অনুগল্প - পূজা মৈত্র

আদিম পাপ
পূজা মৈত্র



মোবাইলটা দিন পনেরো হলো হাতে পেয়েছে শৌর্য। নাইনে ওঠার জন্য বাবা কিনে দিয়েছে। মাল্টিমিডিয়া সেট, টাচ। বড় স্ক্রিন, ঝকঝকে ডিসপ্লে। কাল মায়ের কাছে আব্দার করে নেট কার্ড ভরিয়ে নিয়েছে। বন্ধুরা বহুদিন ধরেই বুদ্ধিটা দিয়েছে, কিন্তু বাবা কিছুতেই ভরিয়ে দিচ্ছিল না। অবশেষে মাকে পটিয়ে... আজ মা-বাবা কেউ বাড়িতে নেই। অজয়কাকুর অ্যানিভারসারি পার্টিতে গেছে। শৌর্য টিউশনে যায়নি আজ। বাড়ি পাহারা দেওয়ার নাম করে রয়ে গেছে। ও যদি পড়তে যেত, বাড়িতে বৃষ্টি একা থাকত। বৃষ্টি ওর বোন। ক্লাস সেভেনে পড়ে। পাশের ঘরে পড়ছে। শৌর্য দেরি করল না আর। একের পর এক নিষিদ্ধ ঠিকানা মন্থন করতে শুরু করল। থ্রি জি-র দৌলতে ডাউনলোড হচ্ছিল চোখের নিমেষে। নিজের শরীর নিয়ে কত অজানাই জানা হয়ে যাচ্ছিল। অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছিল শৌর্য। ছটফট করছিল। ওর কিশোর শরীর আদমের আপেল খেয়ে স্বর্গচ্যুত হতে চাইছিল। হঠাৎ -ই একটা মেয়ে চোখের সামনে আসে ওর। মেয়েই তো? হ্যাঁ- ছিপছিপে গড়ন, সদ্য ফোটা ফুলের মত স্তন জামার আড়াল থেকে আভাস দিচ্ছে, হাঁটুর কাছে শেষ হওয়া ফ্রকের ঝুলের বাইরে বেরিয়ে থাকা ফরসা পা দুটো শৌর্যকে বলছে ওদের মধ্যেকার রহস্যখনি খুঁজে নিতে। শৌর্য আর আটকাল না নিজেকে, আটকাতে পারল না। মেয়েটা অস্ফুটে কয়েকটা কথা বলছিল বটে, শোনার সময় বা ধৈর্য কিছুই শৌর্যের ছিল না তখন।

মনস্তত্ত্ববিদ অলি রায়চৌধুরী অবাক হলেন, “মাস তিনেক ধরেই ও এইরকম চুপচাপ?” মিসেস মজুমদার হতাশায় ভেঙ্গে পড়া স্বরে বললেন, “কি আর করব বলুন? হঠাৎ করেই নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে গেল। কারোর সাথে কথা বলে না, নিজেকে একটা ঘরে আটকে রাখে, কাউকে কাছে আসতে দেয় না। ওর পাগলামিতে বিরক্ত হয়ে আমাদের ছেলেটা বোর্ডিং- এ চলে গেল”। “স্ট্রেঞ্জ! আপনারা কাইন্ডলি বাইরে যান, আমি বৃষ্টির সাথে একান্তে কথা বলতে চাই।” মিঃ আর মিসেস মজুমদার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চলে গেলেন।


“বৃষ্টি, কি হয়েছিল? আমাকে বল- কে কি করেছেন তোমাকে? সেদিন তো তুমি বাড়িতেই ছিলে। পড়ার চাপ দিয়েছেন কেউ? মেরেছেন কেউ? বাবা? মা?” বৃষ্টির শূন্য দৃষ্টি সহসা অর্থ পায়। একটা শব্দ উচ্চারণ করে ও, “দাদা।” তারপর ঘরে নীরবতা জমাট বাঁধে।


1 মতামত: