প্রেম অপ্রেম
রুমনি সেন
রুমনি সেন
স্মিতা স্মিতা প্লিজ। আমার কথাটা একবার শোন। প্লিজ স্মিতা।
সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে জয়। আমাকে এবার যেতে হবে। অনেকক্ষণ বেরিয়েছি। মা চিন্তা করবে।
স্মিতা স্মিতা তুমি আমাকে এভাবে একা ছেড়ে যেতে পার না।
আমার কিছু করার নেই জয়।
তুমি কি আমাকে ভালবাসো না?
বাসি জয়।
তাহলে তোমার বাবাকে বলছ না কেন তুমি এই বিয়ে করতে চাও না?
কী করে বলব? ভাল ফ্যামিলি, ভদ্র শিক্ষিত ছেলে, ভাল চাকরি করে। কোনও দাবি-দাওয়া নেই। আমরা খুব গরিব জয়, তুমি তো জানো। আমার আঠাশ বছর বয়স হয়ে গেল, বাবা আর কত টানবে? আমার পরে আরো দুটো বোন আছে, তাদেরকেও পার করতে হবে বাবাকে। আমি কোন যুক্তিতে বলব বিয়ে করতে চাই না।
আমাকে ভালবাসো সেই যুক্তিতে।
তা হলে বাবা বলবে তাকেই বিয়ে কর। যা বেরো। তখন কী করব? তুমি তো এতদিনেও কাজকর্ম কিছু জোটাতে পারলে না।
আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ। এই ধরো আর দুটো বছর। আমি চাকরি খুঁজছি। চেষ্টা করলে ঠিক একটা জুটে যাবে।
বুঝলাম। তার মানে আমি বাবাকে বলব আমি একজনকে ভালবাসি। সে এখনও চাকরি পায়নি, কিন্তু পেয়ে যাবে। দুবছর সময় চেয়েছে। ততদিন আমি তোমার ঘাড়ে বসে খাব। তাই তো?
তা জন্ম দিয়েছে যখন খেতে পরতে দিতে তো বাধ্য।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বাধ্য। আর খেতে পরতে দিচ্ছেও। কিন্তু তোমার জন্য আমি সেটা আরও দুবছর বাড়াতে চাই না। আর আমার বাবার সম্বন্ধে একটু ভদ্রভাবে কথা বলো জয়।
স্মিতা আমাকে ক্ষমা করো। আমি কী বলতে কী বলে ফেলেছি। আমি তোমাকে ভীষণ ভীষণ ভালবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।
আমাকে যদি সত্যিই ভালবাসো তাহলে এই বিয়েতে তুমি আপত্তি কোরো না জয়।
তুমি আমাকে ভালবাসার পর আর একজনের সঙ্গে শুতে পারবে?
শোয়ার কথা আসছে কোথা থেকে? তুমি তো অনেক দূর অবধি ভেবে নিয়েছ।
এঃ, বিয়ে করবে শোবে না। এ দিকে শোবার জন্য মনে মনে হেদিয়ে মরছে আর আমাকে নানা রকম যুক্তি দেখানো হচ্ছে। কী করব, বাবা গরিব, আরও দুটো বোন আছে। ন্যাকা মেয়েছেলে।
জয় ভদ্রভাবে কথা বলো। অসভ্যতার একটা সীমা আছে।
চোপ। খালি বড় বড় কথা!! আমার সঙ্গে এতদিন প্রেম করে উনি আর একজনের সঙ্গে ড্যাঙড্যাঙিয়ে শুতে যাবেন আর আমি হাতে হাত দিয়ে বসে বসে তাই দেখব!
জয় জয় তুমি অমন করছ কেন? আমার ভয় করছে। খক খক। তোমার হাতে বোতলে ওটা কি? খক খক খক
এটা? এটা হল অ্যাসিড। এটা দিয়ে তোমার মুখের একটু বিউটিফিকেশন করে দেব যাতে বিয়ের শখ জন্মের মত মিটে যায় তোমার।
না, না জয়। খক খক। প্লিজ অমন কোরো না। থুঃ থুঃ থুঃ...
একি স্মিতা! তোমার থুথুতে রক্ত?
ও কিছু না। খক খক খক থুঃ থুঃ
কিছু না বললেই হল? ইসস কত রক্ত বেরোচ্ছে।
কিছু না, ও এমনিই। খক খক খক থুঃ থুঃ থুঃ...
তোমার কি টিবি হয়েছে?
থুঃ থুঃ... হ্যাঁ জয়। তোমার কাছে লুকবো না। বাবা মা কাউকে বলতে বারণ করেছে। অনেক দিন ধরে ভুগছি।বাবা আমার চিকিৎসাও করাতে চায় না, বলেছে, বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি, এবার তোর দায়িত্ব তোর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের। তারা যা করার করবে। কিন্তু তাদেরকেও আমার অসুখের কথা জানায়নি। বিয়ের পর তো তারা সব জানবেই। তখন কি হবে ভেবে আমি ............... আমি কী করব আমাকে বলে দাও জয়। খক খক খক...
ইসস রাত নটা বেজে গেছে। এই শোন স্মিতা। তুমি এখন বাড়ি যাও। আমাকেও যেতে হবে, চলি কেমন?
(একমাস পর)
এই যে দাদা, একটু শুনুন, হ্যাঁ আপনি।
আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ আপনি তো স্মিতার হাজব্যান্ড, তাই না?
হ্যাঁ, আপনাকে তো ঠিক .........
আমি ওর পাড়ারই ছেলে। আমার নাম জয়।
জয়? হুমম, জয় জয়...... হ্যাঁ, ওর কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি।
অনেক শুনেছেন? কী শুনেছেন বলুন তো?
এই আপনি খুব ভাল ছেলে এই সবই আরকি। আর বলবেন না। মাত্র দশ দিনে ওর বন্ধুবান্ধব পাড়া প্রতিবেশী, পাড়ার কুকুর, বেড়াল সব্বার নাম আমাকে মুখস্থ করিয়ে ছেড়েছে। পাগল হয়ে গেলাম মশাই।
অ, তা ভাল। তা, ও এখন কেমন আছে?
হা হা ভালই আছে। খারাপ থাকার তো কোন কারণ নেই।
না মানে ওর শরীর কেমন আছে? ওর চিকিৎসা ঠিক মত চলছে তো?
কীসের চিকিৎসা? কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
সে কি আপনি জানেন না? ওর তো টিবি আছে। আপনাকে বলে নি? ওর রোগ লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছে?
টিবি! কী বলছেন মশাই? মাথা টাথা ঠিক আছে তো? আমার বউয়ের ও সব টিবি-ফিবি নেই।
আমি নিজে ওর কাশির সঙ্গে রক্ত পড়তে দেখেছি। আর ও নিজে আমাকে বলেছে ওর টিবি হয়েছে।
ও হো হো হা হা হা হা হা হা...
এতে এত হাসির কী হল?
হা হা হা, আরে মশাই স্মিতা আমাকে সব বলেছে। ওটা কাশির রক্ত নয়। আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় জিভ কামড়ে ফেলেছিল, তারই রক্ত দেখেছেন। জিভ কামড়ে ফেলার পর বেশ কিছুদিন ভুগেছিল, ডাক্তারও দেখিয়েছিল। তবে বিয়ের আগেই জিভের ক্ষত সেরে গিয়েছিল। বুঝেছেন?
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন