এসএমএস
পিয়ালী মজুমদার
পিয়ালী মজুমদার
অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে ফোনের মেসেজ বক্সটা
চেক করছিল রিক্তা । আলোকিত স্ক্রিনে আনমনে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎ খেয়াল হল , বেশ
কিছুদিন কাকিমার এসএমএস আসেনি। এমনতো হয় না সচরাচর ।
কাজের চাপে দম ফেলার ফুরসত মেলেনি, বিষয়টা তাই নজর এড়িয়ে গিয়েছে, ভাবল
রিক্তা, তবে কি কোনও অঘটন , শরীরটরির খারাপ কিছু ?
সুতপা কাকিমা রিক্তাদের পারিবারিক বন্ধু , ইংরাজি সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত
শিক্ষিকার অবসরের অন্যতম বিনোদন বলতে এখন এই এসএমএস।
নিত্যনতুন শব্দ ডানায় ভর করে নিঃশব্দ বার্তালাপের এই খেলা যেন নেশার মতন ।
একাকী একঘেয়ে দিন-যাপন , আর দু-কামরার ফ্ল্যাটের চৌহদ্দি পেরিয়ে খেয়াল-খুশির
অনুভূতিমালা দুনিয়াজোড়া বন্ধু - আত্মীয়দের সাথে ভাগ করে নিতে উৎসাহের অন্ত নেই
ষাটোর্ধ্ব প্রৌঢ়ার । রিক্তাও তাদের মধ্যে একজন । সে কিন্তু একটুও বিরক্ত হয় না
অহরহ এই এসএমএস-এর বন্যায় ভেসে যেতে , বরং প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের চোখেই দেখে কাকিমার
এই ছেলেমানুষী ভালোলাগাটুকু ।
কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে হইহই করে উঠলেন সদালাপী মানুষটি, "আরে রিক্তা কতদিন পর এলি । অফিস ফেরত
বুঝি ? আয় আয়..."
"তোমার কোনও এসএমএস না পেয়ে...... কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে , ফোন না করে
চলেই এলাম।"
একটু থমকালেন কাকিমা। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, "এসএমএস করাটা ছেড়েই
দিলাম বুঝলি।"
কয়েক সেকেন্ডের নৈঃশব্দ্য ......... " বউদির
থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে কারসিনোমা ধরা পড়েছে ।
ডাক্তার আশার কথা কিছু শোনাতে পারেননি ......... সারাজীবন ছায়া দিয়ে গেল মানুষটা । কিছু তো
দিতে পারলাম না পরিবর্তে ।"
রিক্তা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন একগাল হেসে, "বউদি
সেরে উঠলে প্রথম এসএমএস-টা তোকেই করব,
দেখিস । "
রিক্তার মোবাইলে ইনবক্স সরগরম যখন তখন । প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কত শব্দের ভিড়,
জোড়াতালির সম্পর্কের গুঞ্জন কত । তবু কী যেন নেই । চেতনে অবচেতনে কী যেন খুঁজতে
থাকে রিক্তা । আনমনে মোবাইল হাতড়ায় । অপেক্ষা... আর একটা এসএমএস, যা কোনও দিন আসবে
না । রিক্তা জানে, তবুও...
সুন্দর লেখা
উত্তরমুছুন