রম্য রচনা - জয় ভট্টাচার্য

চিন্তন বৃত্ত
জয় ভট্টাচার্য

চোখ কান খোলা রেখে চললে আমাদের সামনে ঘটে চলা কত কিছুই আমাদের চোখে পড়ে যায়, অথবা কানে প্রবেশ করে ! যা দেখতে গেলে আমাদের উঁকি মারতে হয় না, বা শুনতে চাইলে আড়ি পাততেও হয় না। তেমনই একটা ঘটনার বার্তা বিবরণ....

ডাক্তারবাবু চলে যাবার পর, দোকানটা ফাঁকা হয়ে গেলে আমি কাঁচের দরজা ঠেলে বাইরে বেরোলাম। একটা বিড়ি খেতে হবে, তা ছাড়াও অনেকক্ষণ চা খাওয়া হয় নি। সামনের চা-এর দোকান থেকে একটু চা নিয়ে আসা যাক। আমার দোকান থেকে বাইরে পা রাখলেই একটা ড্রেইন। তার ওপরে কংক্রীটের স্ল্যাব পাতা। এক ভদ্রমহিলা সেখানে দাঁড়িয়ে কারোর সাথে ফোনে কথা বলছেন  ... আমিও স্ল্যাবের ওপর দাঁড়িয়ে মৌজ করে একটা বিড়ি ধরিয়ে, বুক ভরে বিড়ির ধোঁয়া টেনে নিয়ে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে দিলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে। কানে এলো, ভদ্রমহিলা বলছেন- "জানলার ধারে যেখানে জামা কাপড় মেলে দি, সেখানে আমার ব্রা-টা ফেলে এসেছি। ওটা তুলে রাখিস। ..." জায়গাটা একদম বড় রাস্তার ওপরে, উনি বেশ জোরে জোরেই দ্বিতীয় বার পুনরাবৃত্তি করলেন কথাগুলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওনার কথাগুলো শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু উনি যেখানে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললেন, সেখান থেকে শব্দগুলো আমার কানে না এসে অন্য কোথাও যাবার কোনো উপায় নেই। আমার বেশ মজা লাগলো কথাগুলো শুনে। ভাবতে থাকলাম - প্রকাশ্যরাস্তায় দাঁড়িয়ে, অন্তর্বাস নিয়ে এমন ফোনালাপ সচরাচর শোনা যাবে না।
বিষয়টা নিয়ে ভালো মন্দের আলোচনায় যেতে আমি রাজি নই। হয় তো ওনার কাছে সেই মুহূর্তে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা, যেটা না বলে ওনার কোনো উপায় ছিল না। তবুও, আমাকেই কেন সাক্ষী হতে হলো এই ঘটনাটার, সেটা ভাবতে ভাবতেই চা আনতে চলে গেলাম। চা নিয়ে ফিরে এসে দোকানের এসি টা চালিয়ে দিয়ে রিভলভিং চেয়ারে গা এলিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে চোখ বন্ধ করে দেখতে পেলাম - খোলা জানলারপাশে এক চিলতে ছাদ। সেই ছাদের দড়িতে মেলে রাখা একটা লাল রং –এর ব্রা।

মুক্ত বিহঙ্গের মত হাওয়ায় দুলছে, মনের আনন্দে !!


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন