প্রবন্ধ - বিদিশা সরকার

বাতায়ন
বিদিশা সরকার



আমরা কি নৈসর্গিক, আমরা কি প্রাকৃতিক, আমরা কি আধিদৈবিক, অথবা আমরা কি রাজনৈতিক? সিদ্ধন্তের দোলাচলে একটা যুযুৎসু প্যাঁচই যথেষ্ট। আমার সিদ্ধান্ত কি আমি নিই, নাকি ভাইরাসবাহিত এক মারীর আক্রমনের প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে আমিও আক্রান্ত হই প্রতিরোধহীন মারণ ব্যাধিতে!

কাগজকলম আর হাইভোল্টেজপুষ্ট একটি মেধা স্বয়ংক্রিয়তার একাঙ্ক নাটক নিয়ে উপস্থিত হয়, আত্মবিশ্বাস স্বউপার্জিত। অভ্যাসিত হাততালি আর ড্রপসিনের পর বিপরীতমুখী নগরজীবন! সমস্ত নাটকের জন্য মঞ্চ আবশ্যিক নয়। নাটক জটলায়, নাটক সংঘে, নাটক সমিতিতে এবং হাস্যকরভাবে, সংসারেও।

তাহলে বাতায়নের প্রয়োজনীয়তা কতখানি, অথবা ব্যালকনি'র? নিজস্বতার একটা স্টেজ অ্যাপিয়ারেন্স--প্রতিবেশীর কুশল বিনিময়--এ বাড়ির ছাদে ও বাড়ির ঘুড়ি-- আম গাছের মগডালে জড়ানো ধারালো মাঞ্জা আর এক পশলা দুয়েক শ্রাবণের জানান ---

মুহূর্ত বদলিয়ে যায়
পাতার বহর
মুহূর্ত খেলবি আয়
অসময়, ঝড়!
আয়েশা সংস্কারের চৌকাঠ পেরিয়ে তার সর্পিল শরীর নিয়ে সাইকেলের প্যাডেলে পা রাখে। পিঠে রুকস্যাক। প্রত্যন্তের ঝিলে জড়ো হয় একদল কচিকাঁচা। আয়েশা ওদের নিয়ে জলে নামে। সাঁতারের বিভিন্ন প্রকরণ, কি দারুন জলকেলি! আয়েশা সন্ধ্যা নিয়ে ফেরে। শ্যাম্পুর একটা পাউচ্‌ খালি হয়। তারপর উঠে যায় ছাদে।
সমস্ত কথাই তার জল বিষয়ক
দক্ষিনের হাওয়া আর হাওয়ার চালক !
পুঁথিগত বিদ্যাকে ছুটি দিয়ে সে এখন জীবিকাসন্ধানী। মাসান্তে সমস্তটাই তুলে দেয় বিধবা মায়ের হাতে। মুসুর ডাল আর আলুভাজার গন্ধে এক ক্ষিদে মরে গিয়ে অন্য ক্ষিদে জেগে ওঠে। তারপর বরাদ্দ বিছানায় নির্জন চিন্তন। কখন যে ডুবে যায় ডুবসাঁতারে!

অথবা, প্রিন্সেপ ঘাটের আমিনুল দম্পতি'র একজোড়া সন্তানসন্ততি। যখন সর্বসাকুল্যে একটাই ডিঙি অস্তমিত সূর্যের প্রচ্ছায়া পেরিয়ে ভাবুক ভাসমান! ভাটা'র গঙ্গায় মেঘ ভাঙা সিঁদুরে সূর্যের রশ্মি রক্তিম মূর্ছনায় তরলবাহিত, সবাইকে স্তব্ধ করে দেয় আমিনুলের পুত্র।

আবেগে বিস্ময়ে বলে ওঠে --"সপাপা পাপা দেখো পানিমে আগ লাগ গই"।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সকলেই প্রায় বিস্মিত। শৈশবের মতই সহজ তার দৃষ্টিভঙ্গী। কোন আরোপিত ইচ্ছা, কোন বলপ্রয়োগ তাকে ঐ মুগ্ধতার ভাষা দেয়নি। সর্বকালীন ভাষাটা একটা শিশুর মুখ থেকেও উঠে আসতে পারে। এই বিরল দৃশ্য ওর বিস্ময়ের ক্রাফট্‌ বুকে সন্ধ্যার অব্যক্ত সিগনেচার। হয়তো শিশুটি হারিয়ে ফেলবে প্রায় জ্বলন্ত নদীর ম্যাজিক মুহূর্ত। অন্য সন্ধ্যায় তার বাতায়নে কিছুটা অন্যমনস্কতায় কোন শব্দ উচ্চারিত হবে কে জানে!


5 মতামত: