কবিতা - ইন্দিরা দাশ

অনুচিত প্রেম
ইন্দিরা দাশ



কিছুদিন ধরে মনে হয়
ভালবাসা মাপবার একটা যন্ত্র চাই,
সামাজিক,অদ্ভুত,অবৈধ,অন্যায়
সব ভালবাসা মেপে দেখবার,
একটা মিটার।

ছয় হাত বদলানো মেয়ে নিয়ে ক’টা রাত দুটো দিন,
তরল পানীয়,খাজুরাহো,নিদেনপক্ষে মন্দারমণি
ছোট হোটেলের বিল,
ক’ছটাক ভালবাসা মাপা মুশকিল।

অথবা বোকাসোকা লোক ধরে ফেলে,
বারবার মন দেওয়া-নেওয়া
ভাঙা-জোড়া খেলা খেলে,
আত্মতুষ্টিতে যে মহিলার সময় যাপন,
কে জানে কতগুলো মন,
সেইখানে হয়েছে আপন।

শরীরে পিষ্ট শরীর,সোনাগাছি,অন্ধকার পার্ক স্ট্রীটে
অথবা বছর পনেরো পুরনো প্রাণহীন বিবাহিত বিছানায়
অভ্যাসে চুমোচুমি,বড়জোর শোয়াশুয়ি,সপ্তাহে দিন তিন হয়,
ইচ্ছাহীন নিজেদের চোখ ঠেরে সহাবস্থান
প্রেমের কথামালার কততম উপাখ্যান ?

চোখ ঠোঁট সেলাইতে এখন যে বড় ঘরটাতে,
অমুক পিসির মেয়ে পালাতে না পেরে মামাতুতো দাদাটার সাথে,
আন্দুল লোকালের রেলপথে ফুলশয্যা যদিই বা পাতে,
রক্তের সিঁদুরে সাজে সোহাগীর লাল
বাধা দিতে পেরেছিল বৈধতা কাল ?

বস্তির ছামিয়া মারধোর মাতাল মরদকে ফেলে, কি খুঁজে যে পেল
রোগা কালো নতুন মাস্টারের চোখে এলোমেলো।
সেখানে সে সম্রাজ্ঞীর আসনেতে বসে
হয়ত বা জীবনের প্রথম,অথবা শেষ চুমু পেয়ে
এক ঢোঁকে ডিডিটিটা পুরো নিল খেয়ে।
সামাজিক অবদান,
ছোটোখাটো ভুলে যাওয়া প্রাণ।

যে ছেলেটা সমকামী ভালবাসা গলা টিপে ধরে
আরও বেশী অসহায় নতুন সীমন্তিনীর সাথে
অভিনয়ে রাজি হয়
তাকে কি বলবে, ভালো ‘সংসারী’ নয় ?

কে পাঠালো ন্যায়, বৈধতার দাগ-রেখাখানা স্বর্গরাজ্য থেকে !
নাকি মানুষের সমাজেরই সৃষ্ট ভয় সীতারক্ষা গণ্ডী এঁকেবেঁকে
ঘিরেছে জীবন ?
এই যে মনন-
হত্যা, লুট, ভোজালির এক কোপে প্রতিহিংসার জয়,
কোনওটাই তো নয়!
যারা শুধু ফোটাতে চেয়েছিল সাদা-নীল অল্প কিছু ফুল,
নিঃশর্তে কাউকে বলে যেতে চেয়েছিল, ‘তোমাকেই ভালবাসি’,
তারা সবটাই ভুল !

শোন,
সেই কাটাছেঁড়া তুতো ভাইবোন,
দেওর-বউদি সব জন
অথবা দড়িতে দোদুল্যমান যেই প্রেয়সীর
নরম অঙ্গুষ্ঠ ছুঁয়ে যে মজনু চলে গেছো অস্তাচল তীর,
এই পৃথিবীর –
এক নির্বোধ কবি আছে বেঁচে,তার লেখনীতে
তোমাদের সবাইকে অচেনা স্বর্গতে এক ঠাই করে দিতে।

যে কথা দুহাত ছড়িয়ে চিৎকার করে
পাহাড় আকাশেতে প্রতিধ্বনি ভরে,
বলা গেল না তো কোনও মতে একবার,
আফ্রিকা অরণ্যে অথবা নায়াগ্রা ধারাপাতে
নির্দ্বিধায় সামনে সবার -
আমি তাকে ‘জীবন’ বলেছি অকুন্ঠ বিশ্বাসে,
যে জীবন প্রতিদিন ‘মরণ’কে জেনেশুনে
তাও ভালবাসে।


3 মতামত: