কবিতা - শমীক (জয়) সেনগুপ্ত

বৈদ্যনাথ
শমীক (জয়) সেনগুপ্ত


আজ আমি পাগল বৈদ্যনাথ; তোমরা কি কেউ সৎ ব্রাক্ষ্মণ আছো? তোমাদের কি কলার গাছে মোচা থোড় হয় ? আমি তবে অর্দ্ধেকে তার ভাগ বসাবো চুরি করে । আমি আজ বদ্যি পাগলা- পৃথিবীতে সৎ ব্রাক্ষ্মণ বড্ড কমে গেছে ।

মায়ের মুখে শোণা কথা, বদ্যি থাকত' মামাবাড়ির পাড়ায়- তখনকার মামাবাড়ি এখনকার শহর ছিল না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে জজপুকুরের দিকে তাকালে শুধু জল টলমল ঘাটে- সবুজে ছায়ার খেলা দেখা যেত !! আজকের রেলিঙে বা ছেলেবেলার কচুরিপানায় ডাহুক আর পানকৌড়িরও আগের কথা- জল কিলিবিলানি ছায়ায় টুপুস করে ডুবে যেত সূয্যি ঠাকুর । সূর্যের সাথে আজ পুকুরের আড়ি !- মস্ত মস্ত বাড়ি উঠেছে সবুজ ভেঙে - হারিয়ে গেছে বদ্যিনাথের ঘর ওরই মতন করে .. রাতের কানে বদ্যির কানা দিদি ডাক ছাড়ত' -" অ বৈ-দ-দো-" পাগলায় উত্তর করত' "হ" ।

হাততালি দিয়ে বলতাম "আবার বল মা, আবার বল-" মা কিন্তু আর কিছু বলত না।।

দাদামশায়ের নাম ছিল সৎ ব্রাক্ষ্মণ হিসেবে- জীবনে মিথ্যে বলতেন না; আবার ছুঁত-মার্গ ও ছিল না। আয় কম ছিল তবু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছের অভাব হয়নি কোনদিন। তাই বদ্যিনাথের চুরির জন্য মামাবাড়ির কলাগাছ মাঁচার লাউ, পুঁইচারা কেউ রক্ষে পেত না। দিদা বলতেন -"নিবি যখন পুরোটা নিয়ে যা-" বদ্যি জীভ কাটত ! সৎ ব্রাক্ষ্মণকে ভাগ না দিয়ে চুরি করলে পাপ হয়- পাগল ছিল, তাই পাপ-পুণ্যির বিচার ছিল; আমরা পাগল নই- তাই সে বিচারও আমাদের নেই।।

দাদামশাই মারা যেতে- বদ্যি নাকি আমাদের দাওয়ায় আছরে পরে কেঁদেছিল খুব। কতকাল আগের কথা - আমি জানি না, সব শোণা। তারপর একদিন, বৈদ্যনাথ কোথায় চলে গেল। কেউ জানলো না- কোথায় ধানের শীষে; নবান্নের কাস্তের বোলে আবার দিন বয়ে যায়। আবার হেহনতী হাত ঠুকঠাক কামারের ঘাম ঝরা গান শুনিয়েছে নিঃশব্দ কামারশালায় ।

আবার আশ্বিণে ভরে ওঠা জজপুকুর দীঘল কালো জলে ইমারতী ছায়া ফেলে- লাইট জ্বলে ত্রিফলায়; আর রেলিঙে রেলিঙে দিন বদলেছে।

আচ্ছা সৎ ব্রাক্ষ্মণের হদিশ দিতে পার কেউ? কোথায় যেন বৈদ্যনাথ; আমার রক্তের সাথে মিশে গেছে; সেই শোণা গল্পের ভিড় ঠেলে- চারুকলা আর থোড়-কলা সব মিলে গেল। শুধু আকাশের দিকে তোলা হাত আর বিড়বিড় করা মুখ ব্রাক্ষ্মণ খুঁজে ফেরে।

আর আমার অন্তরের ভগ্নাংশে মেটামর্ফোসিস হয় অজানা উদ্ভ্রান্ত এক চন্দ্রাহত প্রাণের।

আমিও তাই আজ পাগল বৈদ্যনাথ ।।


1 মতামত: