প্রতিবেদন - সুভাষ রায়



বসন্ত আবাহনে
চিলেকোঠা
সুভাষ রায়
 ক্রমশঃ প্রবল জনপ্রিয়তার আবহে চিলেকোঠা আয়োজিত 'বসন্তোৎসবে' এবার বিভিন্ন বর্নমালায় ও শানিত প্রানের ছোঁয়ায়, বিচিত্র জীবনের স্পন্দন ধ্বনিত হলো ।সমবেত বসন্ত আবাহনের শুরু রোটারী সদন থেকে বাস যাত্রার শুভারম্ভে ।নব নব রাগে ও রঙে সব রঙীন বন্ধুদের, রুপময় উপস্থিতিতে চতুর্দিকে বসন্তেরই শুভসূচনা। প্রকৃতির সমান্তরালে স্বতন্ত্র এক বাস্তবের নির্মাণ ।নতুন সৃষ্টির সফল মধুর কলতান বেজে উঠেছে প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে।
অবশেষে এলাম ডোমজুড় নীলাঞ্জনা পার্কে ।এক অমানবী রুপকল্প, নিরব শিষ্ট নজরে আমি স্বপ্নচারী দর্শক ।সামনে অপরূপা ভঙ্গিমায় বিস্রস্ত এলায়িত রূপসী শরীর, স্নিগ্ধ মনোরম শাখে শাখে আনন্দের শিহরন ।নীলাঞ্জনা তার রূপের মুগ্ধ পসরা নিয়ে সমুপস্হিত, এক দর্শনে প্রেমের আকুতি ।
সকালের প্রাতঃরাশের তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে না তুলতেই দিনের সেরা আকর্ষণ শব্দবাজি নামক সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী বাংলা শব্দের গঠন ও সঠিক শব্দ চয়ন। এই বিশেষ ধরনের খেলায় বিশেষ পারদর্শীতা অর্জন করলেন মুনিয়া দি, অমিত দা জুটি ।এছাড়া পুরস্কার প্রাপক দের তালিকায় নন্দিনী দি নারায়ণ দা, অরুন দার জুটির নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।
এর পর বসন্তোৎসব নামের সার্থক অনুষ্ঠানের শুরুতে চিলেকোঠার সঙ্গীত শিল্পীদের এক রাশ মুগ্ধতা প্রদান, যা আসলে প্রখর মননের সর্বোতমুখী বিচ্ছুরণ ।
রবীন্দ্রসঙ্গীত, বসন্ত যাপনের এক অঙ্গ বিশেষ ।এই সঙ্গীতের মর্মার্থ আমাদের ত্বক ও বুদ্ধি ভেদ করে, চিন্তার পূনর্বিন্যাস দাবী করে ।এ গানের সুর আমাদের আত্মার গহনে ছায়া দেয় ।অন্যান্য গানগুলিও অত্যন্ত সুখশ্রাব্য ।
ইন্দ্রাণী দি, মুনিয়া দি, সঞ্চিতা, শুভা দি, নূপুর দি, কুমকুম দি, যারা সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে সংপৃক্ত ।
সঙ্গে সঙ্গে বাচিক শিল্পীরা তাদের শ্রম ও মেধাব় সুচিন্তিত প্রয়োগ কুশলতায়, অনিবার্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ।শিবু, মধুমিতা, গার্গী দি, দোলনচাপা,চৈতালী দি, প্রভৃতি দক্ষ আবৃত্তি শিল্পীরা এক কথায় অনবদ্য ।
নৃত্য শিল্পীরা, নৃত্যের তালে তালে এক একটি সাঙ্গীতিক বিষয়ের, নাটকীয়তার ক্রমান্বয় বিন্যাসে, এক চরম তম মুহুর্তের উত্তরন সম্ভব করেছেন ।নন্দিনী দি, সুমন, অনন্যাদের মতো গুনি শিল্পীদের, উজ্জল আবির্ভাবের আগমনীবার্তা বলে দেয়া যায় ।
অন্য দুই কিশোরী শিল্পী যথাযথ এবং আমাদের যথার্থ উত্তরসুরি ।
তারপর দুপুরের ভুরিভোজ, যথার্থ এবং যথেষ্ট পরিমাণে উদর পূর্তির পর অলোক দার নেতৃত্বে পার্ক দর্শনে বেরোলাম আমরা কয়েক জন ।প্রচুর ছবি তোলা হল, দ্রষ্টব্য সকল কিছু দেখলাম, যার মধ্যে খুজে পাই অাশ্চর্য সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতা, যেন মেঘমেলার মত ভেসে থাকে এবং নিরন্তর সুষমা তৈরী করে ।
ফিরে এসেই হানির কুশলী সঙ্গীত পরিবেশনা শুনলাম ।
সবশেষে তুসিমার অন্তরঙ্গ ও অনবদ্য কিছু প্রবল জনপ্রিয় সুর শুনলাম, তার সুরের প্রকাশ হয়ে উঠেছে, কেবল মাত্র শৈলী প্রধান।
সঙ্গে নৃত্য সহযোগে শ্রীরুপা, শ্রাবণী, শান্তনু, তাপস দা, ইন্দ্রাণী দি, অলোক দা, শিবু, শুভা দি, পারমিতা দি, সে এক দুরন্ত হুল্লোড়, তথা রাগ রাগিণীর প্রতি নিমগ্ন ভালবাসা তাদের পরিচলনে কোন স্থায়ী নিশ্চিতি নেই, তাহলেও অবশেষে এক সময় শেষ হল অনুষ্ঠান ।
সব মিলিয়ে আজকের বসন্তোৎসব অত্যন্ত সবল সাঙ্গীতিক, বাচিক ও নৃত্যের সমন্বয়ে দর্শক কে পৌঁছে দেয় এক ভিন্নতর উপলব্ধিতে ।
অভিজ্ঞতার মধ্যে তৃপ্তির আনন্দ আছে তারই পরম প্রাপ্তি ঘটল, আজকের বসন্তের এই নিটোল উপস্থাপনায় ।আমরা যখন গৃহে ফিরে স্মৃতি রোমন্থনে ব্যাস্ত তখন রাগ সকালের প্রবলব জনসমাগম, শুন্য পড়ে আছে প্রিয় 'নীলাঞ্জনা', সময় বিচ্ছিন্ন পরিসর টুকুই যেন পড়ে আছে যাপন চিহ্ন সম্বল করে ।।


2 মতামত: