ছোটগল্প - অরুণ চট্টোপাধ্যায়

অযান্ত্রিক
অরুণ চট্টোপাধ্যায়

পেসেন্ট পার্টিকে বিষয় আর তার গুরুত্বটা সব বুঝিয়ে দিলেন ডাঃ চক্রবর্তীবুকে ব্যথা আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে এ নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছে এক রোগিনী শ্রীমতী সারদা ঘোষাল লোকাল ডাক্তার দিন দশেক চিকিৎসা করেছিলতারপর আর সামলাতে না পেরে নার্সিং হোমে ঠেলে দিয়েছে
অবশ্য রেফার করেছিল “Advised immediate Hospitalization” বলে কিন্তু সাতষট্টি বছরের ভদ্রমহিলার সম্বল বলতে শুধু মেয়েজামাই। আর্থিক দিক থেকে তারা মোটামুটি সক্ষম আর ভালওবাসে তাদের মাকেহাসপাতালের হাওয়া তাদের কারোর ঠিক সহ্য হয় নাতাই হাসপাতালের বদলে ভর্তি করেছে এই নার্সিং হোমে বেশ চকমকে পরিস্কার
ডাঃ চক্রবর্তী লোকটা খুব সোজা সাপটাযা বলার বলেই ফেলেন রাখঢাক না করেএকেবারে এক্স-রে প্লেটটা মেয়ের চোখের সামনে তুলে ধরে বললেন, দেখুন এই আপনার মায়ের বুকের ছবি।
মেয়ে দেখল কিন্তু অতটা ঠিক বুঝতে পারল নাখানিক খুটিয়ে দেখে তাকিয়ে রইল ডাক্তারের মুখের দিকেডাক্তার এবার প্লেটের বিষয় খোলসা করলেন । দেওয়ালের আলোর সামনে মেলে ধরলেন প্লেটটা
- কি দেখছেন? প্লেট প্রায় ফাঁকা তাই তো? তার মানে ফুসফুসের কি দশা আপনি বুঝতে পারছেন?  ডাক্তার বললেন, মনে হচ্ছে অনেকদিন ধরে ব্যাপারটা নেগলেক্ট করা ছিলমেয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, বুঝতেই তো পারছেন মা একা থাকতেনআমরা অবশ্য বেশী দূরে থাকতাম না কিন্তু খুব একটা কাছেও তো নয়
জামাই বলল, তাছাড়া বুঝতেই তো পারছেন বেশ বয়েস হয়েছে বাতিকগ্রস্ত। পুজো টুজো নিয়েই থাকতেনকথা টথা বিশেষ শুনতেন নাজলঘাঁটা তিথি-নক্ষত্রে নির্জলা উপোষ এ তো ছিলই
ডাক্তার চুপ করে ভাবছেন। মেয়েও চুপ করে ভাবছেতার চোখে জল সেটা বেশ ভাল বোঝা যাচ্ছেজামাই পুরুষ মানুষ তাই তার চোখে জলটা আর দেখা যাচ্ছে নাতবে মনটা বেশ ভারাক্রান্ত এটা বেশ বুঝতে পারছেন ডাঃ চক্রবর্তী
অনেকে বলবে শাশুড়ী তো পরের মা তার জন্যে আর জামাই কাঁদতে যাবে কেন? কিন্তু ঠিক অতটা সরলীকরণের পথে হাঁটেন না ডাক্তারতিনি তাঁর চোখ দিয়ে জামায়ের উদ্বেগটা ঠিক দেখে দিয়েছেন
চিকিৎসা তাঁর রোগীর শরীর নিয়ে বটে তবে মনের দিকে কেন যেন অভ্যাস বশেই পড়ে যায় তাঁরঅনেক সতীর্থ বলেছে, চক্রবর্তী তুমি কিন্তু শারীরিক রোগের ডাক্তার মানসিক রোগের নয়ডাক্তার চক্রবর্তী সামান্য একটু লেখেন টেখেন। তাঁর ছেলেবেলার অভ্যাসকিছু বাংলা পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেনইংরেজিতেও লেখেন তবে সেটা কমশরীরের উপসর্গ লেখার পর মনের উপসর্গ লেখেনলেখেনঃ শুধু শরীরের চিকিৎসায় মানুষের রোগ সারে নাতার মনটার দিকেও নজর দিতে হবে সমানে
শরীরের ডাক্তাররা সে লেখা পড়ে বলে আমাদের অত সময় কোথা? কখন আবার ফ্রয়েড টয়েড ঘাঁটব? লোকটা নিজেই পাগল
মনের ডাক্তাররা বলে, তাহলে কি আর লোকে আমাদের কাছে আসে এমনি এমনি?
মেয়ের গলা কান্নায় বুজে এসেছে, তাহলে কি হবে? মা কি আর -
- দেখুন আশা ভরসা বিশেষ দিতে পারছি নামানুষের জন্ম মৃত্যু তো আর মানুষের হাতে নয়। আমি ডাক্তার হলেও মানুষ তো বটে
ডাক্তার বয়েসে পঞ্চান্ন ছাপ্পান্নমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল। এ মেয়েটার বয়েস আর কত হবে। বড়জোর তিরিশ বত্রিশতার মেয়ের থেকে বড় জোর দুই কি তিন বছরের বড়তার মাথায় নিজের হাতটা আলগা রেখে বললেন, দুশ্চিন্তা কর না যা করার যতটা করার আমি করব এই নাও আমার পারসোন্যাল নাম্বার। দুশ্চিন্তা হলে ফোন কর
একটা কাগজে ঘসঘস করে একটা নম্বর লিখে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন
ছল ছল চোখ নিয়ে উঠল মেয়েজামাই ডাক্তারের সংগে করমর্দন করে বলল, ওকে ডক্টরটাকার জন্যে চিন্তা করবেন নাযখন যা দরকার হবে বলবেনআমি অবশ্য জানি টাকায় সব সময় সব কিছু হয় না। তবু বলা রইল স্যর
ডাঃ চক্রবর্তীর হাতে এই নার্সিং হোমে আপাতত গোটা পাঁচছয় রোগী আছে সংখ্যায় হ্রাসবৃদ্ধি তো লেগেই আছেখুব ভাল করে রাউন্ড দেন ওয়ার্ডেঅনেকক্ষণ রোগীর সঙ্গে কথা বলেনসেদিন ঐ সাতষট্টি বছরের রোগিনীকে দেখতে তার বিছানাতেই বসে পড়লেন
সারদা ঘোষালের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কেমন আছেন দিদি?
খুব কষ্টের সঙ্গে রোগী বলল, আমি আর বাঁচব না
- কে বললে বলুন তো? এখানকার কেউ? তাকে আজ বিদেয় করে ছাড়ব
- আমায় বাঁচিয়ে দিন ডাক্তারবাবু। বাঁচিয়ে দিন
খুব সরু গলা রোগিনীর। একেবারে শোনাই যায় নানেহাত নার্সিং হোমের নিস্তব্ধ আবহাওয়া আর ডাক্তারের অভ্যস্ত কান তাই
ডাঃ চক্রবর্তী বললেন, কে ডাক্তারবাবু? আমি আপনাকে দিদি বলে ডাকলাম আর আপনি ডাকলেন ডাক্তারবাবু বলে এ কেমন কথাআচ্ছা –
ঝট করে নিজের গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপটা খুলে বিছানায় রেখে বললেন, আচ্ছা এবার আমি কে বলুন তো? আপনার ডাক্তারবাবু না আপনার ভাই?
রোগিনীর চোখে তখন নামতে যাচ্ছিল বাঁধ ভাঙ্গা জলবদলে এল একটা বিস্ময়ের চিহ্নকিচ্ছু বলা আর হল নাডাঃ চক্রবর্তী মিষ্টি মোলায়েম হেসে বললেন, কি দিদি বললেন না?
ডাঃ চক্রব্রতীর হাত খুব সামনেই ছিলপেসেন্ট একেবারে সেটা জড়িয়ে ধরে বলল, সবাই যে বলল আমার বুকের অবস্থা খুব খারাপআমি হয়ত আর বেশীদিন –
- কে বলেছে এ কথা? সিস্টার! সিস্টার! ডাক্তার সামান্য জোরে ডাকতেই নার্স একেবারে দৌড়ে এল, কি হয়েছে স্যার?
- কে বলেছে আমার দিদির বুকের অবস্থা খুব খারাপ?
দিদি? এই রোগিনী যে ডাঃ চক্রবর্তীর দিদি তা তো জানা ছিল নাসর্বনাশ কি হবে এখন?
- মানে স্যর - ডাঃ সেন বলছিলেন  এক্স-রেটা দেখে নার্সের তো তখন পায়ে পড়ার মত অবস্থা, আমি নিজে থেকে কিছু বলি নিআপনার দিদি বার বার আমার অবস্থা জানতে চাইছিলেন । কি করব স্যর বলুন?
- কেন পেসেন্টকে ভুল ভাল বল তোমরা? তোমার এগেনস্টে আমি রিপোর্ট করে দিলে কি হবে জান?
- কিন্তু – মানে আমি তো স্যর –
নার্স শোভনার বাড়ীর অবস্থা তেমন ভাল নয়একটা এন-জি-ওর আন্ডারে চলা প্রাইভেট নার্সিং স্কুল থেকে অতিকষ্টে পাশ করে এই চাকরিটা জোগাড় করেছে এবার সেটা বুঝি গেল। হায় ভগবান
কিন্তু ডাঃ চক্রবর্তীকে অনেকদিন ধরে দেখছে সেএকটু খেয়ালি মানুষ সে সকলের মত তারও জানা ছিলকিন্তু এমন রুক্ষ মেজাজ তো কখনও দেখে নি
- ভুল হয়ে গেছে স্যরতাছাড়া আপনার দিদি আমি আগে জানতাম নাকেউ তো বলে নি –
- আগে জানলে কি করতে? আরও বেশী যত্ন করতে? ডাক্তার চক্রবর্তীর রাগটা তখনও তেমন কমে নি বোঝা গেল, সব রোগীদের আমার দাদা দিদি ভাবতে পার না?
- সরি স্যার
- যাও ওনার এক্স–রে প্লেটটা নিয়ে এসডাক্তার চক্রবর্তীর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝল যেন নার্সডাক্তার মৃদু গলায় বললেন, কমলা ঘোষের প্লেটটা নিয়ে এসকমলা ঘোষ এ নার্সিং হোমে ভর্তি আছে। তার লিভার সংক্রান্ত রোগকিন্তু একটা বেয়াড়া কাশি অনেক দিন ধরে ভোগাচ্ছিল বলে বুকের একটা এক্স-রে করতে বলা হয়েছিলএক্স- রে তে কিছু পাওয়া যায় নি।
এক্স-রে প্লেট এলপ্লেটের ওপর পেসেন্টের নামের জায়গাটা অদ্ভুত কায়দায় নিজের আঙ্গুল দিয়ে ঢেকে রেখে বললেন, দেখুন দিদি আপনার কত পরিস্কার বুকের ছবিকেন লোকের আজেবাজে কথায় মন খারাপ করে নিজের রোগটা বাড়ান বলুন দেখি?
রোগিণী তো কিছু বুঝতে পারছেন নাতাছাড়া অত দূর থেকে তেমন করে দেখতেও পারছেন না। ক্লান্ত শরীরের সঙ্গী হওয়ায় চোখও ক্লান্ত
সারদা দিদির চোখের বেশ সামনে আনলেন ডাক্তার চক্রবর্তী তাঁর প্লেটটাপেছন থেকে মারলেন টর্চএকটু হেসে বললেন, কি দেখলেন তো কেমন স্পষ্ট পরিস্কার বুকের ছবি? মিথ্যে বলেছে আপনার ভাই?
রোগিণীর মুখের ভাব দেখে মনে হল সেই মুহূর্তে তার বুকের ব্যথা যেন বেশ কম কম লাগছেশুধু আমতা আমতা করে বললেন, কিন্তু তাহলে আমার বুকের ব্যথাটা –
ডাঃ চক্রবর্তী মুখে তুচ্ছ ভাব দেখিয়ে বললেন, সে তো হবেইরোজ অতক্ষন পুজো আচ্চা করেন। না খেয়ে থাকেন বলুন তো কতক্ষন? পেটে গ্যাস হয়ে হয়েছে যত উৎপাতভাববেন না। আমি ও গ্যাস সব বার করে দেব
বিছানায় পড়ে থাকা স্টেথো এবার উঠল ডাক্তারের কানেচক্রবর্তী সুন্দর হেসে বললেন, এখন কিন্তু আমি ডাক্তার। আপনাকে পরীক্ষা করতে হবে আর কিন্তু কোনও প্রশ্ন নয়। কথাও নয়। শুধু বিশ্রাম
রাউন্ড দিয়ে বার হবার মুখে নার্স বলল, স্যর কমলা ঘোষের প্লেটটা?
- যেটা যে ফাইলে থাকার সেটা সে ফাইলে রাখবে এটা কি আবার নতুন করে বলতে হবে নাকি? আর শোনও প্লেটের কথাটা আর একটা লোকও জানুক এটা আমি চাই না
চোখ ছলছল করে শোভনা বলল, আমি কিন্তু সত্যি জানতাম না উনি আপনার নিজের দিদি? ভুল হয়ে গেছে – আপনি যদি রিপোর্ট করে দেন তো – মানে আমার চাকরি এখনও কনফার্ম হয় নি
- কনফার্ম হয় নি হবেডাঃ চক্রবর্তী আশ্বস্ত করলেন শোভনাকে, সব রুগীকে নিজের দাদা দিদি বাবা কাকা ভাই বোন ভাবলে নার্সিং হোম কেন রুগীরাই তোমাকে কনফার্ম করে দেবেরোগীদেরনাহয়আত্মীয়ইভাবলে? ভাবনারওপরতোআরট্যাক্সবসেনি?
শোভনার অবাক ভাবটা কাটছিল না কিছুতেইডাঃ চক্রবর্তীর এ ব্যাবহারটা প্রশংসা না তিরস্কার কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না
- আর শোনচলে যেতে যেতেও থেমে গেলেন ডাক্তার, এ রোগিণীর আরোগ্যের চান্স যদি অন্তত দশ ভাগও বাড়ে তবে জানবে কৃতিত্বের অন্ততঃ পাঁচ ভাগ তোমার
গট গট করে বেরিয়ে গেলেন ডাঃ চক্রবর্তী
এই শেষ কথাটা বেশ ভাল করে বুঝল শোভনাআর ভাবনার রাস্তা ধরে ভাবতে ভাবতে বুঝে গেল ডাক্তারের ঠিক এর আগে বলা কথাগুলোর অর্থও
- কি এত ফুস ফুস গুজ গুজ রে এতক্ষন ধরে?
নার্স তিয়াসা পালনার্স আর ডাক্তারদের একান্তে এক সঙ্গে দেখলেই একটু আড়াল থাকে কান পাতায় ব্যস্ত থাকে যেতার শরীরের নানা জায়গায় রসক্ষরণ হতে থাকে
চোখে একটু জল এসে গিয়েছিল । সেটা মুছে ফেলে শোভনা সামান্য হেসে বলল, ও কিছু নয়। ২৩৫ নম্বর বেডের পেসেন্টের কথা
- ও তাই বল? তিয়াসা কায়দা করে হাসল, পেসেন্টকে দেখ কিন্তু ডাক্তারকে বেশিক্ষণ দেখিস নি যেন। বড় খামখেয়ালী লোকটা। তাছাড়া  ডাক্তারের চুল দেখেছিসহলপ করে বলতে পারিস ও গুলো কলপ করা নয়?
শোভনা আর কথা বাড়াল না। বাড়াল তার পা। এবার ওয়ার্ডে ওষুধ দেবার পালা
দিন তিনেক পরে নার্স বলল, মিরাকেল স্যরএকটু যেন ডেভেলাপমেন্ট মনে হচ্ছে
- কি ব্যাপার?
- সেই রুগীর মানে আপনার দিদির আর কি - ব্লাডে অক্সিজেনের পার্সিয়াল প্রেসার অনেক বেড়ে গেছেওনার লাং এখন অনেক গুণ ভাল কাজ করছেকাল রাতে ডাঃ সেন রুটিন ভিজিট করে বললেন
ডাঃ সেন এ নার্সিং হোমের ফিজিশিয়ান-ইন-চার্জযার যার অধীনে রুগীরা থাকেন তারা তো সব সময় নার্সিং হোমে থাকেন না তাই সে সময় এরা রুটিন চেক করেনক্রিটিক্যাল অবস্থা হলেসেই রুগীর ডাক্তারকে ফোন করা হয়কন্ডিশন নর্মাল থাকলে বা সামান্য উন্নতি ঘটলে অবশ্য তেমন কিছু করা হয় না
মেয়েকে জানানো হল সে কথা
- এখন আস্তে আস্তে ইম্প্রুভ করছেন আপনার মাতবে মাস খানেক তো এখানে মনে হয় রাখতেই হবেবুঝতেই পারছেন বিল কিন্তু অনেক পুড়বে
মেয়ের চোখে জল এসে গেছে। তবে এ জলটা আনন্দেরমানুষের  হঠাৎ-মৃত্যুর খবরটায় মানুষ যেমন কেঁদে ফেলে শোকে তেমনই হঠাৎ কারও সুস্থ হয়ে ওঠার খবরেও আনন্দের অশ্রু চাপা যায় না
মেয়ে কিছুই বলতে পারল নাজামাই ডাক্তারের সঙ্গে হ্যান্ড শেক করে বলল, সো কাইন্ড অফ ইউ স্যর বিলের জন্যে চিন্তা করবেন না। আমার তো কোনও ছেলেপিলে হয় নিধরে নিন আমার শাশুড়ীই আমাদের সন্তান
ডাঃ চক্রবর্তী বললেন, রাখে হরি মারে কে? আপনার শাশুড়ি খুব পুজো করতেন হয়ত এ তারই ফল
ছাড়বার সময় কিন্তু পই পই করে বলে দিলেন ডাঃ চক্রবর্তী যেন যত্নের কোনও ত্রুটি না হয়আর রোগ নিয়ে রোগিণীর সঙ্গে কোনও আলোচনা একেবারেই নয়
প্রায় মাস ছয়েক পরের কথাউল্টো দিক থেকে একটা রিক্সা আসতে দেখে নিজের গাড়ী থামালেন ডাঃ চক্রবর্তীরিক্সায় করে আসছেন সেই সাতষট্টি বছরের রোগিণীসারদা ঘোষাল
ঘ্যাচাং করে গাড়ির দরজাটা বন্ধ করে এ পারে চলে এসেছেন ডাক্তারহেসে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কেমন আছেন দিদি? আর বুকে ব্যাথা হয় না তো?
রিক্সাওলা চেনে ডাক্তারকে। বেশ ভাল ডাক্তার। ব্যবহার খুব সুন্দরএকটু সম্ভ্রমের সঙ্গে রিক্সাটা একপাশে দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলকিছু কৌতূহলী লোকও দাঁড়িয়ে পড়ল
রোগিণী তো প্রায় হতভম্ব। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন
- কি আমাকে চিনতে পারছেন না? বুকের ব্যথাটা আছে না গেছে?
নার্সিং হোম থেকে ছেড়ে দেবার সময় নিজের বন্ধু চেস্ট স্পেশালিষ্ট বিদ্যুৎ সাহার ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিয়েছিলেন চক্রবর্তী ডাক্তারবলেছিলেন, ইনি তোমার মাকে এর পর থেকে দেখবেনঅবশ্য যদি তোমরা চাওমেয়েজামাই তাঁর সে পরামর্শ মেনে নিয়েছেএ তো পরামর্শ নয় এ যে ভগবানের আদেশ
- না না একটুও নয়রোগিণী বললেন, কিন্তু এতবড় ডাক্তার হয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেখা করতে এসেছেন আমার সঙ্গে?
ডাক্তার অন্যমনস্কভাবে আজ গলার স্টেথো ব্যাগে ঢোকান নিগাড়ীতে বসেও নার্সিং হোমে ভর্তি এক রুগীর কথা চিন্তা করছিলেনএমন কি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ও সেটা ঝুলছিল গলায়এখন যেন হঠাৎ মনে পড়লঝট করে গলায় ঝোলানো স্টেথোটা রিক্সায় রোগিণীর পায়ের নীচে রেখে বললেন, এই নিন। পড়ে রইল আমার ডাক্তারির সিম্বলআর হাতে রইল কেবল দিদি আর ভাইয়ের সম্পর্কটা

Arun Chattopadhyay
chattopadhyayarun@gmail.com
8017413028




0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন