প্র্রসঙ্গঃ নাটক ও একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা (অল্প কথা)
প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এম এ (নাটক)
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, নির্দেশক – নচিকেত নাট্যগোষ্ঠী
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, নির্দেশক – নচিকেত নাট্যগোষ্ঠী
“ন তজ্ জ্ঞ্যানং, ন তশিং, ন সা বিদ্যা, ন সা কলা, নসৌ যোগা, নত্য কর্ম নাটো হস্মিন্ যন্ন দৃশ্যতে।“
ঋষি ভরত তাঁর নাট্যশাস্ত্রে যে যথার্থতা তুলে ধরেছেন, অর্থাৎ, এমন কোন জ্ঞ্যান, শিল্প, বিদ্যা, কলা নেই, এমন যোগ বা কৌশল কম নেই যা নাট্যে দেখা যায়না।
বলা বাহূল্য, প্রকৃত নাট্যের এই রূপ, এই সুন্দরের সার্থক প্রকাশ বহু সাধনার বিষয়।
বাংলার নাট্য-ইতিহাস, তার চর্চা, আন্দোলন যে পথ পরিক্রমায়, তা কিন্তু গর্বের বিষয় রূপেই বাঙালি দর্শক মননে রেখাচিহ্ন এঁকে চলেছে। ঊনবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে ‘হিন্দু থিয়েটার’, সাতের দশকে ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’-এর হাত ধরে, গণনাট্য ও নবনাট্য আন্দোলনে এসে বিংশ শতকের উপান্ত পর্বেই ‘নবান্ন’-এর ঘ্রাণে, গ্রুপ থিয়েটার নামক নাট্য-যৌবনের জোয়ার বাংলা নাট্য জগতকে সমাচ্ছন্ন করেছে। অর্ধেন্দুশেখর, গিরিশচন্দ্র, অমৃতলাল হয়ে শিশিরকুমার,শম্ভু মিএ, কিংবা পূর্বের ‘নীলদর্পণ’, চার অধ্যায়, দশচক্র, কল্লোলযুগের উপমা। যেখানে সে দিনের কল্লোল, উৎপল দত্তও সমভাবে হাজির।
এই নাট্য তথা শিল্প-সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয় সামাজিক প্রেক্ষিত থেকে। আর এই সামাজিক প্রেক্ষিত সৃষ্টির অন্তরালে থাকে আর্থ-রাজনৈতিক ঘেরাটোপ। এই আবর্তেই আবার বিংশ শতকের চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে একাঙ্ক নাটক ও প্রতিযোগিতা ভিত্তিক প্রযোজনার সৃষ্টি। প্রতিযোগিতার জন্যে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নাটক লিখতে গিয়ে, ‘নাট্য’ এক্ষেএে তার কৌলিন্য ভুলেছে। এ এক শিল্পের সংকট। আজই মূল্যায়ন প্রয়োজন।
নাট্য আন্দোলনের পূর্ব ইতিহাস, বিষয়গত দৃষ্টিকোণ, গভীরতা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে, বিচারক নয়, দর্শকের মূল্যায়নই প্রযোজনাকে মর্যাদার স্হানে উন্নিত করতে পারে। দর্শকই শ্রেষ্ঠ বিচারক।
নাটক তো মানুষের কথা বলে, জীবনের কথা বলে। ঘটা করে প্রতিযোগিতার অর্থ কোথায়? বরং প্রকৃত নাট্য-চর্চা এতে বন্ধ হচ্ছে। বন্ধ্যা হচ্ছে আগামীর সংস্কৃতি। অভিনেতা-অভিনেএীদের মধ্যে ‘অহং’ ও ‘আমিত্ব’ প্রকট হচ্ছে, যা কখনই ভালো নাটক, ভালো প্রযোজনার সৃষ্টি করতে পারেনা।
নাট্যবন্ধু, মননের উন্মেষ, আত্মবিশ্লষণ, কঠোর চর্চা(তপস্যা বলাই ভালো), সঠিকভাবে প্রতিক্ষণের অধ্যায়ণ, যথাযত নাট্যগুরুর সান্নিধ্যে নাট্যাশ্রমে অংশগ্রহণ, ভালো নাট্যের সঠিক প্রযোজনার সূচনা করতে পারে। এতো আপনার মত আমারও অজানা নয়। তবু পথ ভুল হয়, ভুল পথেই আবার নাট্যপথিক পথ খুঁজে নেয়, সত্যের পথ, সংকল্পের পথ, সুন্দরের পথ – কীটস্ এর কথায় ------
Beauty is truth, Truth is beauty
That is all
Ye Know on earth and –
All ye need to know
- Ode 0n a Grecian urn.
তাই, এই সুন্দরের সাধনা প্রতিযোগিতায় নয়, সহযোগিতার সাহচর্যেই সম্ভব। তাহলেই নাট্যের সঙ্গে প্রযোজনার প্রকৃত সঙ্গম, সৃষ্টি করতে পারে সার্থক সংস্কৃতি। অন্যথায়, নাটকের কষ্টিপাথরে দাগ লাগেনা, বরং প্রশ্ন আসে প্রচেষ্টার সূক্ষতা নিয়েই। মনে রাখতে হবে সন্মাগ সপর্যা – শম্ভু মিএ “ আমাদের আকাঙ্খা এক, স্বপ্ন এক এবং এই আমাদের ঘাড়ে ভর করেই মা নাট্যভারতী নড়বড় করতে করতে চলেছে, আর ভাবছে – বোধ হয় ভাবছে – সে মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে কিনা।“
বাংলা নাটক এবং একাঙ্ক নাটক-প্রতিযগিতা নিয়ে লেখা এক মননশীল আলেখ্য। লেখকের সঙ্গে সম্পুর্ণ সহমত। তবে, একাঙ্ক নাটক-প্রতিযোগিতার উৎসাহে বোধহয় এখন ভাঁটার টান চলছে।
উত্তরমুছুন