কবিতা - নীলিমা দে


প্রেমের ঠাকুর
নীলিমা দে



দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরেতে গুণীজনের
মাঝে
আছেন বসে রামকৃষ্ণ মধ্যম
ণি সে যে 
রামকৃষ্ণ ‘কৃষ্ণরাম’ যে নামেতেই ডা
কো
ব্রহ্ম’ বিনা মনে তার সুর বাজে নাকো
জ্ঞানীজনের কথার মাঝে আছে শুধু যুক্তি
তাঁরাই আসেন একটু আশায় হয় যদি বা মুক্তি
ধর্ম নিয়ে নানান কথা বোঝান জ্ঞানী গুণী
মুচকি হেসে ঠাকুর বলেন
– ‘বলছ যখন শুনি 
ক্ষণেক পরে ঠাকুর বলেন- ‘
ব্রহ্ম’ কে তা জান ?
বোঝাও তবে তোমরা তারে কেমন রূপে চেন ?
রামের মত ছেলেরা সব রয়েছে তাঁরে ঘিরে
ক্ষুব্ধজনে হাঁকেন জোরে
যায় না রে আর কিরে
ব্যর্থ হয়ে ভাবেন শেষে পাগল নয় কে সে যে
পাগল বোকা এলেম বুঝি ওদের সর্বনেশে
বৃদ্ধরা কন - ছোকরা গুলোর জীবন হল নষ্ট
আরো বলেন
হায়, পিতামাতার বুঝবে কেন কষ্ট

সেবায় লাটু অনেক বড়  কাঙাল প্রেমের তরে
সবাই তারে স্নেহ দিলেন কত আদর করে ।
উচ্চ নীচের শাপের ভেদ দিলেন ঠাকুর মুছে
প্রেমের রাখি বাঁধল মনে ছাপরা জেলার ছেলে
সবার আগে আপন হলেন লাটু মহারাজ
নরেন হলেন সভার মাঝে নক্ষত্র রাজ ।

নদী মাতে গহন রাতে চাঁদের আলিঙ্গনে
ছোটেন ঠাকুর বসন হাতে অতি সঙ্গোপনে
লাটু ভাবেন কোথায় গেলেন? দেখেন আগল হতে
ঠাকুর কেমন দাঁড়িয়ে আছেন বসন নিয়ে হাতে

নরেন বলেন
– ‘পাগল ঠাকুর মূর্খ তুমি কত
জগৎটারে মিথ্যে ভেবে ভাবের ঘরে ছোট



তবু শিবানন্দ, প্রেমানন্দ, ব্রহ্মানন্দ আনন্দের ভিড় সেথা
ছাপরা জেলার ছোট্ট লাটু তিনিও এলেন হেথা
লেখাপড়া নাই বা জানুক মনটি বড় সাদা
ঠাকুর বুকে নিলেন টেনে রইল না আর বাধা

বিশ্বজোড়া খ্যাতির মুকুট পরেন নরেন শিরে
ভাবেন লাটু নরেন কি আর চিনবে তেমন করে ?

জয়ের মুকুট শিরে নরেন এলেন মোদের ঘরে
খোঁজেন সবার মুখে
পায় না তারে খুঁজে,
ব্যবধানের আড়াল নিয়ে থাকেন লাটু সরে।
নরেন বলেন আয় না কাছে দেখিরে তোর মুখ
বলেন হেসে
দে না জোরে, আলিঙ্গনের সুখ

এই শহরে সভার কাজে ব্যাস্ত নরেন ভাষণ মাঝে
দ্বারে আছেন দাঁড়িয়ে লাটু শীতল পাত্র হাতে
শ্রোতারা সব ব্যস্ত বিষম নগদ তুলে নিতে ।
হায়, গলা যে তার শুকনো মাটির মাঠ
কষ্ট কেউ বোঝে না তো বক্ষ হল কাঠ
ধীরে অতি ধীরে জল পাত্র হাতে নিয়ে লাটু এলেন ঘরে
বলেন নরেন, কষ্ট আমার বুঝলি কেমন করে ?
শ্রান্ত দেহ তৃপ্ত হল পরম সেবা লয়ে।

ওরে, জানবি অনুক্ষণ -
প্রেম দিয়ে যে সেবা করে
স্বর্গ সে তো আপনি গড়ে
মহান সেবায় জয় করলি মন
সেবা ধর্ম, সেবা কর্ম, প্রেম পরম ধন
অশ্রুভেজা বক্ষে তারা দেন আলিঙ্গন।


0 মতামত:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন