ছোটগল্প - নন্দিনী সেনগুপ্ত

ঘেঁটে ঘ
নন্দিনী সেনগুপ্ত

আমি নিজে পেশায় ভূতাত্বিক বা জিওলজিস্ট। এই পেশা নিয়ে জড়িত অনেক ঘটনা, রটনা, প্রবাদ বা ‘মিথ’ ছোট ছোট গল্পের আকারে তুলে ধরতে নিয়ে এলাম এক নতুন সিরিজ, “ঘেঁটে ঘ”। গল্পে বর্ণিত সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে কোনও মিল সম্পূর্ণ সমাপতন বা কাকতালীয় বলেই ধরতে হবে।



ঘেঁটে ঘ ১

- রিঙ্কু মা, আমার, লক্ষ্মী সোনা, ওই ছেলেটা, ওই নির্মল - তুই ওকে ভুলে যা ।

- মানে? কী বলছ মা? তুমিই তো বললে সেদিন যে তোমার কথা বলে ভাল লেগেছে। ছোটমাসিকে ফোন করে পর্যন্ত বললে যে সরকারি চাকুরে, গেজেটেড অফিসার, কলকাতায় নিজেদের বাড়ি... হ্যানত্যান সাতসতেরো। আর এখন আমাকে বলছ ‘ভুলে যা’ ।

- হ্যাঁ বলেছি তো। কিন্তু তখন কি জানতাম যে ছেলেটা জিওলজিস্ট?

- আমি তো তোমাকে বলেইছিলাম যে আমার ওর সঙ্গে কলেজেই আলাপ, সেই সেকেন্ড ইয়ার থেকে, তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা।

- হ্যাঁ বলেছিলি বটে, কিন্তু জিওলজিস্ট এটা বলিস নি।

- তো? তোমার হলটা কি? জিওলজিস্ট হলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হল?

- কি করে বোঝাই? ওরে তোর বাবার অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে জিওলজিকাল সার্ভেতে। ওই জিওলজিস্টরা যে কি অদ্ভুত জীব সে আর কি বলব !

- অদ্ভুত জীব? মানে?

- ওরে জানিস না, ওরা ঘর সংসার ফেলে মাসের পর মাস ফিল্ডে পড়ে থাকে। পাহাড়ে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে, শুধু পাথর খুঁজে বেড়ায়, তাঁবুতে থাকে, মাঠেঘাটে পটি করে, নিয়মিত জামাকাপড়ও কাচে না, বেজায় নোংরা হয়।

- তুমি এত কথা জানলে কী করে?

- ওরে যারা ওদের একটু কাছ থেকে দেখেছে, তারা সবাই জানে। তার ওপর সংসার থেকে দূরে থাকে বলে, সংসারের কারও প্রতি মায়া-মমতাও থাকে না। এই তো, তোর বাবার বন্ধু দুলালদার এক জিওলজিস্ট বন্ধু, ফিল্ডে থাকতো দিনের পর দিন। পরে জানা গেলো নাকি কোন আদিবাসী সাঁওতালি মেয়ের সঙ্গে লটরপটর!

- কিন্তু মা, জানো, আমার না তাঁবুতে থাকার বহুদিনের শখ। জিওলজিস্টরা অনেকেই বিয়ের পর বউকে নিয়ে ফিল্ডে যায়। আমিও নির্মলকে বলে রেখেছি যে আমিও ওর সঙ্গে যাবো, আমার খুব দেখার ইচ্ছে নির্মল এত কি ফিল্ড ওয়ার্ক নিয়ে বড়াই করে! ওর সঙ্গে বিয়ে না হলে আমি এসব দেখবো কি করে?

- তুই নির্মলকে ভালবাসিস বলে ওকে বিয়ে করতে চাস, নাকি তোর তাঁবুতে থাকার ইচ্ছেপূরণের জন্য ওকে বিয়ে করবি? মন ঠিক কর ।

- দুটোই মা, দুটোই।

- হা ঈশ্বর! জিওলজিস্টরা জংলী হয় জানতাম, কিন্তু আমিও যে এমন জংলী মেয়ে পেটে ধরেছি জানতাম না। যা ভালো মনে হয় করো ।


2 মতামত:

  1. দেবাশিস কাঞ্জিলাল১৯ মে, ২০১৫ এ ৯:১২ PM

    নন্দিনী,নিজের পেশার প্রতি গড়পরতা মানুষের একটি সহজাত বিরাগ থাকে ।
    কেন থাকে সে অনেক আলোচনার বিষয়,এই স্বল্প পরিসরে সে এখন থাক ।
    তবে তুমি নিজের পেশা সুন্দর লেখাটিতে নিয়ে যেভাবে ঠাট্টা করেছ,তা দেখে খুব আমোদ পেলাম ।
    ঘেঁটে ঘ এর পরের কিস্তীর অপেক্ষায় রইলাম ।

    উত্তরমুছুন