নিজের মুখোমুখি
পূজা মৈত্র
বাড়ি ফিরতে বেশ দেরিই হয়ে গেল। রূপসা আটটার মধ্যেই ফিরে যেত। কিন্তু মেট্রোটা মিস করলো। এসপ্ল্যানেডে প্রতিবাদ মিছিলটা ছিল। মৌন প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিল। দিল্লীর ধর্ষণের ঘটনার জন্য। দামিনীর জন্য। ঘড়ি দেখল রূপসা। সাড়ে আটটা বেজে গেছে। জানুয়ারীর প্রথম। বেশ শীত পড়েছে। যতীন দাস পার্ক মেট্রো থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ ওদের ফ্ল্যাট। তাড়াতাড়ি হবে বলে গলিপথ ধরল। গলিতে ঢুকেই বুকটা ধক করে উঠল। একদম শুনশান আজ। শীতের দাপটে যে যার ঘরে। চাদরটা ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিল। দিল্লী, কোলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই- সব শহরেই নারীরা বিপন্ন আজ।
ডোরবেলের প্রত্যুত্তরে ছায়ামাসি দরজা খুলবে ভেবেছিল। স্বরাজকে দেখে একটু থমকাল রূপসা। চেম্বার থেকে এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে? ফোন করেনি তো? স্বরাজের চোখের ভাষা থমথমে। চোয়াল কঠিন।
____ সরি, লেট হয়ে গেল। মেট্রোটা মিস না করলে...
স্বরাজ হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিল---- লেম এক্সকিউজ দিয়ো না, তুতান স্টাডিতে আছে। তোমার জন্য ওয়েট করছে। সম্ভবত ওকে কয়েকটা হোমওয়ার্ক করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল তোমার----
রূপসা হাউসওয়াইফ। স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত সার্জেন। অঢেল উপার্জন করে। তাই ঘর সামলানো, ছেলে পড়ানো সব দায় রূপসার। এর পাশাপাশি একটা এন.জি.ও , একটা নারী সংগঠন করে। যাদের আহ্বানেই আজ মিছিলে গিয়েছিল।
------ ছিল। আমি করিয়ে দেব। আই উইল ম্যানেজ...
----- কথা না বাড়িয়ে যাও... স্বরাজের গলায় এমন কিছু ছিল যা রূপসাকে চুপ করিয়ে দিল।
আজ কোন কিছুতেই মন বসছিল না রূপসার। দামিনীর খবরটা শোনার পর থেকেই মন ভাল নেই। আজ মিছিলে গিয়ে আশাবাদের জায়গায় নিরাশা ঘিরে ধরেছে। মোমবাতির নরম আলোর মৌন প্রতিবাদে কি আদৌ কোন প্রভাব পড়ে? মানুষ তো আজ নরপশু। নইলে পাশবিক অত্যাচারের পরেও লোহার রড! দামিনীর কান্না মাঝে মাঝেই কানে ভাসছে। আজ বলে তো নয়, ধর্ষণ চিরদিনই ছিল। এখন বিকৃত কামের বাড়বাড়ন্ত। নীল ভিডিও মোবাইলে মোবাইলে। নারীকে সেখানে ভোগ্যপণ্য হিসাবে দেখানো হয়। কিশোর বয়স থেকেই সেই দৃষ্টিভঙ্গি মনে বাসা বাঁধে। স্বল্পবসনা হিরোইনরা রূপোলী পর্দা থেকে হাতছানি দেওয়ায় কল্পনার ঘোড়া লাগাম ছাড়া হয়। আর হামলার শিকার হয় নিরীহ পথচলতি মেয়েটি। এর শেষ কোথায়? পুরুষের মানসিকতা না বদলালে ধর্ষণ রোখা কি আদৌ সম্ভব? আর মানসিকতা বদলের কোন সম্ভবনাও খুব কম। আগে সব চাপা থাকত, এখন মিডিয়া আছে বলে...
স্বরাজ সারাক্ষণ চুপচাপ ছিল। রূপসার সাথে ভালভাবে কথা বলছিল না। রূপসা জানে ও কোন অন্যায় করেনি। আজ মিছিলে না গেলে, সবার সাথে না হাঁটলে যে টুকু প্রতিরোধ গড়ে উঠছে সেটুকুও হত না। নিজের কাছে নিজে মরমে মরে থাকতো। তুতানকে তো রোজই পড়ায়। আজকেও পড়িয়েছে। কোন অযত্নই হতে দেয়নি কখনো। একার হাতে করেই তো দশ বছরের করে তুলেছে। স্বরাজ সময় পেয়েছে সাহায্য করার? তাহলে আজ সামান্য দেরীর জন্য এত রাগ দেখাচ্ছে কেন?
তুতানের মুখ শুরুতে ভার থাকলেও, এখন আবার স্বাভাবিক। মাম্মা দেরী করে ফিরলেও সবকটা কথা রেখেছে। রাতে তুতানকে ঘুম পারাবে বলেছিল, সেটাও করেছে। তুতান নিজের ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে এখন।
নিজেদের ঘরে গেল রূপসা। স্বরাজ লেপের মধ্যে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। রূপসা কথা বলল না। এমনিতেই মেয়েটার জন্য মন খারাপ, তার উপর স্বরাজের ব্যবহার। বিছানায় নিজের পাশে শুয়ে পড়ল ও। চোখ বন্ধ করে ঘুমাবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ঘুমের বদলে চিন্তার স্রোত মাথায় ভিড় করছিল।
স্বরাজের স্পর্শে চমকে উঠল রূপসা। এ স্পর্শ ওর চেনা। স্বরাজ মিলন চায়। অন্যান্য দিন হলে রূপসা আপত্তি করত না।আজকের পরিস্থিতিটাই যে অন্য!
___ স্বরাজ স্টপ ইট! স্বরাজ রূপসার দিকে কঠিন চোখে তাকাল
___ কেন?
____ আমার মুড নেই তাই। আয়াম নট ইন আ মুড। রূপসা স্বরাজকে সরিয়ে দিতে চাইল। অন্য দিন হলে স্বরাজ সরে যেত। কিন্তু আজ সরল না। দ্বিগুন জোরে রূপসার প্রতিরোধ ভাঙ্গতে থাকল।
____ বাট আয়াম ইন আ মুড। তাই তোমার কোন আপত্তি শুনতে চাই না।
রূপসা অবাক চোখে স্বরাজের দিকে তাকাল। বারো বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম বার স্বরাজ জোর করছে। রূপসার চোখের ভাষা স্বরাজ বুঝেও বুঝল না। রূপসার আবরণ সরাতে সরাতে ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বলল
____ চেঁচাবে নাকি? তুতান জেগে যাবে কিন্তু...
রূপসা আর বাধা দিল না। ছটফট করল না। উফ টুকুও করল না। নিজের বিশ্বাস চোখের সামনে ভেঙ্গে যেতে দেখলে মানুষ বোবা হয়ে যায়। তৃপ্ত স্বরাজ বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে লক্ষ্য করল রূপসা কাঁদছে।
___ কাম অন। এতে কাঁদবার কি হল? নতুন নাকি? ওঃ! তুমি তো আবার নারীবাদী। তা এটাও রেপ, নাকি? কোথায় পড়ছিলাম যেন, এর জন্যও শাস্তি হওয়া উচিত বলে তোমরা দাবি তুলেছ? পেপারেই মনে হয়। গালভরা নামও দিয়েছ, ম্যারিটাল রেপ! হাইট অফ ফুলিশনেস। নিজের বউকে লা... আই মিন নিজের বউয়ের সাথে সেক্স করবে, তাও নাকি রেপ? ম্যারেজের সংজ্ঞা-ই বদলে দেবেন এরা! দ্যাখো, তুমি-ই সবার আগে চেষ্টা করে দ্যাখো, যদি আমাকে শাস্তি দেওয়াতে পারো...। ইউ উইল বি আ পাইওনিয়ার দেন।
হতবাক রূপসাকে ফেলে স্বরাজ বাথরুমে চলে গেল।
বাড়ি ফিরতে বেশ দেরিই হয়ে গেল। রূপসা আটটার মধ্যেই ফিরে যেত। কিন্তু মেট্রোটা মিস করলো। এসপ্ল্যানেডে প্রতিবাদ মিছিলটা ছিল। মৌন প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিল। দিল্লীর ধর্ষণের ঘটনার জন্য। দামিনীর জন্য। ঘড়ি দেখল রূপসা। সাড়ে আটটা বেজে গেছে। জানুয়ারীর প্রথম। বেশ শীত পড়েছে। যতীন দাস পার্ক মেট্রো থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ ওদের ফ্ল্যাট। তাড়াতাড়ি হবে বলে গলিপথ ধরল। গলিতে ঢুকেই বুকটা ধক করে উঠল। একদম শুনশান আজ। শীতের দাপটে যে যার ঘরে। চাদরটা ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিল। দিল্লী, কোলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই- সব শহরেই নারীরা বিপন্ন আজ।
ডোরবেলের প্রত্যুত্তরে ছায়ামাসি দরজা খুলবে ভেবেছিল। স্বরাজকে দেখে একটু থমকাল রূপসা। চেম্বার থেকে এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে? ফোন করেনি তো? স্বরাজের চোখের ভাষা থমথমে। চোয়াল কঠিন।
____ সরি, লেট হয়ে গেল। মেট্রোটা মিস না করলে...
স্বরাজ হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিল---- লেম এক্সকিউজ দিয়ো না, তুতান স্টাডিতে আছে। তোমার জন্য ওয়েট করছে। সম্ভবত ওকে কয়েকটা হোমওয়ার্ক করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল তোমার----
রূপসা হাউসওয়াইফ। স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত সার্জেন। অঢেল উপার্জন করে। তাই ঘর সামলানো, ছেলে পড়ানো সব দায় রূপসার। এর পাশাপাশি একটা এন.জি.ও , একটা নারী সংগঠন করে। যাদের আহ্বানেই আজ মিছিলে গিয়েছিল।
------ ছিল। আমি করিয়ে দেব। আই উইল ম্যানেজ...
----- কথা না বাড়িয়ে যাও... স্বরাজের গলায় এমন কিছু ছিল যা রূপসাকে চুপ করিয়ে দিল।
আজ কোন কিছুতেই মন বসছিল না রূপসার। দামিনীর খবরটা শোনার পর থেকেই মন ভাল নেই। আজ মিছিলে গিয়ে আশাবাদের জায়গায় নিরাশা ঘিরে ধরেছে। মোমবাতির নরম আলোর মৌন প্রতিবাদে কি আদৌ কোন প্রভাব পড়ে? মানুষ তো আজ নরপশু। নইলে পাশবিক অত্যাচারের পরেও লোহার রড! দামিনীর কান্না মাঝে মাঝেই কানে ভাসছে। আজ বলে তো নয়, ধর্ষণ চিরদিনই ছিল। এখন বিকৃত কামের বাড়বাড়ন্ত। নীল ভিডিও মোবাইলে মোবাইলে। নারীকে সেখানে ভোগ্যপণ্য হিসাবে দেখানো হয়। কিশোর বয়স থেকেই সেই দৃষ্টিভঙ্গি মনে বাসা বাঁধে। স্বল্পবসনা হিরোইনরা রূপোলী পর্দা থেকে হাতছানি দেওয়ায় কল্পনার ঘোড়া লাগাম ছাড়া হয়। আর হামলার শিকার হয় নিরীহ পথচলতি মেয়েটি। এর শেষ কোথায়? পুরুষের মানসিকতা না বদলালে ধর্ষণ রোখা কি আদৌ সম্ভব? আর মানসিকতা বদলের কোন সম্ভবনাও খুব কম। আগে সব চাপা থাকত, এখন মিডিয়া আছে বলে...
স্বরাজ সারাক্ষণ চুপচাপ ছিল। রূপসার সাথে ভালভাবে কথা বলছিল না। রূপসা জানে ও কোন অন্যায় করেনি। আজ মিছিলে না গেলে, সবার সাথে না হাঁটলে যে টুকু প্রতিরোধ গড়ে উঠছে সেটুকুও হত না। নিজের কাছে নিজে মরমে মরে থাকতো। তুতানকে তো রোজই পড়ায়। আজকেও পড়িয়েছে। কোন অযত্নই হতে দেয়নি কখনো। একার হাতে করেই তো দশ বছরের করে তুলেছে। স্বরাজ সময় পেয়েছে সাহায্য করার? তাহলে আজ সামান্য দেরীর জন্য এত রাগ দেখাচ্ছে কেন?
তুতানের মুখ শুরুতে ভার থাকলেও, এখন আবার স্বাভাবিক। মাম্মা দেরী করে ফিরলেও সবকটা কথা রেখেছে। রাতে তুতানকে ঘুম পারাবে বলেছিল, সেটাও করেছে। তুতান নিজের ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে এখন।
নিজেদের ঘরে গেল রূপসা। স্বরাজ লেপের মধ্যে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছে। রূপসা কথা বলল না। এমনিতেই মেয়েটার জন্য মন খারাপ, তার উপর স্বরাজের ব্যবহার। বিছানায় নিজের পাশে শুয়ে পড়ল ও। চোখ বন্ধ করে ঘুমাবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ঘুমের বদলে চিন্তার স্রোত মাথায় ভিড় করছিল।
স্বরাজের স্পর্শে চমকে উঠল রূপসা। এ স্পর্শ ওর চেনা। স্বরাজ মিলন চায়। অন্যান্য দিন হলে রূপসা আপত্তি করত না।আজকের পরিস্থিতিটাই যে অন্য!
___ স্বরাজ স্টপ ইট! স্বরাজ রূপসার দিকে কঠিন চোখে তাকাল
___ কেন?
____ আমার মুড নেই তাই। আয়াম নট ইন আ মুড। রূপসা স্বরাজকে সরিয়ে দিতে চাইল। অন্য দিন হলে স্বরাজ সরে যেত। কিন্তু আজ সরল না। দ্বিগুন জোরে রূপসার প্রতিরোধ ভাঙ্গতে থাকল।
____ বাট আয়াম ইন আ মুড। তাই তোমার কোন আপত্তি শুনতে চাই না।
রূপসা অবাক চোখে স্বরাজের দিকে তাকাল। বারো বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম বার স্বরাজ জোর করছে। রূপসার চোখের ভাষা স্বরাজ বুঝেও বুঝল না। রূপসার আবরণ সরাতে সরাতে ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বলল
____ চেঁচাবে নাকি? তুতান জেগে যাবে কিন্তু...
রূপসা আর বাধা দিল না। ছটফট করল না। উফ টুকুও করল না। নিজের বিশ্বাস চোখের সামনে ভেঙ্গে যেতে দেখলে মানুষ বোবা হয়ে যায়। তৃপ্ত স্বরাজ বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে লক্ষ্য করল রূপসা কাঁদছে।
___ কাম অন। এতে কাঁদবার কি হল? নতুন নাকি? ওঃ! তুমি তো আবার নারীবাদী। তা এটাও রেপ, নাকি? কোথায় পড়ছিলাম যেন, এর জন্যও শাস্তি হওয়া উচিত বলে তোমরা দাবি তুলেছ? পেপারেই মনে হয়। গালভরা নামও দিয়েছ, ম্যারিটাল রেপ! হাইট অফ ফুলিশনেস। নিজের বউকে লা... আই মিন নিজের বউয়ের সাথে সেক্স করবে, তাও নাকি রেপ? ম্যারেজের সংজ্ঞা-ই বদলে দেবেন এরা! দ্যাখো, তুমি-ই সবার আগে চেষ্টা করে দ্যাখো, যদি আমাকে শাস্তি দেওয়াতে পারো...। ইউ উইল বি আ পাইওনিয়ার দেন।
হতবাক রূপসাকে ফেলে স্বরাজ বাথরুমে চলে গেল।
চিলেকোঠায় বসে এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে হারিয়ে গেছি আকাশের নীল নীলিমায় । এখানে কোনও বাজপাখি নেই, বারোমাস বসন্ত , বুকের মধ্যে লাব ডুব করে নিজের হৃৎপিণ্ড । আমি ভালোবাসি আমার চারপাশ আমার একফালি নিজস্ব সময় আর গোপন একটি চিলেকোঠা । যারা খুঁজে দিলে তাদের জন্য আশ্বিনের কাশ ফুল আর সুগন্ধি শিউলি ।
উত্তরমুছুনPuja.....tomar chhoto galpo..amar khub bhalo legechhe....praye sab meyer -e ei obhigyota achhe...jharjhare lekha tomar.....mon chhuyechhe....!!
উত্তরমুছুন.