অস্ফুটে
তনুশ্রী চক্রবর্তী
আজ তৃষ্ণার জন্মদিন। কততম? কে জানে ...
সে হিসাব আর কে রাখে...
সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে জানলাটা খুলে, বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা ভাল হয়ে গেলো। কি সুন্দর রোদ ঝলমলে দিনটা! ডোরবেলের শব্দে চমক ভাঙলো; দরজাটা খুলতেই একটা লাল টুকটুকে গোলাপের বোকে ...
কিন্তু ওটা আনলো কে?
আরে – পলাশ ... তুমি!
‘ তুমি ভাবলে কি’করে যে আজ তোমার জন্মদিন আর আমি বেলা ন’টা অবধি শুয়ে শুয়ে ঘুমোবো? ’ -
বোকে হাতে ধরিয়ে পলাশ এগিয়ে যায় তৃষ্ণার দিকে ...
জানো আমি ভাবতেই পারিনি, তুমি আজ আমার জন্য এতো সুন্দর একটা উপহার আনবে! কি যে খুশী হয়েছি, বলে বোঝাতে পারবোনা – সাজতে সাজতে জানায় সে। আয়না দিয়ে পলাশের গর্বভরা হাসিটা চোখ এড়ায় না তার; আজ তৃষ্ণার পরনে একটা জরির কাজ করা বনানী সবুজ শাড়ী আর সাথে মুক্তো ও সোনার মিহি নক্সার গহনা।
অবাক হয়ে তাকায় পলাশ – ‘ দারুণ দেখাচ্ছে তো তোমাকে! ’
গড়িয়া থেকে মেট্রো ধরে সোজা পার্ক স্ট্রীট।
তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া না, এই এক সমস্যা! –
কেন?
আরে দেখছো না, সবাই শুধু তোমাকেই দেখছে?
‘ পাগল ’ – হাসতে হাসতে বলে তৃষ্ণা।
কোথায় যে গেলো দিনটা! – নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে;
পলাশ, আমি খাবো না প্লীজ ...
ওরে বাবা জন্মদিনে একটু মিষ্টি খেলে মোটা হবে না ডার্লিং – বলে জোর করে মিষ্টির দোকানে নিয়ে গিয়ে বসায় পলাশ।
ওমা, সাতসকালে অণিমাদি তুমি? –
‘হ্যাঁ গো দিদিমণি, তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম ’ - একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে, ‘ আমি জানি তো আজ তোমার জন্মদিন; তাই ওই ওদের বাড়ি যাবার আগে এট্টু মিষ্টি দিয়ে গেলাম – খেও কেমন! ’ - বলেই ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেলো।
মিষ্টি হাতে নিয়ে দু’চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে তৃষ্ণার।
চলো না, আজ একটু গড়ের মাঠে বসি – কতক্ষণ যে এইভাবে বসে তা নিজেও জানেনা সে;
ও দিদিমণি! দিদিমণি!
হ্যাঁ, বলো! –
কি গো তোমায় কখন দিয়ে গেলাম, আর তুমি এখনো ...
দাও, দাও, আমাকে দাও ... ফ্রীজে তুলে রাখি;
বারোটা বাজতে চলল, যাও দেখি চান করে একটু কিছু মুখে দাও –
চা খাবে?
নাহ্! থাক –
পলাশ তোমার কি আজও একবারের জন্যও তোমার তৃণাকে মনে পড়ছে না? সব স্মৃতিই কি ফিকে হয়ে যায়!
বিরিয়ানী খাওয়া নিয়ে ও যে কি করতো! –
জানো আমার ভালো লাগেনা –
‘ আজ তো আমার ভালো লাগার জন্যও কিছু করতে হবে ...
অতএব, নো কমেন্টস্, বিরিয়ানী খেতেই হবে ’।
ও . কে বাবা – I agreed ।
চামচটা মুখে তুলতেই কেমন জোলো স্বাদে চমক ভাঙে। নাঃ আজ আর বিরিয়ানী নয় – রেডিমেড স্যুপ। খাওয়া ছেড়ে চটিটা পড়ে একটু বেরোয় ...
আসছি অণিমাদি,
দরজাটা দাও।
একটা কিছু তো কিনতে হবে –
না হলে ও যে ভীষণ রাগ করবে।
একটা সালোয়ার – কামিজ কিনি; আরে ওই তো, পিংক কালারটা তো বেশ!
আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছি আমারও প্রাণ ... সুরেরও বাঁধনে – রিংটোনটা শুনেই হ্যালো বলতেই ও পাশ থেকে ভেসে আসে বিজ্ঞাপনদাতার কণ্ঠস্বর ...
ফোন কেটে দেয় তৃষ্ণা।
আজ সারাদিন পলাশ কিছু খায়নি। অফিসে কোন কাজেও মন দিতে পারছেনা।
‘ স্যার ’ –
বলো –
বলছিলাম যে –
আজ নয়, কাল শুনবো।
কিন্তু স্যার -
কোন কথা না শুনেই বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।
সকাল থেকে তিন প্যাকেট সিগারেট শেষ, এই চার প্যাকেটে হাত পড়লো ... মনে মনে হাসে সে; আজ যদি তৃণা থাকতো! কত যে অভিমান করতো ... আর রাগ দেখিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতো –
“প্রাণাধিকা, প্রিয়তমা, তুমি সিগারেট,
বেঁচে থাকো, সাথে থাকো, জিও! তুমি গ্রেট!! ”
কি যে হল আমার সেদিন! কেন যে ...
ল্যাপটপটা কোলের ওপর রেখে অনেকক্ষণ ধরে তৃণার নির্বাক ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে ...তারপর বলে ওঠে, আজ আর আমার কোনকিছুই চাওয়ার নেই; শুধু একটাই প্রার্থনা তোমার জন্য –
“ ভালো থেকো সবসময়ের জন্য ” – অস্ফুটে বলে ওঠে পলাশ।
আজ তৃষ্ণার জন্মদিন। কততম? কে জানে ...
সে হিসাব আর কে রাখে...
সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে জানলাটা খুলে, বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা ভাল হয়ে গেলো। কি সুন্দর রোদ ঝলমলে দিনটা! ডোরবেলের শব্দে চমক ভাঙলো; দরজাটা খুলতেই একটা লাল টুকটুকে গোলাপের বোকে ...
কিন্তু ওটা আনলো কে?
আরে – পলাশ ... তুমি!
‘ তুমি ভাবলে কি’করে যে আজ তোমার জন্মদিন আর আমি বেলা ন’টা অবধি শুয়ে শুয়ে ঘুমোবো? ’ -
বোকে হাতে ধরিয়ে পলাশ এগিয়ে যায় তৃষ্ণার দিকে ...
জানো আমি ভাবতেই পারিনি, তুমি আজ আমার জন্য এতো সুন্দর একটা উপহার আনবে! কি যে খুশী হয়েছি, বলে বোঝাতে পারবোনা – সাজতে সাজতে জানায় সে। আয়না দিয়ে পলাশের গর্বভরা হাসিটা চোখ এড়ায় না তার; আজ তৃষ্ণার পরনে একটা জরির কাজ করা বনানী সবুজ শাড়ী আর সাথে মুক্তো ও সোনার মিহি নক্সার গহনা।
অবাক হয়ে তাকায় পলাশ – ‘ দারুণ দেখাচ্ছে তো তোমাকে! ’
গড়িয়া থেকে মেট্রো ধরে সোজা পার্ক স্ট্রীট।
তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া না, এই এক সমস্যা! –
কেন?
আরে দেখছো না, সবাই শুধু তোমাকেই দেখছে?
‘ পাগল ’ – হাসতে হাসতে বলে তৃষ্ণা।
কোথায় যে গেলো দিনটা! – নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে;
পলাশ, আমি খাবো না প্লীজ ...
ওরে বাবা জন্মদিনে একটু মিষ্টি খেলে মোটা হবে না ডার্লিং – বলে জোর করে মিষ্টির দোকানে নিয়ে গিয়ে বসায় পলাশ।
ওমা, সাতসকালে অণিমাদি তুমি? –
‘হ্যাঁ গো দিদিমণি, তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম ’ - একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে, ‘ আমি জানি তো আজ তোমার জন্মদিন; তাই ওই ওদের বাড়ি যাবার আগে এট্টু মিষ্টি দিয়ে গেলাম – খেও কেমন! ’ - বলেই ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেলো।
মিষ্টি হাতে নিয়ে দু’চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে তৃষ্ণার।
চলো না, আজ একটু গড়ের মাঠে বসি – কতক্ষণ যে এইভাবে বসে তা নিজেও জানেনা সে;
ও দিদিমণি! দিদিমণি!
হ্যাঁ, বলো! –
কি গো তোমায় কখন দিয়ে গেলাম, আর তুমি এখনো ...
দাও, দাও, আমাকে দাও ... ফ্রীজে তুলে রাখি;
বারোটা বাজতে চলল, যাও দেখি চান করে একটু কিছু মুখে দাও –
চা খাবে?
নাহ্! থাক –
পলাশ তোমার কি আজও একবারের জন্যও তোমার তৃণাকে মনে পড়ছে না? সব স্মৃতিই কি ফিকে হয়ে যায়!
বিরিয়ানী খাওয়া নিয়ে ও যে কি করতো! –
জানো আমার ভালো লাগেনা –
‘ আজ তো আমার ভালো লাগার জন্যও কিছু করতে হবে ...
অতএব, নো কমেন্টস্, বিরিয়ানী খেতেই হবে ’।
ও . কে বাবা – I agreed ।
চামচটা মুখে তুলতেই কেমন জোলো স্বাদে চমক ভাঙে। নাঃ আজ আর বিরিয়ানী নয় – রেডিমেড স্যুপ। খাওয়া ছেড়ে চটিটা পড়ে একটু বেরোয় ...
আসছি অণিমাদি,
দরজাটা দাও।
একটা কিছু তো কিনতে হবে –
না হলে ও যে ভীষণ রাগ করবে।
একটা সালোয়ার – কামিজ কিনি; আরে ওই তো, পিংক কালারটা তো বেশ!
আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছি আমারও প্রাণ ... সুরেরও বাঁধনে – রিংটোনটা শুনেই হ্যালো বলতেই ও পাশ থেকে ভেসে আসে বিজ্ঞাপনদাতার কণ্ঠস্বর ...
ফোন কেটে দেয় তৃষ্ণা।
আজ সারাদিন পলাশ কিছু খায়নি। অফিসে কোন কাজেও মন দিতে পারছেনা।
‘ স্যার ’ –
বলো –
বলছিলাম যে –
আজ নয়, কাল শুনবো।
কিন্তু স্যার -
কোন কথা না শুনেই বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।
সকাল থেকে তিন প্যাকেট সিগারেট শেষ, এই চার প্যাকেটে হাত পড়লো ... মনে মনে হাসে সে; আজ যদি তৃণা থাকতো! কত যে অভিমান করতো ... আর রাগ দেখিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতো –
“প্রাণাধিকা, প্রিয়তমা, তুমি সিগারেট,
বেঁচে থাকো, সাথে থাকো, জিও! তুমি গ্রেট!! ”
কি যে হল আমার সেদিন! কেন যে ...
ল্যাপটপটা কোলের ওপর রেখে অনেকক্ষণ ধরে তৃণার নির্বাক ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে ...তারপর বলে ওঠে, আজ আর আমার কোনকিছুই চাওয়ার নেই; শুধু একটাই প্রার্থনা তোমার জন্য –
“ ভালো থেকো সবসময়ের জন্য ” – অস্ফুটে বলে ওঠে পলাশ।
তনুশ্রী চক্রবর্তীর 'অস্ফুটে' পড়ে,
উত্তরমুছুনএক অন্যধরনের অনুভূতি এলো মনে।
কি বলবো লেখাটিকে ? ছোটগল্প ? না কি কবিতা এক !
বর্তমান সময়ের ব্যক্তি-অনুভূতিকে কেন্দ্রে রেখে ,
এই লেখা ফিরে ফিরে এসেছে ও গেছে,সময়ের এ' পারে ও' পারে !
শুধু না বলেও এঁকে গেছে সম্পর্কের এক টানাপোড়েনের অদৃশ্য ছবি !
পলাশের আর তৃষ্ণার মাঝের দুয়ার কেন পারবে না তারা খুলে নিতে ?
যদিও তা' এ' কবিতা বলে নি তা' ,তবু তাদের কষ্টটিকে করে গেল অনুপ্রবিষ্ট এই মনে !
অভিভূত হবার মতই লেখা, 'বনানী সবুজ শাড়ী'র মত পরিনত শব্দচয়নে !
কাকু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই । আমার লেখা যে আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমি যারপরনাই আনন্দিত এবং মতামত জেনে অভিভুত হলাম । প্রণাম নেবেন এবং এইভাবে সঙ্গে থাকবেন ।আশীর্বাদ করুন আমার সৃষ্টি যেন আপনাদের এইভাবেই আনন্দিত করে। আপনাদের ভাল লাগলে তবেই তো আমার সৃষ্টির সার্থকতা।
মুছুনতোমার কৃতিত্ব তোমাকে এগিয়ে দেবে
মুছুনআমরা দর্শক ।
নিজের লেখার কাছে বিশ্বস্ত থাকো,সেটিই জরুরী :)
তাই যেন হয় । আপনার কথা আমি মনে রাখবো :)
মুছুনমন খারাপ করা গল্প পড়ে কি মন ভালো হয়!!! কি জানি হয়তো হয়.. আবার হয়তো হয় না.. কিন্তু অদৃশ্য কথোপকথন গুলো সোজা বুকে এসে বিঁধল বৈ কি, নিজেকেই কখনও তৃষ্ণা আবার কখনও পলাশ মনে হচ্ছে।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো 'অস্ফুটে'......
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে । আপনি যে এইভাবে এই গল্পের সাথে একাত্ম হতে পেরেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো ... আমার প্রয়াস যে আপনাদের স্পর্শ করতে পেরেছে,তাতেই আমি ধন্য হলাম। ভাল থাকবেন , সঙ্গে থাকবেন । :)
উত্তরমুছুনEto sabolil lekhay Mon-er charpash ta je bojhano jay....Moner manush er theke bicched howay je roktokhoron hoy ontormohol-e se sob byakto kora jay na...Bondhu apni perechen apnar lekhonir madhyome...Bhalo thakben
উত্তরমুছুনKotota perechhi janina...se bicharer bhaar apnader...apnader bhalo lagle tobei amar proyas sarthok mone hobe...apnara songe thakben eibhabe...apnarai amar onuprerona...bhalo laglo bondhu apnar motamot jene....bhalo thakben :)
উত্তরমুছুন