কিছু মা-বাবা তাঁদের সন্তানকে সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে শিশুদের প্রতি যে নিষ্ঠুরতা ও অবহেলা দেখান,তা' এখন এক সামাজিক সমস্যায় দাঁড়িয়েছে । আশা করি সে বিষয়ে আরও কিছু আমরা জানতে পারব ভবিষ্যতে।
উত্তরমুছুনbheeshon proyojoneeyo o gurottwopurno ekti lekha..apnar kachh theke erokom aro lekha pabo asha rakhi
উত্তরমুছুনdarun ekti lekha............asole amra vabi j sishu ra khb ekta bhoje na..ei dharonata vul.........thnx Nandini Sengupta chakraborty...
উত্তরমুছুনআপনাদের আমার আন্তরিক ধন্যবাদ, আপনাদের উৎসাহে আমার লেখার ইছহে অনেক বেড়ে গেল ।দেবাশিস কাঞ্জিলাল, Baijayanta Raha, n Tapas4u....
উত্তরমুছুন