গল্প - নূপুর বডুয়া


মিনু পিসি
নূপুর বডুয়া
    মিতালী, এই মিতালী ...চৈতালীর ডাকে সম্বিত ফিরে পেল মিতালী| কিছুক্ষণ আগে মিনু পিসি র শবদেহ নিয়ে চলে গেছে পাড়ার ছেলেরা| বাড়ির দোরগোড়ায় পড়ে আছে কিছু ফুল, খই আর পয়সা| মিতালী র দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে|কেন জানিনা বুকের ভেতর একটা কষ্ট অনুভব হচ্ছে মিনু পিসির জন্য | অথচ, ঐ মানুষ টা কে ছোটবেলায় মনে মনে কত কুকথা শুনিয়েছে সে |
    আসলে পাড়াতে মিনু পিসির খুব বদনাম ছিল | সব সময়ে সকলের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করত মিনু পিসি |ছোট ছেলে মেয়েরা বিকেলে খেলতে গেলেই সেখানে এক গামলা জল ঢেলে দিত | ব্যস, খেলা পন্ড|পুজোর চাঁদা চাইতে গেলেই অকথ্য গালিগালাজ করত|কিছু বলতে গেলেই বাড়িতে নালিশ করে দিত| এহেন মিনু পিসির মৃত্যুতে আজ মিতালী দু চখের জল আটকাতে পারছেনা| আসলে ঐ কচি বয়সে সে বুঝতে পারতনা দেখতে অত ভাল ছিলনা আর গায়ের রঙ ময়লা ছিল বলে মিনু পিসিকে কেউ ভালবাসতনা, শুধুই অবজ্ঞা আর অবহেলাই পেয়ে এসেছিল সারা জীবন |তার এত সুন্দর গানের গলা ছিল, কিন্তু সেদিকেও কেউ কনদিন নজর দে্যনি |বাড়ির যত আজেবাজে কাজ তাকে দিয়ে করানো হত |ছোটবেলা থেকে ভালবাসা না পেয়ে পেয়ে মিনু পিসি অমন রুক্ষ আর বদমেজাজী হয়ে উঠেছিল | শেষ বয়েস টা বড় কষ্টে কেটেছে তার| আত্মীয়-স্বজনরা সবাই তাকে ছেড়ে চলে গেছিল|পাড়ায় কারুর সাথে সদ্ভাব না থাকায় খুব করুণ অবস্থা হয়েছিল মিনু পিসির |খবর পেয়ে মিতালী একদিন দেখতে গিয়েছিল| তাকে দেখে পিসির দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে|খুব খারাপ লেগেছিল মিতালীর| একটি এন জি ও তে যুক্ত থাকার সুবাদে সে কিছু সাহায্য করার চেষ্টা ও করেছিল| আসলে পরিণত হওয়ার পর মিতালী বুঝতে পেরেছে কচি বয়সের নরম মন একটু আদর-ভালবাসায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে, ভবিষ্যতে অপরকে ভালবাসতে শেখায়| নিজে সম্মান পেলে তবেই সে শেখে অপরকে সম্মান করতে| সুস্থ মনের মানুষ হতে গেলে একটি শিশুর মানসিক শিক্ষা,পরিবেশ খুব ই জরুরী|


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন