আমার সরস্বতী পূজো
ইন্দ্রাণী ঘোষ
জানুয়ারীর শেষে, ফেব্রুয়ারীর শুরুতে শীত যখন যাই যাই করেও যায় না, কৃষ্ণচূড়া, রুদ্রপলাশে, চারিদিক হলুদ হয়ে থাকে, একটা কোকিল মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে, ঠিক তখনি হুড়মুড়, দুদ্দাড় করে আগল ভেঙে বেরিয়ে আসে আমার ছেলেবেলা। আর ছেলেবেলা মানেই সরস্বতী পূজো ।
এক মাস আগে থেকে চলত নাটকের মহড়া - কখনো রবীন্দ্রনাথ, কখলো সুকুমার রায়, কখনো ঋতু রঙ্গ নিয়ে একেবারে বাসন্তী সাজে সেজে চলে আসত দিনগুলো আমার সামনে। ভাবতাম কি করে থাকব সারাটা বছর এত আনন্দ ছাড়া। তখন তো আর বুঝতে শিখি নি, না থাকাটাকেই মেনে নিতে হয়, আনন্দ আসলে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা!
সরস্বতী পূজোর আগের রাত্রে আমরা কেউ ঘুমোতাম না। সেই রাতের নেশা এখন যে কোনো নেশা কে ঠেলে সরিয়ে দিতে পারে। রক্তচক্ষু এড়িয়ে সেই আনন্দের চোরাস্রোতে গা ভাসানোর এক মুক্তির আশ্বাস ছিল আমাদের কাছে। পাশের তৈরি হওয়া বাড়ির থেকে ইঁট চুরি করা দিয়ে শুরু হতো আমাদের সৃষ্টিশীলতা। সারা রাত বাজে বকে ভোর হতে যখন একটু বাকি থাকত, আমরা যেতাম ময়দা গুলে আঠা তৈরি করতে । সেই আঠা, মারবেল পেপার, চুমকি, অভ্র, সমস্ত নিয়ে সেদিন আমরা একেবারে সৃষ্টিশীলতার তুঙ্গে থাকতাম।
ঐ কয়েক ঘন্টা আমরা হয়ে পড়তাম’ চূড়ান্ত সৃষ্টিশীল। সব শেষ করে যে যার বাড়ি গিয়ে চাপ চাপ হলুদ মেখে স্নান করে নতুন পরতে শেখা শাড়ী নিয়ে লতপত করে ঠাকুরের সামনে। শুরু হত আমাদের সরস্বতী পূজো ।
আমরা সেদিন সব এক এক জন নায়িকা। সবই তো আপেক্ষিক, ভেবে নিলেই হল। সকালের অনিদ্রার চোখ জ্বালা, হলদে শাড়ীর ঝলকানী আর কাঁচা হলুদের গন্ধ নিয়ে সে কি মহা সমারোহ !
এতদিন পর হয়তো অনেক কারনেই চোখ জ্বালা করে, সেই সরস্বতী পূজোর চোখ জ্বলুনীর সাথে তার কোন তুলনা নেই। কি মুক্তির আস্বাদ থাকতো হলদে শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে। আজ প্রায় মধ্য বয়েসে এসে দাঁড়িয়ে সেই নতুন বাটা হলুদের গন্ধ ঝাপটা মারে ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে, ফিরে যেতে পারি শুধু স্মৃতিতে, যেখানে ছবিতে বাঁধাই হয়ে আছে আমার সরস্বতী পূজো।
আর সেই দিন ফিরবে না জানি, কারণ সেই চমক লাগা মনটাই তো ঘুমিয়ে পড়েছে এজ অভিজ্ঞতার লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে !
জানুয়ারীর শেষে, ফেব্রুয়ারীর শুরুতে শীত যখন যাই যাই করেও যায় না, কৃষ্ণচূড়া, রুদ্রপলাশে, চারিদিক হলুদ হয়ে থাকে, একটা কোকিল মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে, ঠিক তখনি হুড়মুড়, দুদ্দাড় করে আগল ভেঙে বেরিয়ে আসে আমার ছেলেবেলা। আর ছেলেবেলা মানেই সরস্বতী পূজো ।
এক মাস আগে থেকে চলত নাটকের মহড়া - কখনো রবীন্দ্রনাথ, কখলো সুকুমার রায়, কখনো ঋতু রঙ্গ নিয়ে একেবারে বাসন্তী সাজে সেজে চলে আসত দিনগুলো আমার সামনে। ভাবতাম কি করে থাকব সারাটা বছর এত আনন্দ ছাড়া। তখন তো আর বুঝতে শিখি নি, না থাকাটাকেই মেনে নিতে হয়, আনন্দ আসলে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা!
সরস্বতী পূজোর আগের রাত্রে আমরা কেউ ঘুমোতাম না। সেই রাতের নেশা এখন যে কোনো নেশা কে ঠেলে সরিয়ে দিতে পারে। রক্তচক্ষু এড়িয়ে সেই আনন্দের চোরাস্রোতে গা ভাসানোর এক মুক্তির আশ্বাস ছিল আমাদের কাছে। পাশের তৈরি হওয়া বাড়ির থেকে ইঁট চুরি করা দিয়ে শুরু হতো আমাদের সৃষ্টিশীলতা। সারা রাত বাজে বকে ভোর হতে যখন একটু বাকি থাকত, আমরা যেতাম ময়দা গুলে আঠা তৈরি করতে । সেই আঠা, মারবেল পেপার, চুমকি, অভ্র, সমস্ত নিয়ে সেদিন আমরা একেবারে সৃষ্টিশীলতার তুঙ্গে থাকতাম।
ঐ কয়েক ঘন্টা আমরা হয়ে পড়তাম’ চূড়ান্ত সৃষ্টিশীল। সব শেষ করে যে যার বাড়ি গিয়ে চাপ চাপ হলুদ মেখে স্নান করে নতুন পরতে শেখা শাড়ী নিয়ে লতপত করে ঠাকুরের সামনে। শুরু হত আমাদের সরস্বতী পূজো ।
আমরা সেদিন সব এক এক জন নায়িকা। সবই তো আপেক্ষিক, ভেবে নিলেই হল। সকালের অনিদ্রার চোখ জ্বালা, হলদে শাড়ীর ঝলকানী আর কাঁচা হলুদের গন্ধ নিয়ে সে কি মহা সমারোহ !
এতদিন পর হয়তো অনেক কারনেই চোখ জ্বালা করে, সেই সরস্বতী পূজোর চোখ জ্বলুনীর সাথে তার কোন তুলনা নেই। কি মুক্তির আস্বাদ থাকতো হলদে শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে। আজ প্রায় মধ্য বয়েসে এসে দাঁড়িয়ে সেই নতুন বাটা হলুদের গন্ধ ঝাপটা মারে ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে, ফিরে যেতে পারি শুধু স্মৃতিতে, যেখানে ছবিতে বাঁধাই হয়ে আছে আমার সরস্বতী পূজো।
আর সেই দিন ফিরবে না জানি, কারণ সেই চমক লাগা মনটাই তো ঘুমিয়ে পড়েছে এজ অভিজ্ঞতার লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে !
ইন্দ্রাণী ঘোষের 'আমার সরস্বতী পূজো' প্রতিবেদনটি ভারী নস্ট্যালজিক। তাঁর স্নিগ্ধ লেখাটি অনেকের ছোটবেলার স্মৃতিকে উসকে দেবে তা নিশ্চিত করেই বলা চলে।
উত্তরমুছুনdhonnobad khub bhalo laglo.
উত্তরমুছুনkhub sundor godyovasha!
উত্তরমুছুনভালো লেখা। তখন সরস্বতী ছিলেন জ্ঞানের দেবী, এখন প্রেমের দেবী ! আমার শুধু দুটি না-পাওয়া থেকে গেল এই লেখাটি থেকে। ঈন্দ্রানী অবশ্য কাগজ, চুমকি, আঠার কথা লিখেছেন, কিন্তু শিকলি ছাড়া সরস্বতী পুজো আর শিউলি ফুল ছাড়া সরস্বতীর কথাটার অনুউল্লেখ আমার মনঃকষ্ট বাড়িয়ে দিলো !!
উত্তরমুছুন