বড়শি
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
অঙ্কে যা মাথা মেয়েটার। কম্পিউটার স্কুলের ম্যাডাম শাশ্বতী বলেছিল, বড় হয়ে তুই নির্ঘাত কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার হবি।
ধক করে আশার দীপ জলে উঠেছিল বিদিশার মনে। উৎসুক আর উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কবে ম্যাম?
তার কথাটা এমন গেঁথে যাবে ছাত্রীর মনে তা
ভাবতেও পারে নি শিক্ষিকা। সে নিজেও অঙ্কে নেহাত খারাপ ছিল না। কিন্তু ভাল নম্বর পায় নি হায়ার সেকেন্ডারিতে। বেশিদূর পড়তেও পারে নি। প্রাইভেট একটা কম্পিউটার ইন্সটিটিউট থেকে
কম্পিউটারের কোর্স করে গ্রামের এই কম্পিউটার স্কুলে জয়েন করেছে। অনেক জায়গায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ডিজাইনার ফিজাইনার পেয়েছিল বটে তবে তার মন
পড়েছিল শেখানোর দিকেই তাই সে এখানে ফ্যাকাল্টির চাকরিতেই জয়েন করেছে। মাইনে বেশি নয় বটে তবে কাজটা ভাল। তার মনের পক্ষে খুব উপযুক্ত।
যে স্বপ্নের বীজ তার নিজের মনে পোঁতা ছিল
কিন্তু অঙ্কুরিত হতে পারে নি সেটাই সে পুঁতে দিতে চায় উপযুক্ত আর কারোর মনে।
বিদিশার মনে কিন্তু স্বপ্নের বীজটা বেশ
গভীরভাবে গাঁথা হয়ে গেল। কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ারের ব্যাপার স্যাপার
কিছুই সে বোঝে না কিন্তু ম্যামের মুখে শুনে তার হয়েছিল জিনিসটা খুব বড় হবেই।
কি সুন্দর সাজানো গোছানো টেবিলে কম্পিউটারের
সামনে বসে রঙ্গীন চুড়িদার পরে মুখে হাসি নিয়ে তাদের শেখান ম্যাম। যতবারই কেউ জিজ্ঞেস করুক তার মুখে কোনও
বিরক্তি নেই। মুছে যায় নি মুখের হাসিও।
প্রথমে ভেবেছিল ম্যামের মত সে একজন কম্পিউটার
শিক্ষিকা হবে। আনন্দের আতিশয্যে একদিন ম্যামের কাছে সে বলেও
ফেলেছিল। ম্যাম হেসে বলেছিল,আমার মত কেন রে? অঙ্কে তোর যা মাথা তুই তো একজন কম্পিউটার
ইঞ্জিনীয়ারই হবি।
সুতরাং কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার একটা বেশ ভাল
জিনিস। ম্যামের থেকেও বড়। তাই ওটা তাকে হতেই হবে। ম্যাম বলেছে অঙ্কে সে খুব ভাল। ইঞ্জিনীয়ার হতে গেলে তাকে আরও ভাল হতে হবে। তাই দিনরাত সে পড়াশোনা করছে।
বিদিশার বাড়িতে নেই বটে তবে মিমির বাড়িতে আছে। আছে মানে একটা টিভি আছে। মিমি খুব টিভি দেখে। অনেক সিরিয়াল দেখে। স্কুল থেকে যাওয়া আসার পথে সিরিয়াল আর
রিয়ালিটি শো নিয়ে কত আলোচনা করে।
এ সব কিছু মাথায় ঢোকে না বিদিশার। প্রথম কথা টিভি তাদের বাড়িতে নেই। বাবা জন মজুর। দাদা ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ে একটা মিস্তিরির
দলে ঢুকে পড়েছে।মা তিন চার বাড়ি কাজ করে। তার একটা বাচ্চা ভাই হয়েছে। সে হবার সময় বেশ কটা বাড়ির কাজ একটু আধটু
বিদিশাকেই করে দিয়ে আসতে হয়েছে। কি করবে মা বেচারি যে বাচ্চা ভাইটাকে নিয়েই
ব্যতিব্যাস্ত।
সকাল বিকাল তো তার পড়া ভাল করে হয় না। কাজে যেতে হয়। বেলায় ইস্কুল। ইস্কুল সে ফাঁকি দিতে চায় না একদম। তার তো আর প্রাইভেট টিচার নেই যে ইস্কুল
কামাই করলে সেই পড়াগুলো দেখিয়ে দেবে। রাতের বেলা পড়ে। বেশ রাত জেগেই। ম্যাম বলেছে অঙ্কে সে বেশ ভাল। আরও ভাল করে করলে কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার হতে
পারবে। সে না জানি কি বিরাট এক ব্যাপার। তবে ম্যাম বলেছে তখন অনেক টাকা হবে তার। ভাল খেতে ভাল পরতে পারবে।তারপর কত লোকে চিনবে তাকে। কত নাম হবে।
তাই পড়াশোনায় কি ফাঁকি দিলে হয়? রাত জেগে পড়া করলে শরীরে একটু কষ্ট হয় বটে
তবে ম্যামের হাসিমুখের ওই কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার হবার কথাটা তার সব কষ্ট মুছিয়ে দেয়। বড় হলে কত টাকা হবে। বাবা দাদাকে অত কষ্ট করে জন মজুর খাটতে হবে
না। বাবাকে দেখেছে সে ঠা ঠা দুপুর রোদে মাঠে
ধানের চারা রুইতে। অবশই অন্যের জমিতে। কাঠফাটা রোদে কত কষ্ট হয়।
শনিবার দুপুরে দাদাকে দেখেছে সেই কাঠফাটা
দুপুরেই মাথায় ইট বা মশলার কড়াই কিংবা ঘাড়ে ভর্তি সিমেন্টের বস্তা নিয়ে এক জায়গা
থেকে অন্য জায়গায় বয়ে দিতে। মনে মনে ভাবে ইস দাদাটা তো কম বোকা নয়? পড়াশোনাটা তুই ছাড়লি কেন? বড় হয়ে চাকরি করতিস কত টাকা পেতিস। এমন করে বালি সিমেন্টের বস্তা ঘাড়ে বইতে হত
না।
ক্লাস এইটে তিন তিনবার ফেল করেছিল দাদা। তার আগে ঘষতে ঘষতে উঠেছে। বাবা তাই তার পড়া ছাড়িয়ে দিল। ঢুকিয়ে দিল মিস্তিরির দলে। মাঝে মাঝে ইস্কুল থেকে আসার সময় গাছের নিচে
বসে ওকে বিড়ি টানতে দেখেছে বিদিশা। শুনেছে সন্ধ্যেবেলা নাকি নেশাও করে। বাবা কিছু বলে না। কিন্তু মা মাঝে মাঝে হা হুতাশ করে, বখে গেলি তুই গোবিন্দ? একেবারে বখে গেলি? বিড়ি খাস খা কিন্তু সন্ধ্যেবেলা ওই সব নেশার
ঠেকে না গেলেই নয়?
-কেন বাবা তো যায় দোষ নেই তার বেলা? দোষ শুধু আমার বেলা? চোপা করে অন্যদিকে সরে যায় গোবিন্দ।
মালতির মা এসে পড়েছিল এই সময়। বললে, আর দুঃখ করে কি করবে বল বিদিশার মা। এখন দিনকাল যা পড়েছে। তাতে তোমার ছেলে যে আবার লায়েক হয়ে গেছে। কথায় বলে ছেলে লায়েক হলে বাবা ছেলে এক
পাত্তরের মিত্তর হয়। কপাল চাপড়ে আর কি করবে বল?
সে এসেছিল আর একটা নতুন বাড়িতে কাজ করার জন্যে। কিন্তু মুখ কাচুমাচু করে বিদিশার মা তাকে বলল, দেখতেই তো পারছ বোন বাচ্চাটা নিয়ে আমি
নাজেহাল হচ্ছি। আর নতুন কোনও কাজ ধরতে পারব না।
-তাই তো কিন্তু ওরাও তো লোক পাচ্ছে না। গাঁই গুঁই করে মালতির মা, এখন কি যে বলি। বড় আশা করে এসেছিলুম দিদি। এখন মুখ থাকছে না দেখছি।
বিদিশার মা আর কথা না বলে বাচ্চাটার
পরিচর্যায় লেগে যায়। নিস্তার কি আছে? এটাকে কোলে
নিয়েই তো একটা বাড়ি সারতে হয় কাজ। কি আর করবে বাচ্চাটার দুধ সেরেল্যাক তো জোগান
দিতে হবে। স্বামী ছেলে যে রোজ কাজ পায় তা তো নয়। তবে তার কাজটা পার্মানেন্ট এই যা ভরসা। ছেলে কোলে নিয়ে কাজ করলে গিন্নী একটু বিরক্ত
হয় বটে কিন্তু এতদিনকার ঠিকে ঝি ওকে তো আর শুধু এই কারণে বিদেয় করা যায় না। তাছাড়া বিদেয় করলে নতুন লোক জোটানোও তো
মুশকিল।
ফিরেই যাচ্ছিল মালতির মা। হঠাৎ তার চোখ পড়ল বিদিশার দিকে। বিদিশা তখন একমনে পড়ছিল। এদিকে কান দেয় নি।
-তা তোমার মেয়েও তো বেশ বড় হয়েছে দিদি। বেশ ডাগোর ডোগোর। ও কি পারবে না এ কাজটা সামলাতে? বেশি ভারি তো আর নয়। দুটো ছেলে মেয়ে আর স্বামী ইস্তিরির সংসার। কদিন তো ওকে পাত্তরদের বাড়িতে কাজ করতে
দেখেছি গো?
-কে বিদিশা?
-হ্যাঁ গো দিদি তুমি না পার মেয়েটাকে দাও। বড় উবগার হয় লোকটার। একটা নুরকুট চাইছে।
বিদিশার মা রেগে উঠল, শুধু নুরকুট কেন ও পুরো কাজই সামলাতে পারে
বোন। বয়েস ওর কম হয় নি। কেলাস এইটে পড়ে। কিন্তু-
মালতির মা হয়ত বুঝল আপত্তির কারণটা। তাড়াতাড়ি বলল, তা বেশ তা বেশ নুরকুট নয় পুরো মাইনেই ওরা
দেবে আমি বলে দেব।
যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে এমনি ভাবে দৌড়ে চলে গেল
সে। এদের শেষের কথাগুলো প্রায় গিলছিল বিদিশা। আর মন তার ভয়ে কাঁটা হচ্ছিল। বলল, না মা আমি আর কারোর বাড়ি কাজে যেতে পারব না। ম্যাম বলেছে আমি অংকে খুব ভাল।
-তো? তার মা ঝামড়ে উঠে বলল, অঙ্কে ভাল হওয়াটা কোন সগগে বাতি দিতে লাগবে
শুনি?
-ম্যাম বলেছে আমি বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার
হতে পারি।
বিদিশার কথায় তার মা হাসবে কি কাঁদবে ভেবে
পেল না। তাদের এই ঝিটে বেড়ার খুপরি ঘর থেকে আধপেটা
খাওয়া মেয়ে হবে ভবিষ্যতের ইঞ্জিনীয়ার? বললে,তা ইঞ্জিনীয়ার হওয়া কি মুখের কথা? কত টাকা লাগবে জানিস?
সেটা তো বিদিশা সত্যিই জানে না। কোনও ধারণাও নেই। ক্লাস এইটে পড়া বিদ্যে হলেও এটুকু জানে এতে
লাগে হাজার হাজার টাকা। কিন্তু মাকে বললে মা তো সঙ্গে সঙ্গে না করে
দেবে। কিন্তু ইঞ্জিনীয়ার হোক বা না হোক লেখাপড়া
ছেলে বাড়ি বাড়ি কাজ করতে হবে?
-আমার কথা ছেড়ে দিলেও তোর বাবা দাদাকে দেখে
বুঝতে পারছিস ওরা কত কষ্ট করে সকলের মুখে দুটো ভাত তুলে দিচ্ছে? এ সংসারের প্রতি তোর কোনও দায়িত্ব নেই মা? তুই এত স্বার্থপর?
আর কথা বাড়াল না বিদিশা। তার চোখ থেকে ফোঁট ফোঁটা জল পড়তে লাগল। ওর মা সেটা দেখতে পেল না। সে এখন বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। সন্ধ্যেবেলা বাবা বাড়ি ঢুকল। আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু তাড়াতাড়ি। কারণটা হল মালিক তিনদিনের মজুরি আটকে রেখেছে। ঠেকে গিয়ে জানল এখন তার সাতদিনের টাকা বাকি
আছে। আজ সব না দিলে আর মাল দেওয়া যাবে না।
মেজাজ তাই টঙ্গে চড়ে বসে আছে। বৌ ব্যস্ত কোলের বাচ্চাটাকে নিয়ে। একটু চা করে দেবারও কেউ নেই। রোজ অবশ্য চা খায় না। মানে সন্ধ্যেবেলা অন্য কিছু খায় বলে খাবার
দরকার হয় না। কিন্তু আজ বাইরের লোকগুলোর ব্যবহার দেখে মনে
হল এর চেয়ে বাড়ির লোকগুলোই ভাল। অনেক আশা নিয়ে এসেছিল বৌ এক কাপ চা নিয়ে আসবে। মেয়ে পাশে বসে তার মাথায় আদর করবে। ভুলে যাবে মজুরি বা চোলাই না পাওয়ার দুঃখটাকে।
কিন্তু এখন বৌ ব্যস্ত তার বাচ্চা নিয়ে আর
মেয়ে ব্যস্ত পড়াশোনা নিয়ে।
-কি এত দিনরাত পড়াশোনা রে? মেয়েকে জিজ্ঞেস করল।
মেয়ে জবাব দেওয়ার আগেই মা বলে উঠল, তোমার মেয়ের শখ হয়েছে সে নাকি ইঞ্জিনীয়ার হবে। তাই এত রাতদিন পড়া।
একে তো মেজাজ চড়ে ছিল টঙ্গে। তারপর এই বেয়াড়া বেমানান কথায় মাথায় আগুন
জ্বলে উঠল। কি আমাদের মত গরিব বাড়ির মেয়ে কিনা হবে
ইঞ্জিনীয়ার?রূপকথার গল্প আর কি। ভেংচে উঠল নিতাই। ভেতরে ঢুকে মেয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে
বই টই সব ছুড়ে ছটকে দিয়ে বলল, এসব মস্করা কোথায় শিখলি?
ছেলের মুখে বোতল ধরেছিল বিদিশার মা। সেই ভাবেই সে বলল, ওর কম্পিউটারের ম্যাম ওকে খেপিয়েছে। সেই জন্যে তিতলিদের বাড়িতে কাজ করতেও যাবে না
বলছে। আহা মালতির মা কত করে বলল। যা হোক মাস গেলে দু’পাচশটা টাকা তো আসত নাকি?
-বার করছি তোর ওই কম্পিউটার শিক্ষা। কাল থেকে আর কম্পিউটারের ক্লাসে যাওয়া চলবে
না। মাসে মাসে অতগুলো করে টাকা জোগাতে হয় মুখের
রক্ত তুলে। আর সেখানে কিনা এসব শেখানো হয়।
অনেক লুকিয়ে চুরিয়ে পরের দিন কম্পিউটার
ক্লাসে গেল বিদিশা। ম্যমকে মিনতি করে বলল সে যেন বাবা বা মাকে
কিছু না বলে। ম্যাম ভেবে বলল, ঠিক তো কিন্তু মানা এটা তো আমার ইস্কুল নয়। আমি শুধু মাইনে করা দিদিমনি কেবল। মাইনে না দিলে কি আর তোমার শেখা হবে? ইস তোমার এত স্বপ্ন বিফলে যাবে? কিন্তু আমি আর কি করি বল। তোমার বাড়ির লোকই যদি রাজি নয় তোমাকে পড়াতে।
একজন লোক এসেছিল আর একমনে একটা কম্পিউটার
সারাচ্ছিল। সে মাঝে মধ্যে এখানে কম্পিউটার ঠিকঠাক করতে
আসে। কৌতূহলী হয়ে এদিকে তাকিয়ে দেখে আবার নিজের
কাজে মন দিল। একটু পরে বলল, কিন্তু তোমার এত বড় স্বপ্ন। অংকে তুমি এত ভাল। আবার দেখতেও তো বেশ ভাল। খুব সুন্দর।
বিদিশা আর কি বলবে। চুপ করে ম্যামের দিকে চেয়ে বসে আছে। যদি ম্যাম একটু বাবাকে বলে দেন। কিন্তু ম্যাম নয় বলল সেই লোকটি।
-একটা এন-জি-ও র সঙ্গে আমার জানাশোনা আছে। ওরা গরীবদের খুব সাহায্য করে। বিশেষ লেখাপড়ার ব্যাপারে।
ইস্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছে বিদিশাকে। ছাড়তে হয়েছে কম্পিউটার ক্লাসও। সেদিন তিতলিদের বাড়ি থেকে কাজ করে ফিরছিল। বেশ সন্ধ্যেও হয়ে গেছে। হঠাৎ তার গা ঘেঁসে একটা সাইকেল দাঁড়াল।
-তুমি বিদিশা না? তুমি মৃন্ময়বাবুকে চেন?
বিদিশা খানিক হাঁ হয়ে থেকে ঘাড় নাড়ল। কিন্তু মৃন্ময়বাবুকে সে চেনে না তাও বলল। তবে কথা শুনে মনে হল সেদিন কম্পিউটার স্কুলে
যে লোকটিকে কম্পিউটার সারাতে দেখেছিল তিনিই মৃন্ময়বাবু। আর সেদিন তিনি যে এন-জি-ও র কথা বলেছিলেন এই শুভ নামক লোকটি সেই এন-জি-ও তেই কাজ
করে।
-দেখ তো তোমার মত সুন্দরী মেয়ের এ কি
হ্যানস্থা। এই সব বাবা মায়েরা কবে বুঝবে মেয়েদের ভবিষ্যৎ
শুধু তারা নয় ঠিক করে দেবার আরও লোক রয়েছে?
এন-জি-ও টা একটু দূরে। পাশের এক শহরে। তা এ অসুবিধে কিছু নয়। তুমি বললে আমি নিয়ে যেতে পারি। ওরা প্রথমে টাকার অর্ধেকটা ধার হিসেবে দেবে।তোমাকে পড়িয়ে তোমার চাকরি পর্যন্ত করিয়ে দেবে। তখন তুমি মাসে মাসে ওদের ধার শোধ করে দেবে
কেমন?
আরে এমন হলে তো কত ভাল হয়। শুভ বলেছে একটা ইঞ্জিনীয়ার হয়ে সে কত মাইনে
পাবে। কত বড় বাড়ি হবে। কিন্তু বাবা? মা কিংবা দাদা? ওরা তো রাজি হবে না।
-ওদের বলতে হবে না ছাড় তো। মেয়ের উন্নতি চায় না যারা তাদের সঙ্গে আবার
কিসের কথা? শুভ বলল, এন-জি-ও র সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে দেখবে কত মিষ্টি
মানুষ।
ভাবার সময় চেয়েছে বিদিশা। আর ভেবেচেও সাতদিন ধরে। বাবার ছুড়ে দেওয়া নিজের ছেঁড়া বইগুলোর দিকে
তাকিয়ে ভেবেছে। আয়নায় বাবার চড়ে নিজের কালশিটে পড়া গালের
দিকে চেয়ে ভেবেছে। তিতলিদের বাড়ি কাপড় কাচতে কাচতে আর বাসন
মাজতে মাজতে ভেবেছে।
সাতদিন পরে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শুভ
সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। একটা শর্ট কাট পথ ধরলেই গ্রামের মধ্যে দিয়ে
যাওয়া হাই রোডটা।অন্ধকার এক কোণে কাল কাঁচে মুখ ঢেকে একটা
মোটর গাড়ি দাড়িয়ে আছে। শুভ উঠল সেই গাড়িতে বিদিশাকে নিয়ে। সেখানে আরও তার সমবয়সী বা সামান্য কম বয়েসী
বয়সী মেয়েও বসে আছে। এরা সবাই চলেছে সে এন-জি-ও তে
সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করতে। এতগুলো মেয়েকে তার সঙ্গী হতে দেখে বুকে বল
পেল বিদিশা। তাহলে সে একা নয়।
হেডলাইট জ্বলল হাল্কা হয়ে। বিদিশা উৎফুল্ল হল। হেডলাইট নয় যেন আর আশা আর স্বপ্ন পূরণের বাতি। সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা হল। উনি এদের এক ঝলক দেখেই এদের তুলে দিলেন আর
একজনের হাতে।
পড়াশোনা তো আছেই। তার আগে একটু মজা হুল্লোড়। দীঘায় যাবে এরা বেড়াতে। সমুদ্র সৈকতে উপভোগ করবে জীবনের আনন্দ। তারপর যাবে ইন্সটিটিউটের পথে।
তিন বছর কেটে গেছে। অনেক গলিঘুঁজি পেরিয়ে এখন বিদিশার ঠিকানা
হয়েছে একটা খারাপ পল্লীর খারাপ ঘর। খারাপ বলতে নেই। বলবে এটাই তোমাদের আসল ঘর। ধরতে পার এটাই শ্বশুরবাড়ি।
মাসি রোজ এই কথাটাই আওড়ে যায় তাদের কাছে।
Arun
Chattopadhyay
181/44
G.T.Road (Gantir Bagan)
P.O.
Baidyabati
Dist.
Hooghly (PIN 712222) W.B.
Mobile 8017413028
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন