মুক্ত গদ্যঃ অব্যয় অনিন্দ্য (বাংলাদেশ)
































মুক্ত গদ্যঃ 


মনখারাপের উঠোনে কাঠ-ঠোকরা 
অব্যয় অনিন্দ্য (বাংলাদেশ) 

একটা মন খারাপ এখন প্রায়ই আসে। এসে আমার কৈশোরের পোয়াতি স্বপ্নগুলোর গর্ভপাতকে ঠোঁটে করে নির্ঘুম রাতকে কোমর-বেল্ট বানিয়ে আমাকে ঘিরে দোল ঘড়ি হয়ে যায়। ঘড়িটা বেজে ওঠে ঠিকই, কিন্তু আমার হাতে সময়টা বাজে না। এই না বাজা সময় গোবেচারা মনখারাপকে নখ-দন্ত দিতে চায়। পড়শি হিংস্রতাকে ডাকতে যায়। ও তখন আর ধলেশ্বরীর চরগুলোর মত ডুবে থাকতে চায় না। স্পষ্ট নগ্ন মেরিলিন মনরো হতে চায়। কিছু একটা পোড়ানোর জন্য আগুন হয়ে যায়। অনেক কসরত শেষে অবসন্ন মনখারাপটা সিগারেট হয়ে আমাকে পোড়ায়। 

আসলে মনখারাপটাকে লাল-ভোল দেখিয়ে কীর্ত্তিনাশার খেয়ায় রেখে চলে আসার সময় ও চোখ মেরেছিল। ওই চোখমারার পাসওয়ার্ড সেসময় আমার জানা ছিল না। যতিকে ভুলে টেরামাইল গতিতে ছোটার পথে মনখারাপটা পাত্তা পায়নি। কিন্তু আজ বুঝি – কীর্ত্তিনাশার খেয়া বেয়ে ও আমার সাথেই ছিল। ও ছিল মারিয়ানা খাদ থেকে শুরু করে এভারেস্ট ছুঁয়ে ছুঁয়ে। আমার সাথেই সাত মহাদেশের প্রতিটি নগরে পাখি হয়ে উড়ছিল বেহুলার ভেলা ডানায় নিয়ে। 

এদিকে মনখারাপ বিষয়ে গতকাল ক’টা মদের গেলাস সুন্দরবনের এক কাঠ-ঠোকরা আর এক ছিঁচকে মাস্তানের ডায়েরী পড়ছিল। মনখারাপটা কিভাবে দিনে দিনে কাঠ-ঠোকরার ঠোঁটে ধারালো বর্শার ডিএনএ সূত্র লিখে দিয়েছে আর কেমন করে ওর জমজ বোন বিষণ্নতা মাস্তানটাকে ছিনতাইয়ের হাত ধরে নেতা বানিয়ে দিয়েছে সে গল্প শুনে একটা সাধুবাদ ছুটে গিয়েছিল মনখারাপের উদ্দেশ্যে। 

কিন্তু সাধুবাদটা আমাকে আড়ালে ডেকে বলল, ‘মনখারাপটা হতাশার সাথে দোস্তালি পাতালে ওকে আর সামলাতে পারবে না। তুমি কাঠ-ঠোকরা নও। মাস্তানি গুণও তোমার নাই। ওদের দোস্তালি থামাতে এক্ষুণি কূটনীতিকে ডাক।’ 

কূটনীতির সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল হেগ শহরে। শান্তি প্রাসাদে কবিগানের আসরে। সেখানেও ক’টা মনখারাপ পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নেতাদের টাইয়ের নটে খেউর নাচছিল। ওই মনখারাপের ছোঁয়ায় কূটনীতিটা নিউইয়র্ক ঘুরে আটলান্টিকে ডুব দিলে শান্তি ফেঁটে গেল নারিকেল গাছে। আর সুযোগ বুঝে মনখারাপগুলো যুদ্ধ হয়ে গেল। যুদ্ধটা উড়তে শুরু করল এদেশ থেকে ওদেশে। শকুনের ডানায় চড়ে মানবতাকে খুঁজতে লাগল। ধর্মশালায় বসে স্বর্গ-ফাঁদ আর ওয়ালস্ট্রিটে বসে বাজার-দখল এই দু’ভাই শকুনটাকে পথ দেখাচ্ছিল। এই শান্তি, কূটনীতি আর যুদ্ধের শুভমহরতে মানবতাটা কিন্তু অবশেষে চিতোরের পদ্মিনী হয়ে বেঁচেই গিয়েছিল। 

কিন্তু হায়, শকুনগুলোকে যে এখন মানবতার পাড়া-পড়শিদেরকেও খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই মনখারাপ শুধু আমারই থাক। সিগারেট হয়ে আমাকেই পোড়াক। সাথে ধলেশ্বরী কাঁদুক। কীর্ত্তিনাশার খেয়া ছটফট করুক। না হয় - আসছে বৈশাখী মেলায় মাটির সানকি কিনে ওর সাথেই ঘরকন্না শুরু করব। কেননা আমি ওটুকুই পারি - ক্ষমতা আমার সাথে এখনো ভাদ্দরবউ সম্পর্কই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতা যাদের চিলেকোঠায় ইটিশ-পিটিশ করছে, মনখারাপ সেখানে গেলে - কূটনীতি হেরে যায়। যুদ্ধটা কাঠ-ঠোকরা হয়ে এক ঠোকরে গিলে ফেলে সকল ধলেশ্বরী, সকল কীর্তিনাশা।


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন