কুচবরণ কন্যা আর এক
বাসরগাথা
শ্যামশ্রী
চাকি
ভোর পাঁচটা.. জমাট
অন্ধকার...
নহবতখানা থেকে সানাইয়ের সুর ভেসে আসছে....
নহবতখানা থেকে সানাইয়ের সুর ভেসে আসছে....
ভাঙা কার্নিশে আলতো হেলান দেয় মিতা। বাড়িটা জেগে উঠছে বিলম্বিত লয়ে....মধুবনী সারেঙ্গ.. একটু বাদেই জল সইতে যাবে সব.. রাতভোর আনন্দনাড়ু ভাজা হয়েছে, এখন একটা হালকা আলসেমির চাদর জড়িয়ে এই পুরোনো সাবেকি বাড়িটার গায়ে, অথবা সারাদিনের আসন্ন উৎসবের প্রস্তুতি...
রিম্পার ঘরের সামনে এসে
একটু থমকে দাঁড়ায় মিতা, সেদিনের একরত্তি মেয়ে, ভালো
করে হাঁটতে পারতনা..পায়ে পায়ে জড়িয়ে যেত, এই তো সেদিনও কাক কে
বলতো কাগা।
ক্লাস ফাইভে চাকরি যায় শ্যামলের। ওই রোগা আপনভোলা মেয়েকে কীভাবে সামলেছে ওরাই জানে। কাউকে একবিন্দু বুঝতে দেয়নি, সম্বল বলতে কটা পৈতৃক গয়না আর এই ভুতুড়ে বাড়িটা, ভিটেমাটি ছাড়া একে একে সব হারিয়েছে... তবুও আধফোটা ফুল পূর্ণাবয়ব পেয়েছে কীটদংশন ছাড়াই।
অপুষ্টিতে টিমটিম করে বেড়েছে আদৃতলতা কিন্তু লাবণ্যময়ী সে কুড়িটা বসন্ত পেরিয়ে বাস আর লোকাল ট্রেনের ধকল সয়ে আজও সতেজ ঢলঢলে লালিত্যমাখা..থাক.. শান্তিতে ঘুমোক.. ভেতরটা গুঁড়িয়ে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে মিতার..
ক্লাস ফাইভে চাকরি যায় শ্যামলের। ওই রোগা আপনভোলা মেয়েকে কীভাবে সামলেছে ওরাই জানে। কাউকে একবিন্দু বুঝতে দেয়নি, সম্বল বলতে কটা পৈতৃক গয়না আর এই ভুতুড়ে বাড়িটা, ভিটেমাটি ছাড়া একে একে সব হারিয়েছে... তবুও আধফোটা ফুল পূর্ণাবয়ব পেয়েছে কীটদংশন ছাড়াই।
অপুষ্টিতে টিমটিম করে বেড়েছে আদৃতলতা কিন্তু লাবণ্যময়ী সে কুড়িটা বসন্ত পেরিয়ে বাস আর লোকাল ট্রেনের ধকল সয়ে আজও সতেজ ঢলঢলে লালিত্যমাখা..থাক.. শান্তিতে ঘুমোক.. ভেতরটা গুঁড়িয়ে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে মিতার..
"বিসরি ত্রাস- লোক লাজে
সজনী আও আও না।।
গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে..."
গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে..."
রান্নাঘরের বারান্দায়
বসা বামুনদিকে তাড়া লাগায়,
...কই গো তোমার ভাই-বৌকে ডেকে জলখাবারটা চাপিয়ে দাও, দেরি হয়ে যাবে যে, দেখছ না ঘর ভর্তি আত্মীয় কুটুম্ব!! আমার রিম্পা মায়ের বিয়ে বলেই না এত দূর থেকে সব এসেছে.. দেখো কারো অবহেলা না হয়।
...কই গো তোমার ভাই-বৌকে ডেকে জলখাবারটা চাপিয়ে দাও, দেরি হয়ে যাবে যে, দেখছ না ঘর ভর্তি আত্মীয় কুটুম্ব!! আমার রিম্পা মায়ের বিয়ে বলেই না এত দূর থেকে সব এসেছে.. দেখো কারো অবহেলা না হয়।
মাথা নীচু করে চলে যায়
বামুনদি, একটু
আড়ালে ফিরে চোখ মোছে, ওঘর থেকে উলুধ্বনি আর
শাঁখের আওয়াজ কানে আসে মিতার এই দধিমঙ্গল শুরু হলো, পারিবারিক নিয়মে ও ঘরে
এখন যাবে না মিতা, আহা!! ভালো হোক সুখে
থাকুক মা আমার..
শ্যামলকে ঘুম থেকে তুলে
দেয় মিতা, এত
হৈ হট্টগোলে কীভাবে ঘুমায় কে জানে? অবশ্য রোজ ঘুমের ওষুধ
খেতে হয় শ্যামলকে, মিতার সে পাট কবে চুকে
গেছে!
এবার বাজারে না গেলে আর ভালো কিছুই পাবে না, যজ্ঞি বাড়ির দুপুরের রান্না.. রাতে অবশ্য আলাদা ব্যবস্থা.. নাহ! মেয়ের বিয়েতে কোন খুঁত রাখবে না ওরা, বড়ো আদরের যে.. কত সাবধানে কত যত্নে রক্ষা করে চলেছে এই মণিমণ্ডিত অমুল্য সম্পদ.. আজ কুড়িটা বছর.. ফেরার পথে শাঁখারিকে খবর দিতে যেন না ভোলে বারেবারে মনে করায় মিতা..
এবার বাজারে না গেলে আর ভালো কিছুই পাবে না, যজ্ঞি বাড়ির দুপুরের রান্না.. রাতে অবশ্য আলাদা ব্যবস্থা.. নাহ! মেয়ের বিয়েতে কোন খুঁত রাখবে না ওরা, বড়ো আদরের যে.. কত সাবধানে কত যত্নে রক্ষা করে চলেছে এই মণিমণ্ডিত অমুল্য সম্পদ.. আজ কুড়িটা বছর.. ফেরার পথে শাঁখারিকে খবর দিতে যেন না ভোলে বারেবারে মনে করায় মিতা..
এবার নিজের ঘরে ঢুকে
দরজা বন্ধ করে মিতা, দাদা-শ্বশুরের আমলের
পুরোনো সাবেকি খাটের নীচে রাখা বরণডালা বের করে শ্রী বানায়, বেজোড়
কলার ফানা দিয়ে সাজায় এক মনে, পেল্লায় প্রদীপটা ভরে
তেল দেয়, পলতেটা
এগিয়ে দিয়ে সাবধানে মালসা দিয়ে আধঢাকা করে প্রদীপের শিখা.. খুব সাবধানে আগলে
রাখে.. যেন আলগা বাতাসে নিভে না যায় মঙ্গলদীপ.. রক্ষা করতেই হবে.. মন ফিরে যায়
রিম্পার ছোট বেলায়.. বেলা বাড়ে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, পাশের ঘরগুলো থেকে ভেসে
আসে স্ত্রী-আচারের আনন্দ ধ্বনি, আর সুবেশা ললনাদের
নিক্কন, আর
নতুন বস্ত্রের সুঘ্রাণ.. আনন্দে ঘোর লেগে আসে নিরম্বু উপবাসে থাকা মিতার চোখে..
প্রদীপ জ্বলতে থাকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর...
"ঢালে ইন্দু অমৃতধার
বিমল রজত ভাতি রে।
মন্দ মন্দ ভৃঙ্গ গুঞ্জে, অযুত কুসুম কুঞ্জে কুঞ্জে,"...
মন্দ মন্দ ভৃঙ্গ গুঞ্জে, অযুত কুসুম কুঞ্জে কুঞ্জে,"...
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে
নামে, ফিরোজা
আকাশ হয় কৃষ্ণাভ, সামনের আম গাছে যেখানে
বাদুড় ডানা ঝটপটায় ঠিক সেখানে স্থির দৃষ্টি শ্যামলের, দেড় বছর আগে ঠিক ওখানেই
বিয়ের লাল ওড়নাটা গলায় জড়িয়ে ঝুলছিল রিম্পা.. ঠিক ওখানেই, সত্যি যদি আজ নেমে আসে, নীল
বেনারসিটা পরে কপালে চন্দন মাখা মেয়ে বলে ওঠে...
আমি এসেছি বাবা এই
দ্যাখো..
আসবে কি?
সত্যি কি এসে দাঁড়াবে শ্যামলের সামনে.. আম গাছের সব কটা পাতা ফিসফিস করে, আসবে আসবে, ফিরতে তাকে হবেই.
সত্যি কি এসে দাঁড়াবে শ্যামলের সামনে.. আম গাছের সব কটা পাতা ফিসফিস করে, আসবে আসবে, ফিরতে তাকে হবেই.
"পিনহ চারু নীল বাস, হৃদয়ে
প্রণয়কুসুমরাশ,
হরিণনেত্রে বিমল হাস, কুঞ্জবনমে আও লো।।"
হরিণনেত্রে বিমল হাস, কুঞ্জবনমে আও লো।।"
এলোকেশে খড়িওঠা মুখে, তিনদিনের
বাসি শাড়ি পায়ে জড়িয়ে বরণকুলো নিয়ে সদর দরজায় ছুটে যায় স্কিৎজিওফ্রেনিয়ার রুগী মিতা
চ্যাটার্জি.. সেদিন সাজানো দরজায় এসে পৌঁছয়নি রিম্পার তিন বছরের প্রেমিক বরবেশী
হবু জামাই, গভীর
রাতে একটা ফোন এসেছিল, আর তারও অনেক পড়ে বাড়ির
সামনের আম গাছ থেকে কাকে যেন নামিয়ে আনা হয়েছিলো, সে নাকি সালংকারা, তার
পরনে নীল বেনারসি কপালে চন্দন তবে আজ সে এসে দাঁড়াবেই, দেড় বছর ধরে রোজ
বরনকুলো সাজাচ্ছে মিতা, একদিন না একদিন তো
রাজপুত্রকে পক্ষীরাজে চেপে তার নীলাম্বরী রাজকন্যার কাছে ফিরতেই হয়.....
osadharon, sesh ta je ei bhabe nariye diye jabe bujhi ni aage.
উত্তরমুছুনMonvanganiya
উত্তরমুছুন