সুকুমার রায়ের কথা
দেবাশিস কাঞ্জিলাল
আমাদের বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের কথা এলেই প্রথমেই যাঁদের নাম মনে আসে,সুকুমার রায় তাঁদের অন্যতম। এমন কোন বাঙ্গালী পাঠক নেই যিনি সুকুমার রায়ের রচনার সাথে পরিচিত নন।
কিন্তু তাঁর প্রায় সব রচনার সাথে আমরা পরিচিত থাকলেও ,তাঁর কিছু লেখা অনেকের এখনও খুব একটা পরিচিত নয়। সে সব লেখা ছড়িয়ে আছে নানা যায়গায়,চিঠিপত্রে। তাঁর জীবন-চর্যার মাঝেই জড়িয়ে ছিল যে হাস্যরস, তা তার চিঠিপত্রের মধ্যে দিয়েও ঝলকানি দিয়ে যেত।
তাঁর ছাত্রাবস্থায় প্রেসিডেন্সী কলেজে তিনি ‘ননসেন্স ক্লাব’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। সেখান থেকে ‘সাড়ে-বত্রিশ-ভাজা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত নিয়মিত। সেই পত্রিকাই ছিল তাঁর ননসেন্স-লেখার ধাত্রীভূমি।
পরবর্তী কালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এই ধরনের আরেকটি সংস্থা সৃষ্টি করেছিলেন,যার নাম দিয়েছিলেন ‘মন্ডা-ক্লাব’। এই আড্ডায় সদস্যরা প্রতি সোমবারে মিলতেন নানা বিষয়ে আড্ডা দিতে,যেখানে এমন কোন বিষয় থাকত না যা নিয়ে আলোচনা হত না।
সুকুমার মজার ছড়ায় এই আড্ডার আমন্ত্রণ-পত্র লিখে ক্লাবের সদস্যদের কাছে পাঠাতেন। যদিও সেগুলি প্রধানতঃ থাকত সভার ঘোষণা হিসেবে,তবু সেই সব চিঠির সরস সাহিত্য-মূল্য যে কতখানি তা সেই চিঠিগুলি পড়লেই বোঝা যাবে।
সেই চিঠিগুলির কয়েকটি এখানে সংগ্রহ করে দেওয়া গেল,আশা করি সেই লেখাগুলি থেকে সুকুমার রায়ের প্রতিভার ব্যাপ্তি কিছুটা হলেও সচেতন পাঠকেরা অনুভব করতে পারবেন।
চারটি আমন্ত্রণ-পত্র
এক
সম্পাদক বেয়াকুব
কোথা যে দিয়েছে ডুব
এদিকেতে হায় হায়
ক্লাবটি তো যায় যায়।
তাই বলি সোমবারে
মদ-গৃহে গড়পারে
দিলে সবে পদধূলি
ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি।
রকমারি পুঁথি কত
নিজ নিজ রুচিমত
আনিবেন সাথে সবে
কিছু কিছু পাঠ হবে।
করজোড়ে বারবার
নিবেদিছে সুকুমার।
দুই
[এটি রবিঠাকুরের ‘মেঘ বলেছে যাবো যাবো’ গানের প্যারডি]
কেউ বলেছে খাবো খাবো, কেউ বলেছে খাই
সবাই মিলে গোল তুলেছে, আমি তো আর নাই।
ছোটকু বলে, রইনু চুপে
ক’মাস ধরে কাহিল রূপে!
জংলি বলে “রামছাগলের, মাংস খেতে চাই।”
যতই বলি “সবুর কর”, কেউ শোনে না কালা,
জীবন বলে কোমর বেধে, কোথায় লুচির থালা ?
খোদন বলে রেগেমেগে
ভীষণ রোষে বিষম লেগে-
বিষ্যুতে কাল গড়-পারেতে
হাজির যেন পাই।
তিন
শনিবার ১৭ ই, সাড়ে পাঁচ বেলা,
গড়-পারে হৈ হৈ, সরবতী মেলা।
অতএব ঘড়ি ধরে, সাবকাশ হয়ে
আসিবেন দয়া করে, হাসি মুখে লয়ে।
সরবৎ সদালাপ, সঙ্গীত – ভীতি
ফাঁকি দিলে নাহি মাপ, জেনে রাখ-ইতি।
চার
আমি, অর্থাৎ সেক্রেটারি,
মাস-তিনেক কলকেতা ছাড়ি
যেই গিয়েছি অন্য দেশে
অমনি কি সব গেছে ফেঁসে।
বদলে গেছে ক্লাবের হাওয়া,
কাজের মধ্যে কেবল খাওয়া!
চিন্তা নেইক গভীর বিষয়
আমার প্রাণে এসব কি সয়?
এখন থেকে সম্ঝে রাখ,
এ সমস্ত চলবে নাকো,
আমি আবার এইছি ঘুরে,
তান ধরেছি সাবেক সুরে।
শুনবে এস সু-প্রবন্ধ
গিরিজার বিবেকানন্দ,
মঙ্গলবার আমার বাসায়।
আর থেক না ভোজের আশায়।।
আমাদের বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের কথা এলেই প্রথমেই যাঁদের নাম মনে আসে,সুকুমার রায় তাঁদের অন্যতম। এমন কোন বাঙ্গালী পাঠক নেই যিনি সুকুমার রায়ের রচনার সাথে পরিচিত নন।
কিন্তু তাঁর প্রায় সব রচনার সাথে আমরা পরিচিত থাকলেও ,তাঁর কিছু লেখা অনেকের এখনও খুব একটা পরিচিত নয়। সে সব লেখা ছড়িয়ে আছে নানা যায়গায়,চিঠিপত্রে। তাঁর জীবন-চর্যার মাঝেই জড়িয়ে ছিল যে হাস্যরস, তা তার চিঠিপত্রের মধ্যে দিয়েও ঝলকানি দিয়ে যেত।
তাঁর ছাত্রাবস্থায় প্রেসিডেন্সী কলেজে তিনি ‘ননসেন্স ক্লাব’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। সেখান থেকে ‘সাড়ে-বত্রিশ-ভাজা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত নিয়মিত। সেই পত্রিকাই ছিল তাঁর ননসেন্স-লেখার ধাত্রীভূমি।
পরবর্তী কালে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এই ধরনের আরেকটি সংস্থা সৃষ্টি করেছিলেন,যার নাম দিয়েছিলেন ‘মন্ডা-ক্লাব’। এই আড্ডায় সদস্যরা প্রতি সোমবারে মিলতেন নানা বিষয়ে আড্ডা দিতে,যেখানে এমন কোন বিষয় থাকত না যা নিয়ে আলোচনা হত না।
সুকুমার মজার ছড়ায় এই আড্ডার আমন্ত্রণ-পত্র লিখে ক্লাবের সদস্যদের কাছে পাঠাতেন। যদিও সেগুলি প্রধানতঃ থাকত সভার ঘোষণা হিসেবে,তবু সেই সব চিঠির সরস সাহিত্য-মূল্য যে কতখানি তা সেই চিঠিগুলি পড়লেই বোঝা যাবে।
সেই চিঠিগুলির কয়েকটি এখানে সংগ্রহ করে দেওয়া গেল,আশা করি সেই লেখাগুলি থেকে সুকুমার রায়ের প্রতিভার ব্যাপ্তি কিছুটা হলেও সচেতন পাঠকেরা অনুভব করতে পারবেন।
চারটি আমন্ত্রণ-পত্র
এক
সম্পাদক বেয়াকুব
কোথা যে দিয়েছে ডুব
এদিকেতে হায় হায়
ক্লাবটি তো যায় যায়।
তাই বলি সোমবারে
মদ-গৃহে গড়পারে
দিলে সবে পদধূলি
ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি।
রকমারি পুঁথি কত
নিজ নিজ রুচিমত
আনিবেন সাথে সবে
কিছু কিছু পাঠ হবে।
করজোড়ে বারবার
নিবেদিছে সুকুমার।
দুই
[এটি রবিঠাকুরের ‘মেঘ বলেছে যাবো যাবো’ গানের প্যারডি]
কেউ বলেছে খাবো খাবো, কেউ বলেছে খাই
সবাই মিলে গোল তুলেছে, আমি তো আর নাই।
ছোটকু বলে, রইনু চুপে
ক’মাস ধরে কাহিল রূপে!
জংলি বলে “রামছাগলের, মাংস খেতে চাই।”
যতই বলি “সবুর কর”, কেউ শোনে না কালা,
জীবন বলে কোমর বেধে, কোথায় লুচির থালা ?
খোদন বলে রেগেমেগে
ভীষণ রোষে বিষম লেগে-
বিষ্যুতে কাল গড়-পারেতে
হাজির যেন পাই।
তিন
শনিবার ১৭ ই, সাড়ে পাঁচ বেলা,
গড়-পারে হৈ হৈ, সরবতী মেলা।
অতএব ঘড়ি ধরে, সাবকাশ হয়ে
আসিবেন দয়া করে, হাসি মুখে লয়ে।
সরবৎ সদালাপ, সঙ্গীত – ভীতি
ফাঁকি দিলে নাহি মাপ, জেনে রাখ-ইতি।
চার
আমি, অর্থাৎ সেক্রেটারি,
মাস-তিনেক কলকেতা ছাড়ি
যেই গিয়েছি অন্য দেশে
অমনি কি সব গেছে ফেঁসে।
বদলে গেছে ক্লাবের হাওয়া,
কাজের মধ্যে কেবল খাওয়া!
চিন্তা নেইক গভীর বিষয়
আমার প্রাণে এসব কি সয়?
এখন থেকে সম্ঝে রাখ,
এ সমস্ত চলবে নাকো,
আমি আবার এইছি ঘুরে,
তান ধরেছি সাবেক সুরে।
শুনবে এস সু-প্রবন্ধ
গিরিজার বিবেকানন্দ,
মঙ্গলবার আমার বাসায়।
আর থেক না ভোজের আশায়।।
হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা ... অসাধারণ বললেও কম বলা হবে...
উত্তরমুছুনশেষ আমন্ত্রণ-পত্রটি তো অসাধারণ !! অবশ্য, কোনটাই বা নয় !! দেবাশিষ দার সৌজন্যে এক অজানা সুকুমারের সাথা পরিচয় হোল ।
উত্তরমুছুনহা হা হা অসাধারণ সংগ্রহ । খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন