রম্যরচনা - নারায়ণ রায়

টি উইথ পটাইবাবু
নারায়ণ রায়



আমাদের উত্তর কলকাতায় রকবাজি ব্যাপারটা এখনও চালু আছে। রকবাজি শব্দটার মধ্যে একটা ভালগারিটি আছে, তাই আমরা ভদ্র ভাষায় বলি ‘রকে বসে গল্প করা’। আরও সুন্দর করে বললে, বলতে হয় দুই বা ততোধিক ব্যাক্তির একত্রে একটি খোলা বারান্দায় বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। আমাদের পাড়ায় পটাইবাবুর পৈতৃক বাড়িতে রাস্তা বরাবর একটা সুন্দর বারান্দা আছে, সেখানে আমি, পটাইবাবু এবং পটাইবাবুর বন্ধু লাটাইবাবু এই তিনজন সকালে এবং সন্ধ্যায় কিছু সময় বসে গল্প গুজব করি। মাঝে মধ্যে কোন কোন দিন আরও দু এক জন জুটে যায়, তবে আমরা তিনজন এই ব্যাপারে খুবই নিয়মিত। আর সংখ্যায় তিনজনের অধিক হ’লে একটা অসুবিধাও আছে, পটাইবাবুর স্ত্রী সুরবালা আমাদের তিনজনের জন্য দৈনিক মোট তিনকাপ চা বরাদ্দ করে রেখেছেন, সেকারণে আড্ডাবাজের সংখ্যা তিনের অধিক হলে চায়ের পরিমান বৃদ্ধি পাবে না, বড়জোর সেই অতিরিক্ত সংখ্যার খালি কাপ পাওয়া যেতে পারে। বাঙ্গালি তো এমনিতেই চিরকাল আড্ডাবাজ বলে পরিচিত, ঘনাদা, টেনিদা, ব্রজদা এই সব প্রাতঃস্মরনীয় ব্যক্তিরা তেমন কোন কাজ না করে শুধু আড্ডা দিয়েই বিশ্ব খ্যাত হয়েছেন। শুধু আড্ডার জন্যই কফি হাউস ছাড়াও কলকাতার বেশ কয়েকটি রেস্তোরার আজ ভুবন জোড়া নাম। তবে পটাইবাবুর দুঃখ এ পোড়া বাংলাদেশে তাঁর প্রতিভার প্রকৃত মূল্যায়ন আজও হ’ল না, তিনি যদি ইউরোপ বা আমেরিকায় জন্মাতেন তাহলে নোবেল পুরস্কার না হলেও দু-চারটে অস্কার কিম্বা বুকার অবশ্যই পেতেন। তবে হ্যাঁ, পটাইবাবুর স্মরণ শক্তির জবাব নেই, এই এলাকার গত ষাট বছরের সমস্ত ঘটনা তাঁর মুখস্ত।



এখন আমাদের আড্ডা সম্বন্ধে কিছু বলার আগে আমাদের এলাকার একটি বর্ননা দেওয়া যাক। এই পাড়াটি নিতান্তই নিম্নবিত্ত এবং কিছুটা মধ্যবিত্ত এলাকা, এখনও বেশ কিছু ধুতিপরা লোক দেখতে পাওয়া যায়, বেশীরভাগ লোক সকালে লুঙ্গি পড়ে বাজার করতে যায়। এখনও এই এলাকায় প্রচুর পুরানো বাড়ি আছে, তবে আস্তে আস্তে সেসব বাড়ি ভেঙ্গে সেখানে বহুতল নির্মিত হচ্ছে, কিছুদিন পূর্বেও এমনই একটি বাড়ির গেটে একটি প্লাকে লেখা ছিল “এই বাড়িতে ভরতের প্রথম ডাচ গভর্ণর বাস করিতেন”। সম্প্রতি সেই বাড়িটিও ধূলিসাৎ হয়ে সেখানে একটি বহুতল নির্মিত হয়েছে। নিকটস্থ আর একটি বাড়ি, এলাকায় ‘বোবা স্কুল’ নামে পরিচিত ছিল, এই বাড়িটিতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কিছুদিন বাস করেছিলেন এবং কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা রচনা করেছিলেন, আজ সেই বাড়িটিও বহুতলের গহ্বরে ধূলিসাৎ ।



পটাইবাবুর বাড়ির সামনের রাস্তার উল্টোদিকে ডানদিকে একটি পুরানো বাড়িতে ‘আদর্শ মাতৃ সদন’ নামে একটি নার্সিং হোম আছে । রাস্তার উল্টোদিকে বাঁদিকে আগে একটি পুরানো জীর্ণ বাড়ি ছিল, সম্প্রতি সেখানে একটি বহুতল নির্মিত হয়েছে যার প্রথম দুটি তল বিবাহ অথবা ঐ ধরনের কোন উৎসবে ভাড়া দেওয়া হয়। বাড়িটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সুবর্ণরেখা’।



আমাদের আড্ডা-বারান্দার সামনের রাস্তাটি সোজা নাক বরাবর গঙ্গায় গিয়ে পড়েছে, পাশেই শ্রী রামকৃষ্ণ মহাশ্মশান, প্রায় প্রতি ঘন্টায় একটি দুটি করে মৃতদেহ যেতে দেখা যায়। মোটামুটি এই হ’ল আমাদের এলাকার বর্ননা।



এ পাড়ায় আমি মাত্র গত কয়েক বছরের বাসিন্দা। তাই যে কোন খোঁজ খবরের জন্য আমাকে পটাই বাবুর উপরেই নির্ভর করতে হয়। সে যাই হোক, অন্যান্য দিনের মত সেদিনও আমরা তিনজন যথারীতি বারন্দায় সবে বসেছি, এমন সময় দেখি সামনের নার্সিং হোমটায় একটি রিক্সা এসে দাঁড়াল এবং রিক্সা থেকে নেমে এক যুবক ভিতরে ঢুকে গেলেন। এই দৃশ্য দর্শণ করে পটাইবাবু যা বললেন তার সারমর্ম হ’ল - নার্সিং হোমটির আসল নাম ‘আদর্শ মাতৃ সদন’ হলেও সবার কাছে সেটি ‘বিলে ডাক্তারের নার্সিং হোম’ বলেই পরিচিত। গরিবের ডাক্তার বলে পাড়ায় বিলে ডাক্তারের বেশ সুনাম আছে। নিতান্তই সাদামাটা নার্সিং হোম, ডাক্তারবাবুর মত বাড়িটিও প্রাচীন, ডাক্তারবাবু ছাড়া দুইজন নার্স ও দুইজন মাত্র কর্মী আছেন। পাড়ায় ছোট খাটো কোন ঘটনা ঘটলে ডাক্তারবাবু নিজের হাতে রোগীর ক্ষতস্থানে মারকিউরোক্রোম লাগিয়ে এবং একটা অ্যান্টি টিটেনাস ইঞ্জেকশান দিয়ে আর জি করে পাঠিয়ে দেন, এছাড়া নার্সিংহোমে সন্তান প্রসবা মায়েদের চিকিৎসা এবং প্রসব হয়ে থাকে। বিলে ডাক্তারের আসল নাম ডাঃ বলেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত, বিলে ডক্তারের বাবা পরলোকগত ধীরেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত স্থানীয় বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ছিলেন । সে যুগে শিক্ষকদের সমাজে বিশেষ মর্যাদা ছিল, অমন একজন পিতার পুত্র, তায় আবার চিকিৎসক, তাই পরিবারটিকে এলাকার লোকেরা বিশেষ সমীহ করে। কিছুক্ষন পরেই সেই যুবকটি তার কিশোরী বধূকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এসে রিক্সায় উঠলেন, কিশোরী বধুটির কোল আলো করে রয়েছে একটি সদ্যজাতক। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল,কিন্তু গোল বাধলো এর পরেই, যখন পটাইবাবু আমাকে জিগ্যেস করলেন, “আচ্ছা রায়বাবু আপনি কি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন?” আমি অসম্মতিসূচক ঘাড় নাড়তেই তিনি বললেন, “এই হয়েছে মুশকিল, দু’কলম বিজ্ঞান পড়েই আপনারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। অথচ স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ প্লানচেটের মাধ্যমে পরলোকগত তাঁর প্রিয় ব্যক্তিদের আত্মাকে এই ধরাধামে আনতে সক্ষম ছিলেন।” হঠাৎ এসব কথা অবতারনার কারন জানতে চাওয়ায় পটাইবাবু বললেন, “ আসলে ঐ শিশুটির ললাট এবং মুষ্টিবদ্ধ হাতদুটি দর্শন করে আমি নিশ্চিত জানতে পেরেছি যে শিশুটি পূর্বজন্মে কোন রাজনীতিবিদ ছিল।” যদিও সদ্যজাত শিশুর হাত সবসময় মুষ্টিবদ্ধই থাকে এবং বেশিরভাগ সময়ে চক্ষু দুটি বুজে থাকার জন্য কারও কারও কাছে তাকে চিন্তাশীল ব্যক্তির মতই লাগে, তবে পটাইবাবুর মুখের উপর একথা বলার সাহস আমার নেই, তাই মৌনব্রত অবলম্বন করাই শ্রেয় বলে মনে করলাম।



এদিকে ইতিমধ্যে পটাইবাবুর স্ত্রী সুরবালা একটা ভাঙ্গা প্লেটে তিনটে হাতল ভাঙ্গা কাপে তিনকাপ চা ঢিপ করে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। লাটাইবাবু প্রতিদিন এই একটি দায়িত্ব পালন করেন ! এক অদ্ভুত কায়দায় তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা একটি একটি করে কাপ এক এক জনের হাতে তুলে দেন। আমরা সবাই সবে চায়ে প্রথম চুমুক দিতে উদ্যত হয়েছি এমন সময়ে একটি গাড়ি এসে আমাদের আড্ডা বারান্দার সামনে এসে দাঁড়ালো এবং একজন যুবক গাড়ি হ’তে গলা বার করে শুধালেন,. “আচ্ছা এখানে সুবর্ণরেখা বিয়েবাড়িটা কোথায় বলতে পারেন ?” লাটাইবাবু তার উত্তরে জানালেন যে, “আপনারা সেই বাড়িটির সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।”



এ কথা শুনে পটাইবাবু আমাদেরকে বললেন,“আপনারা কি এই বিয়ে বাড়িটির ইতিহাস কিঞ্চিত জানেন ?”



আমরা উভয়ে না বলায় পটাইবাবু যা বললেন তার মর্মার্থ হল,ঐ স্থানে আগে একটি পুরানো জীর্ণ বাড়ি ছিল, বাড়িটিতে একজন অশীতিপর বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা তাঁর অসুস্থা ষাটবর্ষীয়া কন্যাকে নিয়ে থাকতেন। এইরকম একটি জনবহুল এলাকায় বাড়িটিতে খুবই ভূতের উপদ্রব ছিল। প্রায়ই দিনে-দুপুরে ভূতেরা বাড়িটির উপর বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করত। একদিন সারাদিন ধরে বাড়িটির উপর অনেক বোমা পড়ল, বিকেলের দিকে গোলাগুলিও চলল। আহত দুই অসহায় বৃদ্ধাকে এলাকার কয়েকজন স্বঘোষিত সমাজসেবী যুবক হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেন, তারপর থেকে তাঁরা আর এপাড়ায় ফিরে আসেননি, ঐ বাড়িটিতে, ভূতেদেরও আর দেখা মেলেনি। অতঃপর সেখানে একটি বহুতল নির্মিত হয়,যার প্রথম দুটি তল বিবাহ অথবা কোন উৎসব অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়, এবং এই হল ‘সুবর্ণরেখা’। এ’কথা বলার পর পটাইবাবু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে এত কিছু শোনার পরেও আমার ভূত-প্রেতের ন্যায় অপদেবতায় বিশ্বাস আছে কিনা। আমি আমার বক্তব্য জানাবার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই আমাদের সকলের নজর গিয়ে পড়ল ঐ বিবাহ বাড়িটির দিকে। গতকাল রাত্রে বিবাহ হওয়া দম্পতি সপার্ষদ শঙ্খধ্বনি সহযোগে বাইরে আসছে, নববধূ অবনত মস্তকে লাজুক বদনে এবং সিঁদুর রঞ্জিত সিঁথি নিয়ে প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে পা রাখতে চলেছেন। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে এক জোড়া নর নারীর মধ্যে এ কি এক অদ্ভুত পরিবর্তন। বিবাহিত জনেরা সকলেই এই পরিবর্তনটা উপলব্ধি করেছেন। মনে মনে যখন এই সব সাত পাঁচ ভাবছি তখন পটাইবাবু বললেন, “জানেন, শীতকালে কারো বিবাহ দেখলে আমার একটি বিশেষ কথা মনে পড়ে, ‘এক মাঘে শীত যায় না’ ! আমার জীবনে কিন্তু একটা মাঘেই জীবনের সব শীত চলে গিয়েছিল । লাটাইবাবু জিগ্যেস করলেন যে, কেন তিনি এমন কথা বলছেন ? তার উত্তরে পটাইবাবু বললেন-- “আমাদের বিয়ে হয়েছিল মাঘ মাসে, বিবাহে শ্বশুর মশাই দান সামগ্রী ও বিছানার সঙ্গে একটি খুবই মোলায়েম, ভেলভেটের লেপ দিয়েছিলেন, নতুন বিবাহের পর পরই মাঘ মাসে ঐ লেপের ভিতর শয়নের যে উষ্ণতা, তা’ আর জীবনের পরবর্তী বছর গুলির কোন মাঘ মাসেই আর ফিরে এলো না ? তাই আমার জীবনে ঐ এক মাঘেই জীবনের সমস্ত শীত চলে গিয়েছে। ”

আমাদের আড্ডার সময় ফুরিয়ে আসছিল, এমন সময় একটি শবযানে একটি মৃতদেহ যেতে দেখে লাটাইবাবু বললেন, “আজকাল মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার খুবই ভালো ব্যবস্থা হয়েছে। সুন্দর কাচে ঢাকা গাড়িতে ফুলের অলংকারে সজ্জিত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত অবস্থায় নীরবে চলে্‌ যাওয়া যায়।অথচ আগেকার দিনে একগাদা লোক মদ্য পান করে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে একটি মৃতদেহকে কাঁধে নিয়ে যেভাবে লাফাতে লাফাতে যেত,তা বড়ই দৃষ্টিকটু ছিল।” একথা শুনে পটাইবাবু বললেন, “আপনি ঠিকই বলেছেন লাটাইবাবু, শুধু তাই নয় সাংসদ কিম্বা বিধায়কদের নাম শোভিত কিছু কিছু গাড়ি তো আবার রীতিমত শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, যাতে মৃত ব্যক্তির স্বর্গ যাত্রার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।” আমরা দুজনে পটাইবাবুর কথায় সম্মতি জানাতেই তিনি বলে চললেন,“আপনাদের অবগতির জন্য জানাই যে শুধু শবযান নয় আমার পরিচিত একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর এলাকায় পুরো শ্মশান এমনকি চুল্লীর ভিতরটিও শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছেন,কারণ ঐ জনপ্রতিনিধি ভদ্রলোক একেবারেই গরম সহ্য করতে পারেন না। তাঁর বাড়ির রান্নাঘর বাথরুম সবই শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত। তাই তিনি তাঁর এলাকার শ্মশানের চুল্লীটি পযর্ন্ত শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছেন,যাতে মৃত্যুর পর তিনি অত্যন্ত আরামদায়ক শীতল পরিবেশে পুড়তে পুড়তে স্বর্গে গমন করতে পারেন।” এ কথা শোনার পর অত্যন্ত সাহস সঞ্চয় ক’রে আমি পটাইবাবুকে জিগ্যেস করি, “সদ্যজাত শিশুর পূর্ব জন্মের পরিচয়, কিম্বা এক মাঘে শীত না কাটা পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল কিন্তু শ্মশানে চুল্লীর ভিতরটাও শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত—এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না কী ?” এর উত্তরে কিঞ্চিৎ উত্তেজিত হয়ে পটাইবাবু বলে উঠলেন, “ঐ যে আপনারা দুকলম বিজ্ঞান পড়ে নিজেদেরকে বড্ড পন্ডিত ভাবে্‌ন, তাই এসব ব্যাপার নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করাই বৃথা।” সত্যি পটাইবাবুর মতো পন্ডিত ব্যক্তির সঙ্গে আমার তর্ক করতে যাওয়া উচিৎ হয়নি,আমি যখন একথা ভাবছি তখনই লাটাইবাবু বললেন, “আপনারা বৃথাই তর্ক করছেন, আজ একটা ব্যাপার আপনারা লক্ষ করেছেন কি ?” ব্যপারটা কী জানতে চাওয়ায় তিনি বললেন,“এখানে এতদিন বসছি, কিন্তু আজকেই প্রথম আমরা গত দুই ঘন্টায় জন্ম, বিবাহ এবং মৃত্যু পর পর তিনটেই প্রত্যক্ষ করলাম।”


1 মতামত: