বিশেষ রচনা - ঈশানী রায়চৌধুরী

ভালোবাসা | চার অক্ষর |
ঈশানী রায়চৌধুরী


চারটে অক্ষর কী অবলীলায় ব্যবহার করি ! সম্পর্কের ফাটলগুলো জোড়াতালি দিতে | অর্থহীন সংলাপের ফাঁকফোকরে গুঁজে দিই যখন তখন | দিব্যি অভ্যেস হয়ে গেছে ! উষ্ণতা বিছিয়ে দিতে | কেমন চমত্কারভাবে সাদা পাতায় ছড়িয়ে যায় যত্ন করে এঁকে রাখা লাল টুকটুকে লাজুকলতা হৃদপিণ্ডের মুখ | পানপাতা ! জেনে গেছি , ফুল-লতা-চকোলেটে-আংটিতে একটু সাজালে গোছালে এই চারটে অক্ষর খুব সহজেই পণ্য হয়ে যায় | অবিশ্বাস্য দ্রুততায় | দামী বা সস্তা কাগজে, নীল-কালো-বেগনী কালিতে অক্লেশে লিখে যাই চারটে অক্ষর | মৌখিক উচ্চারণ… সোচ্চার বা নিরুচ্চার… কোনো পূর্ব-নির্ধারিত আবেগের শর্ত ব্যতিরেকে | গল্পে বা কবিতায়, নাটকে বা সিনেমায়… যত আলগা বুনোট রিফু করি ; যত ছেঁড়া ফাটা সংলাপ ... কী সুন্দর... সেজেগুজে তৈরী চার অক্ষরের রঙিন পোশাকে | আমরা ওই চার অক্ষর সর্বাঙ্গে জড়িয়ে নিই আলগা করে … খুশি থাকি, খুব খুশি থাকি | রুপোর থালায় ছত্রিশ ব্যঞ্জনে খিদে মেটে না ; চার অক্ষরে কিন্তু তৃপ্তির উদ্গার ! গাছের নতুন পাতায়, বীজ থেকে অঙ্কুরের আভাসে, ফুলের পাপড়িতে ভেসে থাকা প্রথম আলোয় খুঁজে ফিরি ওই চারটে অক্ষরের জাদু ! এমনকি ধারালো ছুরির টানে যখন ফালাফালা হয়ে যায় রোজের মুখোশ আর পরণের রঙিন আলখাল্লা … তখন খুঁটে খাই চার অক্ষরের দানাপানি-সুখ | দু'টি নক্ষত্র ...কয়েক আলোকবর্ষ দূরে বা আকাশের এ অসীম নৈ:শব্দ্যের বধিরতা ...এ সব কি মেটাতে পারে ওই চারটি অক্ষর ? জানি, পারে না | তবু অস্বীকার করি, কারণ বৈচিত্র্যহীন যাপনসুখের ঝাঁ চকচকে ধাতব নীরবতা খানখান করে ভেঙে দিয়ে বারবার যখন কোনো ওষ্ঠাধরের উচ্চারণে ওই চারটি অক্ষর... বিস্ময়ে, ব্যথায়, শ্বাসে ও নি:শ্বাসে .... আঁকড়ে ধরি দু'টি আঙুলে… খাদের গায়ে লেপটে থাকা পিচ্ছিল পাথর ....


আঁকড়ে ধরি, ছেড়ে দিই, আঁকড়ে ধরি........


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন