সুন্দরী শিলং অসামান্য আসাম
তন্ময় গুপ্ত
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩
বেজায় গরম কলকাতায়, আমার ছেলে জন্টির স্কুলে গরমের ছুটি। আমার অফিসের ইয়ার এন্ড সেরে আমিও একটু হাল্কা । তাই ঠিক হল চল শিলং। কদিনের প্রাক্ যাত্রার উত্তেজনার শেষে আজ চলেছি। দমদম বিমানবন্দর থেকে ঘণ্টা খানেক বিমান যাত্রায় এসে গেছি গুয়াহাটি বিমানবন্দর। একটা ক্যাব নিয়ে এখন চলেছি পাহাড়ি রাস্তায়।
এসে গেলাম মেঘের দেশে। মেঘালয়। পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে কালো হয়ে এল চারপাশ । নিকষ কালো। দুপুর দুটোতেই সব গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠল। পাশের পাহাড় গুলোর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পাহাড়ের গায়ে একসারি দিয়ে আগুন জ্বলছে। বহুদূর পর্যন্ত সে আগুনের রেখা ঘিরে রেখেছে পাহাড়ের তলদেশ। অন্ধকারের মাঝে মনে হল যেন স্বয়ং মহাদেব এর পায়ের মল, নাকি গিরিকন্যার পা এর নূপুর ! খানিক পর পর ঝিরঝির, কখনও বা ঝমঝম।
শিলং শহরে এসে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। উঁচু নিচু, আঁকা বাঁকা পিচের রাস্তা । পোলো বাজারের অর্কিড হোটেলে আমাদের ঘর বুক করা ছিল। চমৎকার হোটেল। কাল যাব চেরাপুঞ্জি।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩
চেরাপুঞ্জি, প্রায় ৪৫০০ কিমি উচ্চতা। যে দিকে দু চোখ যায় সে দিকেই উঁচু পাহাড়। হাল্কা মেঘের চাদরে আবৃত। এখানেই দেখলাম নহকালিকাই ফলস। একে নাকি সেভেন সিস্টার ফলস ও বলে। সাত বোন কে পাশাপাশি দেখাও গেল। সাতটি ঝর্ণা ঝরে চলেছে অবিরাম। অতল গভীরে মাওডক ভ্যালি, যেখানে প্রায় ৮ প্রকার সবুজ আর ৫ প্রকার হলুদ রঙ এর অরণ্য, কিছু কিছু জায়গা লাল পাতায় ভরতি কোন এক নাম না জানা গাছ।
এরপর আজকের চমকপ্রদ ঘটনা। আমরা যাচ্ছি ১৫০ মিটার বিস্তৃত একটা প্রাকৃতিক গুহা দেখতে । গাইড বলল, যাদের হৃদয় দুর্বল তারা গুহায় প্রবেশ করবেন না, গিন্নী সেই শুনে গুহার সামনে এসে বললেন ‘আমি অহল্যার প্রতীক্ষা নিয়ে এই বসলাম’; জন্টি বলে, ‘মাস্ট গো’। তাই বাপ-বেটা তে প্রবেশ করলাম গুহা তে। ক্রমশই সঙ্কীর্ণ হতে লাগল গুহার পথ। এবার আর সোজা হয়ে এগোনো যাচ্ছে না। কখনও হামাগুড়ি দিয়ে, কখনও বা কাত হয়ে আবার কখনও ফাটলের মধ্যে নিজেকে ঢুকিয়ে এগোতে লাগলাম।
স্যাঁতস্যাঁতে ভিজে ভিজে পাথরের ওপর একটু দাঁড়ানোর মতো জায়গা তে এসে আবিস্কার করলাম আমাদের বাকি সঙ্গীরা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তারা ফিরে গেছে। সামনে বেশ গভীর গর্ত, ধারে অসমান পিছল পাথর। আমরা না পারছি এগোতে না পারছি পিছতে। আমরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে, এমন সময় গলার আওয়াজ পেলাম একটা, খুব মৃদু। খানিক পর পিছন দিক থেকে একজন স্থানীয় গাইড এল। তার সাহায্যে ওই জায়গাটা পেরলাম। এরপরের রাস্তা জলের ধারায় প্লাবিত। অবিরত জলের ফোঁটা টুপুং টুপুং শব্দে বেজে চলেছে। সাবধানে পিছল পথ পেরিয়ে...বাইরের আলো !! দেখতে পেলাম প্রতীক্ষারতা শবরীকে।
১৬ই এপ্রিল, ২০১৩
এই একটু আগেই ফিরলাম। আজ দেখলাম এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গল্ফ এর মাঠ, সুবিশাল ক্যাথিড্রাল চার্চ। স্টেট মিউজিয়াম এ খাসি, জয়ন্তিয়া আর গারো উপজাতির দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এখানে রাখা বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্রের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালাম। ঢোলক এর আয়তন দেখে অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম যন্ত্রীর আয়তন কত বিশাল হতে পারে! কয়েকটা ঢোল এতটাই চওড়া আর তাদের বাজাতে হলে দুই প্রসারিত হাতের বিস্তার কতটা হওয়া উচিত, এর ওপর দুই করতল রাখতে হবে দুই পাশের চামড়ার ওপর !!! নাহ! মেলাতে পারছিলাম না!!
এলিফ্যান্টা ফলস যে হস্তী সদৃশ পাথরের নামানুসারে, তা আজ কালের গর্ভে বিলীন। ১৮৫৬ বা ৫৭ সালে ভূমিকম্পে সেটি ধসে যায়। ২৫০ টি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। ওই ঝরঝর ঝর্ণা, ও রুপালী বর্ণা। সুবিশাল বড়াপানি হ্রদ এ ঢোকার সময় মন আনমনা। মেঘলা আকাশ, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, লেক-এর ধারে একটা শেড এর নিচে চেয়ার এ বসে এক মাগ কফি হাতে দেখছি চেনা- অচেনা গাছের হুল্লোড়, তখনই দেখলাম তাকে! আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দরী! অমলতাস ছাড়া এত সুন্দরী আর কাউকে দেখিনি। বেশ বড় গাছ, ঝিরঝিরে পাতা, আকাশী রঙের ফুল ভরে আছে। সে বড় সুন্দর নীল। বৃক্ষতল ও নীলাম্বরী হয়ে আছে ঝরা ফুলে।
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩
বেজায় গরম কলকাতায়, আমার ছেলে জন্টির স্কুলে গরমের ছুটি। আমার অফিসের ইয়ার এন্ড সেরে আমিও একটু হাল্কা । তাই ঠিক হল চল শিলং। কদিনের প্রাক্ যাত্রার উত্তেজনার শেষে আজ চলেছি। দমদম বিমানবন্দর থেকে ঘণ্টা খানেক বিমান যাত্রায় এসে গেছি গুয়াহাটি বিমানবন্দর। একটা ক্যাব নিয়ে এখন চলেছি পাহাড়ি রাস্তায়।
এসে গেলাম মেঘের দেশে। মেঘালয়। পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে কালো হয়ে এল চারপাশ । নিকষ কালো। দুপুর দুটোতেই সব গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠল। পাশের পাহাড় গুলোর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পাহাড়ের গায়ে একসারি দিয়ে আগুন জ্বলছে। বহুদূর পর্যন্ত সে আগুনের রেখা ঘিরে রেখেছে পাহাড়ের তলদেশ। অন্ধকারের মাঝে মনে হল যেন স্বয়ং মহাদেব এর পায়ের মল, নাকি গিরিকন্যার পা এর নূপুর ! খানিক পর পর ঝিরঝির, কখনও বা ঝমঝম।
শিলং শহরে এসে মনটা আনন্দে ভরে উঠল। উঁচু নিচু, আঁকা বাঁকা পিচের রাস্তা । পোলো বাজারের অর্কিড হোটেলে আমাদের ঘর বুক করা ছিল। চমৎকার হোটেল। কাল যাব চেরাপুঞ্জি।
১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩
চেরাপুঞ্জি, প্রায় ৪৫০০ কিমি উচ্চতা। যে দিকে দু চোখ যায় সে দিকেই উঁচু পাহাড়। হাল্কা মেঘের চাদরে আবৃত। এখানেই দেখলাম নহকালিকাই ফলস। একে নাকি সেভেন সিস্টার ফলস ও বলে। সাত বোন কে পাশাপাশি দেখাও গেল। সাতটি ঝর্ণা ঝরে চলেছে অবিরাম। অতল গভীরে মাওডক ভ্যালি, যেখানে প্রায় ৮ প্রকার সবুজ আর ৫ প্রকার হলুদ রঙ এর অরণ্য, কিছু কিছু জায়গা লাল পাতায় ভরতি কোন এক নাম না জানা গাছ।
এরপর আজকের চমকপ্রদ ঘটনা। আমরা যাচ্ছি ১৫০ মিটার বিস্তৃত একটা প্রাকৃতিক গুহা দেখতে । গাইড বলল, যাদের হৃদয় দুর্বল তারা গুহায় প্রবেশ করবেন না, গিন্নী সেই শুনে গুহার সামনে এসে বললেন ‘আমি অহল্যার প্রতীক্ষা নিয়ে এই বসলাম’; জন্টি বলে, ‘মাস্ট গো’। তাই বাপ-বেটা তে প্রবেশ করলাম গুহা তে। ক্রমশই সঙ্কীর্ণ হতে লাগল গুহার পথ। এবার আর সোজা হয়ে এগোনো যাচ্ছে না। কখনও হামাগুড়ি দিয়ে, কখনও বা কাত হয়ে আবার কখনও ফাটলের মধ্যে নিজেকে ঢুকিয়ে এগোতে লাগলাম।
স্যাঁতস্যাঁতে ভিজে ভিজে পাথরের ওপর একটু দাঁড়ানোর মতো জায়গা তে এসে আবিস্কার করলাম আমাদের বাকি সঙ্গীরা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তারা ফিরে গেছে। সামনে বেশ গভীর গর্ত, ধারে অসমান পিছল পাথর। আমরা না পারছি এগোতে না পারছি পিছতে। আমরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে, এমন সময় গলার আওয়াজ পেলাম একটা, খুব মৃদু। খানিক পর পিছন দিক থেকে একজন স্থানীয় গাইড এল। তার সাহায্যে ওই জায়গাটা পেরলাম। এরপরের রাস্তা জলের ধারায় প্লাবিত। অবিরত জলের ফোঁটা টুপুং টুপুং শব্দে বেজে চলেছে। সাবধানে পিছল পথ পেরিয়ে...বাইরের আলো !! দেখতে পেলাম প্রতীক্ষারতা শবরীকে।
১৬ই এপ্রিল, ২০১৩
এই একটু আগেই ফিরলাম। আজ দেখলাম এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গল্ফ এর মাঠ, সুবিশাল ক্যাথিড্রাল চার্চ। স্টেট মিউজিয়াম এ খাসি, জয়ন্তিয়া আর গারো উপজাতির দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এখানে রাখা বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্রের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালাম। ঢোলক এর আয়তন দেখে অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম যন্ত্রীর আয়তন কত বিশাল হতে পারে! কয়েকটা ঢোল এতটাই চওড়া আর তাদের বাজাতে হলে দুই প্রসারিত হাতের বিস্তার কতটা হওয়া উচিত, এর ওপর দুই করতল রাখতে হবে দুই পাশের চামড়ার ওপর !!! নাহ! মেলাতে পারছিলাম না!!
এলিফ্যান্টা ফলস যে হস্তী সদৃশ পাথরের নামানুসারে, তা আজ কালের গর্ভে বিলীন। ১৮৫৬ বা ৫৭ সালে ভূমিকম্পে সেটি ধসে যায়। ২৫০ টি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। ওই ঝরঝর ঝর্ণা, ও রুপালী বর্ণা। সুবিশাল বড়াপানি হ্রদ এ ঢোকার সময় মন আনমনা। মেঘলা আকাশ, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, লেক-এর ধারে একটা শেড এর নিচে চেয়ার এ বসে এক মাগ কফি হাতে দেখছি চেনা- অচেনা গাছের হুল্লোড়, তখনই দেখলাম তাকে! আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দরী! অমলতাস ছাড়া এত সুন্দরী আর কাউকে দেখিনি। বেশ বড় গাছ, ঝিরঝিরে পাতা, আকাশী রঙের ফুল ভরে আছে। সে বড় সুন্দর নীল। বৃক্ষতল ও নীলাম্বরী হয়ে আছে ঝরা ফুলে।
khub valo laglo bhruman kahani ti
উত্তরমুছুনতন্ময় গুপ্তর শিলং ভ্রমন মনকে মুগ্ধ করল । চেরাপুঞ্জীর বর্ননা ভারী সুন্দর হয়েছে। মেঘালয়ে মৌসিনরামে এখন চেরাপুঞ্জীর থেকেও বেশী বৃষ্টি হয়। সেখানে তন্ময় গিয়েছিলেন কি না,তা' পরবর্তী অংশে আশা করি জানতে পারা যাবে। লেখাটির আকর্ষণ বাড়িয়ে ছবিগুলি খুব ভালো লাগল !
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর লাগলো ভ্রমণকাহিনীটি , তবে আরও পড়তে ইচ্ছে করছিল ... ছবিগুলো যে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন তা বলাই বাহুল্য । :)
উত্তরমুছুন