অণুগল্প - শ্যামশ্রী চাকী

রসগোল্লা
শ্যামশ্রী চাকী
এই এত্তোটুকুনি ছানার ল্যাদা, রসে ফেলেছ কি ফুলে ইয়া...কী বন্ন!! বাবুদের বাগানের বিদেশী ফুল যেন...কী তার সোয়াদ!! আহা!!
জেবনে একবারই চেখেছিল ন্যাবা, মালিক ছিলনা..বাবা চুপিচুপি একটা সাদা ফল হাতে দিয়ে বলেছিলো 'নে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে'
পুরোটা একা খায়নি ন্যাবা, বোনের জন্য নিয়ে গেছিল, বোন তখন বেঁচে, মা দাওয়ার খুঁটির সাথে কোমরের ঘুনসিতে দড়ি বেঁধে চারদিকে মুড়ি ছড়িয়ে কাজের বাড়ি যেত।
রসগোল্লা মুখে দিতেই ট্যাঁ, ট্যাঁ  থামিয়ে এক্কেবারে চুপ। সেই প্রথম কাউকে কিছু দিয়ে দিলটা  বে-ইন্তেহা খুশ হয়েছিলো ন্যাদার।গত বছর মারা গেছে বোনটা... হাত, পা কাঠি কাঠি আর পেটটা ফুলে গেছিল বোনটার.... বাবা পরের দিন দোকানের উনুনে রসগোল্লার কড়াই চড়াতে চড়াতে তারু খুড়োকে বলেছিল 'রিকেট'...
'
গরিবদের শোক হলো বিবিয়ানা,কাজই ভাত'....বিড়বিড় করছিল বাবা...
ততক্ষণে রসগোল্লা কড়াইয়ে ফুলে উঠেছে।
ছেঁড়া গেঞ্জিতে চোখ মুছে ন্যাবা দুটো শিঙাড়া  আর রসগোল্লার প্লেট এগিয়ে দেয়,
অনেক খদ্দের পুরোটা খায়না একটু চামচে কেটে ফেলে দ্যায়, ভজা বলে 'নষ্ট করতে নেই, আহা!! সাদা অমৃতফল।'
এঁটো খেতে ঘেন্না পায় ন্যাবা, দূরে দাঁড়িয়ে দেখে ভজার মুখে কেমন একটা আলো আলো ভাব ফুটে ওঠে, দোকানের টিভিতে দেখা শাহরুখের  মতো।
ভজার ঠিক ওপরের দাদাটাও নাকি রিকেটে মারা গেছে...অত ভাববার সময় কই ন্যাবার? রসগোল্লার কড়াই মাজার জন্য বাবা তাড়া লাগায়।


2 মতামত: