কবিতা - সাত্যজিৎ

বিদায়
সাত্যজিৎ



কেউ বলতো পথশিশু,
কেউ বলত বেজন্মা,
মাগো, তোমার চরণে নমস্কার,
তুমি দেখিয়েছ পৃথিবীর সুষমা।

নেয়নি সমাজ মেনে আমায়,
রেখে গেছ মহাভুবনে,
কেন মা আমায় নিলে না সাথে ?
দেখ আমি আজ পেরিয়ে এসেছি
একা একা অনেকটা পথ নিজের মতে।

ষ্টেশনের সেই সিঁড়িটাতে
বসে আছি একলা হয়ে,
বৃষ্টিটা যে কখন এলো
বোঝাও গেল না কোন মতে।
ওঠার চেষ্টা করলাম কত,
পারলাম না বাইতে সিঁড়ি,
চিনচিন করে বুকে হয় ব্যথা,
মনে পড়ে যায় অনেক কথা।
ছোটবেলায় খেলতাম এই সিঁড়িরই সাথে।

এখন অনেক লোকের ভিড়,
ছেলে বুড়ো বাচ্চা বউ,
সবজিওয়ালা,মুটে, মাঝি আরও নানান লোক,
দেখে আসছি বহুকাল।
জানো মা? অনেক কিছুই বদলেছে এতদিনে,
বদলেছে দিন, বদলেছে সময়, বদলেছে ঠাটবাট,
হয়ত আকাশের তারা হয়ে রোজ তুমি দেখ আমায়।
আমিও খুঁজি তোমায় হাজার তারার মাঝে।
সামনের দোকানগুলো বদলেছে,
ছিটেবেড়া থেকে হয়েছে ইঁটের,
দেওয়ালে লেগেছে রং।
স্টেশনের টিনের চাল আর নেই,
নেই পাথুরে মেঝে, ঝাঁ চকচকে সব,
ঝাড়ুদার ঝাঁটা নিয়ে আসেনা আর,
এখন আধুনিক, বলে ভ্যাকুমক্লিনার।
অবশ্য আমার ভালো,
পড়ে থাকতে হয়না ধুলো ময়লাতে,
মাটি থেকে কুড়োতে হয়না খাবার,
অভাব নেই খাবারের, সবাই আজ দুধেভাতে,
উচ্ছিষ্ট ফেলে যায় ওই নীলরঙা ডাস্টবিনে।

মা মনে আছে তোমার?
স্টেশন চত্তরটা একদিন আমাদের ছিল,
আজ তার কিছুটা জুড়ে ঠাণ্ডা পানীয়
আর রঙিন কাগজে মোড়া খাবারের স্টল,
আধুনিক চলমান সিঁড়ি,
কিন্তু কেউ কেড়ে নেয়নি আমার এই জায়গাটা।
আমার জন্মভূমি, আজ আমার মৃত্যুস্থল।

বৃষ্টিটা এলো ঝেঁকে, দূরে কোথাও পড়লো বাজ,
কোলাহল, লোক ছোটে আস্তানার খোঁজে,
ভিজতে থাকি আমি পাখিদের সাথে,
আজ তোমার আঁচল নেই মা,
মুছিয়ে দিতে আমায়,
রাখতে বুকে আঁকড়ে আমায় ঝড়জলে।
মা, সময় নেই এতকিছু বলার,
আসছি আমি তোমারই কাছে,
তোমারই কোলে মাথা রেখে,
শোনাব আমার রূপকথার বাকি গল্প।


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন