রম্যরচনা - রবিন বন্দ্যোপাধ্যায়



নকুড়ের নাতজামাই
রবিন বন্দ্যোপাধ্যায়

বর্ষাকালে নকুড় মন্ডলের ঘোলাপুকুরে মাছ ধরবার হিড়িক পড়ে যায় | রুই-কাতলা, বেলে-পাবদা, পার্শে-ট্যাংরা, চিংড়ি-কাছিমের ভিড়ে ছোটখাটো পুঁটি-খলসেরা মুখ লুকোবার জায়গা পায় না লজ্জায়| তো সেই পুকুরে একদিন মাছ ধরবার ইচ্ছে হল নকুড়বাবুর নতুন নাতজামাইয়ের | নাতজামাইয়ের নাম দর্পচরণ | মানুষটি বুদ্ধিমান ও সুদর্শণ, কিন্তু লাজুক, বড়ো চট করে মুখ খোলে না | শ্বশুরবাড়িতে বউ নিয়ে প্রথমবার আসবার সময় হাতে করে দই, মিষ্টি, মাছ নিয়ে এসেছে | অত্ত বড়ো পুকুর দেখে তার আর আনন্দের সীমা রইল না |
মাছ ধরতে ধরতেই হুড়মুড়িয়ে নেমে গেল বৃষ্টি | তাতে কি আর তাকে দমানো যায়! ছাতা ছিল পাশে | সেটা বাগিয়ে ধরে আরও জু করে বসল দর্পচরণ | আর তার মিনিট দশেকের মধ্যেই ছিপে ধরা পড়ল বিশাল এক রুই মাছ | জামাইমশাই তো মহা খুশি | রাত্তিরে খাবার পাতে বেশ তারিয়ে তারিয়ে টাটকা রুইমাছের ঝোল খাওয়া যাবে | গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সে ফিরে চলল শ্বশুরবাড়িতে ছাতা মাথায় | তার এক হাতে ছাতা | ছিপটাই সঙ্গে নিতে ভুলে গেল সে | বাড়িতে তো সবাই মহা খুশি! জামাই মাছ ধরে নিয়ে এসেছে | শ্বাশুড়ি বলল “এখন চান করে খেয়েদেয়ে নাও দেখি| বেলা পড়ে গেছে| এর পর খেলে পেটে সইবে না| রাত্তিরে বরং এই রুইমাছের কালিয়া রেঁধে খাওয়াবো|”
চান করে খেয়েদেয়ে একটা ভাত-ঘুম | তারপর সবার সঙ্গে একটু গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা | দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল | এবার আবার রুইমাছের কালিয়া দিয়ে ভাত বেড়ে দিল শ্বাশুড়ি | পঞ্চব্যঞ্জন রান্না | চারিদিকে আত্মীয়স্বজন, শালা, শালী, শ্বশুরমশাই | জমিয়ে খাওয়া প্রায় শেষ | মিষ্টিও এসে গেল | কিন্তু জামাই ভাবল দই কোথায় গেল ? সে তো আসবার সময় নিজে হাতে করে দইয়ের হাঁড়ি এনেছিল ! কই, তাকে তো দিল না ! কিন্তু নতুন জামাই বলে কথা! মুখ ফুটে বলতেও পারছে না! হঠাৎ তার চোখে পড়ল দূরের জলচৌকিটার পাশে রাখা দইয়ের হাঁড়িটার দিকে | কী করে সে? হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল তার | ছোট শালাকে ডেকে বলল, “বুঝলে ছোটবাবু, এ আর কি মাছ ধরেছি আমি! একটা বিশাল কাতলা মাছ তো একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল | যদি গাঁথতে পারতাম ওটাকে-আহা!” সকলে হই হই করে উঠল- কত বড়, কত বড় ? জামাই উত্তর দিল, “কত বড়? তা ধরো...” বলে দুটো হাত দুদিকে প্রসারিত করে জামাই বলল, “ তা ধরো, এই এইখান থেকে জলচৌকির পাশে রাখা ওই দইয়ের হাঁড়িটা পর্যন্ত |” ব্যাস, আর যায় কোথা ! শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সব হাঁ হাঁ করে উঠল- ওরে ওরে, শিগগির করে দইয়ের হাঁড়িটা জামাইয়ের জন্য নিয়ে আয় | বড্ড ভুল হয়ে গেছে | বাকিটুকু আরও বলে দিতে হবে নাকি?


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন