সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ ৭ম সংখ্যা

সম্পাদকীয়



কনকনে উত্তুরে হাওয়ার হিমেল পরশে পৌষ পার্ব্বণকে পিছনে ফেলে এসে উপস্থিত শীত ঋতুর দ্বিতীয় অধ্যায়, মাঘ; বাংলা সনের দশম এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শকাব্দের একাদশ মাস। বাংলা ‘মাঘ’ এবং শকাব্দের ‘মাঘা’ নামটি এসেছে ‘মঘা’ নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। প্রবাদে আছে, ‘মাঘের শীত বাঘের গায়ে’!! ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাই পড়ার কথা এ মাসে। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কাল ও তাপমাত্রার এমনই তারতম্য ঘটেছে যে, সত্যি সত্যি এখনো মাঘ মাসে বাঘের শীত করে কিনা, সে খবর অবশ্য নেওয়া হয় নি!!

এরই মাঝে ঘটে গেল বাংলা তথা ভারতবর্ষের চলচ্চিত্র জগতের মহানক্ষত্রপতন। কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের (৬ই এপ্রিল, ১৯৩১ – ১৭ই জানুয়ারী, ২০১৪) জীবনাবসান। বাংলাদেশের এক অখ্যাত গ্রামের এক অখ্যাত স্কুলের হেডমাস্টার করুণাময় দাসগুপ্ত ও ইন্দিরাদেবীর পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা রমা দাসগুপ্তর ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের চিরনবীন কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেন হয়ে ওঠার কাহিনী নিঃসন্দেহে ঘটনাবহুল। ১৯৭৪ সালে বিখ্যাত শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন রমা। তারপর ১৯৫২ সালে প্রথম ছবি ‘শেষ অধ্যায়’ অবশ্য মুক্তি পায়নি। ওই বছরই আরো দুটি সিনেমা করেন তিনি। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তমকুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ তাঁর আত্মপ্রকাশ বাংলা সিনেমা জগতে সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৯, দীর্ঘ ২৬ বছর – অগ্নিপরীক্ষা, দেবদাস, শাপমোচন, সবার উপরে, সাগরিকা, শিল্পী, হারানো সুর, পথে হোল দেরী, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, চাওয়া পাওয়া, হসপিটাল, সাত পাকে বাঁধা, উত্তর ফাল্গুনী, দেবী চৌধুরানী, মুসাফির, বোম্বাই কা বাবু, মমতা, আঁধি, প্রভৃতি একের পর এক প্রায় ৬৭টি বাংলা ও হিন্দী হিট ফিল্ম। তাঁর আভিনয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৬৩ সালে; ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভাল-এ। ১৯৭২-এ পান পদ্মশ্রী, আর ২০১২ সালে বঙ্গ বিভূষণ ‘লাইফ টাইম এচিভ্‌মেন্ট ইন ফিল্ম এক্টিং’-এর জন্য। ১৯৭৯ সালে অবসর গ্রহনের পর দীর্ঘ ৩৫ বছর তিনি নিয়ে ছিলেন স্বেচ্ছানির্বাসন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই মহানায়িকার জীবনাবসান হোল ১৭ই জানিয়ারী, ২০১৪।

তবুও মৃত্যু শুধু একটি অধ্যায়েরই ছেদ টানতে পারে; পৃথিবী চলে নিজের গতিতে, কোনও পরিবর্তন হয় না। তাই মাঘমাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ঝমঝমিয়ে এসে উপস্থিত হয় বাঙ্গালীর প্রেমদিবস – সরস্বতী পূজো আর ১১ই মাঘ ব্রাহ্মসমাজের মাঘোৎসব। খনা বলেন, যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ – তবুও মাঘের প্রকৃতি নীরস। তাই বাংলা সাহিত্যে মাঘের প্রসঙ্গ দুর্লভ। কিন্তু, আমের কুশি তো এই মাসেই বোলে পরিণতি পায়!! তাই রিক্ত মাঘ, নিঃস্ব মাঘ উল্লেখযোগ্য স্বাতন্ত্রে ইঙ্গিত বহন করে চির নতুন, চির সবুজের প্রতীক বসন্তের নৈকট্য বার্তার পূর্বাভাসে!!

এ মাসের বিশ্ব বিখ্যাত বঙ্গীয় উৎসবটি হোল নিঃসন্দেহে কলকাতা পুস্তক মেলা। ১৯৭৬ সালে প্রবর্তিত এই বইমেলা ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি অর্জন করে। এশিয়ার সর্ব বৃহৎ এবং ফ্রাঙ্কফূর্ট ও লন্ডন বইমেলার পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ এই মেলা পুস্তকপ্রেমী মানুষের এক আশ্চর্য মিলনতীর্থ। কলকাতা বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম অবাণিজ্যিক বইমেলা। এ বছর মেলার ৩৮তম বছর। ফ্রাঙ্কফূর্ট বইমেলার আদলে প্রতি বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী একটি বিদেশী রাষ্ট্র ‘ফোকাল থিম’ ও ‘সম্মানিত অতিথি রাষ্ট্র’ নির্বাচিত হয়। এবারের ‘ফোকাল থিম’ ও ‘সম্মানিত অতিথি রাষ্ট্র’ রহস্যময় ‘ইন্‌কা’ সভ্যতার মায়াবী দেশ দক্ষিণ আমেরিকার পেরু। এখন কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এই মেলা একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। বিভিন্ন দেশী বিদেশী বই ছাড়াও নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, পদযাত্রা, প্রতিযোগিতা, গ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠান, লিটল ম্যাগাজিন স্টল, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, গান, আর কত কি এ মেলার বিশেষ আকর্ষণ। পরিসংখ্যান বলে, প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের শেষ বুধবার থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় রবিবার পর্যন্ত – ১২ দিন ব্যাপী এই মেলায় প্রায় ২ কোটি মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ এক অভাবনীয় মিলনোৎসব।

এই সর্বব্যাপী উৎসবের বার্তা বহন করে প্রকাশিত হোল চিলেকোঠা ওয়েবজিন প্রথম বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা। এই সংখ্যায় সংযোজিত হোলো দুটি নতুন বিভাগঃ আনন্দলোক এবং হাস্যকৌতুক। এছাড়া থাকছে প্রচ্ছদ নিবন্ধ, বিশেষ প্রতিবেদন, কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রা সেনের স্মৃতিতর্পণ, তিনটি মনোজ্ঞ প্রবন্ধ, কবিতা, ছোটগল্প, ধারাবাহিক, নাটক, ইত্যাদি। আর, চিলেকোঠা সরগরম, ছোটোদের পাতা, রান্নাঘরের মতো নিয়মিত বিভাগগুলি তো থাকছেই। আশা করি, ভালো লাগবে।

সংশয় নেই, প্রতিবারের মতই এবারও পড়বেন মন দিয়ে; নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়ান, সুচিন্তিত মতামত জানিয়ে পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করুন। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আপনাদের একান্ত নিজস্ব পত্রিকাটির মানোন্নয়ণে সহায়তা করবে।

জানি, সঙ্গে আছেন, সঙ্গে থাকবেন, ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা জানবেন।।



নমস্কারান্তে,

চিলেকোঠা ওয়েবজিনের সম্পাদকমণ্ডলী


1 মতামত:

  1. সুচিত্রা সেন অভিনীত ছায়া-ছবির দীর্ঘ তালিকা থেকে সপ্তপদী কিভাবে বাদ গেল বুঝলাম না !!

    উত্তরমুছুন