শ্রদ্ধার্ঘ্য পদ্মশ্রী মান্না দে
শ্যাম রায়
কতদূরে আর নিয়ে যাবে বল...না বেশি দূর যেতে হয়নি, কোলকাতা ১০ থেকে ১৩১, জায়গাটা নিউ ব্যারাকপুর সালটা ১৯৮৩ হবে ...ফুলবাগানে একদিন হটাৎ নিউ ব্যারাকপুর-চিড়িয়াখানা মিনিবাসের পিছনে বিজ্ঞাপনটা দেখেই মনস্থির, এ সুযোগ ছাড়া যায় না...
উনি এলেন—গাইলেন—জয় করলেন, সঙ্গী তবলায় আর এক দিকপাল, শ্রী রাধাকান্ত নন্দী আর ছিলেন টোপাদা, পারকারশন-এ। আসর জমে উঠেছে ... কাহারবা নয় দাদরা বাজাও গাইছেন, হঠাৎ বললেন, রাধাকান্ত তুমি দেখছি আসরটাকে করলে মাটি ... কখনও টোপাদাকে কিঞ্চিৎ টোকা, অবশ্যই উজ্জীবিত করার জন্যে ... আবার পরক্ষনেই, আহা কি বাজাচ্ছ, লোকে তো আমার গান না শুনে বাজনা শুনবে...সত্যি একটা সময় একটু ছেড়ে দিলেন, তখন শুধুই যন্ত্র বাজছে, আর আমরা মন্ত্র মুগ্ধের মতো মোহাবেশে আচ্ছন্ন, সবার কাছেই তখন মেজাজটাই তো আসল রাজা। কোন বিশেষণই বোধহয় যথেষ্ট নয় ... আহা দরদী গো, কি চেয়েছি, আর কি যে পেলাম ... আজও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল। একটি ছেলে দৌড়ে আসছে একটা গানের অনুরোধ নিয়ে ... স্বেচ্ছাসেবকরা হাঁ হাঁ করে উঠল, মান্না বাবু তাকে আদর করে ডেকে নিলেন ... ওদের বললেন, ছেড়ে দাও, কত আশা নিয়ে এসেছে, একটা গান শুনবে বলে, ওকে আসতে দাও ... সস্নেহে বললেন, বল ভাই, কি গান ... এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, খোলা মাঠে প্যান্ডেল করে অনুষ্ঠান , উনি সেদিনই বম্বে (তখনও মুম্বাই হয় নি) থেকে এলেন এবং শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন...আবার শুরু......।
এবার সবার দাবি, কফি হাউস...মুচকি হেসে বললেন, আমরা প্রকৃত অর্থেই বাঙালি, সেই কবে এক কাপ কফি খেয়ে ছিলাম, আজও ঠোঁটে লেগে আছে – বলেই শুরু করলেন ... কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ...কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই ... সত্যি সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, হারিয়ে গেল ওনার সাথে সাথে, অবসান হোল সংগীতময় এক যুগের । খুব ভোজন রসিক ছিলেন শুনেছি, আর তাইতো বুঝি, আমি শ্রীশ্রী ভজহরি মান্না যেন তাঁর নিজের কথা...।।
এর পরে দেখি ওনাকে মহাজাতি সদনে আরও কয়েক বছর বাদে, ততদিনে চলে গেছেন রাধাকান্ত বাবু। মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখলাম, পুরোপুরি অভিভাবক সুলভ ভঙ্গিতে ওনার ছেলে নীলকান্ত নন্দীকে উপস্থাপন করলেন, পরিচয় করিয়ে দিলেন সবার সাথে। সেদিনও আসর মাতিয়ে দিলেন, তবে আগের সেই মাঠের মেজাজটাই আজও জ্বলজ্বল করছে। আজও আকাশে, বাতাসে তাঁর সঙ্গীত ভেসে আসছে; ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে...। আক্ষেপ রয়ে গেল তাঁর বেড়ে ওঠার শহর তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারল না ...স্ত্রী বিয়োগের বেদনা তাঁকে বড় একা করে দিয়েছিল ... শেষ দিকটা কি সেই...নিরালায় বসে স্মরণ বীণ বেঁধে গেলেন !!
আজ বলতে ইচ্ছে করছে, অভিমানে চলে যেও না...এখনই শেষের গান গেও না , ভালবাসার রাজপ্রসাদে নিশুতি রাত আজ যে গুমরে কাঁদছে ...মুকুটটাই তো পড়ে আছে রাজাই শুধু নেই...
সঙ্গীত সাধক মান্না দে ... সারা জীবন শুধু দিয়েই গেলেন...সুর সাগরে আমাদের ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন...হৃদয়ের গান শিখে তো গায় যে সবাই, ক’জনায় তোমার মত গাইতে পারে...সঙ্গীতের জড়োয়ার ঝুমকো থেকে আসল মোতিটাই আজ খসে পড়ল...আসুন আমরা সবাই কুড়িয়ে নিই...।।
কতদূরে আর নিয়ে যাবে বল...না বেশি দূর যেতে হয়নি, কোলকাতা ১০ থেকে ১৩১, জায়গাটা নিউ ব্যারাকপুর সালটা ১৯৮৩ হবে ...ফুলবাগানে একদিন হটাৎ নিউ ব্যারাকপুর-চিড়িয়াখানা মিনিবাসের পিছনে বিজ্ঞাপনটা দেখেই মনস্থির, এ সুযোগ ছাড়া যায় না...
উনি এলেন—গাইলেন—জয় করলেন, সঙ্গী তবলায় আর এক দিকপাল, শ্রী রাধাকান্ত নন্দী আর ছিলেন টোপাদা, পারকারশন-এ। আসর জমে উঠেছে ... কাহারবা নয় দাদরা বাজাও গাইছেন, হঠাৎ বললেন, রাধাকান্ত তুমি দেখছি আসরটাকে করলে মাটি ... কখনও টোপাদাকে কিঞ্চিৎ টোকা, অবশ্যই উজ্জীবিত করার জন্যে ... আবার পরক্ষনেই, আহা কি বাজাচ্ছ, লোকে তো আমার গান না শুনে বাজনা শুনবে...সত্যি একটা সময় একটু ছেড়ে দিলেন, তখন শুধুই যন্ত্র বাজছে, আর আমরা মন্ত্র মুগ্ধের মতো মোহাবেশে আচ্ছন্ন, সবার কাছেই তখন মেজাজটাই তো আসল রাজা। কোন বিশেষণই বোধহয় যথেষ্ট নয় ... আহা দরদী গো, কি চেয়েছি, আর কি যে পেলাম ... আজও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল। একটি ছেলে দৌড়ে আসছে একটা গানের অনুরোধ নিয়ে ... স্বেচ্ছাসেবকরা হাঁ হাঁ করে উঠল, মান্না বাবু তাকে আদর করে ডেকে নিলেন ... ওদের বললেন, ছেড়ে দাও, কত আশা নিয়ে এসেছে, একটা গান শুনবে বলে, ওকে আসতে দাও ... সস্নেহে বললেন, বল ভাই, কি গান ... এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, খোলা মাঠে প্যান্ডেল করে অনুষ্ঠান , উনি সেদিনই বম্বে (তখনও মুম্বাই হয় নি) থেকে এলেন এবং শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন...আবার শুরু......।
এবার সবার দাবি, কফি হাউস...মুচকি হেসে বললেন, আমরা প্রকৃত অর্থেই বাঙালি, সেই কবে এক কাপ কফি খেয়ে ছিলাম, আজও ঠোঁটে লেগে আছে – বলেই শুরু করলেন ... কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই ...কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই ... সত্যি সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, হারিয়ে গেল ওনার সাথে সাথে, অবসান হোল সংগীতময় এক যুগের । খুব ভোজন রসিক ছিলেন শুনেছি, আর তাইতো বুঝি, আমি শ্রীশ্রী ভজহরি মান্না যেন তাঁর নিজের কথা...।।
এর পরে দেখি ওনাকে মহাজাতি সদনে আরও কয়েক বছর বাদে, ততদিনে চলে গেছেন রাধাকান্ত বাবু। মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখলাম, পুরোপুরি অভিভাবক সুলভ ভঙ্গিতে ওনার ছেলে নীলকান্ত নন্দীকে উপস্থাপন করলেন, পরিচয় করিয়ে দিলেন সবার সাথে। সেদিনও আসর মাতিয়ে দিলেন, তবে আগের সেই মাঠের মেজাজটাই আজও জ্বলজ্বল করছে। আজও আকাশে, বাতাসে তাঁর সঙ্গীত ভেসে আসছে; ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে...। আক্ষেপ রয়ে গেল তাঁর বেড়ে ওঠার শহর তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারল না ...স্ত্রী বিয়োগের বেদনা তাঁকে বড় একা করে দিয়েছিল ... শেষ দিকটা কি সেই...নিরালায় বসে স্মরণ বীণ বেঁধে গেলেন !!
আজ বলতে ইচ্ছে করছে, অভিমানে চলে যেও না...এখনই শেষের গান গেও না , ভালবাসার রাজপ্রসাদে নিশুতি রাত আজ যে গুমরে কাঁদছে ...মুকুটটাই তো পড়ে আছে রাজাই শুধু নেই...
সঙ্গীত সাধক মান্না দে ... সারা জীবন শুধু দিয়েই গেলেন...সুর সাগরে আমাদের ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন...হৃদয়ের গান শিখে তো গায় যে সবাই, ক’জনায় তোমার মত গাইতে পারে...সঙ্গীতের জড়োয়ার ঝুমকো থেকে আসল মোতিটাই আজ খসে পড়ল...আসুন আমরা সবাই কুড়িয়ে নিই...।।
jeno ei srrititorpon tukuri proyojon chhilo..khub bhalo laglo...Manna De amader baro hoye othar arek naam...
উত্তরমুছুনভালো লাগল
উত্তরমুছুন