ছোটগল্প - তনুশ্রী চক্রবর্তী

প্রত্যাবর্তন
তনুশ্রী চক্রবর্তী



স্মার্ট, তন্বী আবীরা বরাবরই একটু বেশী রকমের সৌন্দর্য সচেতন । নিজের বয়সটা যাতে কোনভাবেই বোঝা না যায় তার জন্য তার চেষ্টার ত্রুটি নেই । নিয়মিত জিমে যাওয়া, ডায়েট কন্ট্রোল, রূপচর্চা সবই সে ঠিকঠাক নিয়ম মেনে করে। বছর পনেরো হলো তার বিয়ে হয়েছে মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভ ধীমানের সঙ্গে । বিয়ের প্রায় সাত বছর পরে ঘর আলো করে এসেছে আরাধনা । ঈশ্বরের কাছে বহু আরাধনা করে এই কন্যাসন্তান আসায়, ঠাকুমা তার নাতনীর নাম রেখেছেন আরাধনা । আট বছরের ফুটফুটে শান্তশিষ্ট মিষ্টি মেয়েটাকে অবশ্য সকলে মাম্পু নামেই চেনে ।

ভোরবেলায় উঠে আজ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লেগেছে তুমুল তর্কাতর্কি - - ‘কি আশ্চর্য ! তা বলে এত ভালো চাকরিটা আমি করবো না ? এ কিরকম অন্যায় আবদার ! বিয়ের আগে এমনকি বিয়ের পরেও তো আমি দীর্ঘদিন চাকরি করেছি নাকি? ’

– অত্যন্ত বিরক্তি সহকারে জানায় আবীরা । - ‘করেছো সেটা তো আমি জানি। কিন্তু তখন মা সংসার সামলাতেন আর মাম্পু হওয়ার পর ওকেও ; আমি তো তোমাকে চাকরি করতে বারণ করিনি, শুধু বলছিলাম আর দুটো বছর অন্তত যেতে দাও ... তারপর না হয় ... ’

- ধীমান বোঝাতে চেষ্টা করে আবীরাকে ।

- ‘কি বলতে চাও বলতো তুমি ? মেয়েটা কি আমার একার ? তোমার দরকার হয় তুমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে মেয়ে সামলাও । আমি চাকরি করবই ব্যাস্ ।’ - স্পষ্ট জানিয়ে দেয় আবীরা ।

এইভাবে অশান্তি করে যে কোন লাভ হবে না, তা বুঝতে পারে ধীমান । তার স্ত্রী যে কোন যুক্তিতর্কের ধার ধারেনা, সেটা সে বিয়ের অনেক আগে থেকেই জানে । একবার যখন জেদ ধরেছে তখন কারুর ক্ষমতা নেই ওকে টলানোর । কিন্তু মাম্পু ? ওকে কে দেখবে ? একই বাড়িতে থেকে বনিবনা হতোনা বলে, আজ পাঁচ – ছ’বছর হল বাড়ির বাইরে ; একটা ছোট ফ্ল্যাট কিনে স্ত্রী ও একমাত্র সন্ততিকে নিয়ে সংসার পেতেছে সে । বাড়িতে তেমনভাবে কেউ আসেও না । কাজের লোকের কাছে সারাদিনের জন্য অতটুকু একটা মেয়েকে রেখে দিতে মন চায়না - যা দিনকাল পড়েছে ! অনেক ভেবেচিন্তে তারা দুজনে মিলে ঠিক করে যে, মাম্পুকে হস্টেলে দেওয়া হবে।

কিন্তু সকালে বেরোবার সময় একবার মেয়ের মুখটা না দেখলে ...আর ফেরার সঙ্গে সঙ্গে যেখানেই থাকুক ছুট্টে এসে একগাল হেসে ‘কি এনেছো, কি এনেছো’ – করে এমন করে ... মনটা খারাপ হয়ে যায় ধীমানের । - ‘ও বাবা, চলো বাইকটা বের করো ৷ আজ ঠিক স্কুলে লেট হয়ে যাবে’ – মাম্পু ব্যস্ত হয়ে ওঠে ।

- ‘না রে না, লেট হবেনা, ওঠ’

– বলে নিজেই মেয়েকে কোলে নিয়ে বাইকে বসিয়ে দেয় সে ।

- ‘মামমাম দেখো আমি কি ছোট নাকি ? আমাকে বাবা কোলে নিচ্ছে’ – বলে হাসতে থাকে মাম্পু । -

-‘না গো, তুমি তো পাকা বুড়ি’

– বাবার কথায় খুব মজা পায় ছোট্ট মেয়েটা ।

ধীমান বরাবর মিশুকে প্রকৃতির ; সেই সুবাদে পরিচিতির পরিধিটাও নেহাত কম নয় । তাই ভাল হস্টেল খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ তো পেতে হলোই না বরং খুব তাড়াতাড়ি মাম্পুর অ্যাডমিশনের ব্যবস্থাও পাকা হয়ে গেলো । মাস গেলে বেশ কয়েক হাজার টাকা দেওয়াটা একটু কষ্টকর হলেও মেয়েটার কোন কষ্ট হবে না – এই ভেবে আশ্বস্ত হল ধীমান ।

- ‘আচ্ছা বেটা, তুমি তো বড় হয়ে গেছো, তাইনা ? ’ মেয়েকে পড়াতে পড়াতে জিজ্ঞেস করে আবীরা । - ‘হ্যাঁ মামমাম ’ – বলেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে সে । - ‘Good girl, এবার থেকে আমার বেটা খুব বড় আর সুন্দর একটা নতুন স্কুলে যাবে কিন্তু একটু দূরে তো, তাই সেখান থেকে রোজ বাড়িতে আসা যায়না । সেখানে দেখবে তোমার মতো অনেক friends আছে ; তারাও কেউ তাদের বাবা-মামমামের কাছে থাকে না । তোমরা সবাই একসাথে থাকবে ; কি মজা হবে ভাবো ! তাইনা ? ’ - জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় আবীরা মেয়ের দিকে । - ‘তাই ! মামমাম ! ’ - হ্যাঁ রে, চল কাল তো Sunday কালই আমরা দেখতে যাবো নতুন স্কুল ...

বাবা – মায়ের সঙ্গে মাম্পু তার নতুন স্কুল দেখতে গেল । হস্টেলের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর ; আর সকলের ব্যবহার ও আমায়িক । কিছু অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেও তারা জানতে পারে যে, এখানে যত্নের কোন ত্রুটি হয়না এবং লেখাপড়াও হয় যথেষ্ট উন্নতমানের । যদিও এসব ধীমান আগেই শুনেছিল তবুও আবার শুনে নিশ্চিন্ত হল ।এদিকে মাম্পু তো মহাখুশী, কত বন্ধু ! শুধু ওর একটাই আপত্তি ও দোতলা খাটের ওপরের বেডে শোবেনা ; ওকে নীচের বেড দিতে হবে।

মেয়ের হস্টেলে যাওয়া নিয়ে গত সাতদিন ধরে বাড়িতে একেবারে সাজো – সাজো রব । আজ স্কুল ব্যাগ তো কাল টিফিন বক্স আবার পরশু কি সুন্দর একটা ওয়াটার বটল এনেছে তার বাবা ।

- ‘কবে যাবো গো মামমাম নতুন স্কুলে ? ’ – আর তর সইছে না মাম্পুর । - ‘এই তো কালই যাবো বেটা ’ – মা জানিয়ে দেয় ।

অবশেষে আট বছরের মাম্পু বাবা-মায়ের সঙ্গে চললো হস্টেল অভিমুখে । - - ‘ জানো আবীরা, আমি মিথ্যেই ভয় পাচ্ছিলাম, ও তো দেখছি নিজের ব্যাগ নিয়ে নিজেই দিব্যি গটগট করে ভেতরে চলে গেলো ! ওই দেখো কি বলছে ... ’ -আমি ভালো থাকবো, তোমরা চলে যাও মামমাম ... গর্বের হাসি হাসে আবীরা – ‘দেখেছো আমার মেয়ে কত smart ’- ‘হ্যাঁ, তাই দেখলাম – এখন থাকতে পারলে হয়’ – আশঙ্কিত হয় ধীমান ।

আজ রবিবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করার দিন। কিন্তু একি ! চুপ করে এককোণে বসে আছে মাম্পু ; সব বাচ্চাগুলো খেলছে অথচ ওর সেদিকে যেন কোন মনই নেই ...

বাবাকে দেখতে পেয়েই ছুটে এসে ‘বাবা, বাবা ... বাবা...’ – বলে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে সে । - ‘কি হয়েছে ? কাঁদছিস কেন ?’ – উদ্বিগ্ন হয় ধীমান । - ‘আমি আর এখানে থাকবো না ... ’ - ‘কেউ বকেছেন তোকে ? মেরেছেন ? ’ - - না...আ...আ... - ‘তাহলে ?’ - - ‘ভাল লাগছে না এখানে , তুমি আমায় নিয়ে চলো না বাবা ... ’ - ‘এই দেখো কি এনেছি তোমার জন্য–barbie ! বেটা তুমি এতো বোকা ? এ মা..’ - বলে সস্নেহে মেয়েকে নিজের কোলে টেনে নেয় আবীরা ।

এইভাবে চলল মাস খানেক । সেদিন সবে ডাঃ রায়ের চেম্বারে ঢুকেছে, এমন সময় বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো ধীমানের । প্রথমে পাত্তা দেয়নি কিন্তু কিছুতেই কাঁপুনি থামছেনা দেখে অগত্যা মোবাইলটা বের করে দেখে মেয়ের হস্টেলের নাম্বার ।

- ‘স্যার ’ - বিরক্তি নিয়ে তাকান ডাঃ রায় – O.k তড়িঘড়ি ফোন ধরে অস্থিরভাবে হ্যালো বলতেই, ওপাশ থেকে ফাদার জানান যে, আরাধনা অসুস্থ হয়ে পড়েছে ; তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে । তিন – চারদিন পরে মাম্পু একটু সুস্থ হলে ধীমান তার মেয়ের কাছে গোপনে জানতে চায় – ‘কি করে এত ঠাণ্ডা লাগলো রে গুড়িয়ারাণী ? খুব জল ঘেঁটেছিস না রে ? ’ -

- ‘মামমামকে বলবে না তো বাবা ? promise করো আগে ।’ - ‘না রে না, আমাকে বল’ - - ‘হ্যাঁ একটু ।’ - ‘কেন রে ?’ - মাথা নীচু করে চুপ করে থাকে মাম্পু । - ‘বুঝেছি খালি দুষ্টুমি ’ - মুখে বললেও, নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে তার ।

মাস ছয়েক যেতে না যেতেই পুজো এসে যেন আত্মজাকে কাছে পাওয়ার এক বিরাট সুযোগ ঘটে গেলো ধীমানের । সে আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছে বউ – মেয়েকে নিয়ে ভাইজ্যাগ বেড়াতে যাবে বলে । কি খুশী যে হবে মাম্পুটা !

কটা দিন বেশ হৈ – হৈ করে কেটে গেলো । বেড়ানোটাও খুব ভাল হয়েছে আর মাম্পু, সে তো হাতে স্বর্গ পেয়েছে । আবীরার পাশে বসে কি যে হাত পা নেড়ে নেড়ে গল্প করছে কে জানে ! – মুগ্ধ হয়ে দেখে ধীমান । - ‘মাম্পু শোন, এদিকে আয়, দেখে যা তোর জন্য কি এনেছি’ - - ‘কি এনেছো গো বাবা’ – ছুটে আসে সে । - ‘এই নে তোর প্রিয় গরম গরম রসগোল্লা !’ - - ‘আচ্ছা আমাকে চুপিচুপি একটা কথা বলতো, তোর ওখানে কেমন লাগছে রে ?’

এই প্রথম ধীমানের কথার অবাধ্য হয় তার মেয়ে ; রসগোল্লার ভাঁড়টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চীৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে – ‘ওই বিচ্ছিরি জায়গাটার কথা আমায় বলোনা বাবা, ওখানে কি কেউ ভালো থাকতে পারে ?’ - ‘মাম্পু, শোন মা’ – বলে মাথায় হাত রাখতেই ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে হাপুসনয়নে কাঁদতে থাকে সে।

এই অসময়ে আবার এত ঝড়বৃষ্টি কেন ? আপনমনেই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে খেতে বলে ওঠে ধীমান । কাল news এ বলছিল, নিম্নচাপের জের – কখন যে আবীরা বারান্দায় এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করেনি সে । - ‘আচ্ছা আবীরা, মাম্পুকে কোনরকমে এই বছরটা ওখানে রেখে সামনের সেশন থেকে আবার যদি ... কথা শেষ করা হয় না তার । – ‘আস্কারা দিও না তো । বাচ্চারা ওরকম করেই ; ওসব নিয়ে অতো মাথা ঘামালে চলেনা ।’

- তার উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে ফেসপ্যাক তৈরী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।

সকালবেলায় মেয়ের কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙে ধীমানের । শুনতে পায় মাম্পু তার মাকে বলছে –

- ‘মামমাম please তুমি আমায় মারো, বকো, যা খুশী করো কিন্তু ওখানে আমায় পাঠিয়ো না মামমাম’ – মনে মনে ভাবে এবার হয়তো আবীরা মত পালটাবে । কিন্তু সেই ঘরে এসে আবীরার রুদ্র মূর্তি দেখে চমকে ওঠে সে - - ‘আমাকে তোমার বাবা পাওনি বুঝেছো ... just stop it । তুমি ভেবোনা তুমি যা বলবে আমি তাই মেনে নেবো । আমি যা বলবো তোমাকে সেটাই মানতে হবে । That’s final – বুঝতে পেরেছো ? ’ – মাম্পু ফিরে যেতে বাধ্য হয় হস্টেলে ।

মেয়েকে হস্টেলে দিয়ে আসার পরেই একটি বিশেষ কাজে ধীমানকে দিন পনেরোর জন্য কলকাতার বাইরে যেতে হয় । বাড়ি ফিরেই কোনরকমে স্নান খাওয়া সেরে সে ছুটে যায় মাম্পুর হস্টেলে ।

আর তর সইছে না...কখন যে দেখবো মেয়েটাকে ! কতদিন দেখিনি –

দূর থেকে বাবাকে দেখতে পেয়েই মাম্পু ছুটতে ছুটতে ওর ঘরে চলে যায় । খুব খুশী হয়েছে বোধহয় মেয়েটা আজ ; নয়তো এখুনি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বাবা, বাবা করে কান্না শুরু হয়ে যেতো । এবার ঘরে গেলেই একটা একটা করে সবক’টা খাতা বের করবে আর কলকল করে বলে যাবে –‘জানো বাবা আমি ম্যাথ্‌স এ দেখো কটা good পেয়েছি ! তারপর দেখো English এ সবার চেয়ে বেশী ... সব কটা very good ! তারপর জানো …’ আজ আমি কথা বলার সুযোগ পেলে হয় !

–মনে মনে এইসব ভাবতে ভাবতে মেয়ের ঘরে পৌঁছতেই – দড়াম – ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় মাম্পু । ‘মাম্পু, মাম্পু দরজা খোল, কি হল ? খোলো মা… রাগ হয়েছে ? sorry ... মাম্পু...’ – কিন্তু কিছুতেই দরজা খোলে না সে ।

- ‘ Relax my son, ওকে disturb করবেন না’ – ফাদারের কথায় চমকে ওঠে ধীমান !

- মানে ? ফাদার বলতে থাকেন – ‘I’m very sorry to say that your daughter is suffering from a typical mental disease’ । ‘What ! No, no she is alright . কিকরে হলো এসব ? ’ – অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পরে সে । - ‘তা বলতে পারবো না, তবে এবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর থেকেই আরাধনা ঠিকঠাক করে খেতো না, কারুর সাথে কথা বলতো না, এমনকি খেলতো ও না । আপনাদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কোনভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি । আমাদের এখানে ডাক্তার দেখেছেন, উনি বলেছেন ও এমনিতে সুস্থ কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে । ওনার কথা অনুযায়ী আমরা child psychologist দেখাই ; উনি বলে দিয়েছেন, ওর যারা সবচেয়ে প্রিয়জন ও তাদের চিনতে পারবেনা, কাছে যেতে চাইবে না, দেখলে ভয় পাবে । আপনারা ওকে বাড়িতে নিয়ে যান । আমরা সকলে ওর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি । খুব ভাল করে মানুষ করুন ওকে, আমাদের সকলের শুভ কামনা রইলো আরাধনার জন্য ।’ জানান ফাদার ।

ফেরার পথে শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে মাম্পুকে নিয়ে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে ধীমান । সব শুনে ডাক্তার ধর জানান, – ‘ভয়ের কিছু নেই, আপাতত তিনমাস কাউন্সেলিং করালে আশাকরি সুস্থ হয়ে যাবে । তবে আবার যদি বাচ্চাটা এইরকম মানসিক চাপের শিকার হয়, তাহলে হয়তো ও আর কোনদিনই আপনাকে বাবা বলে চিনতে পারবে না ।’ - ‘মাম্পু তোকে আর কোনদিন কোথাও যেতে হবেনা, মা বললেও না ; তুই বাবা-মার সঙ্গেই থাকবি’ কিন্তু মাম্পু বাবার দিকে তাকায় না ,অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে । বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকে মেয়ের সমস্ত দায়িত্ব সে নিজে নিয়েছে, চাকরী ছাড়তে দেয়নি আবীরাকে । - ‘একমাস হয়ে গেল, মাম্পু কবে ডাকবি বাবা বলে আবার ? ’ – মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে একসময় নিজেই ঘুমিয়ে পড়ে ধীমান ।


বাবা, ও বাবা – মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙে বাবার । মাম্পু ... নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ধীমান । মেয়ের গলা পেয়ে ছুটে এসে আবীরা ধীমানের কাছ থেকে প্রায় ছিনিয়ে নেয় নিজের মেয়েকে - ‘তোকে আর কোনদিন কোথাও যেতে হবেনা সোনা, তুই আমাদের কাছে থাকবি ; মামমাম তোকে আর কোথাও যেতে দেবেনা, কোনদিনও না ।’ – আত্মজাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সে । মাম্পু খিলখিল করে হেসে ওঠে – ‘promise করো মামমাম । ’ –‘Promise বেটা’ খুব খুশী হয়ে মাম্পু দু’হাত বাড়িয়ে মা বাবাকে একসাথে জড়িয়ে ধরে ।


2 মতামত:

  1. দেবাশিস কাঞ্জিলাল৭ ডিসেম্বর, ২০১৩ এ ১২:০১ PM


    তনুশ্রী চক্রবর্তীর গল্প 'প্রত্যাবর্তন' পড়লাম । গল্পটি বড়ই মর্মস্পর্শী । তনুশ্রী এই গল্পে যে সমস্যার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করল,তা' আজকের ঘরে ঘরে এক জ্বলন্ত বিষয়। এই যুগে শিশুদের প্রতি যে মমতার অভাব দেখা যায়, তার কারন কিছুটা অর্থনৈতিক কিছুটা সামাজিক। সকলেই চাইছে সন্তানের ভালো করতে,তাদের ইঁদুরদৌড়ে সামিল করে তথাকথিত উন্নতির পথে পাঠাতে। কিন্তু তার ফলে ফুলের মত শিশুদের শৈশব যে খুন হচ্ছে,তা' কিন্তু অনেকেই বুঝতে চাইছে না ! শিশুরা এক এক জন আজ জনহীন দ্বীপবাসী ! সেই সমস্যার দিকে তনুশ্রী যে ভাবে নির্দেশ করেছে,তার মত নবীনার কাছ থেকে সে এক বড়ো প্রাপ্তি। তনুশ্রীর লেখাটির বাঁধন খুব আকর্ষনীয়,তা' লেখাটির পরিণতি নিয়ে আগ্রহ জাগিয়ে রাখে বেশ ! তার কাছে আরো এই ধরনের লেখা পাওয়ার আশা রইল !

    উত্তরমুছুন
  2. তনুশ্রীর গল্পটি আমাদের সবাইকে ভাবাবে, আমাদের নিজেদের অজান্তেই কতো সংসারে আমরা "মাম্পুদের" ভালো করে মানুষ করার নামে তাদেরকে তিলে তলে অসুস্থ করে তুলছি।

    উত্তরমুছুন