প্রতিবেদন - গৌতম সেন

মন জুড়ে ডোমজুড় -- নীলাঞ্জনা 
গৌতম সেন

অনুরোধ এল লিখতে হবে, চিলেকোঠা আয়োজিত মনোরম সেই বসন্ত মিলনোৎসব কে ঘিরে আমার আন্তরিক অনুভুতির কিছু কথা। আন্তরিক কথাটা একটু জোরের সাথেই বলি কারণ জনা ষাটেক সদস্য-সদস্যা, কেউ নিজে একা, আবার কেউ কেউ সপরিবারে জমায়েত হয়েছিলেন নেহেরু শিশু মিউজিয়ামের সামনে অন্তরের অবাধ খুশির জোয়ারে ভেসেউপলক্ষ ডোমজুড়ে, ‘নীলাঞ্জনা’ কুঞ্জবীথিতে সেদিনের বসন্তোৎসব। বিশে মার্চ সকাল সাড়ে নটা নাগাদ যাত্রা শুরু হ’ল এক বিশাল কলেবরের ডিলাক্স ভলভো চড়ে। যাত্রাকাল খুব বেশি নয়, সওয়া ঘন্টা কি দেড় ঘন্টা খানেক লেগেছিল গন্তব্যস্থলে পৌঁছুতে। সারাটা পথ ছিল খুশির হাওয়ায় হাসি কলরোলমুখর। খিদে-তেষ্টার জৈবিক অনুভুতিগুলো উধাও হয়েছিল মনের এক উৎসবমুখর প্রাণচাঞ্চল্যে সেদিন।
অবশেষে ডোমজুড়ে এসে নির্ধারিত উৎসব প্রাঙ্গন ‘নীলাঞ্জনা’ কুঞ্জবীথিতে নামলাম দলের সবাই। সেখানে তন্ময় সমাদ্দার, চিলেকোঠার অন্যতম আর এক প্রাণচঞ্চল সদস্য আগে থেকেই উপস্থিত। যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও শ্রমের বিনিময়ে সেদিনের সেই খুশির প্রাঙ্গন সেজে উঠেছিল বসন্তবাহার সাজে।
সকলের উপস্থিতি আর সকালের উৎসব আমেজের সংমিশ্রনে জন্ম নিয়েছিল এক আনন্দঘন মিলনক্ষণ, বসন্তের ডাকে, বসন্তোৎসবের নামে। জলখাবার বা প্রাতঃরাশ তৈরিই ছিল এক সুস্বাদু অভ্যর্থনা জানাতে। ফুলকো লুচির উষ্ণতা, কষা আলুর দমের রসনাসিক্ত মহিমা আর গোলাপজামের অন্তরের রসমাধুর্য সুপ্ত ক্ষুধাকে তৃপ্ত করল অচিরেই। এরপর গরম গরম কফি উৎসবের মেজাজকে চাগিয়ে তুলল আরও।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল এক চমক। আর.জে. রয় (এই নামেই সে অধিক পরিচিত) ও তার সহকর্মীরা পরিবেশন করল এক চমকপ্রদ মজাদার খেলা –‘শব্দবাজি’। নিয়মকানুনের সাথে স্বল্প পরিচিতি পর্ব সাঙ্গ হতেই জমে উঠল সে খেলা রয়ের সুনিপুন পরিচালনায়। প্রাথমিক পর্যায়ের নির্বাচনের সুবাদে মূল খেলায় ছটি দলকে বেছে নেওয়া হ’ল। খেলা জমে উঠল যতটা না প্রতিযোগিতার পরিমণ্ডলে তারও চেয়ে অনেক বেশি দেদার খুশির ঔজ্জ্বল্যে। প্রায় ঘন্টা খানেক ব্যপী এই খেলা শেষে ফলাফলের নিরিখে অমিত, মুনিয়া; নারায়ণদা, নন্দিনী; ও অনন্যা, নূপুর – এঁদেরকে সুন্দর কিছু বই পুরস্কার স্বরূপ উপহার দিল ‘শব্দবাজি’ পরিচালক দল। এমন এক সুন্দর শিক্ষামূলক বিনোদনের আয়োজন করার জন্য অলোকদা, ইন্দ্রানী ও সৌমিত্র কে সবিশেষ তারিফ জানাই সকলের পক্ষ থেকে। এই অনুষ্ঠান যে আমাদের সবাই কে ঋদ্ধ করেছিল, সে কথা অনস্বীকার্য
পরবর্তী পর্যায়ে শুরু হল চিলেকোঠার মূল অনুষ্ঠান প্রধানতঃ সদস্য-সদস্যাবৃন্দের মনোজ্ঞ পরিবেশনায়, যার সুচনা হ’ল দলের থিম্‌ সঙ দিয়ে। এর পর বসন্তকে বন্দনা করে এক নাতিদীর্ঘ সঙ্গীত-নৃ্ত্য-পাঠ সম্বলিত আলেখ্য পরিবেশিত হ’ল, উপস্থিত আমরা যারা উপবিষ্ট ছিলাম তাদের মনোযোগে কোন চিড় ধরে নি কেবলমাত্র তাঁদের এই সুললিত পরিবশনার গুণে। এঁরা হলেন সুভাস, শিবু,, মধুমিতা,  দোলনচাপা, চৈতালী, সুমন, নন্দিনী, নূপুর, ইন্দ্রানী ও আরও অনেকে। সুমন ও অনন্যা এদের দুই কন্যার নৃ্ত্যশৈলী বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। এছাড়াও সারাদিন ব্যাপি আবৃত্তি (তাপস দা, দেবাশিস, শিবু), গান (মধুমিতা,হানি, টুসিমা) ও নৃত্য (সুমন,  নন্দিনী, অনন্যা) এসবের মধ্যে দিয়ে বিকাল সাড়ে চারটে পর্যন্ত চলল এই অনুষ্ঠান। এর মাঝে ছিল দুপুরের আহারাদি পর্ব। সে আয়োজনও ছিল মনকাড়ানিয়া। সুবাসিত চালের ভাত সাথে অন্যান্য উপাদেয় ভোজসামগ্রী দ্বিপ্রাহরিক ভোজনকে এক অনন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। মজা করে বলি, শেষপাতে আইসক্রীমের দৌলতে অনেককেই এক পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে সাহায্য করেছিল সামান্য উষ্ণ সে মধ্যাহ্নে। এর পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষে অপরাহ্নবেলায় কবির ভাষায় ‘বসন্তে এই ধরার চিত্ত হ’ল উতলা’ এমন এক রঙের বর্ণালীতে মেতে উঠল সবাই – লাল, সুবুজ, হলুদ আরও বিচিত্র সব ফাগে রেঙে উঠল সকলের কলেবরসে এক নির্ভেজাল মনের নান্দনিক আবির বন্দনা।
এরপর কফি খেয়ে নীলাঞ্জনার অমন ছায়া সুনিবিড় শান্তির বাতাবরণকে ঈষৎ ভারি মনে বিদায় জানানো। দিনযাপনের এই আনন্দঘন স্মৃতিমুখর দিনটিকে বুকের মাঝে নিয়ে সবাই ফিরে এলাম বাসে ঘরে ফেরার ডাকে। এ উৎসবের রেশটুকু মনে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথ ফের হয়ে উঠেছিল সঙ্গীতমুখর এক অতি জনপ্রিয় খেলা – ‘অন্তাক্ষরী’ ঘরে ফেরার ক্ষণকে করে তুলল মনোরমদিনান্তের গোধুলিতে কারও মাঝে কোনও ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেল না। বসন্তোৎসব স্থায়ী এক জায়গা করে নিল উপস্থিত চিলেকোঠা নিবাসীদের মনের আঙ্গিনায়। বাস চলতে থাকল কলকাতার দিকে, এ আনন্দের কিছুটা হলেও সাক্ষী হয়ে রইল দিগন্তে বিলীয়মান আবিরমাখা টকটকে লাল সূর্য।


3 মতামত: